১৯ জুন ২০২০

'কৃষ্ণ' নামের ব্যুৎপত্তি

আমরা জানি, পরমেশ্বর ভগবানের অনন্ত নামের মধ্যে 'কৃষ্ণ' নামটি অতি উৎকৃষ্ট ও উৎফুল্ল জনক। এই নামটির উৎপত্তি সম্পর্কিত কিছু ইতিহাস খোঁজার চেষ্টা করা যাক। কৃষ্ণ নামের মধ্যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড লুকিয়ে আছে। কৃষ্ণ লিখতে হলে, প্রথমে ব লিখে কুন্ডলি দিয়ে ঋ দিয়ে ষ্ণ যোগ করতে হয়।

ক- এর প্রথম টানে ব্রহ্মা, দ্বিতীয় টানে বিষ্ণু, তৃতীয় টানে মহেশ্বর বিরাজ করেন। অর্থাৎ ব হয়ে গেলো। এবার কুন্ডলিনী হলেন রাধা।

ঋ- তে বিরাজ করেন যোগমায়া আর

ষ্ণ- তে বিরাজ করেন ত্রিভূবন, চন্দ্র, অরুন, বরুন , আদি ইত্যাদি।

এই তত্ত্বটি ধ্যান যোগে ঋষি গর্গাচার্য্য মুনি জানতে পেরেছিলেন তখন, যখন নামকরনের জন্য নন্দলাল ও যশোদা ঋষির কাছে গিয়েছিলেন। ঋষি ছিলেন একজন ত্রিকালদর্শী, কৃষ্ণ নামটি ইনি রেখেছিলেন।


সৌরমন্ডলে সূর্যের আকর্ষনে যেমন প্রতিটা গ্রহ বা উপগ্রহ আপন আপন কক্ষপথে ঘুরে চলেছে, তেমনি এই সমগ্র বিশ্বব্রহ্মান্ডকে যিনি নিজের দিকে আকর্ষন করে চলেছেন তিনি হলেন কৃষ্ণ। এই সমগ্র বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় আকর্ষন সত্তা হলেন এই কৃষ্ণ। যাঁর আকর্ষন শক্তি থেকে কেউ রেহাই পেতে পারে না। এই শব্দ থেকেই গতি, শক্তি, রতি ও প্রেমের উদয় হয়।

এখন প্রশ্ন আসে কিসের প্রেম গো! মা যশোমতির বাৎসল্য প্রেম। গোকুলের রাখালদের সখ্য প্রেম। আর ব্রজগোপীদের মধুর প্রেম। এই কৃষ্ণেই হলো ভগবান। এবার মিলিয়ে দেখা যাক বিষয়টি।

ভ- মানে ভূমি,
গ- মানে গগন,
ব- মানে বায়ু,
আ-মানে আগুন আর
ন- মানে নীর।

অর্থাৎ, ভগবান মানে ক্ষিতি-অপ-ত্বেজ-মরুৎ-ব্যোম। ভোগ ভোক্তাকে যিনি সমজ্ঞান করে রেখেছেন, তিনি ভগবান। এটা তো গেলো অন্তর্নীহিত অর্থ। বাহ্যিক অর্থ হলো, 'ভগ' শব্দটির অর্থ হলো ঐশ্বর্য্য, ধার্য্য, জ্ঞান, যশ, শ্রী ও বৈরাগ্য। আর 'বান' মানে অধিকারী। এই ছয় প্রকার সম্পদ যাঁর মধ্যে অনন্ত পরিমানে বিদ্যমান কেবল তিনি ভগবান। ইনি নিরাকার পরমব্রহ্ম। ইনি সব কারণের কারণ, ইনি অবিনাশী, ইনি স্বয়ম্ভু, বেদের মধ্যে ওঁ কার ইনি, জলের মধ্যে রস ইনি, সূর্যের মধ্যে তেজ ইনি, চন্দ্রের মধ্যে শোভা ইনি, একাদশ রুদ্রের মধ্যে ইনি, দ্বাদশ আদিত্যের মধ্যে ইনি, অষ্টবসুর মধ্যে ইনি, এই ঈশ্বর যুগে যুগে বিভিন্ন মানবীয় অবতারে পৃথিবীতে এসেছেন।

যিনি সব করতে পারেন, তিনি কি আর মানব হয়ে পৃথিবীতে আসতে পারেন না? অবশ্যযই পারেন! মা যোশদা কৃষ্ণের মুখের ভিতরে সৌর জগৎ, মহাকাশ, নিহারীকা অর্থাৎ সমস্ত বিশ্ব ব্রহ্মান্ড দর্শন করেছেন। ইনি প্রত্যেকটি জীবদেহেও আছেন। আমার মধ্যে ইনি আর সর্বজীবের মধ্যেও ইনি।

এখানে আমরা একটি বিষয় অবতারনা করতে পারি যে, তাহলে যে ব্যাক্তি অন্যায়, পাপাচার ইত্যাদি করছে, যে মানুষ অন্যকে কষ্ট দিচ্ছে তার মধ্যেও কি কৃষ্ণ আছেন? উত্তর হবে, অবশ্যই আছেন। তবে কারো কর্মের উপর ঈশ্বরের কোনো দ্বায় বা অধিকার নেই। এই সব আমরা করে থাকি যোগমায়ার প্রভাব দ্বারা। যোগ মায়ার সাহায্য না নিলে এই পৃথিবীটাকে ঈশ্বর নাট্য মঞ্চ বানাতে পারবেন না।

সব থেকে পরম সত্য হলো যে, আমরা মাতৃগর্ভে কৃষ্ণকে দর্শন করেছি। যখনই পৃথিবীতে এলাম সঙ্গে সঙ্গে যোগমায়া আমাদের চোখে একটি পর্দা দিয়ে দিলেন। গোবিন্দকে দেখতে না পেয়ে আমরা কেঁন্দে উঠলাম। সঙ্গে সঙ্গে মা আমাদের পৃথিবীর অমৃত মুখে তুলে দিলেন। ধীরে ধীরে বড় হলাম। মা পরিচয় করে দিয়ে বললেন, 'এই হলো তোর বাবা, দাদা, কাকা, মামা ইত্যাদি।' কিন্তু আজ পর্যন্ত মা আমাদের পরম আত্মীয় দীনবন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করে দেননি। দিনের শেষে যাকে আমাদের প্রয়োজন। ধীরে ধীরে পার্থিব জগতে আকৃষ্ট হয়ে পড়লাম। অন্তরে বিরাজিত গোবিন্দকে ভুলে গেলাম।

কৃষ্ণ কিন্তু যোগমায়ার অধিন নন। যোগমায়াকে কৃষ্ণের অধিনে থাকতে হয়। এনার শক্তির উপরে কেউ নয়। রুক্মিণীদেবীকে যখন আনতে যায়, তখন রুক্মিনী দেবীর ভাই রুক্মী কৃষ্ণের সঙ্গে যুদ্ধ করলেন। রুক্মী ছাড়লেন ব্রহ্মাস্ত্র। ব্রহ্মাস্ত্র কৃষ্ণকে প্রনাম করে চলে গেলেন।

 সুভদ্রা কেঁন্দে কেঁন্দে কৃষ্ণকে বলছেন, "দাদা তুমি তো অন্তর্যামী, তুমি জানতে যে অভিমণ্যু যুদ্ধে মারা যাবে, তাহলে তাকে বাচালে না কেনো?"

কৃষ্ণ বললেন, "আমাকেও বিধির বিধান মেনে চলতে হয়।"

গুরু দ্রোন একবার ভীষ্মকে বলছেন যে, কাল শ্রীকৃষ্ণ আসছেন শান্তিরদূত হয়ে। তিনিই এই যুদ্ধটা রুখতে পারবেন। পিতামহ ভীষ্ম বলছেন, "কৃষ্ণকে বুঝবার মতো বিশ্ব-ব্রহ্মান্ডে কেই নেই। তিনি আশা-নিরাশা, সত্য-অসত্য, ধর্ম-অধর্ম এই সব কিছুর উপরে।

রাধা কৃষ্ণকে বলছেন, "তুমি তো ভক্তের দাস। তাহলে তুমি কথা দাও আমাকে ছেড়ে কো
নোদিন যাবে না।"

কৃষ্ণ দেখলেন যে, তাঁর তো এখনো অনেক কাজ বাকি। কংস বধ, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ, কালযবন বধ, মুর দৈত্য বধ, জরাসন্ধের সঙ্গে যুদ্ধ এই কাজগুলো সবই বাকি। কৃষ্ণ রাধিকাকে বললেন, "ঠিক আছে তুমি যখন যেতে বলবে তখনই যাবো।"

কৃষ্ণ বাকি দেবতাদের স্মরন করলেন। তাঁরা এসে রাধাকে বোঝালেন যেনো এভাবে কৃষ্ণকে ধরে না রাখে। এরফলে রাধা অনুমতি দেয় কৃষ্ণকে যেতে।

শ্রীকৃষ্ণের অনন্তকোটি লীলা। ব্যাসদেবও যা লিখে শেষ করতে পারেন নি। আর আমরা তো অতি অজ্ঞ নগন্য মাত্র।

। জয় পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।

  পরমকরুনাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান, পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী আর সকল বৈষ্ণব ভক্ত পার্ষদদের শ্রীচরণকমলে নিরন্তর প্রার্থনা করি, সকলের জীবন যেনো রাধাকৃষ্ণময়তায় পূর্ণ হয়ে, মঙ্গলময়, কল্যাণময়, প্রেমময়, ভক্তিময়, মুক্তিময়, শান্তিময়, সুন্দরময় এবং আনন্দময় হয়ে ওঠে সর্বদা।
"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে!!"
!!জয় হোক সকল ভক্তদের!!
!!জয় শ্রীকৃষ্ণ!! জয় রাধে!!

Post: Debendra Biswas
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।