দেহ প্রতিপালন করার জন্য মানুষকে কর্তব্যকর্ম করতে হয়। জড়জাগতিক প্রবৃত্তিগুলিকে শুদ্ধ না করে, নিজের খেয়ালখুশি মতো কর্তব্যককর্ম ত্যাগ করা উচিত নয়। এই জড় জগতের প্রতত্যেকেরই নিশ্চয় জড়া প্রকৃতির ওপর কর্তৃত্ব কুলষময় প্রবৃত্তি আছে, এখানে কুলষময় প্রবৃত্তি বলতে ইন্দ্রিয়-তৃপ্তির বাসনা রয়েছে এমন। সেই কুলষময় প্রবৃত্তিগুলিকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। শাস্ত্র-নির্দেশিত উপায়ে তা না করে কর্তব্যকর্ম ত্যাগ করে এবং শুধু অন্যের সেবার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে তথাকথিত অতীন্দ্রিয়বাদী যোগী হবার চেষ্টা করা কখনই উচিত নয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-
নিয়তং কুরু কর্ম ত্বং কর্ম জ্যায়ো হ্যকর্মণঃ ।
শরীরযাত্রাপি চ তে ন প্রসিদ্ধ্যেদকর্মণ॥
অর্থাৎ শাস্ত্রোক্ত কর্মের অনুষ্ঠান কর, কেন না কর্মত্যাগ থেকে কর্মের অনুষ্ঠান শ্রেয়। কর্ম না করে কেউ দেহযাত্রাও নির্বাহ করতে পারে না। তুমি যদি ব্রাহ্মণ হওয়ার সবকয়টি জ্ঞান স্তর অর্জন করে কর্মে প্রয়োগ করতে সক্ষম হয় তখন বুঝতে হবে তোমার কর্ম ও জ্ঞানের মাধ্যমে তুমি ব্রাহ্মণত্ব লাভ করেছ। আর তখন গুরু দায়িত্ব হবে মন, ইন্দ্রিয়কে নিগ্রহ ও বশে রেখে,
গীতা, বেদ-শাস্ত্রাদি জ্ঞান সম্পাদন করে সেই ধর্মজ্ঞান মনুষ্যকুলে প্রচার করা। এভাবে ক্ষত্রিয়, বৈশ, ও শুদ্রের স্ব স্ব শাস্ত্রোক্ত কর্ম করা উচিত।
কুরুক্ষেত্রে কৌরব এবং পান্ডবদের মধ্যকার সংগঠিত যুদ্ধের শুরুতে অর্জুন এক পর্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে আত্মীয় স্বজন বধ করার মত কাজে লিপ্ত হয়ে যুদ্ধ করা তার পক্ষে সম্ভব না। তখন শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-
অর্জুন, তুমি গৃহস্থ এবং সেনাপতি, তাই শাস্ত্র নির্ধারিত গৃহস্থ ক্ষত্রিয়ের ধর্ম পালন করাই তোমার কর্তব্য। কারণ শাস্ত্রোক্ত এই ধর্ম পালন করার মাধ্যমে জড়-বন্ধনে আবদ্ধ মানুষের মন পবিত্র হয় এবং ফলে সে জড়-বন্ধন থেকে মুক্ত হয়। তথাকথিত ত্যাগীরা, যারা দেহ প্রতিপালন করবার জন্যই ত্যাগের অভিনয় করে, ভগবান তাদের কোন রকম স্বীকৃতি দেননি, শাস্ত্রও তাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তাই তুমি যদ্ধ কর। তোমার এই যুদ্ধকরাটাই হবে তোমার শাস্ত্রোক্ত কর্ম, যেটি ক্ষত্রিয়ের ধর্ম।
সারমর্মঃ- সর্বশেষ আমরা এইতুটু বুঝতে পারি যে আমাদের শাস্ত্রোক্ত কর্ম করা উচিত। কর্মের মাধ্যমে আমাদের বর্ণ নির্ধারণ হবে, জন্মের মাধ্যমে নয় এবং সেই বর্ণই পথ দেখিয়ে দিবে শাস্ত্রে আমাদের জন্য কোন কর্মযজ্ঞ নির্ধারণ করা হয়েছে।
Courtesy by: Bappy Kuri
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন