২৫ অক্টোবর ২০১৮

তারাপীঠ মন্দির

তারাপীঠ মন্দির তৈরী করেছিলেন গন্ধবণিক জয়দত্ত । তবে সেই মন্দির এখন আর নেই। একদা বাণিজ্য সেরে গন্ধ বণিক জয়দত্ত নৌকায় প্রচুত ধন সম্পদ নিয়ে দেশে ফিরছিলেন। দ্বারকা নদীতে তারাপীঠে এসে দুপাশে ঘন জঙ্গল দেখে , রাত হয়ে যাওয়াতে সেইখানেই বণিক মাঝি মাল্লাদের আদেশ দিলেন, এখানেই রাত কাটাতে। সেই রাত্রে হঠাত করে বণিক জয়ের পুত্র ধনঞ্জয় মারা যায়। অকালমৃত্যুতে বণিক খুব ব্যাথা পেয়ে রোদন করতে থাকেন। সেই রাত্রে জয় দত্ত এক নারী কণ্ঠ শোনেন। সেই নারী বলছেন- “বণিক! তোমার নৌকায় কি আছে ?” পুত্রের মৃত্যুতে বণিকের কোনোদিকে খেয়াল নেই। তিন বার প্রশ্ন শোনার পর বণিক বললেন- “ছাই আছে”। পরদিন বণিক প্রভাতে উঠে দেখলেন সব ধন সম্পদ ছাই হয়ে গেছে। বণিক আশ্চর্য হলেন।


এরপর মাঝিরা মাছ ধরে মৃত মাছ একটি পুকুরে ধুতে যাবার সময় মাছ গুলো জ্যান্ত হয়ে সব বেঁচে উঠলো। এই ঘটনা দেখে মাঝিদের কথায় বণিক জয় দত্ত, তাঁর পুত্রের নিথর দেহ সেই পুকুরে স্পর্শ মাত্রই পুত্র বেঁচে উঠলো। আনন্দে বণিক তখন আত্মহারা। বণিক ভাবল নিশ্চয়ই এই স্থানে কোনো দেবী আছেন। যাঁর লীলাতেই এত সব অলৌকিক কাণ্ড হচ্ছে। গন্ধ বণিক সেই স্থানে সেই অচেনা অজানা দেবীর ধ্যানে বসলেন। দেবী তারা প্রসন্ন হয়ে বণিককে এই স্থানে দর্শন দিয়ে মন্দির নির্মাণের আদেশ দিলেন। মন্দির নির্মাণ করে মা তারার পূজা আরম্ভ হল। এরপর জয় দত্তের মন্দির নদী গর্ভে চলে যায়। তারপর ১১৫০ বঙ্গাব্দে জমিদার রামজীবন রায় নতুন করে মা তারার মন্দির নির্মাণ করেন। তিঁনি নাটোরের রাজবংশ নির্মাতা। এরপর থেকে নাটোরের জমিদারী থেকেই মন্দির পরিচালনা করা হত। এরপর বহু জমিদার , রানী মন্দিরের সংস্কার করেন।

তারাপীঠ শ্মশান এক সময় এত গভীর ছিলো যে দিনের আলোতেও সেখানে অন্ধকার বিরাজ করতো। এত ঘন বন। শৃগাল বিরাজ করতো। বাঘেরও আনাগোনা ছিলো। সেই শ্মশানে হাড়হিম পরিবেশ আর নিস্তব্ধতা ছিলো। কেবল তন্ত্র সাধক ভিন্ন সেই শ্মশানে অন্য কেও তিল মাত্র অবস্থান করতে পারতো না। এমনকি শবদাহ করতেও লোকে দল বেঁধে আসতো। শ্মশানের অনেক বিভূতি দেখা যেতো। এখানে ওখানে কেবল ভাঙা কলসি, বাঁশের মাচা, শবের বস্ত্র, হাড় গোড় খুলি ছড়ানো ছিটানো থাকতো। শৃগালেরা মড়দেহ টানাটানি করে খুবলে মাংসাহার করতো- এমনই ছিলো পরিবেশ। বর্তমানে এর ছিঁটেফোঁটাও নেই। ঠকবাজ তান্ত্রিক আর লাইট , হোটেল, মানুষের বসতিতে সেইসব পরিবেশ দিনে দিনে লুপ্ত হয়ে গেছে। তবুও স্থানমাহাত্ম্য কোনোকালেই কম হয় না- এখনও প্রকৃত তন্ত্রসাধকেরাও আসেন তারাপীঠ।

Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।