মা কালীর, দারুক অসুরের নিধনের ঘটনা লিঙ্গপুরাণে পাওয়া যায়। দারুক নামক এক অসুর তপস্যা করে বরদান প্রাপ্ত করেছিলো যে সে কেবল নারীর হাতেই বধ হবে। সেই অসুরের ত্রাসে সর্বত্র হাহাকার উঠেছিলো। এমনকি দেবতারা পরাজিত হয়ে স্ত্রীরূপ ধরে সে অসুরের সাথে যুদ্ধ করতে এসে পরাজিত হয়ে পলায়ন করেছিলো। পরাজিত দেবতারা , প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে গিয়ে প্রার্থনা করে বলল- “হে প্রজাপতি ! দুঃসাধ্য দারুকাসুর এই জগতকে অতিশয় পীড়া প্রদান করছে। আমরাও তাহার নিকট পরাজিত হয়ে পলায়ন করেছি। আমাদের রাজ্য সেই অসুর হস্তগত করেছে।” একথা শুনে প্রজাপতি ব্রহ্মা, ভগবান বিষ্ণু ও দেবতাদের সহিত কৈলাস শিব পার্বতীর সন্নিকটে গেলেন। ভব ভবানীকে প্রনাম করে দারুক অসুরের কথা সবিস্তারে জানিয়ে বললেন-“হে দেবাদিদেব! সেই অসুর কেবল নারীর হাতেই বধ্য। আপনি সেই বেদ- ব্রাহ্মণ বিরোধী অসুরের বিনাশের ব্যবস্থা করুন।” একথা শোনার পর ভগবান শিব হাসতে হাসতে তার বামে উপবিষ্টা দেবী পার্বতীকে বললেন-“ হে বরাননে ! সেই অসুর কেবল নারীর হাতেই বধ্য। অতএব সেই অসুরের বধ করার জন্য তোমাকে আহ্বান জানাচ্ছি।” ভগবান শিবের আদেশ মেনে দেবী পার্বতী সূক্ষ্ম রূপে ভগবান শিবের মধ্যে প্রবেশ করলেন। এত সূক্ষ্ম ভাবে যে দেবতারা এমনকি ব্রহ্মাও টের পেলেন না।
ভগবান শিবের শরীরে প্রবেশ করে দেবী , মহাদেবের কণ্ঠের বিষের প্রভাবে কালকণ্ঠী হয়ে ভগবান শিবের কপালের নয়ন থেকে প্রকট হলেন। কিন্তু মা কালীর এত ক্রুদ্ধ রূপ দেখে দেবতারা এমনকি ব্রহ্মা ও ভগবান বিষ্ণু পলায়ন করেন। দেবীর অঙ্গে ভগবান শিবের মতো বাঘছাল, কণ্ঠে সর্প, হাতে ত্রিশূল সর্প বলয় আদি বর্তমান ছিলো। মস্তকে ছিলো অর্ধচন্দ্র। দেবী প্রলয় নৃত্য আরম্ভ করে যুদ্ধে প্রবেশ করলেন। দেবীর শরীর থেকে সিদ্ধ, পিশাচ আদি সব প্রকট হল। তাদের সাথে অসুর বাহিনীর যুদ্ধ শুরু হল। দেবীর সেই কোপে দারুকাসুরের সেনা সকল ছিন্নভিন্ন হল। শির- হস্ত- পদ খণ্ড খণ্ড হয়ে চারপাশে পড়লো। অসুর বিধ্বংসী রূপ তেমন দেবীর। দেখতে দেখতে দারুকাসুরের জীবন সমাপন হল দেবী কালীর হাতে। পরমেশ্বরী দেবী কালীর নৃত্যে সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডই যেনো লয় পেতে লাগলো। মেদিনী ফেটে যেতে লাগলো। দেবীর হুঙ্কারে দিগবিদিগ কম্পিত হল।
মহাদেবের কণ্ঠের কালকূট বিষের প্রভাবে দেবী কালী আবির্ভাব হয়েছিলো। আর দেবী কালস্বরূপিনী হয়ে সব কিছুই নাশ করতে থাকলেন। দেবতারা পুনঃ ভগবান শিবের স্তব করলেন। ভগবান শিব শ্মশানে এক ছোট্ট শিশুর রূপ ধারণ করে রইলেন। চারিদিকে চিতা জ্বলছে- সেই শ্মশানে দেবী কালী হন হন করে প্রবেশ করলেন। শিশুরূপী মহাদেব করুণ কণ্ঠে রোদোন করতে লাগলেন। এই দেখে দেবী কালীর মনে বাৎসল্যের উদয় হল। শিশুকে ক্রোড়ে নিয়ে স্তন্যপান করালেন। মহাদেব স্তন্যপানের অছিলায় দেবীর শরীর থেকে কালকূট বিষ গ্রহণ করলেন। সেই সময় শিশুরূপে মহাদেব ক্ষেত্রপালক হলেন। ক্রমে মহাদেব ক্ষেত্রপাল হয়ে ৮ ভাগ হলেন। দেবী কালীর ক্রোধ প্রশমন হল। দেবী কালী তখন ভূত প্রেত পিশাচবাহিনীর সাথে নৃত্য আরম্ভ করলেন। ভগবান শিবও আনন্দে নৃত্য করতে থাকলেন।
লিঙ্গপুরাণ... পূর্বভাগ...ষড়ধিকশততম অধ্যায় ( ১- ২৮ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন