বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত মানুষদের সাময়িক চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে বিশ্বে হাইড্রক্সিক্লোরকুইনের চাহিদা বেড়ে গেছে। যা তখন তৈরী হয়েছিল বাঙ্গালী বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের বেঙ্গল কেমিক্যালসে। বিশ্বযুদ্ধ কিংবা মহামারী, ১২৮ বছরে বারবার " উদ্ধারকর্তা" বেঙ্গল কেমিক্যালস।
১৯২৩ সাল, অর্থাৎ প্রায় এক শতাব্দী আগের কথা। ভারতের উত্তরবঙ্গ জুড়ে সে-বছর প্রবল বন্যা। লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া। তাদের সাহায্যের জন্য আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় তৈরি করলেন বেঙ্গল রিলিফ কমিটি। সামান্য চাঁদার অর্থে কিছুটা খাবার তারা তুলে দিতে পারছিল দুর্গত মানুষদের মুখে। কিন্তু এর মধ্যেই নতুন উপদ্রব শুরু করেছে কলেরা এবং টাইফয়েড। আক্রান্ত বহু মানুষ। সেইসব মরণাপন্ন রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করতে এগিয়ে এসেছিল বেঙ্গল কেমিক্যালস।
বর্তমানের দিকে তাকিয়ে দেখলেও, ছবিটা প্রায় একই। করোনা আক্রান্ত মানুষদের সাময়িক চিকিৎসার ব্যবস্থা হিসাবে হঠাৎ চাহিদা বেড়ে গিয়েছে হাইড্রক্সিক্লোরকুইন ওষুধটির। বাজারে যখন কাঁচামালেরই জোগান প্রায় নেই বললেই চলে, তখন এই বিপুল উৎপাদন সম্ভব হবে কী করে? আর সেই পরিকাঠামোই বা কোথায়?
এমন পরিস্থিতিতেই এগিয়ে এল বেঙ্গল কেমিক্যালস। ১২৮ বছর পেরিয়ে আজও দেশের দুর্দিনে সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে পারে এই সংস্থা। এই প্রথমবার তো নয়। দীর্ঘ ইতিহাসে বারবার এমন জরুরি পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসেছে বেঙ্গল কেমিক্যালস।
আবার খানিকটা পিছনের দিকে তাকানো যাক। ১৮৯৮ সাল। বেঙ্গল কেমিক্যালসের বয়স মাত্র ৬ বছর। তখন অবশ্য নাম ছিল ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল ওয়ার্ক’। তেমন বড় কারখানা কিছুই নেই, সামান্য ল্যাবরেটরিতে গবেষণার কাজ চলে। এর মধ্যেই কলকাতায় ছড়িয়ে পড়েছে প্লেগ। আক্রান্ত বহু মানুষ। আর প্লেগের হাত থেকে বাঁচার প্রথম শর্ত ঘর পরিষ্কার এবং কীটপতঙ্গ মুক্ত রাখা। কিন্তু স্যানিটেশনের যাবতীয় যা সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আসে তার দাম আকাশছোঁয়া। সেবারেও এগিয়ে এসেছিল বেঙ্গল কেমিক্যালস। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে তাঁরা তৈরি করেছিলেন ফিনাইল এবং ন্যাপথলিন বল।
শুধু দেশের সাধারণ মানুষ নয়, সরকারের দিকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। ১৯১৪ সাল, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের জন্য কিছু অ্যাসিড এবং রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োজন হয় ব্রিটিশ সরকারের। কিন্তু এতদিন এসব দ্রব্যের জন্য নির্ভর করা যেত জার্মানির উপর। এখন তো জার্মানি প্রতিপক্ষ দলে। তাহলে উপায়? উপায় সেই উপনিবেশের দেশীয় একটি কারখানা, বেঙ্গল কেমিক্যালস। যুদ্ধের যাবতীয় রাসায়নিক দ্রব্যের উৎপাদনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল এই প্রতিষ্ঠান।
সরকারও অবশ্য সেই উপকারের মর্যাদা রেখেছিল। যুদ্ধের পর কোম্পানির মূলধন বেড়েছিল প্রায় ২০ গুণ। সরকার অনেক সম্মানও দিয়েছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রকে। তবে বেঙ্গল কেমিক্যালসের চাহিদা হয়তো এসব কিছুই ছিল না। বরং জরুরি পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে থাকার যতটুকু সামর্থ্য তার আছে, সেটুকুই সম্পূর্ণ দিয়ে যেতে চায়। তাই তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আবার আহত সৈনিকদের জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করতে এগিয়ে আসে এই প্রতিষ্ঠান। অগ্নিযুগের বিপ্লবীরাও সাহায্য পেয়েছেন নানা সময়।
১৮৯২ সালে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের উদ্যোগে সামান্য একটি ভেষজ গবেষণাগার হিসাবে আত্মপ্রকাশ বেঙ্গল কেমিক্যালসের। কালক্রমে একটি রাসায়নিক কারখানা হয়ে ওঠে ১৯০৫ সালে। প্রথম দেশীয় ওষুধ নির্মাতা সংস্থা এটি। ক্রমশ বাড়তে থাকে উৎপাদন। ১৯৩১ সালে শুরু হয় গ্ল্যান্ড প্রোডাক্টের প্রস্তুতি, ১৯৩২ সালে ভিটামিন প্রস্তুতি।
আজও নতুন নতুন ওষুধের উৎপাদন বজায় রেখেছে এই প্রতিষ্ঠান। আমরা শুধু ইতিহাসের পাতাতেই পড়েছি এই প্রতিষ্ঠানের কথা। কিন্তু বেঙ্গল কেমিক্যালস তার দায়িত্ব ভোলেনি। বিধ্বস্ত পৃথিবীতে আজও মসীহা বেঙ্গল কেমিক্যালস।
তথ্য- সংগৃহীত।
১৯২৩ সাল, অর্থাৎ প্রায় এক শতাব্দী আগের কথা। ভারতের উত্তরবঙ্গ জুড়ে সে-বছর প্রবল বন্যা। লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া। তাদের সাহায্যের জন্য আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় তৈরি করলেন বেঙ্গল রিলিফ কমিটি। সামান্য চাঁদার অর্থে কিছুটা খাবার তারা তুলে দিতে পারছিল দুর্গত মানুষদের মুখে। কিন্তু এর মধ্যেই নতুন উপদ্রব শুরু করেছে কলেরা এবং টাইফয়েড। আক্রান্ত বহু মানুষ। সেইসব মরণাপন্ন রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করতে এগিয়ে এসেছিল বেঙ্গল কেমিক্যালস।
বর্তমানের দিকে তাকিয়ে দেখলেও, ছবিটা প্রায় একই। করোনা আক্রান্ত মানুষদের সাময়িক চিকিৎসার ব্যবস্থা হিসাবে হঠাৎ চাহিদা বেড়ে গিয়েছে হাইড্রক্সিক্লোরকুইন ওষুধটির। বাজারে যখন কাঁচামালেরই জোগান প্রায় নেই বললেই চলে, তখন এই বিপুল উৎপাদন সম্ভব হবে কী করে? আর সেই পরিকাঠামোই বা কোথায়?
এমন পরিস্থিতিতেই এগিয়ে এল বেঙ্গল কেমিক্যালস। ১২৮ বছর পেরিয়ে আজও দেশের দুর্দিনে সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে পারে এই সংস্থা। এই প্রথমবার তো নয়। দীর্ঘ ইতিহাসে বারবার এমন জরুরি পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসেছে বেঙ্গল কেমিক্যালস।
আবার খানিকটা পিছনের দিকে তাকানো যাক। ১৮৯৮ সাল। বেঙ্গল কেমিক্যালসের বয়স মাত্র ৬ বছর। তখন অবশ্য নাম ছিল ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল ওয়ার্ক’। তেমন বড় কারখানা কিছুই নেই, সামান্য ল্যাবরেটরিতে গবেষণার কাজ চলে। এর মধ্যেই কলকাতায় ছড়িয়ে পড়েছে প্লেগ। আক্রান্ত বহু মানুষ। আর প্লেগের হাত থেকে বাঁচার প্রথম শর্ত ঘর পরিষ্কার এবং কীটপতঙ্গ মুক্ত রাখা। কিন্তু স্যানিটেশনের যাবতীয় যা সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আসে তার দাম আকাশছোঁয়া। সেবারেও এগিয়ে এসেছিল বেঙ্গল কেমিক্যালস। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে তাঁরা তৈরি করেছিলেন ফিনাইল এবং ন্যাপথলিন বল।
শুধু দেশের সাধারণ মানুষ নয়, সরকারের দিকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। ১৯১৪ সাল, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের জন্য কিছু অ্যাসিড এবং রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োজন হয় ব্রিটিশ সরকারের। কিন্তু এতদিন এসব দ্রব্যের জন্য নির্ভর করা যেত জার্মানির উপর। এখন তো জার্মানি প্রতিপক্ষ দলে। তাহলে উপায়? উপায় সেই উপনিবেশের দেশীয় একটি কারখানা, বেঙ্গল কেমিক্যালস। যুদ্ধের যাবতীয় রাসায়নিক দ্রব্যের উৎপাদনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল এই প্রতিষ্ঠান।
সরকারও অবশ্য সেই উপকারের মর্যাদা রেখেছিল। যুদ্ধের পর কোম্পানির মূলধন বেড়েছিল প্রায় ২০ গুণ। সরকার অনেক সম্মানও দিয়েছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রকে। তবে বেঙ্গল কেমিক্যালসের চাহিদা হয়তো এসব কিছুই ছিল না। বরং জরুরি পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে থাকার যতটুকু সামর্থ্য তার আছে, সেটুকুই সম্পূর্ণ দিয়ে যেতে চায়। তাই তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আবার আহত সৈনিকদের জন্য ওষুধের ব্যবস্থা করতে এগিয়ে আসে এই প্রতিষ্ঠান। অগ্নিযুগের বিপ্লবীরাও সাহায্য পেয়েছেন নানা সময়।
১৮৯২ সালে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের উদ্যোগে সামান্য একটি ভেষজ গবেষণাগার হিসাবে আত্মপ্রকাশ বেঙ্গল কেমিক্যালসের। কালক্রমে একটি রাসায়নিক কারখানা হয়ে ওঠে ১৯০৫ সালে। প্রথম দেশীয় ওষুধ নির্মাতা সংস্থা এটি। ক্রমশ বাড়তে থাকে উৎপাদন। ১৯৩১ সালে শুরু হয় গ্ল্যান্ড প্রোডাক্টের প্রস্তুতি, ১৯৩২ সালে ভিটামিন প্রস্তুতি।
আজও নতুন নতুন ওষুধের উৎপাদন বজায় রেখেছে এই প্রতিষ্ঠান। আমরা শুধু ইতিহাসের পাতাতেই পড়েছি এই প্রতিষ্ঠানের কথা। কিন্তু বেঙ্গল কেমিক্যালস তার দায়িত্ব ভোলেনি। বিধ্বস্ত পৃথিবীতে আজও মসীহা বেঙ্গল কেমিক্যালস।
তথ্য- সংগৃহীত।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন