১৮৯৯ সালে প্লেগ কলকাতায় ভয়ানক রূপ ধারণ করে। সিস্টার নিবেদিতাও
মহামারীতে, মানব সেবার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। একদিন তিনি স্বয়ং
ঝাড়ু লইয়া রাস্তা পরিষ্কার করিতে উদ্যত হইলে পাড়ার যুবকগণ লজ্জিত হইয়া
রাস্তা পরিষ্কার রাখিবার দায়িত্ব গ্রহণ করে । স্বাস্থ্য- সংরক্ষণের জন্য
প্রয়োজনীয় বিধিনিষেধের নির্দেশ যুক্ত হ্যাণ্ডবিল ছাপাইয়া প্রতি পল্লীতে
বিতরণ করা হইয়াছিল । মারাত্মক রোগের ভয় উপেক্ষা করিয়ে নিবেদিতা কিরূপ
আন্তরিকতার সহিত রোগীর শুশ্রূষা করিতেন , তাহার বিবরণ প্রত্যক্ষদর্শী ডাঃ
রাধাগোবিন্দ কর দিয়াছেন-
“১৮৯৯ খৃষ্টাব্দে প্লেগ সংহারকরূপে দেখা দেয় । পূর্ববৎসর তাহার আবির্ভাব
সূচনায় বিধিব্যবস্থা – বিভীষিকা ভয়ে ভীত জনগণ শহর হইতে পলায়ন করে। ... এই
বৎসর ছোটোলাট স্যার জন উডবার্ণ আশ্বাস দেন, কোন রোগীকে বলপূর্বক গৃহান্তরিত
করা হইবে না। ... সেই সময়ে একদিন চৈত্রের মধ্যাহ্নে রোগি- পরিদর্শনান্তে
গৃহে ফিরিয়া দেখিলাম , দ্বারপথে ধূলি- ধূসর কাষ্ঠাসনে একজন য়ূরোপীয় মহিলা
উপবিষ্টা । ইনিই ভগিনী নিবেদিতা; একটি সংবাদ জানিবার জন্য আমার আগমন
প্রতীক্ষায় বহুক্ষণ অপেক্ষা করিতেছেন ।
সেইদিন প্রাতে বাগবাজারে কোন বস্তীতে আমি একটি প্লেগাক্রান্ত শিশুকে দেখিতে গিয়াছিলাম। রোগীর ব্যবস্থা সম্বন্ধে অনুসন্ধান ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যই সিস্টার নিবেদিতার আগমন । আমি বলিলাম – ‘রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন’। বাগদীবস্তিতে কিরূপে বিজ্ঞান- সম্মত পরিচর্যা সম্ভব , তাহার আলোচনা করিয়া আমি তাঁহাকে বিশেষ সাবধান হইতে বলিলাম । অপরাহ্ণে পুনরায় রোগী দেখিতে যাইয়া দেখিলাম , সেই অস্বাস্থ্যকর পল্লীতে , সেই আর্দ্র – জীর্ণ কুটিরে নিবেদিতা রোগগ্রস্ত শিশুটিকে ক্রোড়ে লইয়া বসিয়া আছেন । দিনের পর রাত্রি , রাত্রির পর দিন তিনি স্বীয় আবাস পরিত্যাগ করিয়া সেই কুটীরে রোগীর সেবায় নিযুক্তা রহিলেন। গৃহ পরিশোধিত করা প্রয়োজন । তিনি স্বয়ং একখানি ক্ষুদ্র মই লইয়া গৃহে চুনকাম করিতে লাগিলেন। রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত জানিয়াও তাঁহার শুশ্রূষার শৈথিল্য সঞ্চারিত হইল না। দুইদিন পর শিশু এই করুণাময়ীর স্নেহ- তপ্ত অঙ্কে অন্তিম নিদ্রায় নিদ্রিত হইল।”
মৃত্যুর পূর্বে শিশুটি তাঁহাকেই জননী মনে করিয়া জড়াইয়া ধরিয়া ‘মা’ , ‘মা’ করিয়াছিল। তাঁহার আপ্রাণ চেষ্টা বিফল করিয়া এই শিশুটির মৃত্যু তাঁহাকে বিশেষ বিচলিত করে। নিবেদিতার ‘Studies From an Eastern Home’ নামক পুস্তকে ‘প্লেগ’ নামে একটি প্রবন্ধ আছে । এই প্রবন্ধে প্লেগের আবির্ভাবে পল্লীর তদনীন্তন অবস্থা এবং বিশেষ করিয়া এই শিশুটির মৃত্যুর বর্ণনা আছে; নাই শুধু তিনি নিজে মূর্তিমতী করুণার ন্যায় কিরূপে এই সেবাকার্যে নিজেকে উৎসর্গ করিয়াছিলেন তাহার উল্লেখ। বস্তুত এই কার্যের দ্বারাই নিবেদিতা কেবল সুপরিচিত নহে, সকলের শ্রদ্ধার পাত্রী হইয়াছিলেন। এই মারাত্মক রোগের আক্রমণ- প্রতিরোধের জন্য পরমাত্মীয়ের ন্যায় তাঁহার নিরলস উদ্যম ও ঐকান্তিক সেবা- শুশ্রূষা কে উপেক্ষা করিতে পারে!
( ভগিনী নিবেদিতা... প্রব্রাজিকা মুক্তিপ্রাণা )
সেইদিন প্রাতে বাগবাজারে কোন বস্তীতে আমি একটি প্লেগাক্রান্ত শিশুকে দেখিতে গিয়াছিলাম। রোগীর ব্যবস্থা সম্বন্ধে অনুসন্ধান ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যই সিস্টার নিবেদিতার আগমন । আমি বলিলাম – ‘রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন’। বাগদীবস্তিতে কিরূপে বিজ্ঞান- সম্মত পরিচর্যা সম্ভব , তাহার আলোচনা করিয়া আমি তাঁহাকে বিশেষ সাবধান হইতে বলিলাম । অপরাহ্ণে পুনরায় রোগী দেখিতে যাইয়া দেখিলাম , সেই অস্বাস্থ্যকর পল্লীতে , সেই আর্দ্র – জীর্ণ কুটিরে নিবেদিতা রোগগ্রস্ত শিশুটিকে ক্রোড়ে লইয়া বসিয়া আছেন । দিনের পর রাত্রি , রাত্রির পর দিন তিনি স্বীয় আবাস পরিত্যাগ করিয়া সেই কুটীরে রোগীর সেবায় নিযুক্তা রহিলেন। গৃহ পরিশোধিত করা প্রয়োজন । তিনি স্বয়ং একখানি ক্ষুদ্র মই লইয়া গৃহে চুনকাম করিতে লাগিলেন। রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত জানিয়াও তাঁহার শুশ্রূষার শৈথিল্য সঞ্চারিত হইল না। দুইদিন পর শিশু এই করুণাময়ীর স্নেহ- তপ্ত অঙ্কে অন্তিম নিদ্রায় নিদ্রিত হইল।”
মৃত্যুর পূর্বে শিশুটি তাঁহাকেই জননী মনে করিয়া জড়াইয়া ধরিয়া ‘মা’ , ‘মা’ করিয়াছিল। তাঁহার আপ্রাণ চেষ্টা বিফল করিয়া এই শিশুটির মৃত্যু তাঁহাকে বিশেষ বিচলিত করে। নিবেদিতার ‘Studies From an Eastern Home’ নামক পুস্তকে ‘প্লেগ’ নামে একটি প্রবন্ধ আছে । এই প্রবন্ধে প্লেগের আবির্ভাবে পল্লীর তদনীন্তন অবস্থা এবং বিশেষ করিয়া এই শিশুটির মৃত্যুর বর্ণনা আছে; নাই শুধু তিনি নিজে মূর্তিমতী করুণার ন্যায় কিরূপে এই সেবাকার্যে নিজেকে উৎসর্গ করিয়াছিলেন তাহার উল্লেখ। বস্তুত এই কার্যের দ্বারাই নিবেদিতা কেবল সুপরিচিত নহে, সকলের শ্রদ্ধার পাত্রী হইয়াছিলেন। এই মারাত্মক রোগের আক্রমণ- প্রতিরোধের জন্য পরমাত্মীয়ের ন্যায় তাঁহার নিরলস উদ্যম ও ঐকান্তিক সেবা- শুশ্রূষা কে উপেক্ষা করিতে পারে!
( ভগিনী নিবেদিতা... প্রব্রাজিকা মুক্তিপ্রাণা )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন