• মহাভারতের শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান

    মহাভারতে যে সময়ের এবং শহরগুলোর কথা বলা হয়েছে সেই শহরগুলোর বর্তমান অবস্থা কি, এবং ঠিক কোথায় এই শহরগুলো অবস্থিত সেটাই আমাদের আলোচনার বিষয়। আর এই আলোচনার তাগিদে আমরা যেমন অতীতের অনেক ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসবো, তেমনি বর্তমানের পরিস্থিতির আলোকে শহরগুলোর অবস্থা বিচার করবো। আশা করি পাঠকেরা জেনে সুখী হবেন যে, মহাভারতের শহরগুলো কোনো কল্পিত শহর ছিল না। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে সেই শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর।

  • মহাভারতেের উল্লেখিত প্রাচীন শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান ও নিদর্শনসমুহ - পর্ব ০২ ( তক্ষশীলা )

    তক্ষশীলা প্রাচীন ভারতের একটি শিক্ষা-নগরী । পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। তক্ষশীলার অবস্থান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল এবং পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে; যা গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে খুব কাছে। তক্ষশীলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৪৯ মিটার (১,৮০১ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবিভাগ পরবর্তী পাকিস্তান সৃষ্টির আগ পর্যন্ত এটি ভারতবর্ষের অর্ন্তগত ছিল।

  • প্রাচীন মন্দির ও শহর পরিচিতি (পর্ব-০৩)ঃ কৈলাশনাথ মন্দির ও ইলোরা গুহা

    ১৬ নাম্বার গুহা, যা কৈলাশ অথবা কৈলাশনাথ নামেও পরিচিত, যা অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে ইলোরা’র কেন্দ্র। এর ডিজাইনের জন্য একে কৈলাশ পর্বত নামে ডাকা হয়। যা শিবের বাসস্থান, দেখতে অনেকটা বহুতল মন্দিরের মত কিন্তু এটি একটিমাত্র পাথরকে কেটে তৈরী করা হয়েছে। যার আয়তন এথেন্সের পার্থেনন এর দ্বিগুণ। প্রধানত এই মন্দিরটি সাদা আস্তর দেয়া যাতে এর সাদৃশ্য কৈলাশ পর্বতের সাথে বজায় থাকে। এর আশাপ্সহ এলাকায় তিনটি স্থাপনা দেখা যায়। সকল শিব মন্দিরের ঐতিহ্য অনুসারে প্রধান মন্দিরের সম্মুখভাগে পবিত্র ষাঁড় “নন্দী” –র ছবি আছে।

  • কোণারক

    ১৯ বছর পর আজ সেই দিন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সোমবার দেবতার মূর্তির ‘আত্মা পরিবর্তন’ করা হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ‘নব-কলেবর’ নামের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হবে। পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে, পূজারীদের বিশ্বাস। এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে, যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে এটা তাঁরা দেখতে না পান। পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা পরিচালনা করেন পুরোহিতদের যে বংশ, নতুন বিগ্রহ তৈরী তাদেরই দায়িত্ব থাকে।

  • বৃন্দাবনের এই মন্দিরে আজও শোনা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মোহন-বাঁশির সুর

    বৃন্দাবনের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নিধিবন মন্দির। এই মন্দিরেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। যা আজও পর্যটকদের সমান ভাবে আকর্ষিত করে। নিধিবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য-ঘেরা সব গল্পের আদৌ কোনও সত্যভিত্তি আছে কিনা, তা জানা না গেলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাভূমিতে এসে আপনি মুগ্ধ হবেনই। চোখ টানবে মন্দিরের ভেতর অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্যে ভরা রাধা-কৃষ্ণের মুর্তি।

১৯ জুন ২০২০

মানব গোত্রের কথা

গোত্র শব্দটির অর্থ বংশ বা জন্মপরম্পরা বা গোষ্ঠীকে বুঝায়। সনাতন ধর্মে গোত্র মানে একই পিতার ঔরষজাত সন্তান সন্ততি সমূহ দ্বারা সৃষ্ট বংশ পরম্পরা। বৈদিক শাস্ত্র অনুসারে, একটি বংশের রক্ত প্রবাহিত হয় পুরুষ পরম্পরায়। সূতরাং, বংংশের রক্তের ধারক ও বাহক হলো পুরুষ।

  সনাতন ধর্মের বংশ রক্ষার ধারায় ছিলেন প্রথম সত্য যুগের শুরুতে ব্রহ্মার মানসখসন্তানদের মধ্যে অন্যতম ঋষিগণ। পরবর্তীতে অন্যান্য ঋষির বংশ পরম্পরাও পরিলক্ষত হয়। এই একেকজন ঋষির বংশ পরম্পরা তাঁদের নামে একেকটি গোত্র হিসেবে পরিচিত লাভ করে। সে হিসেবে একই গোত্রের বংশীয়গণ পরস্পর ভাইবোন। এমনকি একই বংশের স্বজনেরা পরবর্তীতে জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে, সাধন-ভজন, পরমেশ্বর ভগবানের বাণী প্রচারের প্রয়োজনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লে পিতার নামের সাথে গোত্র নামের গুরুত্ব প্রকাশ পায়। যেমন- ঋষি কশ্যপ মুনির বংশধরেরা নিজেদের “কাশ্যপ গোত্রস্য” বা কশ্যপ মুনির বংশ পরিচয় দিয়ে থাকেন।

এভাবে পর্যায়ক্রমে আরো অনেক গোত্রের নাম পাওয়া যায়। সনাতন ধর্মে প্রকট আছে, অহরহ যেসব গোত্র দেখা যায় তা হলো,

কাশ্যপ গোত্র,
ভরদ্বাজ গোত্র,
বশিষ্ট গোত্র,
বৃহস্পতি গোত্র,
বিশ্বামিত্র গোত্র,
জামদগ্ন্য গোত্র,
শিব গোত্র,
মৌদগল্য গোত্র,
ভার্গব গোত্র,
শান্ডিল্য গোত্র,
আলম্বায়ন গোত্র ইত্যাদি।


একই গোত্রের লোকজনকে সমগোত্র বলা হয়। সোজা কথা এরা পরস্পর নিকট-আত্মীয়। আর অন্যান্য গোত্রের লোক জনের সাথে তাঁরা পরস্পর আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ এই কারণে যে, আমরা সবাই প্রপিতামহ ব্রহ্মা থেকে এসেছি যদিও আমাদের আদি পিতা-মাতা যথাক্রমে মনু ও শতরূপা।

সমগোত্র:-

সমগোত্র মানে একই পিতৃ বংশ। যেমন কাশ্যপ গোত্র। মুনি কশ্যপ ঋষির বংশধর। ব্রহ্মার মানস পুত্রগণের থেকে আগত প্রতিটি বংশ এক একটি গোত্র বা রক্তের ধারায় প্রবাহিত। একই গোত্র চারটি বর্ণে থাকতে দেখা যায়। কারণ, একই ঋষির সন্তানরা একেক সময়ে একেক কাজে মনোযোগী হয়ে থাকে। যে শাস্ত্র অধ্যয়ণ বা বুদ্ধিভিত্তিক বা আধুনিক সমাজে যাকে বুদ্ধিজীবি বলা হয়, জীবিকা অবলম্বন করে সে ব্রাহ্মণ হিসেবে, রাজধর্ম পালনকারী ক্ষত্রিয়, ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোযোগী হলে সে বৈশ্য আর এসব পেশাগত লোকদের সেবা করেই সন্তুষ্ট অর্জনে আগ্রহীরা শুদ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে থাকে। এ গুণাবলী সমূহ কেউ জন্মে প্রাপ্ত হয় না, অর্জন করতে হয়।

তাই বর্নাশ্রম সঠিক কিন্তু বর্ণপ্রথা ভুল ও মিথ্যা যা ক্ষত্রিয় ধর্ম পালনে পুরোপুরি অপারগ রাজা বল্লাল সেন, তার রাজ অপকর্ম ঢাকতে শুরু করেছেন। ধার্মিক ও পন্ডিতদের অত্যাচার করে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করে। আর এটা পুরোপুরি কার্যকর করেছেন তারই পুত্র রাজা লক্ষ্মণ সেন।

অবশ্য বিষ্ণুপূরাণ ও ভবিষ্য পূরাণে উল্লেখিত অপকর্ম করার সাজা হিসেবে যথারীতি পরবর্তীতে শোচনীয় পরাজয় পুর্বক রাজ্য হারাতে হয়েছ তাকে! সনাতন ধর্মে নিকটাত্মীয় বা সমগোত্রে বিবাহ নিষিদ্ধ। কারণ হিসে
বে বৈদিক শাস্ত্রসমূহ বিশেষ করে মনুসংহিতায় বলা হচ্ছে, একই রক্তের সম্পর্কের কারো সাথে বিবাহ হলে সন্তান বিকলাঙ্গ, শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী, মেধা ও বুদ্ধিহীন হয়। শিশু নানা রোগে জরাজীর্ণ হয়ে থাকে। তবে একান্তই প্রয়োজন হলে, পাত্র-পাত্রী না পাওয়া গেলে ১৪ জ্ঞাতি-গোষ্ঠি পেরিয়ে গেলে তখন বিবাহ করা যেতে পারে। তবে তা যথাসম্ভব এড়িয়ে চললেই ভালো।

চিকিৎসা বিজ্ঞানও এটি স্বীকার করেছে। তারা বলছেন, নিকটাত্মীয় বা কাজিন যেমন, কাকাতো, মামাতো, মাসতুতো, পিসতুতো ভাই বোনদের মধ্যে বিয়ের পরিণামে যে সন্তান হয়, তার মধ্যে জন্মগত ত্রুটি দেখা দেয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। ‍”দ্য ল্যানসেট” সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা এ তথ্য জানিয়েছেন।

জয় বৈদিক সভ্যতার জয়


পরমকরুণাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী আর সকল বৈষ্ণব ভক্ত পার্ষদদের শ্রীচরণকমলে নিরন্তর প্রার্থনা করি, সকলের জীবন যেনো রাধা-কৃষ্ণময়তায় পূর্ণ হয়ে, মঙ্গলময়, কল্যাণময়, প্রেমময়, ভক্তিময়, মুক্তিময়, শান্তিময়, সুন্দরময় এবং আনন্দময় হয়ে ওঠে সর্বদা।
"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে!!"
!!জয় হোক সকল ভক্তদের!!
!!জয় শ্রীকৃষ্ণ!! জয় রাধে!!

Post: Debendra Biswas
Share:

'কৃষ্ণ' নামের ব্যুৎপত্তি

আমরা জানি, পরমেশ্বর ভগবানের অনন্ত নামের মধ্যে 'কৃষ্ণ' নামটি অতি উৎকৃষ্ট ও উৎফুল্ল জনক। এই নামটির উৎপত্তি সম্পর্কিত কিছু ইতিহাস খোঁজার চেষ্টা করা যাক। কৃষ্ণ নামের মধ্যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড লুকিয়ে আছে। কৃষ্ণ লিখতে হলে, প্রথমে ব লিখে কুন্ডলি দিয়ে ঋ দিয়ে ষ্ণ যোগ করতে হয়।

ক- এর প্রথম টানে ব্রহ্মা, দ্বিতীয় টানে বিষ্ণু, তৃতীয় টানে মহেশ্বর বিরাজ করেন। অর্থাৎ ব হয়ে গেলো। এবার কুন্ডলিনী হলেন রাধা।

ঋ- তে বিরাজ করেন যোগমায়া আর

ষ্ণ- তে বিরাজ করেন ত্রিভূবন, চন্দ্র, অরুন, বরুন , আদি ইত্যাদি।

এই তত্ত্বটি ধ্যান যোগে ঋষি গর্গাচার্য্য মুনি জানতে পেরেছিলেন তখন, যখন নামকরনের জন্য নন্দলাল ও যশোদা ঋষির কাছে গিয়েছিলেন। ঋষি ছিলেন একজন ত্রিকালদর্শী, কৃষ্ণ নামটি ইনি রেখেছিলেন।


সৌরমন্ডলে সূর্যের আকর্ষনে যেমন প্রতিটা গ্রহ বা উপগ্রহ আপন আপন কক্ষপথে ঘুরে চলেছে, তেমনি এই সমগ্র বিশ্বব্রহ্মান্ডকে যিনি নিজের দিকে আকর্ষন করে চলেছেন তিনি হলেন কৃষ্ণ। এই সমগ্র বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় আকর্ষন সত্তা হলেন এই কৃষ্ণ। যাঁর আকর্ষন শক্তি থেকে কেউ রেহাই পেতে পারে না। এই শব্দ থেকেই গতি, শক্তি, রতি ও প্রেমের উদয় হয়।

এখন প্রশ্ন আসে কিসের প্রেম গো! মা যশোমতির বাৎসল্য প্রেম। গোকুলের রাখালদের সখ্য প্রেম। আর ব্রজগোপীদের মধুর প্রেম। এই কৃষ্ণেই হলো ভগবান। এবার মিলিয়ে দেখা যাক বিষয়টি।

ভ- মানে ভূমি,
গ- মানে গগন,
ব- মানে বায়ু,
আ-মানে আগুন আর
ন- মানে নীর।

অর্থাৎ, ভগবান মানে ক্ষিতি-অপ-ত্বেজ-মরুৎ-ব্যোম। ভোগ ভোক্তাকে যিনি সমজ্ঞান করে রেখেছেন, তিনি ভগবান। এটা তো গেলো অন্তর্নীহিত অর্থ। বাহ্যিক অর্থ হলো, 'ভগ' শব্দটির অর্থ হলো ঐশ্বর্য্য, ধার্য্য, জ্ঞান, যশ, শ্রী ও বৈরাগ্য। আর 'বান' মানে অধিকারী। এই ছয় প্রকার সম্পদ যাঁর মধ্যে অনন্ত পরিমানে বিদ্যমান কেবল তিনি ভগবান। ইনি নিরাকার পরমব্রহ্ম। ইনি সব কারণের কারণ, ইনি অবিনাশী, ইনি স্বয়ম্ভু, বেদের মধ্যে ওঁ কার ইনি, জলের মধ্যে রস ইনি, সূর্যের মধ্যে তেজ ইনি, চন্দ্রের মধ্যে শোভা ইনি, একাদশ রুদ্রের মধ্যে ইনি, দ্বাদশ আদিত্যের মধ্যে ইনি, অষ্টবসুর মধ্যে ইনি, এই ঈশ্বর যুগে যুগে বিভিন্ন মানবীয় অবতারে পৃথিবীতে এসেছেন।

যিনি সব করতে পারেন, তিনি কি আর মানব হয়ে পৃথিবীতে আসতে পারেন না? অবশ্যযই পারেন! মা যোশদা কৃষ্ণের মুখের ভিতরে সৌর জগৎ, মহাকাশ, নিহারীকা অর্থাৎ সমস্ত বিশ্ব ব্রহ্মান্ড দর্শন করেছেন। ইনি প্রত্যেকটি জীবদেহেও আছেন। আমার মধ্যে ইনি আর সর্বজীবের মধ্যেও ইনি।

এখানে আমরা একটি বিষয় অবতারনা করতে পারি যে, তাহলে যে ব্যাক্তি অন্যায়, পাপাচার ইত্যাদি করছে, যে মানুষ অন্যকে কষ্ট দিচ্ছে তার মধ্যেও কি কৃষ্ণ আছেন? উত্তর হবে, অবশ্যই আছেন। তবে কারো কর্মের উপর ঈশ্বরের কোনো দ্বায় বা অধিকার নেই। এই সব আমরা করে থাকি যোগমায়ার প্রভাব দ্বারা। যোগ মায়ার সাহায্য না নিলে এই পৃথিবীটাকে ঈশ্বর নাট্য মঞ্চ বানাতে পারবেন না।

সব থেকে পরম সত্য হলো যে, আমরা মাতৃগর্ভে কৃষ্ণকে দর্শন করেছি। যখনই পৃথিবীতে এলাম সঙ্গে সঙ্গে যোগমায়া আমাদের চোখে একটি পর্দা দিয়ে দিলেন। গোবিন্দকে দেখতে না পেয়ে আমরা কেঁন্দে উঠলাম। সঙ্গে সঙ্গে মা আমাদের পৃথিবীর অমৃত মুখে তুলে দিলেন। ধীরে ধীরে বড় হলাম। মা পরিচয় করে দিয়ে বললেন, 'এই হলো তোর বাবা, দাদা, কাকা, মামা ইত্যাদি।' কিন্তু আজ পর্যন্ত মা আমাদের পরম আত্মীয় দীনবন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করে দেননি। দিনের শেষে যাকে আমাদের প্রয়োজন। ধীরে ধীরে পার্থিব জগতে আকৃষ্ট হয়ে পড়লাম। অন্তরে বিরাজিত গোবিন্দকে ভুলে গেলাম।

কৃষ্ণ কিন্তু যোগমায়ার অধিন নন। যোগমায়াকে কৃষ্ণের অধিনে থাকতে হয়। এনার শক্তির উপরে কেউ নয়। রুক্মিণীদেবীকে যখন আনতে যায়, তখন রুক্মিনী দেবীর ভাই রুক্মী কৃষ্ণের সঙ্গে যুদ্ধ করলেন। রুক্মী ছাড়লেন ব্রহ্মাস্ত্র। ব্রহ্মাস্ত্র কৃষ্ণকে প্রনাম করে চলে গেলেন।

 সুভদ্রা কেঁন্দে কেঁন্দে কৃষ্ণকে বলছেন, "দাদা তুমি তো অন্তর্যামী, তুমি জানতে যে অভিমণ্যু যুদ্ধে মারা যাবে, তাহলে তাকে বাচালে না কেনো?"

কৃষ্ণ বললেন, "আমাকেও বিধির বিধান মেনে চলতে হয়।"

গুরু দ্রোন একবার ভীষ্মকে বলছেন যে, কাল শ্রীকৃষ্ণ আসছেন শান্তিরদূত হয়ে। তিনিই এই যুদ্ধটা রুখতে পারবেন। পিতামহ ভীষ্ম বলছেন, "কৃষ্ণকে বুঝবার মতো বিশ্ব-ব্রহ্মান্ডে কেই নেই। তিনি আশা-নিরাশা, সত্য-অসত্য, ধর্ম-অধর্ম এই সব কিছুর উপরে।

রাধা কৃষ্ণকে বলছেন, "তুমি তো ভক্তের দাস। তাহলে তুমি কথা দাও আমাকে ছেড়ে কো
নোদিন যাবে না।"

কৃষ্ণ দেখলেন যে, তাঁর তো এখনো অনেক কাজ বাকি। কংস বধ, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ, কালযবন বধ, মুর দৈত্য বধ, জরাসন্ধের সঙ্গে যুদ্ধ এই কাজগুলো সবই বাকি। কৃষ্ণ রাধিকাকে বললেন, "ঠিক আছে তুমি যখন যেতে বলবে তখনই যাবো।"

কৃষ্ণ বাকি দেবতাদের স্মরন করলেন। তাঁরা এসে রাধাকে বোঝালেন যেনো এভাবে কৃষ্ণকে ধরে না রাখে। এরফলে রাধা অনুমতি দেয় কৃষ্ণকে যেতে।

শ্রীকৃষ্ণের অনন্তকোটি লীলা। ব্যাসদেবও যা লিখে শেষ করতে পারেন নি। আর আমরা তো অতি অজ্ঞ নগন্য মাত্র।

। জয় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।

  পরমকরুনাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান, পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী আর সকল বৈষ্ণব ভক্ত পার্ষদদের শ্রীচরণকমলে নিরন্তর প্রার্থনা করি, সকলের জীবন যেনো রাধাকৃষ্ণময়তায় পূর্ণ হয়ে, মঙ্গলময়, কল্যাণময়, প্রেমময়, ভক্তিময়, মুক্তিময়, শান্তিময়, সুন্দরময় এবং আনন্দময় হয়ে ওঠে সর্বদা।
"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে!!"
!!জয় হোক সকল ভক্তদের!!
!!জয় শ্রীকৃষ্ণ!! জয় রাধে!!

Post: Debendra Biswas
Share:

গীতার ১৮টি গুহ্যনাম মাহাত্ম

আমরা শ্রীমদ্ভগবদ গীতা পাঠ শেষে, গীতার মাহাত্ম কিছুটা হলেও পাঠ করে থাকি। এই মাহাত্মে দুটো শ্লোক আছে, যা গীতার গুহ্যনাম।

"গঙ্গা গীতা চ সাবিত্রী সীতা সত্যা পতিব্রতা।
ব্রহ্মা বলির্ব্রহ্মবিদ্যা ত্রিসন্ধ্যা মুক্তিগেহিনী।।
অর্ধমাত্রা চিদানন্দা ভবগ্নী ভ্রান্তিনাশিনী।
বেদত্রয়ী পরানন্দা তত্ত্বার্থ জ্ঞানমঞ্জরী।।"

এই শ্লোকদ্বয়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে শ্রীগীতার আঠারটি নাম, যা গীতার গুহ্যনাম হিসেবে পরিচিত। অনেকেই জানেনা, এই আঠারটি গুহ্যনামের মহাত্ম। বন্ধুদের জ্ঞাতার্থে সেই গুহ্যনাম মাহাত্ম উল্ল্যেখ করার চেষ্টা করছি।

০১) গঙ্গা:- এর অর্থ হলো, গঙ্গায় ডুব দিলে কোনো ব্যাক্তি তার সকল পাপ নাশ করতে পারে। তাই সবার প্রথমে গঙ্গার নাম নেয়া হয়।

০২) গীতা:- যে ব্যাক্তি গীতাপাঠ করে, সেই মুহুর্তেই তার সকল পাপ নাশ হয়। তাই এখানে গীতার কথা বলা হয়েছে।

০৩) সাবিত্রী:- তিনি এতোটাই সতী ছিলেন যে, সে তাঁর মৃত স্বামীর প্রান ফিরিয়ে এনেছিলেন। তাই এখানে সাবিত্রীর নাম বলা হয়েছে।

০৪) সীতা:- ভগবান রামের স্ত্রী,মাতা সীতা এতোটাই পবিত্র ছিলেন যে, রাবণ শত চেষ্টার পরেও তা নষ্ট করতে পারে নি। তাই সীতা নাম মহাপবিত্র বলা হয়।

০৫) সত্যা:- সত্যা বলতে আমাদের আত্মার কথা বলা হয়েছে। আত্মা যেমন অমর গীতাও তেমনি অমর।

০৬) পতিব্রতা:- পতিব্রতা বলতে ভগবানের প্রতি আনুগত্য থাকা। কারন একমাত্র ভগবান পুরুষ, আর সবই প্রকৃতি। অর্থাৎ তিনি সকলের পতি আর আমরা সকলেই তাঁর পত্নী।

০৭) ব্রহ্মাবলী:- ব্রহ্মশক্তী থেকে নির্গত শক্তীকে বলা হয় ব্রহ্মাবলী। যা অবিনশ্বর, যে শক্তির বিনাশ নেই।

০৮) ব্রহ্মবিদ্যা:- ব্রহ্মবিদ্যাকে আমরা ব্রহ্মাবলীর অনুরুপ বলতে পারি।

০৯) ত্রিসন্ধ্যা:- ত্রিসন্ধ্যা মানে হলো তিন কালের সমষ্ঠী। যথা, ইহকাল, বর্তমান কাল ও পরকাল।

১০) মুক্তিগেহিনী:- গীতা পাঠ করলেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই গীতা মুক্তির স্বরুপ হিসেবে এই নাম ব্যবহার করা হয়েছে।

১১) অর্ধমাত্রা:- গীতায় ভগবান বলেছেন, গীতা তাঁর অর্ধক, যার আশ্রয়ে তিনি এ বিশ্বব্রহ্মান্ড নিয়ন্ত্রন করেন। তাই এই অর্থ ব্যবহার করা হয়েছে।

১২) চিদানন্দা:- চিৎ বা জ্ঞান জগতের যে আনন্দ তাই চিদানন্দা।

১৩) ভবগ্নী:- অগ্নি যেমন সোনাকে পুড়িয়ে খাঁটি সোনায় পরিবর্তন করে। ঠিক তেমনি গীতাই পারে আমাদের ভব সংসারের সকল পাপ দুর করতে।

১৪) ভ্রান্তিনাশিনী:- আমরা আমাদের চারপাশের জিনিস দেখে, মায়ার প্রভাবে বিভ্রান্ত হই। আর একমাত্র গীতাই পারে আমাদের এই ভ্রান্তি নাশ করতে।

১৫) বেদত্রয়ী:- ত্রিবেদের সমন্বয়ে গঠীত শক্তিই হলো বেদত্রই।

১৬) পরানন্দা:- অপরের দোষ না দেখে, তার ভাল দিক দেখার মধ্যে যে আনন্দ। গীতায় তার কথাই বলা হয়েছে।

১৭) তত্ত্বার্থ:- গীতা পৃথিবীর তত্ত্ব ও তথ্য সমৃদ্ধ সকল জ্ঞান তথা বিজ্ঞানের আধার।

১৮) জ্ঞানমঞ্জরী:- একজন মানুষ বা জীবন জগতের জন্য যে সকল জ্ঞানের প্রয়োজন, তার সকল কিছুই গীতায় মঞ্জুরীকৃত আছে। তাই শ্রীগীতা জ্ঞানমঞ্জরী।


 এই হলো শ্রীমদ্ভগবদ গীতার আঠারটি গুহ্যনামের সংক্ষিপ্ত মাহাত্ম। আশাকরি কৌতুহলী ভক্ত পাঠকেরা বিষয়টি জেনে ও অন্যকে জানিয়ে আনন্দিত হবে।

।জয় শ্রীমদ্ভগবদ গীতার জয়।

.
# পরমকরুণাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী আর সকল বৈষ্ণব ভক্ত পার্যদদের শ্রীচরণে নিবেদন, সকলের জীবন শ্রীগীতার আদর্শে মঙ্গলময়, কল্যানময়, প্রেমময়, ভক্তিময়, মুক্তিময়, শান্তিময়, সুন্দরময় এবং আনন্দময় করে রাখুন সর্বক্ষণ।(দেবেন্দ্র)
"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে!!"
!!জয় হোক সকল ভক্তদের!!
!!জয় শ্রীকৃষ্ণ!! জয় রাধে!!

Post: Debendra Biswas
Share:

নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র, ধারাবাহিক পর্বঃ- ৬০-৬১

ধারাবাহিক পর্বঃ- ৬১



নির্বাণ কথাটির অর্থ হচ্ছে জড় জীবনের সমাপ্তি।এই জড় জীবনের সমাপ্তি হবার পরে আমাদের প্রকৃত জীবন শুরু হয়। এই জড়-জাগতিক জীবনধারা পরিসমাপ্ত করতে হবে, সেই কথাটি জানাই স্থূল জড়বাদীর পক্ষে যথেষ্ট, কিন্তু যিনি পারমার্থিক জ্ঞান অর্জন করেছেন তিনি জানেন যে, এই জড় জীবনের পরেও আর একটি জীবন আছে। এই জীবনের পরিসমাপ্তির পূর্বে, সৌভাগ্যক্রমে কেউ যদি কৃষ্ণভাবনাময় হয়, তবে সে তৎক্ষণাৎ ব্রহ্মনির্বাণ স্তর লাভ করে। ভগবৎ-ধাম ও ভগবৎসেবার মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই যেহেতু উভয়ই চিন্ময়, তাই ভক্তিযোগে ভগবানের অপ্রাকৃত প্রেমময়ী সেবায় নিয়োজিত হওয়াই হচ্ছে ভগবৎ-ধাম প্রাপ্তি। জড় জগতের সমস্ত কর্মই ইন্দ্রিয়-তৃপ্তির জন্য সাধিত হয়, কিন্তু চিন্ময় জগতের সমস্ত কর্মই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবার জন্য সাধিত হয়। এমন কি এই জীবনে কৃষ্ণভাবনায় উদ্বুদ্ধ হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্রহ্মপ্রাপ্তি হয় এবং যিনি কৃষ্ণভাবনায় মগ্ন, তিনি নিঃসন্দেহে ইতিমধ্যেই ভগবৎ-ধামে প্রবেশ করেছেন। ব্রহ্ম হচ্ছে জড় বস্তুর ঠিক বিপরীত। ব্রাহ্মী স্থিতি বলতে বোঝায় 'জড়-জাগতিক স্তরের অতীত'। ভক্তিযোগে ভগবানের সেবা নিবেদনকে ভগবদগীতায় মুক্ত স্তররূপে স্বীকার করা হয়েছে (স গুনান্ সমতীত্যৈতান্ ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে)। তাই, জড় বন্ধন থেকে মুক্তিই হচ্ছে ব্রাহ্মী স্থিতি। এই ব্রাহ্মী স্থিতি সম্পর্কে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-

এষা ব্রাহ্মী স্থিতিঃ পার্থ নৈনাং প্রাপ্য বিমুহ্যতি ।
স্থিত্বাস্যামন্তকালেহপি ব্রহ্মনির্বাণমৃচ্ছতি।

অর্থাৎ যিনি ব্রাহ্মীস্থিতি লাভ করেন, তিনি মোহপ্রাপ্ত হন না। জীবনের অন্তিম সময়ে এই স্থিতি লাভ করে, তিনি এই জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে ভগবৎ-ধামে প্রবেশ করেন।



ধারাবাহিক পর্বঃ- ৬০

নিষ্কাম হওয়ার অর্থ হচ্ছে নিজের ইন্দ্রিয়-তৃপ্তির জন্য কোন কিছু কামনা না করা। পক্ষান্তরে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সেবা করার কামনাই হচ্ছে নিষ্কামনা। এই জড় দেহটিকে বৃথাই আমাদের প্রকৃত সত্তা বলে না ভেবে এবং জগতের কোনও কিছুর উপরে বৃথা মালিকানা দাবি না করে, শ্রীকৃষ্ণের নিত্যদাস রূপে নিজের যথার্থ স্বরূপ উপলব্ধি করাটাই হচ্ছে কৃষ্ণভাবনার পরিশুদ্ধ পর্যায়। এই পরিশুদ্ধ পর্যায়ে যে উন্নীত হতে পারে, সে বুঝতে পারে, যেহেতু শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন সব কিছুর অধীশ্বর, তাই তাঁকে সন্তুষ্ট করবার জন্য সব কিছুই তাঁর সেবায় উৎসর্গ করা উচিত। কুরুক্ষেত্র-যুদ্ধের প্রারম্ভে অর্জুন নিজের ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করতে নারাজ হয়েছিলেন, কিন্তু ভগবানের কৃপার ফলে তিনি যখন পরিপূর্ণভাবে কৃষ্ণভাবনাময় হলেন, তখন ভগবানের ইচ্ছা অনুসারে তিনি যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হলেন।

নিজের জন্য যুদ্ধ করার ইচ্ছা অর্জুনের ছিল না, কিন্তু ভগবানের ইচ্ছার কথা জেনে সেই একই অর্জুন যথাসাধ্য বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। ভগবানকে সন্তুষ্ট করার বাসনাই হচ্ছে বাসনা রহিত হওয়ার একমাত্র উপায়। কোন রকম কৃত্রিম উপায়ে কামনা-বাসনাগুলিকে জয় করা যায় না। জীব কখনই ইন্দ্রিয়ানুভূতিশূন্য অথবা বাসনা রহিত হতে পারে না। তবে ইন্দ্রিয়ানুভুতি ও কামনাবাসনার বন্ধন থেকে মুক্ত হবার জন্য সে তাদের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারে। জড়-জাগতিক বাসনাসূন্য মানুষ অবশ্যই বোঝেন যে, সব কিছুই শ্রীকৃষ্ণের (ঈশা
বাস্যমিদং সর্বম্) এবং সেই জন্য তিনি কোন কিছুর উপরেই মালিকানা দাবি করেন না। এই পারমার্থিক জ্ঞান আত্মউপলব্ধির উপর প্রতিষ্ঠিত । অর্থাৎ, তাখন যথাযথভাবে বোঝা যায় যে, চিন্ময় স্বরূপে প্রত্যেকটি জীব শ্রীকৃষ্ণের নিত্য অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং তাই জীবের নিত্য স্থিতি কখনই শ্রীকৃষ্ণের সমকক্ষ বা তাঁর চেয়ে বড় নয়। কৃষ্ণভাবনামৃতের এই সত্য উপলব্ধি করাই হচ্ছে প্রকৃত শান্তি লাভের মূল নীতি।

সর্বশেষ মনুষ্য জাতিকে উদ্দেশ্য করে শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ- বিহায় কামান্ যঃ সর্বান্ পুমাংশ্চরতি নিঃস্পৃহঃ। নির্মমো নিরহঙ্কারঃ স শান্তিমধিগচ্ছতি।

অর্থাৎ যে ব্যক্তি সমস্ত কামনা-বাসনা পরিত্যাগ করে জড় বিষয়ের প্রতি নিঃস্পৃহ, নিরহঙ্কার ও মমত্ত্ববোধ রহিত হয়ে বিচরণ করেন, তিনিই প্রকৃত শান্তি লাভ করে।

Courtesy by: Bappy Kuri
Share:

নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র, ধারাবাহিক পর্বঃ- ৬2


সনাতন ধর্ম এবং দেবীরূপে মা জননী।
নারীর পূর্ণতা মাতৃরূপে। মা হচ্ছেন একজন পূর্ণাঙ্গ নারী। সন্তান লাভের পর নারী তাঁর রমণীমূর্তি পরিত্যাগ করে মহীয়সী মাতৃরূপ ধারণ করেন। তাই মা হচ্ছে একজন পূর্ণাঙ্গ মহামানব। মায়ের এর থেকে বৃহৎ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হতে পারে না। এজন্য ধর্ম, নীতিশাস্ত্র, সাধনার উচ্চ মার্গ থেকে শুরু করে জ্ঞানে, ধ্যানে সব সময় জুড়ে থাকে, ঘিরে থাকে মা। মা-ই জগত, মা-ই জীবন।

পুরুষতান্ত্রিক যে সমাজে নারীনির্যাতন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার, নারীকে যথেচ্ছা সম্ভোগ, প্রহার বা তাড়িয়ে দেওয়ার বিধানও যে সমাজ অনুমোদন করে, সেই সমাজ যে ক্রমেই বিনাশপ্রাপ্ত হবে। আর তাই বিশ্বের প্রতিটি নারীর ব্যক্তিগত জীবনের সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও সর্বাঙ্গীন মঙ্গলের লক্ষ্যে, নারীর অপমান ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে মহর্ষি মনু দৃপ্ত বাণী উচ্চারণ করেছেন। সেজন্য অনেকের কাছে মনুকে বরং কট্টর নারীবাদী বলে মনে হতে পারে কিন্তু না; পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর সম্মান সুনিশ্চিত করতে তার এমন প্রচেষ্টা। তিনি পুরুষতান্ত্রিক বা নারীবাদী কোনটাই নন, তিনি হলেন মানবতাবাদী।
সনাতন ধর্মে মা এর স্থান সর্বোচ্চ। তাই কমবেশি সব গ্রন্থে তুলে ধরলেও নারী রূপিণী মা সম্পর্কে বৈদিক শাস্ত্রীয় গ্রন্থগুলোর মধ্যে মনুসংহিতা অন্যতম। যেমন-

★ হে জননী তোমার শ্রী চরণে শতকোটি প্রণাম জানাই-

যত্র নার্য্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ।
যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ।। (মনুসংহিতা ৩/৫৬) অর্থাৎ“যে সমাজে নারীদের যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা হয় সেই সমাজ উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি লাভ করে। আর যারা নারীদের যোগ্য সম্মান করে না, তারা যতই মহৎ কর্ম করুক না কেন, তার সবই নিষ্ফল হয়ে যায়।”

★ হে জননী তোমার শ্রদ্ধা-সম্মান সবার উপর-

যে বংশে ভগিনী ও গৃহস্থের স্ত্রী কিংবা মা (নারীকূল) পুরুষদের কৃতকর্মের জন্য দুঃখিনী হয়, সেই বংশ অতি শীঘ্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আর যে বংশে স্ত্রীলোকেরা সন্তুষ্ট থাকে, সেই বংশ নিশ্চিতভাবেই শ্রীবৃদ্ধি লাভ করে”। (মনুসংহিতা ৩/৫৭)। অর্থাৎ“যে সমাজে নারীদের যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা হয় সেই সমাজ উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি লাভ হবে। আর তাই উচ্চ কন্ঠে বলতে চাই-

হে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ- "সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে" কথাটা বলার পূর্বে একবার নিজের অবস্থান এবং দায়িত্ব কতটুকু রক্ষা করতে পারলেন স্বয়ং বিচার করুন।

★ হে জননী তুমি দেবী রূপে মা লক্ষ্মী -

সন্তান প্রসবিনী মাকে গৃহলক্ষ্মী সম্মানে অভিহিত করে মাতৃ-গৌরব তাৎপর্য মনু স্মৃতিতে এভাবে প্রকাশ পাই-
“উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য্য আচায্যাণাং শতং পিতা।
সহস্রন্তু পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে।।” (মনু,২/১৪৫)
অর্থাৎ দশজন উপাধ্যায় (ব্রাহ্মণ) অপেক্ষা একজন ‘আচার্যের গৌরব অধিক। আবার একশত আচার্যের গৌরব অপেক্ষা একজন পিতার গৌরব অধিকতর। সর্বোপরি, সহস্র পিতা অপেক্ষা মাতা সম্মানার্হ অধিক গুরুত্ব।

★ হে জননী তুমি মনুষ্য জাতির বাহক ও এই বিশ্বসংসারের শ্রী-

মা সন্তান প্রসব ও পালন করে থাকে এবং নতুন প্রজন্ম বা উত্তরসুরির জন্ম দেয়। তাঁরা গৃহের দীপ্তি বা প্রকাশস্বরূপ। তারা সৌভাগ্য ও আশীর্বাদ বয়ে আনে। তাই মা হলেন গৃহের সবচেয়ে বড় শ্রী।” (মনুসংহিতা ৯/২৬)

★ হে জননী তুমি সংসার ধর্মের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র-

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মোন্তরে মা সকল সুখের মূল। কারণ, সন্তান উৎপাদন, ধর্ম পালন, পরিবারের পরিচর্যা, দাম্পত্য শান্তি এসব কাজ নারীদের দ্বারাই সবচেয়ে বেশি সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়।” (মনুসংহিতা ৯/২৮)

★ হে জননী তোমার পাদতলে জগতের সকল সন্তানের
বিশ্বব্রহ্মাণ্ড-

হ্যাঁ, সনাতন ধর্মে মা কে এতটাই মর্যাদা দেওয়া হয়েছে যেটি আমরা বুঝতে পারি যখন সিদ্ধিদাতা গনেশ কে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড পরিক্রম করে আসতে বলা হয় তখন সে তাঁর মা দুর্গা'কে তিনবার পরিক্রম করে মায়ের চরণে প্রণাম করে বলে, আমার বিশ্বব্রহ্মাণ্ড পরিক্রম করা শেষ হয়েছে। আমার কাছে আমার মায়ের চরণতলই আমার বিশ্বব্রহ্মাণ্ড।

★ সর্বশেষ এই জগতের সকল মা কে নিয়ে আমার অনুভূতি - “জগতের সকল সন্তানের কাছে
নিজের মা হলেন একজন দৃশ্যমান মা দুর্গা।”

ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক জগতের সকল মা।

Courtesy by: Bappy Kuri
Share:

নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র, ধারাবাহিক পর্বঃ- ৬৩


দেহ প্রতিপালন করার জন্য মানুষকে কর্তব্যকর্ম করতে হয়। জড়জাগতিক প্রবৃত্তিগুলিকে শুদ্ধ না করে, নিজের খেয়ালখুশি মতো কর্তব্যককর্ম ত্যাগ করা উচিত নয়। এই জড় জগতের প্রতত্যেকেরই নিশ্চয় জড়া প্রকৃতির ওপর কর্তৃত্ব কুলষময় প্রবৃত্তি আছে, এখানে কুলষময় প্রবৃত্তি বলতে ইন্দ্রিয়-তৃপ্তির বাসনা রয়েছে এমন। সেই কুলষময় প্রবৃত্তিগুলিকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। শাস্ত্র-নির্দেশিত উপায়ে তা না করে কর্তব্যকর্ম ত্যাগ করে এবং শুধু অন্যের সেবার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে তথাকথিত অতীন্দ্রিয়বাদী যোগী হবার চেষ্টা করা কখনই উচিত নয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-

নিয়তং কুরু কর্ম ত্বং কর্ম জ্যায়ো হ্যকর্মণঃ ।
শরীরযাত্রাপি চ তে ন প্রসিদ্ধ্যেদকর্মণ॥
অর্থাৎ শাস্ত্রোক্ত কর্মের অনুষ্ঠান কর, কেন না কর্মত্যাগ থেকে কর্মের অনুষ্ঠান শ্রেয়। কর্ম না করে কেউ দেহযাত্রাও নির্বাহ করতে পারে না। তুমি যদি ব্রাহ্মণ হওয়ার সবকয়টি জ্ঞান স্তর অর্জন করে কর্মে প্রয়োগ করতে সক্ষম হয় তখন বুঝতে হবে তোমার কর্ম ও জ্ঞানের মাধ্যমে তুমি ব্রাহ্মণত্ব লাভ করেছ। আর তখন গুরু দায়িত্ব হবে মন, ইন্দ্রিয়কে নিগ্রহ ও
বশে রেখে,
গীতা, বেদ-শাস্ত্রাদি জ্ঞান সম্পাদন করে সেই ধর্মজ্ঞান মনুষ্যকুলে প্রচার করা। এভাবে ক্ষত্রিয়, বৈশ, ও শুদ্রের স্ব স্ব শাস্ত্রোক্ত কর্ম করা উচিত।

কুরুক্ষেত্রে কৌরব এবং পান্ডবদের মধ্যকার সংগঠিত যুদ্ধের শুরুতে অর্জুন এক পর্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে আত্মীয় স্বজন বধ করার মত কাজে লিপ্ত হয়ে যুদ্ধ করা তার পক্ষে সম্ভব না। তখন শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-

অর্জুন, তুমি গৃহস্থ এবং সেনাপতি, তাই শাস্ত্র নির্ধারিত গৃহস্থ ক্ষত্রিয়ের ধর্ম পালন করাই তোমার কর্তব্য। কারণ শাস্ত্রোক্ত এই ধর্ম পালন করার মাধ্যমে জড়-বন্ধনে আবদ্ধ মানুষের মন পবিত্র হয় এবং ফলে সে জড়-বন্ধন থেকে মুক্ত হয়। তথাকথিত ত্যাগীরা, যারা দেহ প্রতিপালন করবার জন্যই ত্যাগের অভিনয় করে, ভগবান তাদের কোন রকম স্বীকৃতি দেননি, শাস্ত্রও তাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তাই তুমি যদ্ধ কর। তোমার এই যুদ্ধকরাটাই হবে তোমার শাস্ত্রোক্ত কর্ম, যেটি ক্ষত্রিয়ের ধর্ম।


সারমর্মঃ- সর্বশেষ আমরা এইতুটু বুঝতে পারি যে আমাদের শাস্ত্রোক্ত কর্ম করা উচিত। কর্মের মাধ্যমে আমাদের বর্ণ নির্ধারণ হবে, জন্মের মাধ্যমে নয় এবং সেই বর্ণই পথ দেখিয়ে দিবে শাস্ত্রে আমাদের জন্য কোন কর্মযজ্ঞ নির্ধারণ করা হয়েছে।


Courtesy by: Bappy Kuri
Share:

নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র, ধারাবাহিক পর্বঃ- ৬৫-৬৪

ধারাবাহিক পর্বঃ- ৬৫

দেবান্ ভাবয়তানেন তে দেবা ভাবয়ন্ত্ত বঃ ।
পরস্পরং ভাবয়ন্তঃ শ্রেয়ঃ পরমবাপ্স্যথ।।

যজ্ঞ দ্বারা তোমারা দেবগণকে (ঘৃতপ্রদানে) সংবর্ধনা কর, সেই দেবগণও (বৃষ্ট্যাদি দ্বারা) তোমাদিগকে সংবর্ধিত করুন; এই রূপে পরস্পরের সংবর্ধনা দ্বারা পরম মঙ্গল লাভ করিবে।


ভগবান জড় জগতের দেখাশোনার ভার ন্যস্ত করেছেন বিভিন্ন দেব-দেবীর উপর। এই জড় জগতের প্রতিটি জীবের জীবন ধারনের জন্য আলো, বাতাস, জল আদির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। ভগবানের তাই এই সমস্ত অকাতরে দান করেছেন এবং এই সমস্ত বিভিন্ন শক্তির তত্ত্বাবধান করার ভার তিনি দিয়েছেন বিভিন্ন দেব-দেবীর উপর, যাঁরা হচ্ছেন তাঁর দেহের বিভিন্ন অংশস্বরূপ। এই সমস্ত দেবদেবীর প্রসন্নতা ও অপ্রসন্নতা নির্ভর করে মানুষের যজ্ঞ অনুষ্টান করার উপর। ভিন্ন ভিন্ন যজ্ঞ ভিন্ন ভিন্ন দেব-দেবীর তুষ্টি সাধনের জন্য অনুষ্টিত হয়। সর্বোপরি আমরা আমাদের কর্ম-যজ্ঞে দেব দেবীর আরাধনা ও সন্তুষ্টির মাধ্যমে পরম মঙ্গল লাভ করতে পারি। যেমন শক্তি রূপে মা দুর্গা, বিদ্যা রূপে মা সরস্বতী এবং ধনসম্পদে মা লক্ষ্মী পূজিত হয়।

ধারাবাহিক পর্বঃ- ৬৪

সাধু সাবধান! গুরু গুরুর আসনে পূজিত হবে, গুরুকে ভগবানের আসনে নয়। চোখ খুলে ধর্ম করুন, অন্ধ বিশ্বাসে নয়।

♣ আচ্ছা, বলুনতো একজন সৎ গুরুকে আপনি কিভাবে চিনবেন?

♣ একজন সৎ গুরু তাঁর প্রাণ প্রিয় শিষ্যদের কিভাবে দিকনির্দেশনা দিবে?

♣ একজন সৎ গুরু কি নিজেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিজকে ভগবানের আসনে বসিয়ে পূজিত হতে পারে?

গুরু=( 'গু'+ 'রু')।।
♦'গু' শব্দের অর্থ অজ্ঞানের অন্ধকার যার মধ্যে জীবজগত নিমজ্জমান।
♦'রু ' শব্দের অর্থ হলো জ্ঞানের আলো যা আমাদের অজ্ঞানের জগত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় জ্ঞানের আলোর জগতে।

সুতরাং গুরু হলেন সেই ব্যক্তিত্ব যিনি আমাদের ভিতরকার অজ্ঞানের অন্ধকার নাশ করে আমাদের মধ্যে শক্তিসঞ্চার করে এগিয়ে দেন মহা জীবনের পথে। সহজ বাংলায় সঠিক জীবন ও সাত্ত্বিক ধর্ম পালনের মাধ্যমে ভগবানের চরণাশ্রিত হওয়ার জন্য যিনি দিক নির্দেশনা দেয় (আধ্যাত্মিক জগতের পথ প্রদর্শক) তিনিই গুরু হিসেবে শিষ্যদের কাছে অখ্যায়িত।

ব্যক্তিগতভাবে খেয়াল করে দেখলাম যে, আমাদের সমাজে কিছু গুরু ও শিষ্যদের ধর্ম চর্চা যেন তাদের একটা নিজস্ব নিয়মে পরিচালিত। যেখানে ধর্ম সভা মানে গুরুর লেখা কিছু ভক্তিমূলক গান ও কিছু সাজানো নিয়মকানুন পালন, পাশাপাশি শিষ্যের লেখা গুরুর গান নিয়ে সাজানো টোটাল একটি প্যাকেজ। কথাটা অপ্রিয় হলেও সত্য যে তাদের ধর্ম সভায় না হয় গীতার আলোচনা, না হয় ভাগবতের আলোচনা কিংবা সঠিক ভাবে হরিনাম সংকীত্তন।

এবার আসুন শ্রীমদ্ভবদ্গীতায় দশম অধ্যায় 'বিভূতিযোগের' ৮, ৯, ১০, ১১ নং শ্লোকে ভাগবান শ্রীকৃষ্ণ কি বলেছেন- (শুধু অনুবাদ তুলে ধরলাম)

#শ্লোক ০৮ এর অনুবাদঃ
আমি জড় ও চেতন জগতের সব কিছুর উৎস। সব কিছু আমার থেকেই প্রবর্তিত হয়। সেই তত্ত্ব অবগত হয়ে পণ্ডিতগণ শুদ্ধ ভক্তি সহকারে আমার ভজনা করে।

#শ্লোক ০৯ এর অনুবাদঃ
যাঁদের চিত্ত ও প্র্রাণ সম্পূর্ণরূপে আমাতে সমর্পিত, তাঁরা পরস্পরের মধ্যে আমার কথা সর্বদাই আলাচনা করে এবং আমার সম্বন্ধে পরস্পরকে বুঝিয়ে পরম সন্তোষ ও অপ্রাকৃত আনন্দ লাভ করেন।

#শ্লোক ১০ এর অনুবাদঃ
আমার ভজনা করে নিত্যযুক্ত, আমি তাঁদের শুদ্ধ জ্ঞানজনিত বুদ্ধিযোগ দান করি, যার দ্বারা তাঁরা আমার কাছে ফিরে আসতে পারেন।

#শ্লোক ১১ এর অনুবাদঃ
তাঁদের প্রতি অনুগ্রহ করার জন্য আমি তাঁদের হৃদয়ে অবস্থিত হয়ে, উজ্জ্বল জ্ঞান-প্রদীপের দ্বারা অজ্ঞান-জনিত অন্ধকার নাশ করি।

ক্ষমা করবেন, একবার ভাবুনতো ঐসব শিষ্যদের ধর্ম পালনের সাথে শ্রীমদ্ভবদ্গীতায় ভগবানের এসব উপদেশের কোন মিল পাওয়া যায়?

♦ এবার আসুন আরেকটি বিষয়ে আলোচনা করা যাক, আমাদের সনাতন সমাজে দেখা যায় যে বাবা-মা দেহত্যাগ করলে শ্রাদ্ধের পরে একটা ভালো দিন দেখে গোবিন্দের সেবা দিয়ে দু-চার জন সাধু গুরু বৈষ্ণবকে সাদর করে সেবা করানো হয়। এখন যদি গোবিন্দের সেবা না দিয়ে কিংবা গুরুর সেবাকে শুধু প্রাধান্য দেওয়া হয়, তাহলে বলুন তো সেটি আপনার কাছে কতটুকু গ্রহণ যোগ্যতা পাবে? আশাকরি আপনার উত্তর এমন হবে যে উক্ত দিবসে অবশ্যই বাবা-মায়ের গুরুর সেবা হবে তবে গোবিন্দের সেবা আগে হবে এবং সেটিকে প্রাধান্য দেওয়া আমাদের উচিত। অত্যান্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় যে কিছু গুরুর শিষ্যরা ঐ দিনটিতে শুধু গুরুর সেবা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এটাই নাকি তাদের গুরুর ধর্মাদেশ।

♦ধরুন, আপনার সন্তানের মুখে প্রসাদ (অন্নপ্রাশন) দিবেন। এখন আপনি কি ভগবানের সেবা দিয়ে আপনার সন্তানের মুখে প্রসাদ দিবেন নাকি আপনার গুরুর সেবা দিয়ে মুখে প্রসাদ দিবেন? এখন কথা হলো আপনি যদি সৎ গুরুর শিষ্য হন কিংবা আপনি সঠিক ধর্ম সম্পর্কে অবগত হন তাহলে আপনি কখনো ভগবানের সেবাকে বাদ দিয়ে গুরুর সেবা দিয়ে আপনার সন্তানের মুখে প্রসাদ দিবেন না। প্রসঙ্গত বলতে হয় বেশকিছুদিন পূর্বে আমার এক সম্পর্কিত লোকের ছেলের মুখে প্রসাদ (অন্নপ্রাশন) দেওয়া হয়। অনুষ্টানে আমার বেশ কিছু বন্ধু ও বড় ভাই আসে। আসার পর তাদের হাতে প্রসাদ মাখা দেওয়া হয়, স্বাভাবিক ভাবে, তারা প্রসাদ প্রণাম দিয়ে নিতে লাগলো আর প্রসাদ নেওয়ার মাঝখানে এক জনের মুখে মাছের কাটা পড়ল। পরের অবস্থা............... আর নাই বললাম।

এখন আপনার মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে, প্রসাদে মাছের কাটা আসলো কি করে? মূলবিষয়টি হলো যে গুরুর সেবা দেওয়া হলো অন্নপ্রাসনকে কেন্দ্র করে, সে গুরুর সেবা তার শিষ্যরা সচরাচর আমিষ দিয়ে করায় এবং সেটাকে প্রসাদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সন্তানের মুখে দেওয়া হয়। এখন আপনি বলুন, আপনার বিবেক কি বলে......?
আর আমি শুধু আপনাদের উদ্দেশ্য একটা প্রশ্ন রাখতে চাই যে আমিষ আহারে শুদ্ধাচার !!! বিষয়টি একটু বিশ্লেষণ করবেন কেউ দয়াকরে? যদি পারেন, তাহলে আমার দ্বিতীয় প্রসঙ্গটি মিথ্যা বলে প্রমাণিত হবে।

♦শেষ প্রসঙ্গ, গত সপ্তাহ ঐসব গুরুর এক শিষ্যের সাথে এই বিষয়ে আলাপ হয় এবং কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই, কিন্তু উনি আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিতে পারে নাই। উনাকে আমি সর্বশে
ষ প্রশ্নটা করলাম যে, আচ্ছা আপনাদের গুরুর কোন শিষ্য দেহত্যাগ করলে আপনারা কি উক্ত মৃতদেহের বুকের উপর গীতা রাখেন? উনি উত্তরে বললো হ্যাঁ রাখি, এমনকি শ্রাদ্ধদিবসেও গীতা পাঠ হয়; এটাই তো নিয়ম। আমি বললাম নিয়ম? কিসের নিয়ম! আপনাদের গুরু কি উনার শিশ্যদের মৃত্যুর পরে আর কি কি করতে হবে তার উপর আরেকটা নিয়ম তৈরি করতে পারে নাই???

হায়রে অন্ধ বিশ্বাসে পালিত ধর্ম! সারাটা জীবন গুরুর সেবাই করে গেলাম, উঠতে-বসতে, বিপদে-আপদে ভগবানের নাম স্মরণ না করে শুধু গুরুর নাম স্মরণ করলাম। কিন্তু মৃত্যুর সময় কানের পাশে হরির নাম সংকীত্তন, বুকের উপর গীতা, এমনকি শ্রাদ্ধদিবসে গীতা পাঠ। আমরা আর কবে বুঝবো কোনটা সঠিক ধর্ম আর কোনটা ধর্মের নামে...........................।।

ঐধরনের গুরু শিষ্যদের উদ্দেশ্যে শ্রীমদ্ভবদ্গীতার দ্বাদশ অধ্যায় ভক্তিযোগের সর্বশেষ শ্লোকটি তুলে ধরলাম-

যে তু ধর্মামৃতমিদং যথোক্তং পর্যুপাসতে ।
শ্রদ্দধানা মৎপরমা ভক্তাস্তেহতীব মে প্রিয়াঃ।।

অর্থাৎ যাঁরা আমার দ্বারা কথিত এই ধর্মামৃতের উপাসনা করেন, সেই সকল শ্রদ্ধাবান মৎপরায়্ণ ভক্তগণ আমার অত্যন্ত প্রিয়।

#অন্তলগ্নে সকল সৎ গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই যে এই লেখার উদ্দেশ্য কাউকে ছোট করার জন্য নয়, এই লেখার উদ্দেশ্য আমাদের বিবেকবোধকে জাগ্রত করা। আমরা কি আমাদের যার যার গুরুর কাছে থেকে সঠিক দিক নির্দেশনা পাচ্ছি? আমরা কি সঠিক পথে থেকে সঠিকভাবে ধর্ম পালন করছি?

Courtesy By: Bappy Kuri
Share:

পঞ্চমহাযজ্ঞ

আমাদের অগোচরে ভগবান আমাদের সমস্ত প্রয়োজনগুলি মিটিয়ে দিয়েছেন, যাতে আমরা আত্ম-উপলব্দ্ধির জন্য স্বচ্ছল জীবন যাপন করে জীবনের পরম লক্ষে পরিচালিত হতে পারি, অর্থাৎ যাকে বলা হয় জড়-জাগতিক জীবন-সংগ্রাম থেকে চিরতরে মুক্তি। আর জীবনের এই উদ্দেশ্যে সাধিত হয় যজ্ঞ অনুষ্ঠান করার মাধ্যমে। সাধারণ লোকের অন্তত পঞ্চমহাযজ্ঞ নামক পাঁচটি যজ্ঞের অনুষ্ঠান করা অবশ্যই কর্তব্য। এই পঞ্চমহাযজ্ঞ হল-

১) ব্রহ্মযজ্ঞ (বা বেদাধ্যয়ন),

২) পিতৃযজ্ঞ (বা তর্পণ),

৩) দেবযজ্ঞ (হোম),

৪) ভূতযজ্ঞ (মনুষ্যেতর জীবের তৃপ্তিবিধান) এবং

৫) নৃযজ্ঞ (অতিথিপূজা)। অর্থাৎ প্রত্যেক মনুষ্য জীবনের জন্য এই পঞ্চমহাযজ্ঞ আবশ্যক, আর তবেই আমরা সত্ত্বগুণে অধিষ্ঠিত হতে পারবো।

তবে পরবর্তীতে, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সব চাইতে সহজ যজ্ঞ-সংকীর্তন যজ্ঞেরর প্রবর্তন করে গেছেন। এই যজ্ঞ অনুষ্ঠান যে কেউ করতে পারে এবং তার ফলে কৃষ্ণভাবনার অমৃত পান করতে পারে।
বত্রিশ অক্ষরের এই হরির নাম মহামন্ত্র-

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।

Courtesy By: Bappy Kuri
Share:

নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র, ধারাবাহিক পর্বঃ- ৬৬-৬৭

ধারাবাহিক পর্বঃ- ৬৭

“মানুষ যে রূপে রথের ব্যবহার করে,
আত্মা সেই রূপে শরীর নামক এই দেহ ব্যবহার করে” আপনি যতক্ষণ রথে বিরাজমান থাকবেন ততক্ষণ আপনার সেই রথ সচল থাকবে কিন্তু আপনি রথ ত্যাগের পর সেই রথ স্থির হয়ে যাবে। তেমনি মানুষের দেহে যতক্ষণ আত্মা বিরাজমান ততক্ষণ সেই দেহ সচল থাকবে। আর আত্মা দেহ ত্যাগ করলে এই দেহরথ নিথর হয়ে পড়বে। তাইতো সরস্বতী গোস্বামী মহারাজ বলেছিলেন আমাদের এই দেহ রথ আর জগন্নাথ দেবের রথ এক এক এক......।।

ধারাবাহিক পর্বঃ- ৬৬

“ আমার জীবনে লোভিয়া জীবন
জাগরে সকল দেশ ” ।

আমি জগতে এসেছিলাম, আমি একটা জীবন তোমাদের সামনে আদর্শ হিসাবে রেখে গেলাম।
সেই জীবন অনুসরণ করে তোমরাও জেগে ওঠো ।

হ্যাঁ, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেই আদর্শকে জানতে হলে শ্রীকৃষ্ণ মানেই একজন বংশী বাদক/প্রেমিক/রাখালবালক ও যুগলমূর্তি শুধু এই ধারণা মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আমাদের জানা উচিত শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন বিরাট যোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, কূটনৈতিক, ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা এবং পরোপকারী।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ১২৫ বছর জগতে প্রকট ছিলেন। বৃন্দাবনে কাটিয়েছিলেন বড়জোর ১২ বছর। বাকি ১১৩ বছর ভারত বর্ষের বিরাট প্রেক্ষাপটে যিনি মানুষের কাছে আদর্শ মানুষরূপে গৃহীত এবং পরবর্তীকালে পূজিত হয়েছেন; সেই ১১৩ বছরের আলোচনা আমাদের মধ্যে হয় না বললেই চলে। যার জন্যে আমাদের বেশিরভাগের কাছে শ্রীকৃষ্ণ মানেই একজন বংশী বাদক/প্রেমিক/রাখালবালক ও যুগলমূর্তির প্রকাশ এবং আমরা সেটাই ভাবতে অভ্যস্ত।

তাই আমরা ভগবান কৃষ্ণচন্দ্রের শুধু ব্রজ লীলা নয় তার যে একটা বিরাট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে; যে রাজনীতিবিদ হিসেবে ভারতবর্ষের মানুষের কাছে পূজিত, যে কূটনীতিবিদ হিসেবে পূজিত এবং বিরাট যোদ্ধা হিসেবে ভারতবর্ষের মানুষের কাছে আদ্রিত, সেই কৃষ্ণকে আমরা কিন্তু অনেকেই জানি না। আমরা এমনি মুখে মুখে বলি তাঁর পাঞ্চজন্য শঙ্খ ছিল, কৌমদখি গদা ছিল, খর্গ ছিল, এই জায়গাটাই এসেই আমাদের জানার সীমাবদ্ধতা। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ কত যুদ্ধ যে করেছিলেন, তাঁর সময় কত রাজন্যবর্গ তার বিরুদ্ধে আচরণ করেছিলেন এই বিষয়টি আমাদের অনেকেই জানা নাই কারণ এসব বিষয় বৈষ্ণব জগতে খুব কম আলোচনা হয়।

★ পরোপকারীর ভূমিকায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণঃ- শ্রীকৃষ্ণ এমনি একজন পরম পুরুষ ছিলেন যার বাল্যকাল থেকে দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন এবং পরোপকারে নিজেকে সর্বদাই সম্পৃক্ত রেখেছিলেন। তাঁর জন্মের পরই কংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তাঁর পিতা বসুদেব তাঁকে গোকুলে নন্দ-যশোদার ঘরে রেখে আসেন। কিন্তু কংস এ কথা জানতে পেরে গোকুলের সব শিশুকে হত্যার নির্দেশ দেয়। কংসের নির্দেশে পূতনা রাক্ষসী বিষাক্ত স্তন্য পান করিয়ে একের পর এক শিশুদের হত্যা করতে থাকে। একদিন শিশু কৃষ্ণকে (গোপাল) হত্যা করতে গেলে তাঁর হাতে সে নিজেই নিহত হয়। এভাবে তিনি বাল্য বয়সে গোকুলের শিশুদের রক্ষা করেন। তিনি বৎসাসুর, অঘাসুর, বকাসুর প্রভৃতি অপশক্তিকে বিনাশ করেন। এছাড়াও তিনি কালীয়দহে কালীয় নাগ দমন, বৃন্দাবনকে রক্ষার জন্য দাবাগ্নি পান, ইন্দ্রের কোপ হতে গোপগণকে রক্ষার জন্য গোবর্ধনগিরি ধারণ ইত্যাদির মাধ্যমে বাল্যকাল থেকে দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন এবং পরোপকারে নিজেকে সর্বদাই সম্পৃক্ত রেখেছিলেন।


★ কিশোর বয়সে শ্রীকৃষ্ণঃ- অত্যাচারী কংস ছিল মথুরার রাজা। সে নিজের পিতা উগ্রসেনকে কারাগারে আটক রেখে সিংহাসন অধিকার করে। এমনকি ভবিষ্যদ্বাণীতে জ্ঞাত তার মৃত্যুর কারণ কৃষ্ণের আবির্ভাব ঠেকাতে সে নিজের বোন-ভগ্নীপতি অর্থাৎ কৃষ্ণের মাতা-পিতা দেবকী-বসুদেবকেও কারাগারে আটক রাখে এবং নিজের হাতে বোনের সন্তানদের হত্যা করে। তাই শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় এসে এই পাপাচারীকে হত্যা করে মাতামহ এবং পিতা-মাতাকে কারাগার থেকে উদ্ধার করেন এবং মথুরায় শান্তি স্থাপন করেন। এমনিভাবে অপশক্তির হাত থেকে শুভশক্তিকে রক্ষার জন্য কৃষ্ণ পরবর্তীকালে আরও অনেক দুর্বৃত্তকে হত্যা করেন।

★ রাজনীতিবিদ, কূটনৈতিক, ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণঃ- ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সবচেয়ে আলোচিত দিক হল তিনি ছিলন একজন বিরাট যোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, কূটনৈতিক, সর্বোপরি ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা যেটি দৃশ্যমান হয় মহাভারতে। এখানে তাকে একজন রাজা (দ্বারকার রাজা), রাজনীতিক, কূটনীতিক, যোদ্ধা এবং দার্শনিক রূপে দেখা যায়। পান্ডবদের পক্ষে দৌত্য-ক্রিয়া ও তাঁদের প্রাপ্য রাজ্য ফিরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে পান্ডবদের পরামর্শ দান ও বিজয়ী করা, দুর্যোধনাদি দুর্জনদের বিনাশ ও যুধিষ্ঠিরকে রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করা, সর্বোপরি অধর্মের বিনাশ করে ধর্মকে প্রতিস্থাপন করা ইত্যাদি কাজ তিনি এখানে সমাপ্ত করেন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে তিনি নিজে যদিও অস্ত্র চালনা করেননি বটে, কিন্তু যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন মূলত তিনিই স্বয়ং। দুর্বৃত্ত জরাসন্ধ বধ ও শিশুপাল বধও এ পর্বেরই ঘটনা। মহাভারতের ভীষ্মপর্বে কৃষ্ণ অর্জুনকে ক্ষাত্রধর্ম এবং আত্মা সম্পর্কে যে উপদেশ দিয়েছেন তা ভগবদ্গীতা বা সংক্ষেপে গীতা নামে খ্যাত। এভাবে কৃষ্ণ অধর্মের বিনাশ ও দুষ্টের দমন করে ধর্ম স্থাপন ও শিষ্টের পালন করেছেন।


Courtesy By: Bappy Kuri


Share:

নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র, ধারাবাহিক পর্বঃ- ৬৮

----------- “আত্মানাং বিদ্ধি”--------------

শ্রী অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে 'কেশিনিসূদন' বলে সম্বোধন করার পিছনে একটা বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
কেশি মানে- অসুর; সূদন মানে- হনন বা হত্যা করা।
অর্থাৎ যিনি অসুর হনন, বধ বা হত্যা করেন তিনি কেশিনিসূদন। কিন্তু কেন শ্রীকৃষ্ণ কেশিনিসূদন হবে?

কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের প্রারম্বে অর্জুনের মনে যখন বিভিন্ন বিষয়ে সন্দেহ ও সংশয় সৃষ্টি হয় তখন তিনি শ্রীকৃষ্ণকে এই বলে সম্বোধন করে বলেছেন- হে কেশিনিসূদন; তুমি আমার সন্দেহগুলো ( বিশেষ করে সন্যাস ও ত্যাগ সম্পর্কিত বিষয়ে সৃস্টি প্রশ্ন, সংশয় ও সন্দেহ) দূর কর।

অর্জুনের মনে সৃষ্ট এই সন্দেহকে অসুরের সাথে তুলনা করা হয়। অন্যদিকে কেশী ছিলেন একজন অত্যন্ত দুর্ধর্ষ অসুর যাকে শ্রীকৃষ্ণ হত্যা বা বধ করেছেন। তাই অর্জুনের মনে সেই অসুর রূপে সৃষ্টি সন্দেহ, সংশয় দূর বা হত্যা করার জন শ্রীকৃষ্ণকে অর্জুন কেশিনিসূদন বলে সম্বোধন করেছেন।

বিঃদ্রঃ- গত পর্বের আলোচনার লিংক কমেন্ট বক্সে দেওয়া আছে।

Courtesy By: Bappy Kuri
Share:

নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র, ধারাবাহিক পর্বঃ- ৬৯

----------- “আত্মানাং বিদ্ধি”--------------

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা এবং শ্রীমদ্ভাগবত এর মধ্যে প্রার্থক্য-

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা হচ্ছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কতৃক এই মানব জাতির জন্য রেখে যাওয়া এক পবিত্র দলীল সরূপ যেখানে লিপিবদ্ধ হয়েছে তাঁর আদর্শ, তাঁর আদেশ এবং তাঁর উপদেশ। সেই আদর্শ কে অনুসরণ করে আদেশ এবং উপদেশ পালন করাই প্রতিটি নর জীবনের একান্ত কর্তব্য। তবেই মানব জীবনের স্বার্থকতা।

অন্যদিকে শ্রীমদ্ভাগবত বা ভাগবত হল ব্যাসদেব কতৃক রচিত সনাতন ধর্মে ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনার উপস্থাপন। যার মাধ্যমে তিনি পরম সত্যকে স্থাপন করেছেন। অর্থাৎ ভাগবতে লিপিবদ্ধ প্রত্যেকটি ঘটনা আমাদেরকে সত্যের পথ দেখায়। যে পথ অনুসরণ করে নিজেকে সত্যে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মন্ত্র শিখায়। যে সত্য পরমার্থিক জীবনে তথা শ্রীমদ্ভগবদ ধাম পৌছানোর পথ দেখায়। এজন্য ব্যাসদেব বলে গিয়েছেন-
"সত্যম পরম ধীমহি"
আমরা পরম সত্যকে ধারণ করি।
অর্থাৎ ভাগবত ভক্তি ও তার শিক্ষা নিজের মধ্যে ধারণ করা মানেই পরম সত্যে নিজেকে অধিষ্ঠিত করা।

বিঃদ্রঃ- গত পর্বের আলোচনার লিংক কমেন্ট বক্সে দেওয়া আছে।

Courtesy By: Bappy Kuri


Share:

নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র, ধারাবাহিক পর্বঃ- ৭০


----------- “আত্মানাং বিদ্ধি”--------------

নির্দিষ্ট কর্মের ত্যাগ নহে সে বিধান।
মোহেতে সে ত্যাগ হয় তামসিক জ্ঞান।

আমাদের প্রতিটি মানুষের নিত্য কর্ম করা উচিত। কিন্তু কর্ম যদি শুধুমাত্র জড় সুখ ভোগের উদ্দেশ্যে সম্পাদন হয় তবে সেই কর্ম পরিত্যাজ্য। তাহলে আমাদের মনে প্রশ্ন তৈরি হতে পারে কিসের উপর ভিত্তিতে নিত্যকর্ম পরিত্যাজ্য নয়?

হ্যাঁ গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন যে সমস্ত কর্ম মানুষকে অপ্রাকৃত স্তরে উন্নীত করে সে সমস্ত কর্ম করা কর্তব্য। যেমন আপনি সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে স্নান করে প্রার্থনা করলেন। তারপর ভগবানের জন্য রান্না করে ভগবানকে ভোগ নিবেদন করলেন, গীতা পাঠ করলে, কিছুটা সময় হরিনাম করে তার পর ভাগবানকে নিবেদন করা প্রসাদ আহার করে আপনি এবার সংসারে বাকি কাজগুলো করলেন। জীবিকার তাগিদে বাহিরে গিয়ে সৎ পথে অর্থ উপার্জন করলেন। সেই উপার্জিত
অর্থ শুধু নিজের ভোগ বিলাসিতায় ব্যায় না করে কিছু অর্থ ধর্মের পথে, কিছু অর্থ মানবতার সেবায় ব্যায় করলেন। এভাবেই প্রতিদিনের নিত্য কর্মের মাধ্যমে সংসার ধর্ম পালন করে আমরা ভগবানের সেবায় নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে পারি। এসমস্ত কর্তব্য কর্মগুলিকে কেউ যদি পরিত্যাগ করে, তাহলে বুঝতে হবে যে সেই ব্যক্তি তমোগুণের অজ্ঞানে আচ্ছন্ন।

এই জন্য গীতায় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন-
হে অর্জুন, নিত্যকর্ম ত্যাগ করা উচিত নয়। মোহবশত কেউ নিত্যকর্ম ত্যাগ করলে, সেই ত্যাগকে তামসিক ত্যাগ বলা হয়।

বিঃদ্রঃ- গত পর্বের আলোচনার লিংক কমেন্ট বক্সে দেওয়া আছে।

★ এই পোস্টের শুধুমাত্র ঠাকুরের ছবিটা সংগ্রহকৃত।

Courtesy By: Bappy Kuri
Share:

নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র, ধারাবাহিক পর্বঃ- ৭১

১) একদিকে ভগবান বলেছেন নিত্যকর্ম ত্যাগ করা উচিত নয়। (গত পর্বে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে)।
রেফারেন্সঃ- শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা অধ্যায়-১৮, শ্লোক-০৭


২) অন্যদিকে ভগবান বলেছেন ফলের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে কর্ম করা উচিত।
#রেফারেন্সঃ- শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা অধ্যায়-৩, শ্লোক-১৯

এখন মনে প্রশ্ন সৃষ্টি হতে পারে, বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের প্রয়োজন। সেই চাহিদা মেটাতে অর্থের প্রয়োজন। আর সেই অর্থের যোগান দিতে আমারা কর্ম করে অর্থ উপার্জন করি। তাহলে কি ভগবানের সেই (ফলাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ) আদেশকে উপেক্ষা বা অমান্য করে অর্থ উপার্জনের জন্য আমরা প্রতিনিয়ত কর্ম করে যাচ্ছি না? অর্থাৎ আমরা পাপ কর্ম করে যাচ্ছি?

উত্তর না; ভগবান হলেন পরম করুণাময়ী। কারণ তিনি তাঁর সৃষ্টির বেঁচে থাকার জন্য যে সমস্ত কাজগুলো আবশ্যক এবং অতি প্রয়োজন সেগুলোর অনুমোদন দিয়েছেন। যেমনঃ-

প্রাণী হত্যা মহাপাপ। বিজ্ঞান বলে উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে তার মানে কি আমরা যখন শাক সবজি আহার করি তখন কি পাপ ভোজন করা হয় না? কিন্তু ভগবান ফল-মূল, শাকসবজি, দুধ এগুলোকে সাত্ত্বিক খাবার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সেগুলোর অনুমোদন দিয়েছে যা আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য অতি প্রয়োজন। অন্যদিকে উক্ত বিষয়ে আরেকটি মত আছে- যে সমস্ত প্রাণী অনুভূতি সমৃদ্ধ এবং ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় সেই অনুভূতির প্রকাশ হয় তাদের হত্যা করায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আপনি ইচ্ছাকৃত একটা ক্ষুদ্র পিঁপড়া মারলে সেটি পাপ হবে। কারণ আঘাতে তাদেরও অনুভূতি প্রকাশ পাই।

#তেমনি ভগবান আমাদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য অর্থ উপার্জন করাকে অনুমোদন দিয়েছেন। সেই অর্থ উপার্জন করাকে তিনি ফলাশ্রয়ী সকাম কর্ম বলে আখ্যায়িত করেছেন যাহা পরিত্যাগ করা উচিত নয়। #রেফারেন্সঃ- শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা অধ্যায়-১৮, শ্লোক-০৮ এর তাৎপর্য। কিন্তু ফলাশ্রয়ী সকাম কর্ম তখনি হবে যখন আমরা সৎ পথে সেই অর্থ উপার্জন করে শুধু নিজের ভোগ বিলাসিতায় না ব্যায় করে ভগবানের সেবায় নিয়োগ করব, মানব সেবায় ব্যয় করব এবং সর্বোপরি তাঁর সৃষ্টি প্রকৃতি ও সমস্ত নীরহ প্রাণীকূলের রক্ষায় ব্যয় করব। তবেই সেই অর্থ উপার্জন হবে ফলাশ্রয়ী সকাম কর্ম যাহা শাস্ত্র অনুমোদিত এবং পরিত্যাগ করা উচিত নয়।

Written By : Bappy Kuri
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।