১৯ জুন ২০২০

নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র, ধারাবাহিক পর্বঃ- ৬2


সনাতন ধর্ম এবং দেবীরূপে মা জননী।
নারীর পূর্ণতা মাতৃরূপে। মা হচ্ছেন একজন পূর্ণাঙ্গ নারী। সন্তান লাভের পর নারী তাঁর রমণীমূর্তি পরিত্যাগ করে মহীয়সী মাতৃরূপ ধারণ করেন। তাই মা হচ্ছে একজন পূর্ণাঙ্গ মহামানব। মায়ের এর থেকে বৃহৎ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হতে পারে না। এজন্য ধর্ম, নীতিশাস্ত্র, সাধনার উচ্চ মার্গ থেকে শুরু করে জ্ঞানে, ধ্যানে সব সময় জুড়ে থাকে, ঘিরে থাকে মা। মা-ই জগত, মা-ই জীবন।

পুরুষতান্ত্রিক যে সমাজে নারীনির্যাতন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার, নারীকে যথেচ্ছা সম্ভোগ, প্রহার বা তাড়িয়ে দেওয়ার বিধানও যে সমাজ অনুমোদন করে, সেই সমাজ যে ক্রমেই বিনাশপ্রাপ্ত হবে। আর তাই বিশ্বের প্রতিটি নারীর ব্যক্তিগত জীবনের সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও সর্বাঙ্গীন মঙ্গলের লক্ষ্যে, নারীর অপমান ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে মহর্ষি মনু দৃপ্ত বাণী উচ্চারণ করেছেন। সেজন্য অনেকের কাছে মনুকে বরং কট্টর নারীবাদী বলে মনে হতে পারে কিন্তু না; পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর সম্মান সুনিশ্চিত করতে তার এমন প্রচেষ্টা। তিনি পুরুষতান্ত্রিক বা নারীবাদী কোনটাই নন, তিনি হলেন মানবতাবাদী।
সনাতন ধর্মে মা এর স্থান সর্বোচ্চ। তাই কমবেশি সব গ্রন্থে তুলে ধরলেও নারী রূপিণী মা সম্পর্কে বৈদিক শাস্ত্রীয় গ্রন্থগুলোর মধ্যে মনুসংহিতা অন্যতম। যেমন-

★ হে জননী তোমার শ্রী চরণে শতকোটি প্রণাম জানাই-

যত্র নার্য্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ।
যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ।। (মনুসংহিতা ৩/৫৬) অর্থাৎ“যে সমাজে নারীদের যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা হয় সেই সমাজ উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি লাভ করে। আর যারা নারীদের যোগ্য সম্মান করে না, তারা যতই মহৎ কর্ম করুক না কেন, তার সবই নিষ্ফল হয়ে যায়।”

★ হে জননী তোমার শ্রদ্ধা-সম্মান সবার উপর-

যে বংশে ভগিনী ও গৃহস্থের স্ত্রী কিংবা মা (নারীকূল) পুরুষদের কৃতকর্মের জন্য দুঃখিনী হয়, সেই বংশ অতি শীঘ্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আর যে বংশে স্ত্রীলোকেরা সন্তুষ্ট থাকে, সেই বংশ নিশ্চিতভাবেই শ্রীবৃদ্ধি লাভ করে”। (মনুসংহিতা ৩/৫৭)। অর্থাৎ“যে সমাজে নারীদের যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা হয় সেই সমাজ উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি লাভ হবে। আর তাই উচ্চ কন্ঠে বলতে চাই-

হে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ- "সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে" কথাটা বলার পূর্বে একবার নিজের অবস্থান এবং দায়িত্ব কতটুকু রক্ষা করতে পারলেন স্বয়ং বিচার করুন।

★ হে জননী তুমি দেবী রূপে মা লক্ষ্মী -

সন্তান প্রসবিনী মাকে গৃহলক্ষ্মী সম্মানে অভিহিত করে মাতৃ-গৌরব তাৎপর্য মনু স্মৃতিতে এভাবে প্রকাশ পাই-
“উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য্য আচায্যাণাং শতং পিতা।
সহস্রন্তু পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে।।” (মনু,২/১৪৫)
অর্থাৎ দশজন উপাধ্যায় (ব্রাহ্মণ) অপেক্ষা একজন ‘আচার্যের গৌরব অধিক। আবার একশত আচার্যের গৌরব অপেক্ষা একজন পিতার গৌরব অধিকতর। সর্বোপরি, সহস্র পিতা অপেক্ষা মাতা সম্মানার্হ অধিক গুরুত্ব।

★ হে জননী তুমি মনুষ্য জাতির বাহক ও এই বিশ্বসংসারের শ্রী-

মা সন্তান প্রসব ও পালন করে থাকে এবং নতুন প্রজন্ম বা উত্তরসুরির জন্ম দেয়। তাঁরা গৃহের দীপ্তি বা প্রকাশস্বরূপ। তারা সৌভাগ্য ও আশীর্বাদ বয়ে আনে। তাই মা হলেন গৃহের সবচেয়ে বড় শ্রী।” (মনুসংহিতা ৯/২৬)

★ হে জননী তুমি সংসার ধর্মের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র-

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মোন্তরে মা সকল সুখের মূল। কারণ, সন্তান উৎপাদন, ধর্ম পালন, পরিবারের পরিচর্যা, দাম্পত্য শান্তি এসব কাজ নারীদের দ্বারাই সবচেয়ে বেশি সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়।” (মনুসংহিতা ৯/২৮)

★ হে জননী তোমার পাদতলে জগতের সকল সন্তানের
বিশ্বব্রহ্মাণ্ড-

হ্যাঁ, সনাতন ধর্মে মা কে এতটাই মর্যাদা দেওয়া হয়েছে যেটি আমরা বুঝতে পারি যখন সিদ্ধিদাতা গনেশ কে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড পরিক্রম করে আসতে বলা হয় তখন সে তাঁর মা দুর্গা'কে তিনবার পরিক্রম করে মায়ের চরণে প্রণাম করে বলে, আমার বিশ্বব্রহ্মাণ্ড পরিক্রম করা শেষ হয়েছে। আমার কাছে আমার মায়ের চরণতলই আমার বিশ্বব্রহ্মাণ্ড।

★ সর্বশেষ এই জগতের সকল মা কে নিয়ে আমার অনুভূতি - “জগতের সকল সন্তানের কাছে
নিজের মা হলেন একজন দৃশ্যমান মা দুর্গা।”

ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক জগতের সকল মা।

Courtesy by: Bappy Kuri
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।