চৈত্র মাসের শুক্ল পক্ষের নবমী তিথিতে ত্রেতা যুগে অয্যোধ্যার ইক্ষ্বাকু বংশীয় সম্রাট মহারাজ দশরথের স্ত্রী কৌশল্যা দেবীর সন্তান রূপে আবির্ভূত হন ভগবান শ্রীরামচন্দ্র। ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের আবির্ভাব তিথিকে "রামনবমী" বলা হয়। ভগবান শ্রীরামচন্দ্র, রাবন বধ করে ধর্ম সংস্থাপন করেছিলেন। চৈত্রমাসের প্রকৃতি । মধুমাসে প্রকৃতি সুন্দর হয়ে উঠলো। অযোধ্যার বৃক্ষ গুলি সুগন্ধে ভরা পুস্পে ভরে উঠলো। নানা রঙ বেরঙের প্রজাপতি ডানা মেলে উড়ে বেড়াতে লাগলো সেই সব পুস্পে, মধুলোভী অলিকূল মধুলোভে পুস্পের ডালে গমন করতে লাগলো। কোকিলাদি নানা পক্ষী মিষ্ট সুরে ভরিয়ে তুলে দিলো অযোধ্যার পরিবেশকে । ভগবানের আবির্ভাব কাল উপস্থিত । কৃত্তিবাস ওঝা লেখেছেন-
কৌশল্যারে দেখা দেন প্রভু নারায়ণ ।।
চতুর্ভুজ রূপে দেখা দিলেন শ্রীহরি ।।
পুত্রভাবে হরিকে করিল রাণী কোলে ।
কহিলেন কৌশল্যারে ডাকিয়া মা ব’লে ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
কৌশল্যা দেবী স্বপ্নে চতুর্ভুজ ভগবানের নীলনবঘন শ্রীমূর্তি দর্শন পেলেন। দেখলেন সেই অনাদির আদি গোবিন্দ পুত্র রূপে তাঁর ক্রোড়ে ।
সন্ত তুলসীদাস গোস্বামী মহারাজ লিখেছেন-
বিপ্র ধেনু সুর সন্ত হিত লীনহ মনুজ অবতার ।
নিজ ইচ্ছা নির্মিত তনু মায়া গুন গো পার ।।
( তুলসীদাসী রামায়ণ )
এর অর্থ- “শ্রীভগবানের নরদেহ ধারন বিপ্র, ধেনু, দেবগণ ও সাধু সন্ত কল্যাণে নিহিত ছিল । অজ্ঞান রূপে মায়ার মলিনতা , ত্রিগুণ ও ইন্দ্রিয় তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। তাঁর দিব্য তনু নিজ ইচ্ছায় নির্মিত , তা কোন কর্ম বন্ধনের বশীভূত হয়ে ত্রিগুণাত্মক পঞ্চভূত দেহ নয় ।”
কৃত্তিবাস ওঝা লেখেছেন-
মধুচৈত্রমাস, শুক্লা শ্রীরাম নবমী ।
শুভক্ষণে ভূমিষ্ঠ হ’লেন জগৎস্বামী ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
রাজা দশরথের অপর পত্নী কৈকয়ী জন্ম দিলেন এক পুত্রের। তাঁর নাম ভরত ।
রাজা দশরথের অপর পত্নী সুমিত্রা দুটি যমজ পুত্রের জন্ম দিলেন। দুই যমজ পুত্রের নাম লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন রাজা দশরথের আনন্দের সীমা নেই । সুমিত্রা সহ যমজ পুত্র দেখে খুশীতে ভরে উঠলেন । শ্রীরামের জন্মেতে ধরিত্রী দেবী খুশী হলেন । বলা হয় ভগবান বিষ্ণু নিজে চার অংশ হয়ে শ্রীরাম, ভরত, লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন রূপে জন্ম নিয়েছিলেন। মুনি ঋষি রা আনন্দিত হলেন – যথা কৃত্তিবাস পণ্ডিত গেয়েছেন-
রামের জনম শুনি, নাচেন সকল মুনি ,
দণ্ড কমণ্ডলু করি হাতে ।
স্বর্গে নাচে দেবগণ , মর্তে নাচে মর্তজন
হরিষে নাচিছে দশরথে ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন