স্বামী সিদ্ধেশ্বরানন্দ মহারাজের লেখনী থেকে এই উৎসবের কথা জানা যায় । ১৩৪২ বঙ্গাব্দ। চারণদল তখন গুজরাটের আমেদাবাদ শহরে । গুজরাটিদের প্রতিটি বাড়ীতে একটি করে দোলনা থাকে। আয় বুঝে গৃহের লোকরা সাধ্য মতো একটি করে দোলনা কিনে ঘরে রাখেন, নিজেরাও দোল খান, অতিথি কেউ দোলনাতে বসিয়ে দোলা দেন। স্বামী সিদ্ধেশ্বরানন্দ এই দেখে ভাবলেন, একটি দোলনা বাজিতপুর কিনে নিয়ে যাবেন। কিন্তু গুরুদেব তো বিশ্রাম , আরাম এর ঊর্ধ্বে ছিলেন, তাই প্রথম প্রথম স্বামী সিদ্ধেশ্বরানন্দ দোলনা কেনার সঙ্কল্প ত্যাগ করলেন । আমেদাবাদ হতে চারণদল গেলো কলোল নামক শহরে।কলোল হতে স্বামী সিদ্ধেশ্বরানন্দ ও স্বামী আত্মস্বরূপানন্দ সিদপুর নামক শহরে গেলেন। সেখানেই দোলনার ব্যাপারে চিন্তাধারা বাস্তবায়িত হল। স্বামী আত্মস্বরূপানন্দ দোলনার একটা চিত্র আঁকালেন- সেটি বানাতে খরচ পড়বে আড়াই শত টাকা। দোলনা টাঙ্গানোর শিকল কিনতে খরচ হবে আরোও পঞ্চাশ-ষাট টাকা। স্বামী আত্মস্বরূপানন্দ শিকলের খরচা দিবেন বলে জানালেন। চারণদলের প্রাপ্ত প্রনামী থেকে দোলনার খরচ বহনের সিদ্ধান্ত হল ।দোলনা তৈরীর ব্যাপার টা কলকাতা আশ্রমেও এসে পৌছালো । স্বামী বেদানন্দ জী টেলিগ্রাম করে দোলনা কিনতে বারন করলেন। চারণদলের নেতা স্বামী শিবানন্দ বেজায় চটে গেলেন। স্বামী সিদ্ধেশ্বরানন্দ কিন্তু মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, দোলনা নেবোই । প্রানারাম গুরুমহারাজকে সেই দোলনাতে বিরাজিত করে দোল দেবোই ।
যাই হোক দোলনা ও শিকল কেনা হল। দোলনা নিয়ে স্বামী সিদ্ধেশ্বরানন্দ কলকাতা বালীগঞ্জ আশ্রমে এসে জানতে পারলেন যে গুরুমহারাজ বাজিতপুর চলে গেছেন। অপরদিকে দোলনা কেনার ব্যাপারটা নিয়ে স্বামী বেদানন্দ খুবুই ক্ষিপ্ত হয়ে ছিলেন। স্বামী সিদ্ধেশ্বরানন্দ খুব কাতর স্বরে অনুনয় বিনয় দ্বারা স্বামী বেদানন্দ কে একবার দোলনাটি দেখার অনুরোধ জানালেন। স্বামী বেদানন্দ কোমল হয়ে বললেন- “কি এনেছিস, চল তো দেখি।” দোলনাটি দেখে স্বামী বেদানন্দ জানালেন- “ও হরি, এটা এনেছিস ! এটা তো একটা বেঞ্চের মতো। এটা আর এমন কি । আমি মনে করেছিলাম কি না কি যেন হচ্ছে , তাই টেলিগ্রাম করেছিলাম। এটাতে কোন দোষ হবে না। এটা নিয়ে চল বাজিতপুরে। তুই শান্ত হ, কাঁদিস নে।” কলকাতা আশ্রম থেকে তেঁনারা বাজিতপুরে আসলেন । মাঘী পূর্ণিমা উৎসব। স্বামীজী গন ভাবিলেন এখন অকালে দোল করিলে কেমন হয় ? মাঘী পূর্ণিমার এক মাস পরে দোল পূর্ণিমা। ভক্তের হৃদয়ে ভগবানের নিত্য দোল উৎসব হয়। সেই মতো দোলনা টিকে ফুলে সাজানো হল। নাট মন্দিরে রাখা হল । এই উৎসবের জন্য একটি গান চাই। স্বামী ভূমানন্দ রচনা করলেন একটি সঙ্গীত-
তালে তালে দোল দে দোল দে দোল,
দোদুল দোদুল দোলে !
হৃদয়েরি দোলে প্রিয়তম দোলে,
দোলে ভুবন ভোলে ।।
বিশ্বদোলনে নাথ দোলেরে,
অপরূপ রূপে ভুবন ভোলেরে !
আয়রে প্রেমিক, আয় দলে দলে
অবগাহি আঁখি জলে ।।
দুলাল দোলেরে গুলাল মাখি,
ভুলালো আজিরে ভরিয়া আঁখি ,
ঢালো ঢালো ঢালো হে সাকী,
প্রেমপিয়ালা ছলে ।।
সেই ফুলে ঢাকা দোলনায় গুরুমহারাজ করে বসিয়ে দোলা দিতে লাগলেন অগণিত ভক্ত গন । রাশি রাশি ফুলে ভক্তের শ্রদ্ধা অর্ঘ গুরুদেব গ্রহণ করে সকলকে কৃপা করতে লাগলেন ।
( শ্রী শ্রী প্রনবানন্দ শতরূপে, শতমুখে ... স্বামী সিদ্ধেশ্বরানন্দ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন