২০ এপ্রিল ২০২০

প্রহ্লাদপুরী মন্দির, মুলতান পাকিস্তান - এখানেই নৃসিংহ দেব হিরণ্যকশিপুকে হত্যা করে প্রহ্লাদকে রক্ষা করেছিলেন (ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরের ভিডিওসহ) ।

প্রহ্লাদপুরী মন্দিরের ভগবান শ্রীনৃসিংহদেবর মুল বিগ্রহ
 প্রহ্লাদপুরী মন্দির পাকিস্তানের একটি হিন্দু মন্দির।এটি পাকিস্তানের মুলতানে অবস্থিত। বর্তমানে এই মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। প্রহ্লাদ মহারাজের জন্ম হয় ত্রেতাযুগে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুলতান শহরে । কশ্যপ বংশীয় রাজা হিরণ্যকশিপুর পুত্ররূপে তাঁর জন্ম হয় । প্রহ্লাদ মহারাজ ছিলেন এক মহান বিষ্ণুভক্ত । কিন্তু তাঁর পিতা ছিলেন বিষ্ণু বিদ্বেষী । পিতা পুত্রের মনোভাবের এই বিরোধের ফলে, দৈত্য পিতা প্রহ্লাদকে নানাভাবে নির্যাতন করেছিল এবং বধ করার চেষ্টা করেছিল । সেই নির্যাতন যখন অসহ্য হয়ে উঠে, তখন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীনৃসিংহদেব রূপে আর্বিভূত হয়ে দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুকে বধ করেছিলেন । বর্তমান পাকিস্তানের মুলতান শহরে প্রাচীন প্রহ্লাদপুরী মন্দির অবস্থিত ।এই স্থানটি পূর্বে কশ্যপপুর নামে পরিচিত ছিল । প্রহ্লাদপুরী মন্দিরটি ভগবান শ্রীনৃসিংহদেবের উদ্দেশ্যে স্বয়ং প্রহ্লাদ মহারাজ নির্মাণ করেছিলেন ।

মুলতাত মুসলমানদের আক্রমণের পর মুলতানের সূর্য মন্দিরের মতো এই মন্দিরটিও ধ্বংস হয়ে যায়। মন্দিরটি তার বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলে এবং ১৯ শতকের সময় একটি আদর্শ মন্দির হয়ে ওঠে। মন্দিরটি মুলতানের দুর্গে একটি উচ্চ স্থানে অবস্থিত। হযরত বাহাহুল হক জাকারিয়ার সমাধির সমীপবর্তী । মন্দিরের কাছে একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল । এটি শিখ সাম্রাজ্যের অধীনেও ছিল। এএন খানের মতে শিখ সাম্রাজ্যের অধীনে মন্দিরটি পুন তৈরি করা হয়। ১৮৩১ সালে আলেকজান্ডার বার্নস মন্দির পরিদর্শন করেন এবং জানালেন যে এটি পরিত্যক্ত হয়েছে এবং এর ছাদ ছিল না। ১৮৪২ সালে ব্রিটিশরা মুলতানের মুলকাস দুর্গে আক্রমণ করে। একটি কার্তুজ

দুর্গের ভিতরে একটি খোলা জানালাতে রাখা ছিল। বাহাউদ্দিন জাকারিয়ার কবর , মন্দির ও দুর্গটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।




মন্দিরে একটি প্রধান হলরুম, প্রশস্থ মন্ডপ ছিল । প্রধান মধ্যবর্তী হলে রয়েছে মূল প্রাচীন বিগ্রহের একটি রেপ্লিকা বিগ্রহ । এছাড়া মন্দিরের সন্নিকটে রয়েছে ধর্মশালা । ঐতিহাসিক মতে একসময় এই মন্দিরটি পুরোটাই স্বর্ণ দিয়ে তৈরী ছিল । কিন্তু অজানা এক কারনে একসময় সমগ্র মন্দিরটিই মাটিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে । পরবর্তী একই স্থানে বর্তমান মন্দিরটি তৈরী করা হয় । মুলতানের ঐতিহাসিক স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য জরিপ ও গবেষণার জন্য আলেকজান্ডার কানিংহাম ১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দে পরিদর্শনে আসেন। প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর বিভাগে উল্লেখ করেন যে, এটি "বর্গক্ষেত্র এবং ইট মন্দির" ছিল। ছাদকে

অবলম্বন দেয়ার জন্য কাঠের স্তম্ভ ছিল। বর্তমান মন্দিরটি ১৮৬১ সালে বদ্বল রাম দাস দ্বারা ১১ হাজার রুপি ব্যয় করে নির্মিত হয়েছিল।

পাকিস্তানের সৃষ্টি হওয়ার পর, অনেক হিন্দু ভারতে চলে যায়। মন্দিরটি দেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের সময় মূল নৃসিংহদেবের বিগ্রহটি ভারতে নিয়ে যাওয়া হয় । এই মন্দিরটিতে থাকা মুল নরসিংহের বিগ্রহটি হরিদ্বারে আছে (নৃসিংহধাম রোড ) । বাবা নারায়ণ দাস বাত্রা মূল বিগ্রহটি ভারতে নিয়ে আসেন। নারায়ণ দাস একজন বিখ্যাত সন্ন্যাসী, যিনি বহু বিদ্যালয় ও কলেজ নির্মাণ করেছেন। সমাজের উন্নয়নের কাজ করার জন্য ২০১৮ সালে পদ্মশ্রী পান তিনি। ১৯৯২ সালে অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হলে পাকিস্তানের মুসলিম জনতা মন্দিরটি ধ্বংস করেছিল।

এটি একটি প্রাচীন মন্দির। বিশ্বাস করা হয় যে, মন্দিরটি প্রহ্লাদ মন্দিরের স্থানে অবস্থিত। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে হোলিকা দহন পালন শুরু হয়েছে এখান থেকে। এখানে দুই দিন ধরে হোলিকা দহন (Holika Dahan) উৎসব এবং নয় দিন ধরে হোলি পালিত হয়।

হোলিকার দহন হচ্ছে হোলি উৎসবের সবচেয়ে বেশি পরিচিত পৌরাণিক ব্যাখ্যা। ভারতের বিভিন্ন স্থানে হোলিকার মৃত্যুর বিভিন্ন কারণ বলা হয়, কিন্তু সকল ক্ষেত্রেই এই বিষয়ে সম্মতি দেখা যায় যে, মুলাস্থান শহরে এই ঘটনাটি ঘটেছিল, যা বর্তমানে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুলতান নামে পরিচিত। এই কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
  • বিষ্ণু বাঁধা দেন বলে হোলিকা আগুনে পোড়ে
  • ব্রহ্মা হোলিকাকে হোলিকাকে এই শর্তে তার আগুনে না পুড়বার ক্ষমতাটি দান করেছিলেন যে, এই ক্ষমতাটিকে অন্য কারও ক্ষতির জন্য ব্যবহার করা হবে না।
  • হোলিকা ভাল নারী ছিলেন, এবং তার পোশাকের কারণে তাকে আগুনে পোড়ানো সম্ভব ছিল না। প্রহ্লাদকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হবে এটা জেনে তিনি তার পোশাক প্রহ্লাদকে দিয়ে দেন এবং নিজে আগুনে পুড়ে আত্মত্যাগ করেন।
  • হোলিকা যখন আগুনের উপর বসেন, তিনি তার চাদর পরিধান করেন এবং প্রহ্লাদকে তার কোলের উপর বসান। প্রহ্লাদ বিষ্ণুর প্রতি প্রার্থনা শুরু করলে বিষ্ণ বাতাস পাঠিয়ে দেন, যা হোলিকার চাদরটিকে উড়িয়ে নিয়ে প্রহ্লাদকে তা দিয়ে আবৃত করে। এরফলে প্রহ্লাদ বেঁচে যায়, এবং হোলিকা আগুনে পুড়ে মারা যায়।




প্রহ্লাদপুরী মন্দির,মুলতান
Prahladpuri Temple View.jpg
প্রহ্লাদপুরী মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
পরিচালনা সংস্থাপাকিস্তান হিন্দু কাউন্সিল
অবস্থান
স্থাপত্য
ধরনহিন্দু মন্দির
ওয়েবসাইট
http://www.pakistanhinducouncil.org/



তথ্যসূত্রঃ
  1. Syad Muhammad Latif (১৯৬৩)। The early history of Multan। পৃষ্ঠা 3,54। Kasyapa, is believed, according to the Sanscrit texts, to have founded Kashyapa-pura (otherwise known as Multan
  2. Gazetteer of the Multan District, 1923-24 Sir Edward Maclagan, Punjab (Pakistan)। ১৯২৬। পৃষ্ঠা 276–77।
  3. Imperial rule in Punjab: the conquest and administration of Multan, 1818-1881 by J. Royal Roseberry। পৃষ্ঠা 243, 263। 
  4. All the year round , Volume 51। Charles Dickens। ১৮৮৩। 
  5. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে Survey & Studies for Conservation of Historical Monuments of Multan. Department of Archeology & Museums, Ministry of Culture, Government of Pakistan 
  6. Muslim Saints of South Asia: The Eleventh to Fifteenth Centuries By Anna Suvorova। পৃষ্ঠা 153। 
  7. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০১৯। Cunningham, 129 
  8. Ajudhia Das, who was formerly Mahant of two temples at Multan named Prahlad and N'arasingpuri, was removed from his office on January 23rd, 1913, by a Panchayat appointed at a mass meeting of Hindus which was convened on that date. All India reporter, Volume 3 by D.V. Chitaley, 1923

ধন্যবাদ উইকিপিডিয়াকে ।
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।