সৃষ্টির দেবতা ব্রহ্মা, স্থিতির অধীশ্বর বিষ্ণু। শিবপুরাণে কথিত‚ একদিন দুজনের মধ্যে শুরু হল বিবাদ, কে বড় -- ব্রহ্মা বলেন‚ তিনি বড়, বিষ্ণু বলেন‚ না তিনি বেশি মহৎ, সমাধান চাওয়া হল মহেশ্বরের কাছে। মহাদেব তখন জ্যোতি বা আলোর স্তম্ভ হয়ে আবির্ভূত হলেন -- স্বর্গ‚ পৃথিবী‚ নরক‚ তিন লোক জুড়ে। ব্রহ্মা‚ বিষ্ণু দুজনকেই তিনি বললেন‚ এই স্তম্ভের শেষ খুঁজে বের করতে। এই আলোর স্তম্ভই হল জ্যোতির্লিঙ্গ, যা নাকি আলো এবং সৃষ্টির প্রতীক।
এদিকে জ্যোতির্লিঙ্গের শেষ খুঁজতে গিয়ে নাজেহাল ব্রহ্মা-বিষ্ণু। মিথ্যে করে শিবকে ব্রহ্মা বললেন‚ তিনি খুঁজে পেয়েছেন। অন্যদিকে‚ বিষ্ণু হার স্বীকার করে নিলেন। ব্রহ্মার ছলনা বুঝতে পেরে শিব তাঁকে অভিশাপ দিলেন‚ কোনও উৎসবে তিনি পূজিত হবেন না। আর বিষ্ণু পেলেন আশীর্বাদ -- যতদিন পৃথিবী থাকবে‚ ততদিন তিনি পূজিত হবেন, প্রতিটি ঘরে।
ক্রমে উপমহাদেশে ৬৪ টি শৈব তীর্থ পরিচিত হল জ্যোতির্লিঙ্গ নামে-- তার মধ্যে ১২ টি খুবই পবিত্র। শ্রাবণ ও চৈত্র মাস তো বাবা মহাদেবের মাস, তাই এই চৈত্র মাসের শুরুতেই দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের কথা।
শিব পুরাণ (শতরুদ্র সংহিতা, অধ্যায় ৪২/২-৪) অনুযায়ী দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অবস্থান দেওয়া হল --
১- সোমনাথ (গুজরাট)সোমনাথ পাঁচ বার ধ্বংসপ্রাপ্ত ও ছয় বার পুনর্নির্মিত হয়। ভারতের বিভিন্ন কিংবদন্তিতে এই মন্দিরের উল্লেখ রয়েছে।
২- মল্লিকার্জুন (অন্ধ্র প্রদেশ)মল্লিকার্জুন বা শ্রীশৈলম কৃষ্ণা নদীর তীরে একটি পাহাড়ের উপর অবস্থিত। মন্দিরটি প্রাচীন ও এর স্থাপত্য সৌন্দর্য দর্শনীয়।
৩- মহাকালেশ্বর (মধ্য প্রদেশ) উজ্জয়িনীর মহাকালে (অপর নাম অবন্তী) মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির অবস্থিত। এটিই একমাত্র দক্ষিণমুখী মন্দির। মন্দিরের গর্ভগৃহে যেখানে শিবলিঙ্গটি রয়েছে সেখানে সিলিং-এ একটি শ্রীযন্ত্র উলটো করে ঝোলানো থাকে।
৪- ওঙ্কারেশ্বর (মধ্য প্রদেশ) নর্মদা নদীর একটি দ্বীপে ওঙ্কারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ ও মামল্লেশ্বর মন্দির অবস্থিত।
৫- কেদারনাথ (উত্তরাখণ্ড) কেদারনাথ সর্ব-উত্তরে অবস্থিত জ্যোতির্লিঙ্গ। এটি তুষারাবৃত হিমালয়ে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির। এই মন্দিরকে ঘিরেও অনেক কিংবদন্তি গড়ে উঠেছে। এই মন্দিরে যেতে গেলে পায়ে হেঁটে যেতে হয়। বছরের মধ্যে ছয় মাস মন্দির বন্ধ থাকে।
৬- ভীমাশঙ্কর (মহারাষ্ট্র) ভীমাশঙ্কর জ্যোতির্লিঙ্গ ঠিক কোথায় তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। মহারাষ্ট্রের পুনের কাছে একটি ভীমাশঙ্কর মন্দির রয়েছে এই অঞ্চলটি প্রাচীনকালে ডাকিনী দেশ নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু উত্তরাখণ্ডের কাশীপুরও প্রাচীনকালে ডাকিনী দেশ নামে পরিচিত ছিল। এখানে মোটেশ্বর মহাদেব নামে একটি ভীমাশঙ্কর মন্দির আছে। ভীমাশঙ্কর মন্দিরের অন্যান্য দাবিদার মন্দিরগুলি মহারাষ্ট্রের সহ্যাদ্রি, অসমের গুয়াহাটির কাছে ও ওড়িশার গুনুপুরে অবস্থিত।
৭- কাশী বিশ্বনাথ (উত্তর প্রদেশ) বারাণসীর বিশ্বনাথ মন্দির হিন্দুদের পবিত্রতম মন্দিরগুলির অন্যতম।
৮- ত্র্যম্বকেশ্বর শিবমন্দির(মহারাষ্ট্র) ত্র্যম্বকেশ্বর মন্দিরটি গোদাবরী নদীর উৎসের কাছে অবস্থিত।
৯- বৈদ্যনাথ (ঝাড়খণ্ড) বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের অবস্থানও বিতর্কিত। ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের বৈদ্যনাথ মন্দিরটি জ্যোতির্লিঙ্গ আখ্যাপ্রাপ্ত। এটিই একমাত্র তীর্থ যা একাধারে জ্যোতির্লিঙ্গ ও শক্তিপীঠ। বৈদ্যনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যান্য দাবিদার মন্দিরগুলি হল হিমাচল প্রদেশের কাংড়া জেলার বৈজনাথ শিবধাম ও মহারাষ্ট্রের বিড জেলার পারলি বৈজনাথ। পৌরাণিক চরিত্ররাবণের সঙ্গে বৈদ্যনাথ লিঙ্গ প্রতিষ্ঠার গল্পটি জড়িত।
১০- নাগেশ্বর (দ্বারকা, গুজরাট) এই জ্যোতির্লিঙ্গের অবস্থানও বিতর্কিত। জ্যোতির্লিঙ্গ দাবিদার মন্দিরগুলি উত্তরাখণ্ডের আলমোড়ার কাছে জাগেশ্বর, গুজরাতের দ্বারকা ও মহারাষ্ট্রের হিঙ্গোলি জেলার অন্ধ নাগনাথে অবস্থিত।
১১- রামেশ্বর (রামেশ্বর,তামিলনাড়ু) রামেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গটি বিশাল। এই মন্দিরে রামেশ্বর স্তম্ভ অবস্থিত।
১২- ঘৃষ্ণেশ্বর (মহারাষ্ট্র) মন্দিরটি ইলোরার গুহামন্দিরের কাছে অবস্থিত।
লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন