শিবমহাপুরাণের ধর্মসংহিতাতে দেবীর দ্বারা রুরু দৈত্য বধের আখ্যান দেখা যায়। “দেবীপুরাণে” রুরু দৈত্যের ঘটনা অন্যভাবে বর্ণিত। সেখানে অষ্টমাতৃকার আবির্ভাবের কথাও আছে। শিবমহাপুরাণে লেখা আছে- রুরু দানব, দেবী পার্বতীকে প্রাপ্তি করার জন্য প্রজাপতি ব্রহ্মার উপাসনা করেন । প্রজাপতি ব্রহ্মা তুষ্ট হয়ে বরদান করতে আসলে অসুর রুরু চাইল- “হে প্রজাপতি । স্ত্রীদিগকে নিয়ে আমি বিন্দুমাত্র ভীত নই। মহাদেব যেনো আমার বশ্যতা স্বীকার করেন। আর দেবী পার্বতী যেনো আমাকে গ্রহণ করেন।”
এই শুনে প্রজাপতি ব্রহ্মা ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন- “রে দুরাচারী! তোমার প্রার্থনা কখনো ফলবে না।”
ব্রক্ষ্মোবাচঃ-
জগন্মাতা পার্ব্বতী লোকপূজ্যা
কালত্রয়ে কুত্রচিদপ্যনার্য্য।।
( শিবমহাপুরাণ/ ধর্মসংহিতা / ষষ্ঠোহধ্যায়/ ১০)
অর্থাৎ- ওরে অধম! দেবী পার্বতী জগতের মাতৃস্বরূপা এবং তিনি লোকত্রয়ে কালত্রয়ে পূজিতা
দানব রুরু বলল- “প্রজাপতি! যদি আপনি আমাকে , দেবী পার্বতী প্রদান না করেন তাহলে আমি কঠোর তপ করবো। আমার তপাগ্নিতে ত্রিলোক ভস্মীভূত হবে।”
ব্রহ্মা প্রস্থান করলে অসুর রুরু কঠোর তপ সাধনা করল। তার তপাগ্নিতে ত্রিলোক ভস্মীভূত হতে লাগল। কৈলাসে হর গৌরী এই তপাগ্নি দেখলেন। দেবাদিদেব তখন মহাদেবীকে সব ঘটনা বর্ণনা করলেন। মহাদেবী ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন- “সে অসুরের এত দুঃসাহস যে আমাকে কামনা করে!”
এই বলে দেবী পার্বতী ক্রুদ্ধ হয়ে অসুরের তপস্যাস্থানে গেলেন। পথে দেখলেন এক স্থানে গজ আর সিংহ যুদ্ধ করছে। দেবী দুই পশুকে বধ করলেন, তাদের রক্তে দেবীর শরীর রক্তবর্ণ হল। দেবী দুই পশুর চর্ম ধারণ করলেন। তারপর অসুরের সম্মুখে গেলেন। অসুর দেবীকে দেখে চিনতে পারলো না। অসুর বলল- “দেবী তুমি কে ? আমি তো তোমাকে কামনা করি নাই। তুমি ত পার্বতী নও। আমার তপস্যা খণ্ডনের জন্য এখুনি তোমাকে যমালয়ে প্রেরণ করবো।”
এই বলে অসুর রুরু গদা নিয়ে রে রে করে তেরে এলো। দেবীও মুষ্টিযুদ্ধ আরম্ভ করলেন। দেবীর সাথে যুদ্ধে রুরু ধরাশায়ী হল। দানবরাজ রুরু এরপর গাছ, পাথর তুলে নানা মায়াবিদ্যা দ্বারা দেবীর সহিত যুদ্ধ আরম্ভ করলো। কিন্তু দেবী , অসুরের সব প্রহার ব্যর্থ করল। দারুন ক্ষতবিক্ষত হয়ে অসুর রুরু পলায়ন করল। দেবীও তার পেছন পেছন চললেন। অসুর রুরু নানালোকে গমন করল, কিন্তু নিস্তার পেলো না। দেবী ভয়ানক রূপে তার পেছনে ধাবামান হচ্ছেন। অসুর ব্রহ্মলোকে গেলো। সেখানেও নিস্তার পেলো না। ব্রহ্মা বললেন- “ওরে মন্দবুদ্ধি! আমি তোকে পূর্বেই মানা করেছিলাম। তখন আমার বাক্য শুনিস নি। এখন আদিশক্তির প্রকোপ থেকে তোর নিস্তার নেই।”
দেবী সেই অসুরকে ধরলেন। রুরু দৈত্যের দেহ গজ চর্মে আবৃত করে ছিন্নভিন্ন করলেন অসুরের শরীর। তারপর দেবী রক্ত মাংস ভক্ষণ করলেন ( শিবমহাপুরাণ/ ধর্মসংহিতা / ষষ্ঠোহধ্যায়/ ৪১-৪৩ )। এই ভাবে দেবী, রুরু অসুরের সংহার করলেন। এরপর ভগবান শিব আলিঙ্গন করে দেবীকে শান্ত করলেন। দেবী গর্জচর্ম ও সিংহচর্ম , ভগবান শিবকে প্রদান করলেন । তৎকালে ঋষি- মুনি- দেবতা- সিদ্ধ- চারণ- অসুর- মানুষ- কিন্নর সকলে নানা স্তবস্তুতি করে ভগবতীকে পূজা করলেন।
( শিবমহাপুরাণ/ ধর্মসংহিতা / ষষ্ঠোহধ্যায় )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন