যে মানুষ যথেষ্ট বুদ্ধিমান নয়, সে পারমার্থিক জীবন সম্বন্ধে অনুসন্ধান করতে পারে না। পক্ষান্তরে, সে নানা রকম অপ্রাসঙ্গিক বিষয় সম্বন্ধে অনুসন্ধান করে, যার সঙ্গে তার সচ্চিদানন্দময় অস্তিত্বের কোনই সম্পর্ক নেই। জীবনের শুরু থেকেই সে তার মা, বাবা শিক্ষক, অধ্যাপক এবং অন্যান্য বহু সূত্র থেকে নানা রকম বিষয়ে
জানবার চেষ্টা করে, কিন্তু সেই সমস্ত প্রশ্নের মাধ্যমে তার প্রকৃত স্বরূপ সম্বন্ধে সে কিছুই জানতে পারে না।
পরীক্ষিৎ মহারাজ যখন জানতে পারলেন যে, সাতদিন পরে তাঁর মৃত্যু হবে, তিনি তৎক্ষণাৎ তাঁর রাজপ্রাসাদ এবং রাজ-ঐশ্বর্য পরিত্যাগ করে পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুত হতে লাগলেন। মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে পরীক্ষিৎ মহারাজ অন্তত সাতদিন সময় পেয়েছিলেন, কিন্তু আমরা যদিও জানি যে, মৃত্যু আমাদের অবশ্যম্ভাবী, তবে কখন যে তা আসবে, সেই সম্বন্ধে আমাদের কিছুই জানা নেই। আমরা জানি যে, যে কোন মুহূর্তে আমাদের মৃত্যু ঘটতে পারে। মহাত্মা গান্ধীর মতাে একজন
তথাকথিত মহাত্মা পর্যন্ত বুঝতে পারেননি যে, পাঁচ মিনিট পরেই তাঁর মৃত্যু হবে, আর তাঁর মহান পারিষদেরাও তার আসন্ন মৃত্যুকে অবলােকন করতে পারেননি।
জন্ম এবং মৃত্যু সম্বন্ধে অজ্ঞতাই পশু এবং মানুষের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করে থাকে। একজন যথার্থ মানুষ তার নিজের সম্বন্ধে এবং তার স্বরূপ সম্বন্ধে প্রশ্ন করে। সে প্রশ্ন করে, কোথা থেকে সে এই
জীবনে এল এবং মৃত্যুর পর সে কোথায় যাবে। সে প্রশ্ন করে, যদিও সে দুঃখ চায় না, তবুও কেন সে ত্রিতাপ দুঃখের দ্বারা জর্জরিত হচ্ছে। জীবনের শুরু থেকে মানুষ তার জীবনের কত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করে, কিন্তু জীবনের যথার্থ তত্ব সম্বন্ধে সে কখনই কোন প্রশ্ন করে না। এটিই হচ্ছে পাশবিকতা। চারটি পশুপ্রবৃত্তি মানুষের মধ্যেও দেখা যায়।
সেই ব্যাপারে মানুষ এবং পশুর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। প্রতিটি জীবই আহার, নিদ্রা, ভয় এবং মৈথুনকে কেন্দ্র করে জীবন যাপন করে, কিন্তু মনুষ্য-জীবনেই কেবল নিত্য অস্তিত্ব এবং চিন্ময় সত্ত্বা সম্বন্ধে অনুসন্ধান করা সম্ভব হয়। তাই মনুষ্য-জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে তার নিত্য অস্তিত্ব সম্বন্ধে অনুসন্ধান করা। বেদান্ত সূত্র উপদেশ দিচ্ছে
যে, সেই অনুসন্ধান এখনই করতে হবে। তা না হলে কখনই তা সম্ভব হবে না। মনুষ্য-জীবন পাওয়া সত্ত্বেও আমরা যদি আমাদের প্রকৃত স্বরূপ সম্বন্ধে অনুসন্ধান না করি, তা হলে প্রকৃতির নিয়মে
আমাদের অবশ্যই আবার পশুজীবন প্রাপ্ত হতে হবে। তখন আর আমরা প্রশ্ন করতে পারব না, ‘আমি কে? আমি কোথা থেকে এলাম? আমি কেন এখানে কষ্ট পাচ্ছি?” তাই জড়জাগতিক বিষয়ে
অনেক মূর্খ লােকদের যথেষ্ট উন্নত বলে মনে হলেও অর্থাৎ আহার, নিদ্রা, ভয়, মৈথুন ইত্যাদি বিষয়ে তাদের খুব উন্নত বলে মনে হলেও
প্রকৃতির নিয়মে মৃত্যুর হাত থেকে তারা কখনই নিস্তার পেতে পারে না। জড়া প্রকৃতি সত্ত্ব, রজ এবং তম—এই তিনটি গুণের দ্বারা সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। যারা সত্ত্বগুণে জীবন যাপন করে, তারা উচ্চতর ধার্মিক জীবন প্রাপ্ত হয়; যারা রজোগুণের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জীবন যাপন করে, তারা জড় জগতে যেখানে রয়েছে সেখানেই আবদ্ধ হয়ে
থাকে; আর যারা তামসিক জীবন যাপন করে, তারা অবশ্যই অধঃপতিত হয়ে নিম্নতর জীবন লাভ করে।
আধুনিক সভ্যতার পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক, কারণ জীবনের যথার্থ উদ্দেশ্য সম্বন্ধে তা কোন শিক্ষাই প্রদান করে না। পশুর মতাে এই সমাজের মানুষেরাও জানে না যে, প্রকৃতির নিয়মে অচিরেই তাদের মৃত্যু হবে। একমুঠো সবুজ ঘাস বা তথাকথিত সুখময় জীবন পেয়ে তারা কসাইখানায় মৃত্যুর প্রতীক্ষমান পাঁঠার মতাে নির্বিকার। আধুনিক মানুষের এই দুর্দশার কথা বিবেচনা করেই আমরা ভগবৎ দর্শনের মাধ্যমে মানুষকে রক্ষা করার চেষ্টা করছি। এই পন্থাটি অলীক নয়।
কলহের যুগ এই যুগে মিথ্যার আবরণ উন্মােচন করে যদি আবার সত্যযুগের প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়, তা হলে ভগবৎ-দর্শনের এই বাণীর মাধ্যমেই তার সূচনা হচ্ছে।
||হরেকৃষ্ণ||
Post Courtesy by: অদ্রিজা মুর্খাজী
জানবার চেষ্টা করে, কিন্তু সেই সমস্ত প্রশ্নের মাধ্যমে তার প্রকৃত স্বরূপ সম্বন্ধে সে কিছুই জানতে পারে না।
পরীক্ষিৎ মহারাজ যখন জানতে পারলেন যে, সাতদিন পরে তাঁর মৃত্যু হবে, তিনি তৎক্ষণাৎ তাঁর রাজপ্রাসাদ এবং রাজ-ঐশ্বর্য পরিত্যাগ করে পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুত হতে লাগলেন। মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে পরীক্ষিৎ মহারাজ অন্তত সাতদিন সময় পেয়েছিলেন, কিন্তু আমরা যদিও জানি যে, মৃত্যু আমাদের অবশ্যম্ভাবী, তবে কখন যে তা আসবে, সেই সম্বন্ধে আমাদের কিছুই জানা নেই। আমরা জানি যে, যে কোন মুহূর্তে আমাদের মৃত্যু ঘটতে পারে। মহাত্মা গান্ধীর মতাে একজন
তথাকথিত মহাত্মা পর্যন্ত বুঝতে পারেননি যে, পাঁচ মিনিট পরেই তাঁর মৃত্যু হবে, আর তাঁর মহান পারিষদেরাও তার আসন্ন মৃত্যুকে অবলােকন করতে পারেননি।
জন্ম এবং মৃত্যু সম্বন্ধে অজ্ঞতাই পশু এবং মানুষের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করে থাকে। একজন যথার্থ মানুষ তার নিজের সম্বন্ধে এবং তার স্বরূপ সম্বন্ধে প্রশ্ন করে। সে প্রশ্ন করে, কোথা থেকে সে এই
জীবনে এল এবং মৃত্যুর পর সে কোথায় যাবে। সে প্রশ্ন করে, যদিও সে দুঃখ চায় না, তবুও কেন সে ত্রিতাপ দুঃখের দ্বারা জর্জরিত হচ্ছে। জীবনের শুরু থেকে মানুষ তার জীবনের কত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করে, কিন্তু জীবনের যথার্থ তত্ব সম্বন্ধে সে কখনই কোন প্রশ্ন করে না। এটিই হচ্ছে পাশবিকতা। চারটি পশুপ্রবৃত্তি মানুষের মধ্যেও দেখা যায়।
সেই ব্যাপারে মানুষ এবং পশুর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। প্রতিটি জীবই আহার, নিদ্রা, ভয় এবং মৈথুনকে কেন্দ্র করে জীবন যাপন করে, কিন্তু মনুষ্য-জীবনেই কেবল নিত্য অস্তিত্ব এবং চিন্ময় সত্ত্বা সম্বন্ধে অনুসন্ধান করা সম্ভব হয়। তাই মনুষ্য-জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে তার নিত্য অস্তিত্ব সম্বন্ধে অনুসন্ধান করা। বেদান্ত সূত্র উপদেশ দিচ্ছে
যে, সেই অনুসন্ধান এখনই করতে হবে। তা না হলে কখনই তা সম্ভব হবে না। মনুষ্য-জীবন পাওয়া সত্ত্বেও আমরা যদি আমাদের প্রকৃত স্বরূপ সম্বন্ধে অনুসন্ধান না করি, তা হলে প্রকৃতির নিয়মে
আমাদের অবশ্যই আবার পশুজীবন প্রাপ্ত হতে হবে। তখন আর আমরা প্রশ্ন করতে পারব না, ‘আমি কে? আমি কোথা থেকে এলাম? আমি কেন এখানে কষ্ট পাচ্ছি?” তাই জড়জাগতিক বিষয়ে
অনেক মূর্খ লােকদের যথেষ্ট উন্নত বলে মনে হলেও অর্থাৎ আহার, নিদ্রা, ভয়, মৈথুন ইত্যাদি বিষয়ে তাদের খুব উন্নত বলে মনে হলেও
প্রকৃতির নিয়মে মৃত্যুর হাত থেকে তারা কখনই নিস্তার পেতে পারে না। জড়া প্রকৃতি সত্ত্ব, রজ এবং তম—এই তিনটি গুণের দ্বারা সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। যারা সত্ত্বগুণে জীবন যাপন করে, তারা উচ্চতর ধার্মিক জীবন প্রাপ্ত হয়; যারা রজোগুণের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জীবন যাপন করে, তারা জড় জগতে যেখানে রয়েছে সেখানেই আবদ্ধ হয়ে
থাকে; আর যারা তামসিক জীবন যাপন করে, তারা অবশ্যই অধঃপতিত হয়ে নিম্নতর জীবন লাভ করে।
আধুনিক সভ্যতার পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক, কারণ জীবনের যথার্থ উদ্দেশ্য সম্বন্ধে তা কোন শিক্ষাই প্রদান করে না। পশুর মতাে এই সমাজের মানুষেরাও জানে না যে, প্রকৃতির নিয়মে অচিরেই তাদের মৃত্যু হবে। একমুঠো সবুজ ঘাস বা তথাকথিত সুখময় জীবন পেয়ে তারা কসাইখানায় মৃত্যুর প্রতীক্ষমান পাঁঠার মতাে নির্বিকার। আধুনিক মানুষের এই দুর্দশার কথা বিবেচনা করেই আমরা ভগবৎ দর্শনের মাধ্যমে মানুষকে রক্ষা করার চেষ্টা করছি। এই পন্থাটি অলীক নয়।
কলহের যুগ এই যুগে মিথ্যার আবরণ উন্মােচন করে যদি আবার সত্যযুগের প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়, তা হলে ভগবৎ-দর্শনের এই বাণীর মাধ্যমেই তার সূচনা হচ্ছে।
||হরেকৃষ্ণ||
Post Courtesy by: অদ্রিজা মুর্খাজী
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন