আমাদের ভক্ত বন্ধুদের আহবান করবো, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ৬৪ গুন সম্বন্ধে জানার জন্য। এই গুন গুলি আমরা দেবী ভগবতীর মধ্যেও দেখতে পাই। এ থেকে শ্রীকৃষ্ণ আর কালী বা শক্তি একাকার হয়ে যায়, যখন শক্তি হলো ভগবান শ্রীকৃষ্ণের যোগমায়া শক্তি। শ্রীল রূপ গোস্বামী নানা শাস্ত্র বিচার করে শ্রীকৃষ্ণের নিম্মোক্ত গুণাবলী উল্লেখ করেন। যা হলোঃ
১) ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সমস্ত শরীর অপূর্ব মাধুর্য মণ্ডিত, মা মহামায়া হলেন ত্রিলোক সুন্দরী, তাই এক নাম ত্রিপুরসুন্দরী, সেই সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে জগত জননীকে কু ভাবে প্রাপ্ত করতে গিয়ে শুম্ভ নিশুম্ভ সৈন্য সমেত ধ্বংস হয়, রাবণেরও সেই হাল। সীতা দেবী মহা ভগবতী মা লক্ষ্মীর অংশ, তুলসী দেবীর স্বামী জালন্ধর মা পার্বতীকে প্রাপ্ত করতে গিয়ে নিহত হয়।
২) শ্রীকৃষ্ণ অত্যন্ত মনোরম, মা হলেন স্বয়ং মনোরমা। হর সুন্দরী।
৩) সমস্ত শুভ লক্ষণ যুক্ত হলেন শ্রীকৃষ্ণ, মা হলেন সকল মঙ্গলের জননী, তাই তিনি মঙ্গলচণ্ডী।
৪) শ্রীকৃষ্ণ হলেন জ্যোতির্ময়, মায়ের দিব্যতেজে অসুর গণ চমকিত হয়েছিলো, মায়ের তেজে সমস্ত জগত ভরে আছে। চন্দ্র, সূর্য, অগ্নি মায়ের তিনটি নয়ন।
৫) শ্রীকৃষ্ণ বলবান। মা স্বয়ং আদিশক্তি। যুদ্ধে তিনি অনেক বলশালী অসুরদের ছিন্নভিন্ন করেছেন।
৬) শ্রীকৃষ্ণ হলেন নিত্য নব যৌবন সম্পন্ন। মা জগদম্বা নিত্যা। তিনি নব যৌবন সম্পন্না। মায়ের ধ্যান মন্ত্র তাই বলে।
৭) শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত ভাষাতেই পারদর্শী, মা হলেন স্বয়ং বিদ্যারূপিনী সরস্বতী। তাঁর কাছে কোনো ভাষাই গুপ্ত নয়।
৮) শ্রীকৃষ্ণ হলেন সত্যবাদী। মা স্বয়ং সত্যের আধার। সত্য রূপ শিবের শক্তি তিনি।
৯) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রিয় ভাষী। মায়ের কথাও তেমনি অমৃত মধুর। সেই মমতা মাখা কথা শুনতেই মা সারদার কাছে দক্ষিণেশ্বরে কতো ভক্ত ছুটে আসতেন।
১০) শ্রীকৃষ্ণ হলেন বাকপটু। আর মায়ের সরস্বতী রূপের করুণায় সকলের মুখে বাক্য আসে। লেখাপড়া শেখে।
১১) শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরম পণ্ডিত। মা হলেন পণ্ডিত গনের মস্তকের মেধা। তিনি নিজেই জ্ঞান রূপিনী। অজ্ঞান নাশ করেন। তাই মায়ের হাতে খড়গ।
১২) শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরম বুদ্ধিমান। মা বুদ্ধি রূপে সকল প্রানীতে অবস্থিত। তিনি নিজেই বুদ্ধির জননী।
১৩) শ্রীকৃষ্ণ অপূর্ব প্রতিভাশালী, মা স্বয়ং তাই। যখন গিরিজায়া মা পার্বতী হিমালয় রাজাকে ব্রহ্মজ্ঞান দিয়েছিলেন, তখুনি মায়ের প্রতিভার কথা পাওয়া যায়।
১৪) শ্রীকৃষ্ণ বিদগ্ধ শিল্প কলায় পারদর্শী, মা হলেন শিল্প কলার দেবী বাগদেবী।
১৫) শ্রীকৃষ্ণ অত্যন্ত চতুর, মা চতুরতায় শুম্ব নিশুম্ভকে সৈন্য সমেত বধ করেন।
১৬) শ্রীকৃষ্ণ পরম দক্ষ। মা জগত পালিনী শক্তি। তিনি সব কিছুতেই দক্ষ।
১৭) শ্রীকৃষ্ণ হলেন কৃতজ্ঞ। মা ও তাই। ভক্তদের বশে থাকেন।
১৮) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। মা ও তাই। অসুর বধের সঙ্কল্পে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
১৯) শ্রীকৃষ্ণ স্থান কাল পাত্র সম্বন্ধে বিচার করতে দক্ষ। মা নিজেও তাই। যাকে যা দেবার তিনি তাকে তাই দেন। ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব একটি উদাহরণ দিয়েছেন। এক বাড়ীতে মাছ এনেছে। এক ছেলের পেট খারাপ। মা তাকে অল্প ঝোল করে দিলেন। যার পেট ভালো তাকে মশলা দ্বারা রান্না করে দিলেন। ঠিক যাকে যা দেবার মা তাকে দেন।
২০) বৈদিক তত্ত্বজ্ঞান এর পরিপ্রেক্ষিতে দর্শন করতে আর উপদেশ দিতে অত্যান্ত পারদর্শী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। মা স্বয়ং বেদমাতা গায়ত্রী। সমস্ত মন্ত্র তিনি। তিনি তুষ্ট হলে ব্রহ্মজ্ঞান দেন, সমাধি বৈশ্যকে দিয়েছিলেন।
২১) শ্রীকৃষ্ণ হলেন পবিত্র। মা স্বয়ং পবিত্রতার আধার। দক্ষ যজ্ঞে শিব নিন্দা শুনে মা সতী ভেবেছিলেন স্বামী নিন্দা শ্রবন করে তিনি অপবিত্র হয়েছেন, তাই প্রান ত্যাগ করলেন।
২২) শ্রীকৃষ্ণ হলেন সংযত। মহামায়াও তাই। তিনি চাইলে প্রথমেই শুম্ভ নিশুম্ভকে বধ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি ভগবান শিবকে দূত করে অসুরদের বোঝাতে চেয়েছিলেন।
২৩) শ্রীকৃষ্ণ হলেন অবিচলিত। মা নিজেও তাই, শিব শক্তি রূপে অবিচল ভাবে তপঃ রূপা।
২৪) শ্রীকৃষ্ণ হলেন জিতেন্দ্রিয়। মাও তাই। তিনি ইন্দ্রিয় দমন করেছেন। ব্রহ্মচারিণী রূপে তপস্যা করে রিপু দমন করলেন। একদা ঠাকুর রামকৃষ্ণদেব মা সারদার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘তুমি কি আমায় সংসার পথে টানতে এসেছো?’। মা সারদা উত্তর দিলেন, ‘না। আমি তোমার ইষ্ট পথে সাহায্য করতে এসেছি।’ স্বয়ং রতি পতি কামদেব কামাখ্যাধামে মায়ের শরণাগত হয়েছেন।
২৫) শ্রীকৃষ্ণ হলেন ক্ষমাশীল। মা স্বয়ং ক্ষমা রূপে সর্বত্র বিরাজিতা। অসুর রাও মায়ের সন্তান। বধ করার আগে মা শুধরানোর সুযোগ দিলে অসুররা মানে না। তাই মা বধ করতে বাধ্য হন। পরশুরাম গণেশের দন্ত কেটে ফেললেও মা গৌরী তাকে ক্ষমা করেছিলেন।
২৬) শ্রীকৃষ্ণ হলেন গম্ভীর। মা তপস্যা রূপে গম্ভীর।
২৭) শ্রীকৃষ্ণ হলেন আত্মতৃপ্ত। মা নিজেও তাই।
২৮) শ্রীকৃষ্ণ হলেন সম দৃষ্টি সম্পন্ন। মা নিজেও তাই। সবাইকে সমান ভালোবাসেন, অসুরদেরও। তাই অসুরদের শুধরানোর সুযোগ দেন। আবার দোষ করলে দেবতাদেরও শাস্তি দেন। অগ্নি দেবতা যেমন দেবী পার্বতীর কাছে শাপ পেয়েছিলেন। তিনি দেবী বলে দেবতাদের অপরাধকেও ক্ষমা করেন না।
২৯) শ্রীকৃষ্ণ হলেন উদার। মায়ের দয়ার কথা বলে শেষ করা যাবে না। মা নিজেই দয়ার রূপ। মা মানেই দয়াময়ী।
৩০) শ্রীকৃষ্ণ হলেন ধার্মিক। মা নিজে ধর্মের প্রতিমূর্তি। পাতিব্রত্য ধর্ম, মাতৃ ধর্ম তিনি জগতকে শেখান। তিনি শিবজায়াও আবার গণেশ জননী।
৩১) শ্রীকৃষ্ণ হলেন বীর। মা নিজেও বীরাঙ্গনা। দুর্ধর্ষ দানবদের নাশ করেন।
৩২) শ্রীকৃষ্ণ হলেন কৃপাময়। মা স্বয়ং কৃপাময়ী। মায়ের কৃপাতে জগত অন্নপূর্ণা থেকে অন্ন পাচ্ছেন। মা সারদা বলতেন, ‘আমার সন্তান যদি ধূলো কাদা মাখে তাহলে আমাকেই ঝেড়ে কোলে নিতে হবে।’
৩৩) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন শ্রদ্ধাবান। মা স্বয়ং শ্রদ্ধা রূপে বিরাজিতা। যা চণ্ডীর স্তবেই আছে।
৩৪) শ্রীকৃষ্ণ হলেন বিনীত। মা নিজেও তাই। তপস্যাতে বিনীত হয়ে শেষে দেবাদিদেবকেই পতি হিসাবে পেলেন।
৩৫) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন শান্ত। মা শান্ত রূপে গৌরী, উমা।
৩৬) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন লজ্জাশীল। মা স্বয়ং লজ্জা রূপে বিরাজিতা। সকল প্রানীতে তিনিই লজ্জা। স্বামীর বুকে চরণ রেখে লজ্জায় জিহ্বা বের করেছেন।
৩৭) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন শরণাগতের রক্ষক। মায়ের প্রনাম মন্ত্রে বলে তিনি শরণাগতকে আশ্রয় দান করেন। একবার এক চোর বেলুরে চুরি করেছিলো। স্বামীজি জানতে পেরে তাকে তাড়াবেন ভাবলেন। চোরটি এসে সোজা মায়ের কাছে আশ্রয় নিয়ে বাঁচতে চাইলো। মা সারদা দেবী তাকে ক্ষমা করলেন। মা রক্ষা করলে আর ভয় কি। চোরটি আর কোনো রূপ শাস্তি পায় নি। এমনি মায়ের দয়া।
৩৮) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন সুখী। মা নিজে সুখ সমৃদ্ধির দেবী লক্ষ্মী।
৩৯) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন ভক্তদের হিতৈষী। মা পরম দয়াময়ী। ভক্তদের মঙ্গল করেন। তিনি ভক্তদের উগ্র বিপদ থেকে রক্ষা করেন তাই তিনি উগ্রতারা। তিনি বিপদ দূর করেন তাই তিনি বিপদতারিনী চণ্ডী।
৪০) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন.প্রেমের বশীভূত। প্রেম ভালোবাসা না থাকলে কোনো সাধনা হয় না। মাকে যে প্রেম ভালোবাসা দিয়ে ডাকে মা তাঁর কাছেই যান।
৪১) ভগবান কৃষ্ণ হলেন সর্ব মঙ্গলময়। মায়ের প্রনাম মন্ত্রেই বলা হয় ‘সর্ব মঙ্গল মঙ্গল্যে’। মা সকল মঙ্গলের জননী। মায়ের নামেই মঙ্গল নেমে আসে। তাই বৈশাখ মাসে তিনি মঙ্গলচণ্ডী নামে পূজিতা হন।
৪২) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন সব চাইতে শক্তিশালী। মা হলেন তাই। আদ্যাশক্তি। মূলাশক্তি।
৪৩) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরম যশস্বী। মা হলেন পরমা যশস্বিনী। তাই মায়ের কাছে আমরা অঞ্জলি দিয়ে প্রার্থনা জানাই ‘আয়ু দাও, যশ দাও’।
৪৪) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন ভক্ত বৎসল। মা নিজেও তাই। পুরাকালে মুনি ঋষিরা এই মহাদেবীর স্তব করে মনো বাঞ্ছিত ফল পেতেন। ত্রষ্টা মুনি ইন্দ্রের থেকে প্রতিশোধ নেবার জন্য জগদম্বার তপস্যা করে মনো বাঞ্ছিত ফল পেয়েছিলেন। মেনকা দেবী জগদম্বাকে কন্যা রূপে চেয়েছিলেন। দেবী কন্যা রূপে এসেছিলেন। মাতঙ্গ মুনি দেবীর কাছে বশীকরণ বিদ্যা চেয়েছিলেন মা তাকে তাই দিয়েছিলেন।
৪৫) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন সমস্ত স্ত্রীলোকের কাছে আকর্ষণীয়। মা স্বয়ং সকল স্ত্রীর মধ্যে বিরাজিতা। চণ্ডীতে একথা দেবতাদের স্তবে স্পষ্ট। নর রূপে নারায়ন, নারী রূপে লক্ষ্মী। নর আর নারী।
৪৬) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন সকলের আরাধ্য। মা জগদম্বাও তাই। প্রজাপিতা ব্রহ্মা মায়ের আরাধনা করেছিলেন। ত্রিদেব মিলে দেবী কমলার পূজা করেছিলেন। স্বয়ং ভগবান রামচন্দ্র এই মহামায়ার পূজা করেছিলেন। ভগবান শ্রীবিষ্ণু মায়ের বগলা রূপকে পূজা করেছিলেন।
৪৭) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন জনপ্রিয়। মা নিজেও তাই। প্রাচীন কাল থেকে পৃথিবীতে অনেক দেশে দেবী রূপে মাকে পূজা করা হতো। ভারতবর্ষের সিন্ধু সভ্যতায় দেবী মূর্তি পূজা হতো। তার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছে। মায়ের যতো রূপের পূজা হিন্দুর ঘরে ঘরে হয়, ততো আর কারোর বোধ করি হয় না। মায়ের অনন্ত কোটি রূপ।
৪৮) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন সমস্ত ঐশ্বর্যের অধিকারী। মা নিজে ঐশ্বর্য দায়িনী দেবী লক্ষ্মী। ধনলাভের আশায় সকাম ভক্তেরা বিষ্ণুপ্রিয়ার আরাধনা করি। দোকানে লক্ষ্মী যন্ত্র স্থাপন করি।
৪৯) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন সকলের মাননীয়। মা হলেন সকলের মাননীয়া। চৌদ্দ ভুবনের সকলেই দিবারাত্র মায়ের স্তব করে। তিনি দেবতা, অসুর, নাগ, যক্ষ, রক্ষ, কিন্নর, গন্ধর্ব, অপ্সরা, চারন, সিদ্ধ, বেতাল, কুস্মান্ড, মানুষ, পক্ষী, পশু এমনকি ত্রিদেব স্বয়ং মহাদেবীর বন্দনা করেন। বৃন্দাবনের পথে অজস্র ভক্ত দিবারাত্র শ্রীরাধারানীর নাম করে চলছেন।
৫০) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরম নিয়ন্ত্রা। মা স্বয়ং ব্রহ্মাণ্ডের ধারিনী শক্তি জগদ্ধাত্রী। তিনি ধারন না করলে গ্রহ গণ কক্ষ থেকে বিচ্যুত হয়ে যেতো। জীব কূল টিকতো না। মা সব কিছুই নিয়ন্ত্রন করেন।
৫১) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন অপরিবর্তনশীল। মা নিজেও তাই। যখন যেমন, ঠিক তেমনই রূপ ধারন করেন।
৫২) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন সর্বজ্ঞ। মা হলেন মহাযোগিনী।
৫৩) যোগিনী মায়ের সেবা করে। মা সব জানেন। মায়ের কাছে কিছুই গুপ্ত নয়। মা নিজে সর্বজ্ঞ।
৫৪) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন চির নবীন। মা নিজে নবীনা। ধূমাবতী রূপে বিধবা, বৃদ্ধা রূপ ধারন করলেও পুনরায় বগলাএরূপে নবীনা। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন সচ্চিদানন্দ। মা নিজেই আনন্দময়ী। তাঁর নাশ নেই, জন্ম নেই। তিনি নিজে নিজেই আবির্ভূতা।
৫৫) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন সমস্ত রকম যোগের সিদ্ধির অধিকারী। মা স্বয়ং সিদ্ধিদাত্রী। নানা প্রকার সিদ্ধি তিনি তিনি দান করেন। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানে যে ১৮ রকম সিদ্ধির উল্লেখ পাওয়া যায়, মা সব দান করেন। তাই সিদ্ধি লাভের আশায় তান্ত্রিকগণ তন্ত্র সাধনা করেন মাকে তুষ্ট করার জন্য। মায়ের এক নাম সিদ্ধেশ্বরী। সকল প্রকার সিদ্ধি মায়ের চরণ তলে।
৫৬) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন অচিন্ত্য শক্তি সম্পন্ন। মা ভগবতী স্বয়ং আদিশক্তি। তিনি ব্রহ্মাণী, নারায়নী, মহাকালী। তিনিই সীতা, রুক্মিণী, রাধা, বিষ্ণুপ্রিয়া, সারদা। তিনি মূলশক্তি। সমস্ত শক্তির উৎস তিনি।
৫৭) ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দেহ থেকে অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি হয়, মা হলেন সেই ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির শক্তি। ব্রহ্মাণ্ড ধারিনী শক্তি। সৃষ্টির পূর্বে যখন কিছুই ছিলো না তখনও তিনি ছিলেন। আবার যখন সব ধ্বংস হবে তখনও তিনি থাকবেন। শক্তির নাশ হয় না।
৫৮) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন সমস্ত অবতারের আদি উৎস। মা হলেন সেই অবতারের শক্তি। শক্তি ভিন্ন ব্রহ্ম জড়।
৫৯) শ্রীকৃষ্ণের হাতে মৃত জনেরা মুক্তি পায়। মা হলেন মোক্ষ প্রদা। সুতরাং মায়ের অস্ত্রে যে সব অসুরগণ নিহত হয়েছে তাঁরা মোক্ষ প্রাপ্তি করবেই, এতে সন্দেহ নেই। তারা দেবাত্মা হবে। তাই মহিষাসুরের পূজা হয়। মা কালীর পূজার সময় তাঁর মুন্ডমালার পূজাও করা হয়।
৬০) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন মুক্তিদাতা। মা সকলের মুক্তি প্রদায়িনী। চণ্ডীর স্তবে একথা স্পষ্ট। মায়ের মায়াজালে যেমন বন্দী হয়, তেমনই মা প্রসন্না হলে মুক্তির পথ তিনিই দেখান।
৬১) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নানারকম লীলা বিলাস করেন, বিশেষ করে বাল্যলীলা। মা হিমালয় ভবনে জন্ম নিয়ে নানান লীলা করছেন। কখনো মা মেনকাকে স্বপ্নে কালী রূপে দেখা দিলেন, কখনো পিতা হিমালয়কে ব্রহ্মজ্ঞান দিলেন। মা সারদা যখন জয়রামবাটিতে তিনিও নানা লীলা প্রকাশ করেছিলেন। কখনো ভীড়ের মধ্যে ওনাকে জিজ্ঞেস করা হলে, ‘তোমার পতি কে’? উনি ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবকেই দেখিয়েছিলেন। বৈকুন্ঠের লক্ষ্মী নারায়নের মর্ত্যলীলা। আবার অন্নপূর্ণা রূপে দুর্ভিক্ষ কালে নিজেই বাতাস করছেন খিচুড়ী ঠান্ডা হবার জন্য যাতে লোকেরা ক্ষিদেতে আর কষ্ট না পায়, তাড়াতাড়ি খেতে পায়। মায়ের লীলাকে বুঝতে পারে। স্বয়ং পরমপিতা ব্রহ্মাও জানেন না। আমরা মানুষগণ তো কোন ছার।
৬২) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন ভক্তগণ পরিবৃত। মা নিজেও তাই। মন্দিরে মন্দিরে সর্বক্ষণ ভক্তরা মায়ের জয়ধ্বনি করেন। দেবীভাগবত পুরান মতে, ত্রিদেব দেবীলোকে গিয়ে দেখলেন সেখানকার ভ্রমর, পাখীগুলি পর্যন্ত দেবীর বীজ উচ্চারন করছে গুনগুন করে। অনেক সেবিকা দেবীর সেবায় রতা।
৬৩) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বাঁশিতে সকলে আকর্ষিত মোহিত হন। মায়ের মায়াতে তো ত্রিলোক আচ্ছন্ন।
৬৪) ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হলেন অতুলনীয় সৌন্দর্য মণ্ডিত। মা হলেন সর্ব সুন্দরী। তিনি ষোড়োশী, আবার তিনিই ত্রিপুরাসুন্দরী।
উক্ত ৬৪ গুন আমরা মহামায়ার মধ্যেও দেখতে পাই। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় মহামায়ার মধ্যেও সেই ৬৪ গুন আছে। এ থেকে পরিষ্কার। শ্যাম আর শ্যামা এঁনারা এক। কোনো ভাবেই আলাদা নয়। এখনও কি সেই নবোদিত, নবোসৃষ্ট ভক্তেরা মানবে না যে, মা শ্যামের দাসী নয়, শক্তি। মানলে ভালো, না মানলে তাদেরই অজ্ঞতা, গোঁড়ামী। যাই হোক এই আলোচোনা এখানেই সমাপ্ত করলাম।
জয় জয় জগৎ-জননী! মহামায়া।
দুঃখিত জীবেরে দেহ চরণের ছায়া।।
জয় জয় অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড কোটিশ্বরী।
তুমি যুগে যুগে ধর্ম রাখ অবতরি।।
ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরে তোমার মহিমা।
বলিতে না পারে অন্যে কে দিবেক সীমা।।
জগৎ- স্বরূপা তুমি, তুমি সর্ব শক্তি।
তুমি শ্রদ্ধা, দয়া, লজ্জা তুমি বিষ্ণু ভক্তি।।
যত বিদ্যা সকল তোমার মূর্তি ভেদ।
সর্ব–প্রকৃতির শক্তি তুমি কহে বেদ।।
নিখিল ব্রহ্মাণ্ডগণের সর্ব মাতা।
কে তোমার স্বরূপ কহিতে পারে কথা।।
তুমি ত্রিজগতহেতু গুনত্রয়ময়ী।
ব্রহ্মাদি তোমারে নাহি জানে, এই কহি।।
সর্বাশ্রয়া তুমি সর্ব জীবের বসতি।
তুমি আদ্যা অবিকারা পরমা প্রকৃতি।।
জগৎজননী তুমি দ্বিতীয়–রহিতা।
মহীরুপে তুমি সর্ব জীব পাল মাতা।।
জল রূপে তুমি সর্ব জীবের জীবন।
তোমা সঙরিলে খন্ডে অশেষ বন্ধন।।
সাধুজন গৃহে তুমি লক্ষ্মী মূর্তিমতী।
অসাধুর ঘরে তুমি কালরূপাকৃতি।।
তুমি সে করাহ ত্রিজগতে সৃষ্টি-স্থিতি ।
তোমা না ভজিলে পায় ত্রিবিধ দুর্গতি।।
তুমি শ্রদ্ধা বৈষ্ণবের সর্বত্র উদয়া।
রাখহ জননী! দিয়া চরণের ছায়া।।
তোমার মায়ায় মগ্ন সকল সংসার।
তুমি না রাখিলে মাতা! কে রাখিবে আর।।
সবার উদ্ধার লাগি তোমার প্রকাশ।
দুঃখিত জীবের মাতা! কর নিজ দাস।।
ব্রহ্মাদির বন্দ্য তুমি সর্বভূত–বুদ্ধি।
তোমা সঙরিলে সর্ব মন্ত্রাদির শুদ্ধি।।
এই মত স্তুতি করে সকল মহান্ত।
বর–মুখ মহাপ্রভু শুনয়ে নিতান্ত।।
(চৈতন্য ভাগবত, শ্রী বৃন্দাবন দাস ঠাকুর, মধ্য-১৮)
.
।জয় কৃপাময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
পরমকরুনাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণী আর সকল বৈষ্ণব ভক্ত-পার্ষদদের শ্রীচরণকমলে নিরন্তর প্রার্থনা করি, সকলের জীবন যেনো রাধাকৃষ্ণময়তায় পূর্ণ হয়ে, মঙ্গলময়, কল্যাণময়, প্রেমময়, ভক্তিময়, মুক্তিময়, শান্তিময়, সুন্দরময় এবং আনন্দময় হয়ে ওঠে।
"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে!!"
!!জয় হোক সকল ভক্তদের!!
!!জয় শ্রীকৃষ্ণ!! জয় রাধে!!
Post Courtesy: Debendra Biswas
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন