• মহাভারতের শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান

    মহাভারতে যে সময়ের এবং শহরগুলোর কথা বলা হয়েছে সেই শহরগুলোর বর্তমান অবস্থা কি, এবং ঠিক কোথায় এই শহরগুলো অবস্থিত সেটাই আমাদের আলোচনার বিষয়। আর এই আলোচনার তাগিদে আমরা যেমন অতীতের অনেক ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসবো, তেমনি বর্তমানের পরিস্থিতির আলোকে শহরগুলোর অবস্থা বিচার করবো। আশা করি পাঠকেরা জেনে সুখী হবেন যে, মহাভারতের শহরগুলো কোনো কল্পিত শহর ছিল না। প্রাচীনকালের সাক্ষ্য নিয়ে সেই শহরগুলো আজও টিকে আছে এবং নতুন ইতিহাস ও আঙ্গিকে এগিয়ে গেছে অনেকদূর।

  • মহাভারতেের উল্লেখিত প্রাচীন শহরগুলোর বর্তমান অবস্থান ও নিদর্শনসমুহ - পর্ব ০২ ( তক্ষশীলা )

    তক্ষশীলা প্রাচীন ভারতের একটি শিক্ষা-নগরী । পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। তক্ষশীলার অবস্থান ইসলামাবাদ রাজধানী অঞ্চল এবং পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার (২০ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে; যা গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড থেকে খুব কাছে। তক্ষশীলা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৪৯ মিটার (১,৮০১ ফিট) উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবিভাগ পরবর্তী পাকিস্তান সৃষ্টির আগ পর্যন্ত এটি ভারতবর্ষের অর্ন্তগত ছিল।

  • প্রাচীন মন্দির ও শহর পরিচিতি (পর্ব-০৩)ঃ কৈলাশনাথ মন্দির ও ইলোরা গুহা

    ১৬ নাম্বার গুহা, যা কৈলাশ অথবা কৈলাশনাথ নামেও পরিচিত, যা অপ্রতিদ্বন্দ্বীভাবে ইলোরা’র কেন্দ্র। এর ডিজাইনের জন্য একে কৈলাশ পর্বত নামে ডাকা হয়। যা শিবের বাসস্থান, দেখতে অনেকটা বহুতল মন্দিরের মত কিন্তু এটি একটিমাত্র পাথরকে কেটে তৈরী করা হয়েছে। যার আয়তন এথেন্সের পার্থেনন এর দ্বিগুণ। প্রধানত এই মন্দিরটি সাদা আস্তর দেয়া যাতে এর সাদৃশ্য কৈলাশ পর্বতের সাথে বজায় থাকে। এর আশাপ্সহ এলাকায় তিনটি স্থাপনা দেখা যায়। সকল শিব মন্দিরের ঐতিহ্য অনুসারে প্রধান মন্দিরের সম্মুখভাগে পবিত্র ষাঁড় “নন্দী” –র ছবি আছে।

  • কোণারক

    ১৯ বছর পর আজ সেই দিন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সোমবার দেবতার মূর্তির ‘আত্মা পরিবর্তন’ করা হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যে। ‘নব-কলেবর’ নামের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবতার পুরোনো মূর্তি সরিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হবে। পুরোনো মূর্তির ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে সঞ্চারিত হবে, পূজারীদের বিশ্বাস। এ জন্য ইতিমধ্যেই জগন্নাথ, সুভদ্রা আর বলভদ্রের নতুন কাঠের মূর্তি তৈরী হয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে ‘গর্ভগৃহ’ বা মূল কেন্দ্রস্থলে এই অতি গোপনীয় প্রথার সময়ে পুরোহিতদের চোখ আর হাত বাঁধা থাকে, যাতে পুরোনো মূর্তি থেকে ‘আত্মা’ নতুন মূর্তিতে গিয়ে ঢুকছে এটা তাঁরা দেখতে না পান। পুরীর বিখ্যাত রথযাত্রা পরিচালনা করেন পুরোহিতদের যে বংশ, নতুন বিগ্রহ তৈরী তাদেরই দায়িত্ব থাকে।

  • বৃন্দাবনের এই মন্দিরে আজও শোনা যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মোহন-বাঁশির সুর

    বৃন্দাবনের পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ নিধিবন মন্দির। এই মন্দিরেই লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। যা আজও পর্যটকদের সমান ভাবে আকর্ষিত করে। নিধিবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রহস্য-ঘেরা সব গল্পের আদৌ কোনও সত্যভিত্তি আছে কিনা, তা জানা না গেলেও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাভূমিতে এসে আপনি মুগ্ধ হবেনই। চোখ টানবে মন্দিরের ভেতর অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্যে ভরা রাধা-কৃষ্ণের মুর্তি।

২৫ অক্টোবর ২০১৮

অঘাসুর

একে একে কংস যখন বৃন্দাবনে অসুরদের প্রেরণ করছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে বধ করার জন্য- সেই সব অসুরেরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের হাতে নিহত হয়ে মুক্তি পেলো। মূর্খ কংস এরপর অঘাসুর নামক এক অসুর কে প্রেরণ করেছিলো। অঘাসুর ছিলো পূতনা ও বকাসুরের ভ্রাতা । অঘাসুর পূর্বে এক দাম্ভিক গন্ধর্ব ছিলো। নিজ সৌন্দর্যে সে এতটাই গর্বিত ছিলো যে একদিন অষ্টবক্র মুনিকে তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে উপহাস করেছিলো। মুনির শাপে সে একটি বৃহৎ সর্পে পরিণত হয় । সেই অঘাসুর বৃন্দাবনে এসে বিশাল শরীর ধারণ করে মুখ টি খোলা রাখলো। অপরদিকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সখা দের নিয়ে গোচারণ ও খেলাধূলা করছেন। হঠাত সেই মুখ উন্মোচিত সর্প কে দেখে গুহা ভ্রমে গোপ বালকেরা বলতে লাগলো- “আরে এই গুহা এখানে কি ভাবে এলো ? আগে ত দেখিনি। এই গুহার মুখ প্রকাণ্ড যেনো একটি বৃহৎ সর্পের মুখের ন্যায় । গুহার ওপরে ও নীচে সূর্যের আলোয় এমন আভা পেয়েছে যেনো মনে হচ্ছে এটি সেই বৃহৎ সর্পের মুখ।”




গোপ বালকেরা বলতে লাগলো- “আরে এই গুহার প্রবেশের পথ টাও সর্পের জিহ্বার ন্যায় । গুহার ভেতরে সর্পের উদরের ন্যায় অন্ধকার । এই গুহার ভেতর থেকে মৃত গলিত পশু পক্ষীর গন্ধ আসছে, যেমন সর্প প্রানীদের ভক্ষণ করলে তাহার মুখ হতে আসে। এই গুহার ওপরের নীচের পাথর গুলি সর্পের দন্তের ন্যায় মনে হচ্ছে। এসো আমরা ভেতরে প্রবেশ করি। এ যদি গুহা না হয়ে সর্প হয় তবুও আমাদের ভয় নেই। কানাই যে ভাবে বকাসুরের অন্ত করেছে, সে সেই ভাবে এই সর্পের নিধন করবে।” এই বলে গোপ বালকেরা গোধন গুলি সহ সব সর্পের ভেতরে প্রবেশ করলেন। অঘাসুর চুপটি করে অপেক্ষা করতে লাগলো কখন নন্দপুত্র মুখে আসবে, তারপর মুখ বন্ধ করে গিলে খাবে। সকল সখা দের অঘাসুরের মুখে যেতে দেখে অন্তিমে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অঘের মুখে প্রবেশ করতেই, অঘাসুর মুখ অন্ধকার করলো। ভেতরে দম আটকে ও নিঃশ্বাস এর অভাবে গোধন ও গোপ সখারা নিহত হয়েছিলো ।

এরপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজের তনু কে এত টাই বৃহৎ করলেন যে অঘাসুরের গলা সম্পূর্ণ রুদ্ধ হল। শ্বাসের অভাবে অঘাসুর ছটফট করতে থাকলো। শরীর মোচর দিতে লাগলো। চোখ বেরিয়ে এলো । এভাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই অঘাসুরের প্রাণ বহির্গত হল। তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিহত গোপ সখা ও গোধন গুলিকে পুনঃ জীবন দান করলেন । অঘাসুরের মরণ হতেই সেই জ্যোতি স্বরূপ গন্ধর্ব বের হয়ে ভগবানের স্তব স্তুতি করলেন। তার সকল দম্ভ দূর হয়েছিলো। সকলে নিহত অঘাসুরের শরীর থেকে নির্গত হলেন। এই ঘটনা বর্ণনা করার পর শ্রীল শুকদেব গোস্বামী মহারাজ পরীক্ষিৎ কে বললেন- “রাজন ! সেই অঘাসুরের দেহের চর্ম শুকিয়ে তা বহুদিন বৃন্দাবনে ছিলো কৃত্রিম গুহার ন্যায়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার সখা দের সহিত সেই স্থানে ক্রীড়া করতেন ।”

( শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণ )

Share:

তারাপীঠ মন্দির

তারাপীঠ মন্দির তৈরী করেছিলেন গন্ধবণিক জয়দত্ত । তবে সেই মন্দির এখন আর নেই। একদা বাণিজ্য সেরে গন্ধ বণিক জয়দত্ত নৌকায় প্রচুত ধন সম্পদ নিয়ে দেশে ফিরছিলেন। দ্বারকা নদীতে তারাপীঠে এসে দুপাশে ঘন জঙ্গল দেখে , রাত হয়ে যাওয়াতে সেইখানেই বণিক মাঝি মাল্লাদের আদেশ দিলেন, এখানেই রাত কাটাতে। সেই রাত্রে হঠাত করে বণিক জয়ের পুত্র ধনঞ্জয় মারা যায়। অকালমৃত্যুতে বণিক খুব ব্যাথা পেয়ে রোদন করতে থাকেন। সেই রাত্রে জয় দত্ত এক নারী কণ্ঠ শোনেন। সেই নারী বলছেন- “বণিক! তোমার নৌকায় কি আছে ?” পুত্রের মৃত্যুতে বণিকের কোনোদিকে খেয়াল নেই। তিন বার প্রশ্ন শোনার পর বণিক বললেন- “ছাই আছে”। পরদিন বণিক প্রভাতে উঠে দেখলেন সব ধন সম্পদ ছাই হয়ে গেছে। বণিক আশ্চর্য হলেন।


এরপর মাঝিরা মাছ ধরে মৃত মাছ একটি পুকুরে ধুতে যাবার সময় মাছ গুলো জ্যান্ত হয়ে সব বেঁচে উঠলো। এই ঘটনা দেখে মাঝিদের কথায় বণিক জয় দত্ত, তাঁর পুত্রের নিথর দেহ সেই পুকুরে স্পর্শ মাত্রই পুত্র বেঁচে উঠলো। আনন্দে বণিক তখন আত্মহারা। বণিক ভাবল নিশ্চয়ই এই স্থানে কোনো দেবী আছেন। যাঁর লীলাতেই এত সব অলৌকিক কাণ্ড হচ্ছে। গন্ধ বণিক সেই স্থানে সেই অচেনা অজানা দেবীর ধ্যানে বসলেন। দেবী তারা প্রসন্ন হয়ে বণিককে এই স্থানে দর্শন দিয়ে মন্দির নির্মাণের আদেশ দিলেন। মন্দির নির্মাণ করে মা তারার পূজা আরম্ভ হল। এরপর জয় দত্তের মন্দির নদী গর্ভে চলে যায়। তারপর ১১৫০ বঙ্গাব্দে জমিদার রামজীবন রায় নতুন করে মা তারার মন্দির নির্মাণ করেন। তিঁনি নাটোরের রাজবংশ নির্মাতা। এরপর থেকে নাটোরের জমিদারী থেকেই মন্দির পরিচালনা করা হত। এরপর বহু জমিদার , রানী মন্দিরের সংস্কার করেন।

তারাপীঠ শ্মশান এক সময় এত গভীর ছিলো যে দিনের আলোতেও সেখানে অন্ধকার বিরাজ করতো। এত ঘন বন। শৃগাল বিরাজ করতো। বাঘেরও আনাগোনা ছিলো। সেই শ্মশানে হাড়হিম পরিবেশ আর নিস্তব্ধতা ছিলো। কেবল তন্ত্র সাধক ভিন্ন সেই শ্মশানে অন্য কেও তিল মাত্র অবস্থান করতে পারতো না। এমনকি শবদাহ করতেও লোকে দল বেঁধে আসতো। শ্মশানের অনেক বিভূতি দেখা যেতো। এখানে ওখানে কেবল ভাঙা কলসি, বাঁশের মাচা, শবের বস্ত্র, হাড় গোড় খুলি ছড়ানো ছিটানো থাকতো। শৃগালেরা মড়দেহ টানাটানি করে খুবলে মাংসাহার করতো- এমনই ছিলো পরিবেশ। বর্তমানে এর ছিঁটেফোঁটাও নেই। ঠকবাজ তান্ত্রিক আর লাইট , হোটেল, মানুষের বসতিতে সেইসব পরিবেশ দিনে দিনে লুপ্ত হয়ে গেছে। তবুও স্থানমাহাত্ম্য কোনোকালেই কম হয় না- এখনও প্রকৃত তন্ত্রসাধকেরাও আসেন তারাপীঠ।

Share:

তারাপীঠের সাথে জড়িয়ে আছে সাধক বামাক্ষ্যাপা বাবার নাম

তারাপীঠের সাথে জড়িয়ে আছে সাধক বামাক্ষ্যাপা বাবার নাম। তিঁনি তারা মায়ের আদুরে ছেলে। আবার তারাপীঠ ভৈরব তিঁনি। তিঁনি মহাসাধক শ্রীবামাক্ষ্যাপা বাবা। ওঁনার আবির্ভাব হয়েছিলো তারাপীঠের কাছেই আটলা গ্রামে এক দরিদ্র ন্যায়নিষ্ঠ মাতৃভক্তব্রাহ্মণ পরিবারে। যৌবনে তিঁনি সন্ন্যাস নেন। তেঁনার দুজন গুরুদেবের নাম পাওয়া যায়- সাধক মোক্ষদানন্দ ও বজ্রবাসী কৈলাসপতি। ক্ষ্যাপাবাবা নিত্য মা তারার দর্শন লাভ পেতেন। কখনো শ্মশানে, কখনো বা আশ্চর্যকুণ্ডে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জলে ডুবে কখনো মন্দিরে মা তারার মন্দিরে বিগ্রহে। মায়ের সাথে কথা বলতেন। কখনো মায়ের কাছে কাকুতি মিনতি কখনো আবার মায়ের ওপর রাগ। মাঝে মাঝে মা তারাও তাঁর ক্ষ্যাপা সন্তানকে শাসনও করতেন। একদিনের কথা , ক্ষ্যাপাবাবা কোনো কারণে অতিষ্ঠ হয়ে মা তারাকে সমানে গালি দিচ্ছেন। হঠাত সকলে দেখলো সশব্দে এক চড় কষানোর শব্দ- দেখলেন বাবার শরীরে স্পষ্ট আঙ্গুলের ছাপ- অদৃশ্য কেও যেনো ক্ষ্যাপাবাবাকে শাসন করেছে। ভক্তেরা দেখে অবাক। আবার ক্ষ্যাপাবাবা অভুক্ত থাকলে মা তারাও অভুক্ত থেকেছেন। একবার খ্যাপাবাবাকে মন্দিরের পাণ্ডারা পূজার পূর্বেই ভোগ খাওয়ার জন্য অত্যন্ত প্রহার করে। তারপর তিন রাত ক্ষ্যাপাবাবা মুখে অন্ন তোলেন নি। মা তারাও অভুক্ত থেকে নাটোরের রানীকে স্বপ্ন দিলেন। নাটোরের রানী এসে মা তারার ভোগের পূর্বে ক্ষ্যাপাবাবার ভোগের বিধান দিলেন। আজোও সেই নিয়ম পালিত হয় ।


যাঁরা ঈশ্বর দর্শন পেয়েছেন- তাঁদের অবস্থা হয় বালকের মত, পিশাচের মত বা উন্মাদের মতো। ক্ষ্যাপাবাবার মধ্যে এই তিন লক্ষণই প্রকাশিত হয়েছিল। কখনো বালকবত মা তারার কাছে এসে আবদার বায়না, কখনো উন্মাদের মত শ্মশানে বিচরণ অট্টহাস্য, কখনো ক্রোধে এমন ‘জয় তারা’ রব তুলতেন যে গোটা শ্মশানভূমি কেঁপে উঠতো। সেই সময় ভক্তেরাও বাবার সেই রুদ্র রূপে কম্পিত হতেন। বাবার কৃপা পেয়ে বহু মুমূর্ষু রোগী একেবারে সুস্থ হয়েছেন। এমনকি মৃত ব্যক্তিও পুনর্জীবিত হয়েছেন। বাবা কাওকে তাবিজ কবজ জলপোড়া তেলপোড়া দিতেন না। রেগে কাওকে পদাঘাত বা কাওকে থুথু ছিটিয়ে দিতেই সেই রোগী একেবারে যমের দুয়ার থেকে ফিরে আসতো। বিরক্ত হয়ে কাওকে মায়ের প্রসাদী ফুল বা শ্মশানের মাটি তুলে দিতেন, তাতেই সমস্যা মিটে যেতো। এমনই ছিল বামদেবের লীলা।

বামদেবের আর একটি লীলা বড় অদ্ভুত। একবার তিঁনি মায়ের শিলামূর্তিতেই মূত্র ত্যাগ করে দিয়েছিলেন। সকলে বাবাকে বকাঝকা করলে বাবা বলেন- “শালা আমি আমার মায়ের কোলে হাগবো মুতবো- তাতে তোদের কি?” একবার কোনো কারণে ক্ষ্যাপাবাবা খুবুই অভিমান করেছিলেন মায়ের উপরে । প্রতিজ্ঞা করলেন মায়ের মন্দিরে বজ্রপাত ঘটাবেন। সেদিন নিশি রাত্রে সত্যই মায়ের মন্দিরে বাজ পড়ে মন্দিরের চূড়ার অংশ ভেঙ্গে পড়েছিলো। তারাপীঠ মা তারার মন্দির । তন্ত্র সাধনার স্থান। এই স্থানে যেনো আকাশে বাতাসে মিশে আছে ক্ষ্যাপাবাবার লীলার কথা। জয় বাম। জয় মা তারা।
Share:

দশমহাবিদ্যার দ্বিতীয়জন হলেন দেবী তারা



কিছু কিছু জনের মতে তারাপীঠকে শক্তিপীঠ ধরা হয় । দশমহাবিদ্যার দ্বিতীয়জন হলেন দেবী তারা । ভগবতী সতী মায়ের তিনটি নয়নের মণি বিন্দু বত্রিশ যোজন অন্তর ত্রিকোনাকারে তিনটি স্থানে পতিত হয়েছিলো । মিথিলার পূর্ব- দক্ষিণ কোণে ভাগীরথীর উত্তরদিকে ত্রিমুখী নদীর পূর্বে সতী দেবীর বাম নয়নের মণি পতিত হয়েছিলো । সেজন্য এই স্থানের নাম “নীল সরস্বতী তারাপীঠ” । বগুড়া জেলায় করতোয়া নদীর পশ্চিমে সতীর দক্ষিণ নয়নের মণি পতিত হয়েছিলো এইস্থান কে বলা হয় “মহাদেবী ভবানী তারাপীঠ” । বক্রেশ্বরের ঈশান কোনে উত্তর বাহিনী দ্বারকা নদীর পূর্ব তীরে মহা শ্মশানে শ্বেত শিমূল বৃক্ষ তলে দেবী সতীর ঊর্ধ্ব নয়ন তারা পতিত হয় । এই স্থানকে “শিলাময়ী দেবী চণ্ডী ভগবতী উগ্র তারা” বলা হয় । ব্রহ্মার মানসপুত্র মহর্ষি বশিষ্ঠ বহু যুগ ধরে নীলাচলে তারাদেবীর সাধনা করে সিদ্ধিলাভে ব্যর্থ হয়েছিলেন । এরপর পিতা ব্রহ্মার আদেশে বশিষ্ঠ মুনি কামাখ্যা শক্তিপীঠে গিয়ে তারা উপাসনায় ব্রতী হয়ে সেখানেও নিস্ফল হলেন। তখন ক্রোধে বশিষ্ঠ মুনি তারাবীজকে অভিশাপ দিতে উদ্যত হলে দেবী দৈববাণী করে জানালেন- “তুমি আমার সাধনার আচার পদ্ধতি জানো না, তাই ব্যর্থ হয়েছো। তুমি মহাচীনে বিষ্ণু অবতার বুদ্ধের নিকট যাও। তিনি তোমাকে আমার সাধনার পথ বলে দেবেন।”




বশিষ্ঠ মুনি এরপর ভগবান বুদ্ধের কাছে সাধনার আচার পদ্ধতি শিখলেন । ভগবান বুদ্ধ তাঁকে বক্রেশ্বরের ঈশাণ কোনে বৈদ্যনাথ ধামের পূর্ব দিকে দ্বারকা নদীর পূর্ব তীরে শ্বেত শিমূল বৃক্ষ তলে সাধনার আদেশ দিলেন । এই সাথে বলে দিলে সেখানেই তোমার আরাধিতা দেবী শিলাময়ী রূপে আছেন। ভগবান বুদ্ধের নির্দেশ মেনে মহামুনি বশিষ্ঠ সেই স্থানে এসে তারা সাধনা শুরু করলেন । কোজাগোরী লক্ষ্মী পূজার পূর্ব দিন অর্থাৎ শুক্লা চতুর্দশী তে মুনি তাঁর আরাধ্য তারা দেবীর দর্শন পেলেন । বশিষ্ঠ মুনির সাধনার সেই পঞ্চমুণ্ডি আসনে পরবর্তী কালে নাটোরের রাজা রামকৃষ্ণ, আনন্দনাথ , পণ্ডিত মোক্ষদানন্দ , সাধক বামাক্ষ্যাপা এই আসনে বসে সিদ্ধ হয়েছিলেন ।
Share:

আমি গর্বিত কারণ আমি হিন্দু । এর অর্থ হল

আমি গর্বিত কারণ আমি হিন্দু । এর অর্থ হল ,
আমি গর্বিত , কারণ আমি পৃথিবীর প্রাচীনতম আধ্যাত্মিক আদর্শের গোষ্ঠীভুক্ত ।
আমি গর্বিত , কারণ সারা পৃথিবীতে আমরাই প্রথম জ্ঞানের আলো জ্বেলেছি ।
আমি গর্বিত , কারণ আমরাই প্রথম জগতের মানুষকে তার অমৃতের অধিকার সম্পর্কে অবহিত করেছি ।
আমি গর্বিত , কারণ আমি ঋষির উত্তরাধিকারী ।



আমাদের ধর্মের নাম ' সনাতন ধর্ম' । নামটিকে বিশ্লেষণ করলে দুটি শব্দ পাই ,- ' সনাতন' ও ' ধর্ম ' । সনাতন হল তাই যা সর্বদাই সমভাবে সত্য । আমরা ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে যে সত্য উপলব্ধি করি তা আপেক্ষিক । একটি মাছি তার পুঞ্জাক্ষি দিয়ে জগৎকে যেরূপে দেখবে , মানুষের উন্নত চোখ সেরূপে দেখবেনা । অথচ উভয়েই একই জগৎকে দেখছে । এই দেখা নিরপেক্ষ সত্য নয় , এটা আপেক্ষিক সত্য । যে দেখছে শুধু তার সাপেক্ষেই সত্য । এভাবে আমরা নিজেদের ইন্দ্রিয় মন ও বুদ্ধি দ্বারা সীমায়িত আপেক্ষিক জগতে বাস করি ও আমাদের অনুভূত আপেক্ষিক সত্যকেই প্রকৃত সত্য বলে মনে করি

আমাদের প্রাচীন মুনি ঋষিরা বুঝেছিলেন - যতদিন মানুষ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা আবদ্ধ ততদিন সত্যলাভ অসম্ভব । তাঁরা ইন্দ্রিয়ের বহির্দেশে যাবার উপায় আবিষ্কার করেছিলেন । এভাবেই জন্ম হয়েছে বেদান্ত বা উপনিষদের । মুনি ঋষিদের অতিচেতন স্তরের উপলব্ধির প্রকাশই উপনিষদ । ইন্দ্রিয়াতীত এবং দেশ-কাল নিরপেক্ষ হওয়ায় তা ' সনাতন ' ।

এবার আসি ' ধর্ম ' কথাটির প্রসঙ্গে । আক্ষরিক অর্থ যাই হোকনা কেন , আধ্যাত্মিক পরিভাষায় ' ধর্ম ' হল একটি বিকাশের প্রক্রিয়া । পাশবিক মানুষের আনন্দ শুধু শরীরগত । শরীরের সুখ বা ইন্দ্রিয়চরিতার্থতা ছাড়া সে আর কিছুই বোঝেনা । আর একটু উন্নত হলে মানুষ মানসিক আনন্দলাভের অধিকারী হয় , তখন সে সাহিত্য রস , শিল্পের রস অনুভব করতে পারে । এটাকে মানবীয় স্তর বলা যায় । আরও উন্নত অবস্থায় মানুষ ঈশ্বরীয় আনন্দে বিভোর হয় , ধ্যানাবস্থায় শান্তির অপূর্ব পরিবেশ অনুভব করতে পারে ; যাকে বলা যায় দৈবী স্তর । এভাবে উন্নত হতে হতে মানুষ যখন দেহ , মন ইন্দ্রিয়ের গণ্ডি অতিক্রম করে তখনই সে লাভ করে শাশ্বত জ্ঞান বা সনাতন সত্য ।

সে অনুভব করে সে ক্ষুদ্র নয় সে দেহ নয় , মন নয় এমনকি চিন্তা চেতনাও নয় , সে আত্মা । সে এক অনন্ত , অখণ্ড অস্তিত্ব । মানুষ তখন তার ক্ষুদ্রতার খোলস পরিত্যাগ করে অনন্ত ' আমিত্বে ' লীন হয়ে যায় । ' নির্গচ্ছতি জগজ্জালাৎ পিঞ্জরাদিব কেশরী ' -- সিংহ যেমন পিঞ্জর ভেঙ্গে ফেলে বেরিয়ে যায় ঠিক তেমনি সে এই জগৎ-জাল ভেদ করে মুক্ত হয়ে যায় । ধর্ম হল এই রূপান্তরের প্রক্রিয়া , যা পশুকে মানুষে , মানুষকে দেবতায় এবং দেবতাকে ঈশ্বরে বিকশিত করে ।

ঋষিদের আবিষ্কৃত এই সত্যলাভের পথই সনাতন ধর্ম । প্রাচীন সিন্ধুনদের তীরবর্তী আর্যজাতি এর আবিষ্কারক বলে এর আরেকনাম হিন্দু ধর্ম । সিন্ধু থেকেই হিন্দু কথাটির উৎপত্তি ।

– তাপস ঘোষ
Share:

কালীমহারাজ ( স্বামী অভেদানন্দ )

তাঁহার পিতার নাম রসিকলাল, মাতার নাম নয়নতারা দেবী। নয়নতারা দেবী মা কালীর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন যে এমন একটি পুত্র সন্তানের যিঁনি ধার্মিক ও সাধু হবেন। এর পরেই ১৮৬৬ সালে ২ অক্টোবর ( বাংলা ১২৭৩ , ১৭ আশ্বিন, কৃষ্ণা নবমী ) স্বামী অভেদানন্দ জী মহারাজের জন্ম হয়। নয়নতারা দেবীর বিশ্বাস ছিলো মা কালীর কৃপাতেই এই নবজাতকের আগমন হয়েছিলো। মা নয়নতারা দেবী পুত্রের নাম রেখেছিলেন কালীপ্রসাদ। কালীপ্রসাদ বাল্যকাল হতেই সংস্কৃতে অগাধ জ্ঞান লাভ করেছিলেন। সম্ভবত ১৮৮৪ সালে তিঁনি পদব্রজে দক্ষিণেশ্বরে যান। সেখানে গিয়ে শোনেন ঠাকুর কলকাতায় গেছেন, রাত্রে আসবেন। অগ্যতা সেখানেই অপেক্ষা শুরু। এই সময় সেদিনই আর এক যুবক সেখানে আসেন। উত্তরকালে ইনি ঠাকুরের ত্যাগী সন্ন্যাসী শিষ্য স্বামী রামকৃষ্ণানন্দজী মহারাজ । রাত্রি নয়টার দিকে ঠাকুর দক্ষিণেশ্বরে আসলেন। ঠাকুরের কাছে নিজ পরিচয় দিয়ে কালীমহারাজ জিজ্ঞাসা করলেন- "আমার যোগসাধনার ইচ্ছা আছে, আপনি শিখাবেন কি?" পরমহংস দেব কিছুকাল মৌন থেকে বললেন- "তোমার এই বয়সেই যোগ শিক্ষার ইচ্ছা হয়েছে- এ অতি ভালো লক্ষণ। তুমি পূর্বজন্মে যোগী ছিলে। কিন্তু তোমার একটু বাকী ছিলো। এই তোমার শেষ জন্ম। আমি তোমায় যোগ শিক্ষা দেবো । আজ বিশ্রাম করো ; কাল এসো।"


এরপর কালীমহারাজ ঠাকুরের কাছে গেলে , ঠাকুর তাঁর জিহ্বাতে কোনো মন্ত্র লেখে দেন। কালীপ্রসাদ মহারাজ এরপর গভীর ধ্যানে মগ্ন হন। ধ্যানে তাঁর অনেক দেব দেবী দর্শন হয়েছিলো। আর মধ্যে দেখেছিলেন ঠাকুরকে। দেখলেন সব দেব দেবী একত্রে ঠাকুরের দেহে মিলে গেলো। এই ঘটনা তিঁনি ঠাকুরকে বলেছিলেন। ঠাকুর বললেন- "তোর বৈকুণ্ঠদর্শন হয়ে গেল; এখন হতে তুই অরূপের ঘরে উঠলি। আর রূপ দেখতে পাবি না।"ঠাকুরের দেহত্যাগের পর যে সকল ব্যক্তি স্বামী বিবেকানন্দের নেতৃত্বে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন, তিনি তাঁহাদের মধ্যে একজন। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠা এবং কঠোরতার সহিত ধ্যান এবং আধ্যাত্মিক পঠন-পাঠনে নিমগ্ন থাকিতেন। গুরুভ্রাতাগণের নিকট তিনি ছিলেন ‘কালী তপস্বী’।

কালীপ্রসাদ ভারতের সমস্ত তীর্থক্ষেত্র পদব্রজে পরিদর্শন করেন। ১৮৯৬ খ্রীষ্টাব্দে তিনি ইংল্যাণ্ডের Christo-Theosophical Society-তে ধর্মবিষয়ে বক্তৃতা দেন। ১৮৯৭ খ্রীস্টাব্দে তিনি আমেরিকায় ‘বেদান্ত সোসাইটি’ স্থাপন করেন এবং ১৯২১ সাল পর্যন্ত সেখানে বেদান্ত প্রচার করিতে থাকেন। এইসময় তিনি পাশ্চাত্যের বহুদেশে যান এবং বহু খ্যাতিমান লোকের সহিত মতবিনিময় করেন। প্রেততত্ত্ববিদ হিসাবেও তিনি বিদেশে খ্যাতিলাভ করেন। ১৯২১ খ্রীষ্টাব্দে কলিকাতায় ফিরিয়া তিনি ‘রামকৃষ্ণ বেদান্ত সোসাইটি’ স্থাপন করেন। এই ‘সোসাইটি’র মাধ্যমে এবং তাঁহার প্রকাশিত “বিশ্ববাণী” পত্রিকার মাধ্যমে শ্রীরামকৃষ্ণের বাণী ও ভাবধারাকে দিকে দিকে প্রচার করেন । ১৯২৫ খ্রীষ্টাব্দে তিনি দার্জিলিঙ-এ ‘রামকৃষ্ণ বেদান্ত আশ্রম’ প্রতিষ্ঠা করেন । ১৯৩৭ সালে ঠাকুরের জন্মশতবার্শিকী উপলক্ষে কলিকাতা টাউন হলে আয়োজিত ধর্মসভায় তিনি সভাপতিত্ব করেন। ১৯৩৯ খ্রীষ্টাব্দে ৮ সেপ্টেম্বর তিঁনি দেহ রাখেন। ভারতবর্ষ ও বিদেশে বেদান্তবাদ প্রচারে তাঁর ভূমিকা অনেক। কালীপ্রসাদ রচিত কয়েকটি গ্রন্থ: আমার জীবনকথা, কাশ্মীর ও তিব্বতে, পুনর্জন্মবাদ, বেদান্তবাণী, ব্রহ্মবিজ্ঞান, মরণের পারে, যোগশিক্ষা, সমাজ ও ধর্ম, হিন্দু ধর্মে নারীর স্থান, শ্রীরামকৃষ্ণ স্তোত্র রত্নাকর ইত্যাদি। জন্মতিথিতে প্রণাম জানাই।
Share:

স্বামী অভেদানন্দ

কাশীপুরের বাগানে অবস্থানকালে পাশ্চাত্য- বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান , পাশ্চাত্য ন্যায় ও দর্শন প্রভৃতি পড়িবার বাসনা আমার অন্তরে বলবতী হইল। নাট্যাচার্য্য গিরিশচন্দ্র ঘোষ ‘সায়েন্স- এ্যাসেসিয়শন’ – এ ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকারের বক্তৃতা শুনিতে যান জানিতে পারিয়া আমিও কাশীপুর হইতে পদব্রজে বৌবাজারে তথায় কয়েকবার গিয়েছিলাম। ক্রমে বিজ্ঞান, দর্শন প্রভৃতি পড়িবার ইচ্ছা আমার পূর্ণ হইয়াছিল। আমি পাশ্চাত্য দর্শন ও বিজ্ঞানাদি শাস্ত্রে ব্যুৎপন্ন লাভ করিবার জন্য অত্যন্ত আগ্রহের সহিত পাঠে মনোনিবেশ করিলাম। ক্রমে গ্যানোর পদার্থবিজ্ঞান , হার্সেলের জ্যোতির্বিজ্ঞান , জন স্টুয়ার্ট মিলের তর্কশাস্ত্র ও ধর্মের বক্তৃতাবলী , লুইসের দর্শনের ইতিহাস , হ্যামিল্টনের দর্শন প্রভৃতি গ্রন্থ আয়ত্ত করিলাম। একদিন সেই তর্কশাস্ত্র পড়িবার সময়ে পরমহংসদেব আমায় জিজ্ঞাসা করিলেনঃ ‘কিরে, কি বই পড়ছিস?’




আমি উত্তর দিলামঃ ‘ইংরাজী ন্যায়শাস্ত্র।’

পরমহংসদেব বলিলেনঃ ‘ওতে কি শেখায়?’

আমি বলিলামঃ ‘এতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমণাসম্বন্ধে তর্ক, যুক্তি ও বিচার শেখায়।’

পরমহংসদেব বলিলেনঃ ‘তুই তো দেখছি এখানে ছেলেদের মধ্যে বই পড়া ঢোকালি। তবে জানিস, বই – পড়া- বিদ্যা কিছু নয়। আপনাকে মারতে গেলে একটা নরুণ দিয়ে মারা যায়, কিন্তু অপরকে মারতে গেলে ঢাল তরোয়াল প্রভৃতি অস্ত্রশস্ত্রের দরকার হয়। বই পড়া তারই জন্য। যারা লোকশিক্ষা দেবে তাদের পড়ার দরকার আছে।’

এই বলিয়া তিনি নীরব থাকিলেন, কিন্তু আমাকে বই পড়তে নিষেধ করিলেন না। এখন বুঝিতে পারিতেছি যে, তিনি আমাকে সর্বশাস্ত্রবিশারদ করিয়া ভ্যবিষতে প্রচারকার্যে নিযুক্ত করিবেন – সেইজন্য আমাকে বই পড়িতে নিষেধ করেন নাই। তীক্ষ্ণবুদ্ধির প্রভাবে আমি সকলেরই প্রশংসা অর্জন করিয়াছিলাম । নরেন্দ্রনাথের সঙ্গে মাঝে মাঝে তুমুল তর্ক করিতাম । আমার বুদ্ধির প্রশংসা করিয়া একদিন পরমহংসদেব আমায় ডাকিয়া বলিলেনঃ ‘ ছেলেদের মধ্যে তুইও বুদ্ধিমান। নরেনের নীচেই তোর বুদ্ধি। নরেন যেমন একটা মত চালাতে পারে, তুইও সে রকম পারবি।’

( আমার জীবনকথা ১ম খণ্ড ... স্বামী অভেদানন্দ... শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ )
Share:

ভগবান শিবকে দূত করে প্রেরণ করার জন্য দেবীর একটি রূপের নাম শিবদূতী

অসুরদিগকে সুপথে ফেরাবার জন্য দেবী একবার ভগবান শিবকে দূত করে অসুরদের নিকট প্রেরণ করেছিলেন। ভগবান শিবকে দূত করে প্রেরণ করার জন্য দেবীর একটি রূপের নাম শিবদূতী, ইঁনিই অপরাজিতা। শ্রীশ্রীচণ্ডীতে লিখিত আছে-

ততো দেবীশরীরাত্তু বিনিস্কান্তাতিভীষণা ।
চণ্ডিকাশক্তিরত্যুগ্রা শিবাশতনিনাদিনী ।।
সা চাহ ধূম্রজটিলমীশানমপরাজিতা ।
দূতত্বং গচ্ছ ভগবন্‌ পার্শ্বং শুম্ভনিশুম্ভয়োঃ ।।
ব্রুহি শুম্ভং নিশুম্ভঞ্চ দানবাবতির্বিতৌ ।
যে চান্যে দানবাস্ত্রত্র যুদ্ধায় সমুপস্থিতাঃ ।।
ত্রৈলোক্যমিন্দ্রো লভতাং দেবাঃ সন্তু হবির্ভুজঃ ।
যুয়ং প্রয়াত পাতালং যদি জীবিতমিচ্ছথ ।।
বলাবলেপাদথ চেদ্‌ ভবোন্ত যুদ্ধকাঙ্ক্ষিণঃ ।
তদাগচ্ছত তৃপ্যন্তু মচ্ছিবাঃ পিশিতেন বঃ ।।
যতো নিযুক্ত দৌত্যেন তয়া দেব্যা শিবঃ স্বয়ম্‌ ।
শিবদূতীতি লোকেহস্মিস্ততঃ সা খ্যাতিমাগতা ।।
( শ্রীশ্রীচণ্ডী... অষ্টম অধ্যায়... শ্লোক- ২৩-২৮ )



অর্থাৎ- অনন্তর দেবীর শরীর থেকে অতিভীষণা, অত্যুগ্রা , অসংখ্য শৃগালের ন্যায় শব্দকারিনী চণ্ডিকাশক্তি আবির্ভূতা হইলেন। এবং সেই অপরাজিতা দেবী ধূম্রবর্ণজটাধারী মহাদেবকে বলিলেন- ভগবন্‌ , আপনি শুম্ভ ও নিশুম্ভকে এবং অনান্য যে সকল দানব তথায় যুদ্ধের ইচ্ছায় সমবেত হইয়াছে তাহাদিগকে বলুন- পুনরায় ইন্দ্র ত্রৈলোক্যের অধিপতি হউনএবং দেবতাবৃন্দ যজ্ঞের আহুতি ভোগ করুন। যদি তোমরা বাঁচিতে ইচ্ছা কর তবে পাতালে প্রবেশ কর। আর যদি বলগর্বহেতু তোমরা যুদ্ধের অভিলাষী হও তাহলে এসো, আমার শৃগালীরা তোমাদের মাংস আহার করে পরিতৃপ্ত হোক । সাক্ষাৎ শিবকে দেবী দৌতকার্য্যে নিযুক্ত করেছিলেন বলে এই জগতে তিনি শিবদূতী নামে প্রসিদ্ধা হলেন।

কিন্তু অসুরেরা দেবীর এই প্রস্তাব মেনে নেয় নি। তারা যুদ্ধেই এসেছে। শিবদূতীদেবীর যুদ্ধ কৌশলও চণ্ডীতে উল্লেখিত। দেবীকে অসংখ্য শৃগালের ন্যায় শব্দকারিনী বলা হয়েছে। চণ্ডীতে লিখিত হয়েছে-

চণ্ডাট্টহাসৈরসুরাঃ শিবদূত্যাভিদূষিতাঃ ।
পেতুঃ পৃথিব্যাং পতিতাংস্তাংশ্চখাদাথ সা তদা ।।
( শ্রীশ্রীচণ্ডী... অষ্টম অধ্যায়... শ্লোক- ৩৮ )

অর্থাৎ- শিবদূতীর উৎকট অট্টহাস্যে মূর্ছিত হইয়া অসুরেরা ধরাশায়ী হইতে লাগিল। আর তিনি পতিত অসুরদের ভক্ষণ করতে লাগলেন।

শিবদূতীস্বরূপেণ হতদৈত্যমহাবলে ।
ঘোররূপে মহারাবে নারায়ণি নমোহস্তু তে ।।
Share:

চামুণ্ডাদেবীর আবির্ভাব

চামুণ্ডা দেবী প্রকট হয়েছিলেন দেবী কৌষিকীর ললাট দেশ থেকে। চণ্ড ও মুণ্ড নামক অসুরদ্বয় কে নিহত করবার জন্যই চামুণ্ডাদেবীর আবির্ভাব। শ্রীশ্রীচণ্ডীতে লেখা আছে-

ততঃ কোপঞ্চকারোচ্চৈরম্‌বিকা তানরীন্‌ প্রতি ।
কোপেন চাস্যা বদনং মসীবর্নমভূৎ তদা ।।
ভ্রকুটিকুটিলাৎ তস্যা ললাটফলকাদ্‌দ্রুতম্‌ ।
কালী করালবদনা বিনিস্ক্রান্তসিপাশিনী ।।
বিচিত্রখট্বাঙ্গধরা নরমালাবিভূষণা ।
দ্বীপিচর্মপরীধানা শুস্কমাংসাতিভৈরবা ।।
অতিবিস্তারবদনা জিহ্বাললনভীষণা ।
নিমগ্নারক্তনয়না নাদাপূরিতদিঙ্‌মুখা ।।
( শ্রীশ্রীচণ্ডী... সপ্তম অধ্যায়... শ্লোক- ৫- ৮ )



অর্থাৎ- তখন অম্বিকা সেই শত্রুগণের প্রতি অত্যন্ত ক্রুদ্ধা হইলেন এবং ভীষণ ক্রোধে তাঁহার মুখমণ্ডল কৃষ্ণবর্ণ হইল। তখন দেবীর ভ্রূকুটি কুটিল ললাটদেশ হতে শীঘ্র খড়্গধরা ও পাশহস্তা ভীষনবদনা কালী বিনিঃসৃতা হইলেন। অম্বিকার ললাটোদ্ভুতা সেই চামুণ্ডা দেবী বিচিত্র নরকঙ্কালধারিণী, নৃমুণ্ডমালিনী, ব্যাঘ্র- চর্ম পরিহিতা , অস্থিচর্মমাত্রদেহা , অতিভীষণা, বিশাল- বদনা, লোলজিহ্বায় ভয়প্রদা,কোটরগত আরক্ত চক্ষুবিশিষ্টা এবং বিকট শব্দে চারপাশ পূর্ণকারিণী।

দেবী অসুরসেনাদের মধ্যে প্রবেশ করে অসুরদের বধ ও ভক্ষণ করতে লাগলেন। এমনকি অশ্ব- সারথি- সহিত অসুরদের রথ শুদ্ধ মুখে নিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেললেন। অসুরদের কাওকে কেশ এবং গ্রীবা ধরে বধ করলেন। কতেক অসুর দেবীর চরণে দলিত হল। এমনকি অসুরেরা যে সকল অস্ত্র নিক্ষেপ করলো- দেবী সেই অস্ত্রগুলিও চিবিয়ে ভক্ষণ করলেন। কোনো অসুরকে দেবী খড়্গ দিয়ে বধ, কাহাকে খট্বাঙ্গের প্রহারে হত কাওকে চর্বণ করে বধ করলেন। দেবীর ভীম বিক্রমে দানবিক আঘাত ক্রমশ শক্তিহীন হলে চণ্ডমুণ্ডের সাথে দেবী কালীর যুদ্ধ আরম্ভ হল। দেবী কালী ‘হুং’ শব্দ করে চণ্ডের কেশ ধরে খড়্গ দিয়ে শিরোচ্ছেদ করলেন। মুণ্ড এরপর যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলে দেবী খড়্গ দিয়ে তারও শিরোচ্ছেদ করলেন। রক্তারক্তি মাখা দেবীর সমগ্র শরীর, খড়্গও রক্তে রাঙা। সেই অবস্থায় দেবী চামুণ্ডা হাতে চণ্ড- মুণ্ডের শির নিয়ে দেবী কৌশিকীকে উপহার দিলেন। দেবী কৌশিকী প্রীতা হয়ে বললেন-

যস্মাচ্চণ্ডচ্চ মুণ্ডচ্চ গৃহীত্বা ত্বমুপাগতা।
চামুণ্ডেতি ততো লোকে খ্যাতা দেবি ভবিষ্যসি ।
( শ্রীশ্রীচণ্ডী... সপ্তম অধ্যায়... শ্লোক- ২৭ )

অর্থাৎ- দেবি, তুমি চণ্ড ও মুণ্ডের মস্তকদ্বয় আমার নিকট আনিয়াছ বলিয়া ধরিত্রীতে তুমি চামুণ্ডা নামে বিখ্যাত হইবে।

এই দেবী রক্তবীজের রক্ত পান করেছিলেন। কোনো কোনো চণ্ডীর ব্যাখাকার এই চামুণ্ডাদেবীকেই তন্ত্রের দেবী কালিকা বলে উল্লেখ করেছেন।

দংষ্ট্রাকরালবদনে শিরোমালাবিভূষণে ।
চামুণ্ডে মুণ্ডমথনে নারায়ণি নমোহস্তু তে ।।

এই হল সংক্ষিপ্ত অষ্টমাতৃকার কথা। এছাড়াও তিনটি শক্তির নাম আছে। এঁনারা হলেন কুবের দেবের শক্তি কৌবেরী, বরুণের শক্তি বারুনী আর যমের শক্তি যামিনী।

Sumon Basak

Share:

দেবী দুর্গার সাথে মা লক্ষ্মী, মা সরস্বতী, সিদ্ধিদাতা শ্রীগনেশ ও দেবসেনাপতি কার্ত্তিক কেন থাকেন ?

 ছোটোবেলায় আমাদের গল্প শোনানো হতো- দেবী দুর্গা বা পার্বতীর , দুই মেয়ে দুই ছেলে। দেবী পার্বতীর সন্তান রূপে পুরাণে কার্ত্তিক ও গণেশের কথা থাকলেও, কোনো পুরাণেই আমরা দেবীর কন্যাসন্তান রূপে লক্ষ্মী, সরস্বতীর উল্লেখ পাই না । শ্রীশ্রীচণ্ডীতে আমরা মহিষমর্দিনী দেবীর সাথে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্ত্তিক, গণেশের উল্লেখ পাই না। তবে এঁনারা কেন থাকেন ? দেবী দুর্গা সর্ব দেবতার তেজপুঞ্জীভূতা মহাশক্তি। অসুর ধ্বংসের জন্য দেবতার তেজ একত্রিত হয়েই দেবীর আগমন ঘটেছিলো ( দেবীর সৃষ্টি বলা সমীচীন না। কারন সেই ভগবতীর জন্ম – মৃত্যু বলে কিছু নেই। বিশেষ বিশেষ সময়ে যেখন সৃষ্টির তিন স্তম্ভ ব্রহ্মা- বিষ্ণু- মহেশ অপারগ হন- তখনই ভগবতীর আবির্ভাব ঘটে। দেবীর আগমনের উদ্দেশ্য সর্বহিত ও দানব নাশ ) । সিদ্ধিদাতা শ্রীগনেশ শ্রম শক্তি অর্থাৎ শূদ্র শক্তির প্রতীক।



 শূদ্র যেমন তাহার অক্লান্ত পরিশ্রম দ্বারা সমাজ কে সকল সেবা প্রদান করেন। লক্ষ্মী দেবী বৈশ্যশক্তির প্রতীক অর্থাৎ বণিক শ্রেনী যেমন ব্যাবসা বাণিজ্যের দ্বারা সমাজের আর্থিক ভিত মজবুত করেন। মা লক্ষ্মীকে ঐশ্বর্য ও ধন সম্পদের দেবী বলে। কুমার কার্ত্তিক ক্ষত্রিয়শক্তির প্রতীক। কুমার কার্ত্তিক দেবতাদের সেনাপতি। তারকাসুর সহ অসুর ধ্বংস করে শান্তি স্থাপন তাঁহার উদ্দেশ্য ছিলো। তিঁনি যুদ্ধ বিগ্রহ করেন এমন কি তাঁর বাহন ময়ূর অল্প নিদ্রিত ও সর্প কূল কে নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করে যুদ্ধে নিপুন এক সেনার মতো পরিচয় দেয় । ক্ষত্রিয় গণ যুদ্ধ করে শত্রু নাশ করে সমাজ কে সুরক্ষিত করেন । রাজা হলেন ক্ষত্রিয়- তিনি শত্রু নাশ করে প্রজাদের সন্তানবৎ পালন করেন । মা সরস্বতী বিদ্যার দেবী। তিঁনি ব্রহ্মণ্য শক্তির প্রতীক। ব্রাহ্মণ বেদ জ্ঞান প্রসার করে সকলের অজ্ঞানতা দূর করে সমাজকে বৈদিক জ্ঞান প্রদান করেন । ব্রাহ্মণ শাস্ত্র জ্ঞান প্রদান করে অন্ধকার দূর করেন , তাই সর্বশুক্লা দেবী সরস্বতী ব্রাহ্মণশক্তির প্রতীক। মা দুর্গার কাঠমোয় তাই দেখা যায় শূদ্রশক্তি, বৈশ্যশক্তি , ক্ষত্রিয়শক্তি ও ব্রহ্মণ্যশক্তি এক সাথে বর্তমান- আর মধ্যে অসুরদলনী মা দুর্গা অসুর নিধন মূর্তিতে আবির্ভূতা । চতুর্বর্ণ একত্র হলেই মা মহাশক্তির আবির্ভাব ঘটে- আর স্থাপিত হয় বৈদিক সমাজ । হি স্বয়ং ঋষিকন্যা পরমাত্মার সহিত নিজ অভেদ জ্ঞান করে “দেবীসুক্তে” বলেছেন –


অহং রাষ্ট্রী সংগমনী বসুনাং
চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম্ ।
তাং মা দেবা ব্যদধুঃ পুরুত্রা
ভুরিস্তাত্রাং ভূর্য্যাবেশয়ন্তীম্ ।।

( অর্থাৎ- আমি রাষ্ট্রী, রাষ্ট্রের অধীশ্বরী । রাজ্যরক্ষার্থ যে সম্পদের প্রয়োজন আমি তাহার বিধানকর্তা । সংসারের শান্তিলাভের জন্য যে ব্রহ্মজ্ঞান প্রয়োজন, আমি তাহাই জানি। আমি এক হইয়াও বহুরূপা । সর্ব জীবে আমি বহু রূপে প্রবিষ্ট হইয়া আছি । দৈবী সম্পৎশালী দেবতাগণ যাহা সাধন করেন সকলই আমার উদ্দেশ্যে সম্পন্ন হয় । )

এটাই আদর্শ বৈদিক সনাতন ধর্মীয় রাষ্ট্রের মূর্তি।
Share:

লক্ষ্মীদেবীর বাহনটি পেঁচা

লক্ষ্মীদেবীর বাহনটি পেঁচা। লক্ষ্মী এমন সুন্দরী, আর বাহনটি এমন কদাকার। পেঁচা দিবান্ধ। ধনশালী হইলেই লোক প্রায়শঃ অন্ধ হইয়া যায়। ধনী হইবার পূর্বে ভাবে- ধন হইলে সকলের উপকার করিব। আত্মীয় স্বজনদের আর দুঃখকষ্টে থাকিতে দিব না। কিন্তু ধন পাওয়া মাত্র সে পেঁচক হইইয়া যায়।

