২৫ অক্টোবর ২০১৮

অঘাসুর

একে একে কংস যখন বৃন্দাবনে অসুরদের প্রেরণ করছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে বধ করার জন্য- সেই সব অসুরেরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের হাতে নিহত হয়ে মুক্তি পেলো। মূর্খ কংস এরপর অঘাসুর নামক এক অসুর কে প্রেরণ করেছিলো। অঘাসুর ছিলো পূতনা ও বকাসুরের ভ্রাতা । অঘাসুর পূর্বে এক দাম্ভিক গন্ধর্ব ছিলো। নিজ সৌন্দর্যে সে এতটাই গর্বিত ছিলো যে একদিন অষ্টবক্র মুনিকে তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে উপহাস করেছিলো। মুনির শাপে সে একটি বৃহৎ সর্পে পরিণত হয় । সেই অঘাসুর বৃন্দাবনে এসে বিশাল শরীর ধারণ করে মুখ টি খোলা রাখলো। অপরদিকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সখা দের নিয়ে গোচারণ ও খেলাধূলা করছেন। হঠাত সেই মুখ উন্মোচিত সর্প কে দেখে গুহা ভ্রমে গোপ বালকেরা বলতে লাগলো- “আরে এই গুহা এখানে কি ভাবে এলো ? আগে ত দেখিনি। এই গুহার মুখ প্রকাণ্ড যেনো একটি বৃহৎ সর্পের মুখের ন্যায় । গুহার ওপরে ও নীচে সূর্যের আলোয় এমন আভা পেয়েছে যেনো মনে হচ্ছে এটি সেই বৃহৎ সর্পের মুখ।”




গোপ বালকেরা বলতে লাগলো- “আরে এই গুহার প্রবেশের পথ টাও সর্পের জিহ্বার ন্যায় । গুহার ভেতরে সর্পের উদরের ন্যায় অন্ধকার । এই গুহার ভেতর থেকে মৃত গলিত পশু পক্ষীর গন্ধ আসছে, যেমন সর্প প্রানীদের ভক্ষণ করলে তাহার মুখ হতে আসে। এই গুহার ওপরের নীচের পাথর গুলি সর্পের দন্তের ন্যায় মনে হচ্ছে। এসো আমরা ভেতরে প্রবেশ করি। এ যদি গুহা না হয়ে সর্প হয় তবুও আমাদের ভয় নেই। কানাই যে ভাবে বকাসুরের অন্ত করেছে, সে সেই ভাবে এই সর্পের নিধন করবে।” এই বলে গোপ বালকেরা গোধন গুলি সহ সব সর্পের ভেতরে প্রবেশ করলেন। অঘাসুর চুপটি করে অপেক্ষা করতে লাগলো কখন নন্দপুত্র মুখে আসবে, তারপর মুখ বন্ধ করে গিলে খাবে। সকল সখা দের অঘাসুরের মুখে যেতে দেখে অন্তিমে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অঘের মুখে প্রবেশ করতেই, অঘাসুর মুখ অন্ধকার করলো। ভেতরে দম আটকে ও নিঃশ্বাস এর অভাবে গোধন ও গোপ সখারা নিহত হয়েছিলো ।

এরপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজের তনু কে এত টাই বৃহৎ করলেন যে অঘাসুরের গলা সম্পূর্ণ রুদ্ধ হল। শ্বাসের অভাবে অঘাসুর ছটফট করতে থাকলো। শরীর মোচর দিতে লাগলো। চোখ বেরিয়ে এলো । এভাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই অঘাসুরের প্রাণ বহির্গত হল। তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিহত গোপ সখা ও গোধন গুলিকে পুনঃ জীবন দান করলেন । অঘাসুরের মরণ হতেই সেই জ্যোতি স্বরূপ গন্ধর্ব বের হয়ে ভগবানের স্তব স্তুতি করলেন। তার সকল দম্ভ দূর হয়েছিলো। সকলে নিহত অঘাসুরের শরীর থেকে নির্গত হলেন। এই ঘটনা বর্ণনা করার পর শ্রীল শুকদেব গোস্বামী মহারাজ পরীক্ষিৎ কে বললেন- “রাজন ! সেই অঘাসুরের দেহের চর্ম শুকিয়ে তা বহুদিন বৃন্দাবনে ছিলো কৃত্রিম গুহার ন্যায়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার সখা দের সহিত সেই স্থানে ক্রীড়া করতেন ।”

( শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণ )

Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।