লক্ষ্মীমান হইয়াও চক্ষুষ্মান এমন মানুষ কি নাই? আছে। লক্ষ্মীর বাহন পেঁচক তাঁহাদের প্রতি ভালকথা বলে- “ভাই অন্ধ হও। মিথ্যার পথে ধন আসিবে, চুরির পথে ধন আসিবে, ঘুষের পথে ধন আসিবে, এই সব বিষয়ে অন্ধ হইয়া যাও। যাহারা এই সব কুৎসিত পথে ধনশালী হইয়াছে তাহাদের দিকে তাকাইও না।”


পেঁচক বলে, “আমি যমের দূত । কুপথে যদি ধন অন্বেষণ কর, তবে যমের দণ্ড মাথায় পড়িবে। আমার প্রভু যমের চিন্তা কর। মৃত্যুর কথা ভাব। কিছুই সঙ্গে যাইবে না। সুতরাং হীন পথে ধন আনিও না, পবিত্র পথে ধন আয় কর। পবিত্র কার্য্যে ব্যয় কর।” যাহার মুক্তি পথের সাধক, পেঁচক তাহাদিগকে গীতার বাণী স্মরণ করাইয়া দেয়। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলিয়াছেন-

যা নিশা সর্বভূতানাং তস্যাং জাগর্ত্তি সংযমী ।
যস্যাং জাগ্রতি ভূতানি সা নিশা পশ্যতো মুনেঃ ।।

যোগী আর ভোগী জীবের কথা বলিতেছেন । ভোগীর পক্ষে যা রাত্রি, যোগীর পক্ষে তা দিন। ভোগীর যা দিন, যোগীর তা রাত্রি। ভোগী আধ্যাত্মিক বহুবিষয়ে ঘুমন্ত, বিষয়সম্ভোগে সজাগ। কিন্তু সংযতেন্দ্রিয় যোগী আত্মিক বিষয়ে সজাগ, বিষয়ে ভোগে উদাসীন অচেতন তুল্য।

পেঁচক মুক্তিকামী সাধককে বলে, “সকলে যখন ঘুমায় তুমি আমার মত জাগিয়া থাক। আর সকলে যখন জাগ্রত তখন তুমি আমার মত ঘুমাইতে শিখ, তবেই সাধনে সিদ্ধি। কৈবল্যধন লাভ।”

পরমার্থধনাভিলাষী সাধক পেঁচার মত রাত্রি জাগিয়া সাধন করে। লোকচক্ষুর অন্তরালে নির্জনে থাকে। লক্ষ্মীমার বাহনরূপে আসন লইয়া পেঁচকের যে ভাষণ তাহা বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন প্রকার সাধকের উপাদেয় সম্পদ ।

( মা দুর্গার কাঠামো... ডঃ মহানামব্রত ব্রহ্মচারী )


Sumon Basak
Share:

মা লক্ষ্মীর আবির্ভাব কি ভাবে হয়েছিলো ?

 বহু পূর্বের কথা। এক সময় দুর্বাসা মুনি একটি পুস্পমাল্য দেবরাজ ইন্দ্রকে উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু রাজা ইন্দ্রদেব তুচ্ছ জ্ঞান করে সেই পুস্পমাল্য দিলেন ঐরাবতকে । ঐরাবত সেই পুস্পমাল্যের কদর বুঝতে না পেরে পায়ে পিষ্ট করে ফেলল। ইন্দ্রদেবতা আর তার বাহনের এই রূপ আস্ফালন দম্ভ দেখে দুর্বাসা মুনি ক্রোধে ইন্দ্রকে শ্রীভ্রষ্ট হবার শাপ দিলেন। লক্ষ্মী দেবীকে হারিয়ে দেবতারা খুব দুঃখে কষ্টে পড়ে ত্রিদেবের আদেশে ক্ষীর সমুদ্র মন্থন করার পরামর্শ দিলেন। এই মন্থনের অন্য উদ্দেশ্য ছিলো অমৃত প্রাপ্তি। মন্দার পর্বতকে মন্থন দণ্ড বানিয়ে ভগবান নারায়ন কূর্ম অবতার নিয়ে পৃষ্ঠে নিলেন, বাসুকী নাগ হলেন রজ্জু। ত্রিদেবের আদেশে দেবতা ও অসুরেরা মিলে মন্থন আরম্ভ করলেন । ক্ষীর সমুদ্র মন্থন আরম্ভ হতেই একে একে উঠে আসতে লাগলো বারুনী, সুন্দরী অপ্সরা সকল, ৩ রকমের অদ্ভুদ দিব্য ক্ষমতা সম্পন্ন প্রানী, কামধেনু সুরভি, ঐরাবত, উচ্চৈঃশ্রবাঃ অশ্ব , মণি মুক্তা, কৌস্তভ মণি। কিন্তু মন্থন দণ্ড তে ঘুরতে ঘুরতে যখন বাসুকী নাগ বিষবমি আরম্ভ করলো তখন মন্থন স্তব্ধ হল। বিষের প্রভাবে দেবতাকূল এমনকি অসুরকূল যারা বাসুকী নাগের মস্তকের দিকে ছিলো তারা ত বটেই, সমস্ত দিকে বিষাক্ত আবহাওয়াতে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠলো। এরপর ভগবান শিব সেই “হলাহল” নামক বিষ পান করে হলেন “নীলকণ্ঠ”।


পারিজাত নামক বৃক্ষ উঠে এলো। শার্ঙ্গ ধনুক, চন্দ্র দেবতা উঠে এলেন । শঙ্খ, জ্যেষ্ঠা , বরুণ দেবের ছাতা, দেবমাতা অদিতির কুণ্ডল, কল্পতরুবৃক্ষ, নিদ্রা উঠে এলো। অন্তিমে এলেন মা লক্ষ্মী দেবী। ঐশ্বর্য ও “শ্রী”, ধন সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মা লক্ষ্মী উঠে এলেন। এরপর এলেন ধন্বন্তরি দেব, হস্তে অমৃত কলস নিয়ে। এসব পৌরাণিক আখ্যান। মানুষের মনেই দেবতা ও অসুর দুই পক্ষই থাকে। এই দুই পক্ষের মধ্যেই অবিরত টানাহ্যাঁচড়া চলে। দেবতার পাল্লা যখন প্রবল হয় তখন দেবী লক্ষ্মীর মতো সদাচারশীলা দেবী, হস্তির ন্যায় শান্ত ধীর বিচক্ষনতা, অশ্বের ন্যায় জড়তা ভাব নষ্টকারী ইত্যাদি দেখা যায়। অসুরের পাল্লা ভারী হলে নিদ্রা, অলসতা , মদিরা ইত্যাদি প্রভাব দেখা যায়। দেবী লক্ষ্মীর এক নাম “সাগরনন্দিনী”- কারণ মা লক্ষ্মী সমুদ্রে প্রবেশ করেছিলেন সাগর রাজার কন্যারূপে। সাগররাজ রত্নাকর দেবীর পিতা রূপে ভগবান বিষ্ণুর সাথে কন্যার বিবাহ দিয়েছিলেন। মা হলেন সাগরকন্যা, তাই ত সাগর থেকে জাত কড়ি, শঙ্খ মা লক্ষ্মীর এত প্রিয়। মা লক্ষ্মীর বাহন রূপে পেঁচক কোন পুরাণে আছে থাকলে জানাবেন। মা লক্ষ্মী পদ্মালয়া। পেঁচক বাহন কি ভাবে হলেন জানাবেন।


Sumon Basak

Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।