দেবী কালীর কপালের মধ্যিখানে জ্বলজ্বল করছে তৃতীয় নয়ন। তাই তিনি ত্রিনয়নী। এই তৃতীয় নয়নেই নাকি লুকিয়ে থাকে দেবীর দিব্যদৃষ্টি!
এ তো গেল দেবীর কথা। কিন্তু, আমরা? আমার-আপনার মতো আম আদমিরও কি তৃতীয় নয়ন থাকে?
আসলে তৃতীয় চক্ষু বিষয়টা কী? সেটা আমাদের আগে একটু বুঝে নিলে ভালো হয়।
মিথোলজি অনুযায়ী যা দেবীর ত্রিনয়ন, তা বাস্তবে আসলে মনঃসংযোগের এক উচ্চতর পর্যায়। যার মাধ্যমে সে গোটা বিশ্বকে অনুধাবন করতে পারে। সোজা ভাষায় বলতে গেলে, তৃতীয় চক্ষু বা 'থার্ড আই' সাধারণ মানুষের চেতনার এক বিশেষ ক্ষমতা, যা নিয়ন্ত্রণ করবে আমার-আপনার মন ও আবেগকে। নিয়মিত কিছু অভ্যাসের মাধ্যমে আমি-আপনিও সেই ক্ষমতার অধিকারী হতে পারেন।
কীভাবে আপনিও পেতেতে পারেন তৃতীয় নয়ন?
-
১) ধ্যানের অভ্যাস করুন। কপালের ঠিক মধ্যিখানে একটি নির্দিষ্ট কাল্পনিক বিন্দুতে মনঃসংযোগ করার চেষ্টা করুন। আমাদের দেহে (কল্পিত) সাতরকম চক্র রয়েছে, এক-একটি চক্রের সঙ্গে শরীর, মন ও আধ্যাত্মিকতার এক একরকম যোগ। এরকমই কোনও একটি চক্রকে ভেবে মনঃসংযোগের চেষ্টা করুন।
২) ধ্যানের জায়গা নির্দিষ্ট করুন। সাধারণত প্রকৃতির মাঝে খোলামেলা জায়গায় বসে ধ্যান করলে ভালো হয়।
৩) ধ্যানে বসারও নির্দিষ্ট ভঙ্গি আছে। মেঝেতে বজ্রাসনে/সুখাসনে বসুন। শিরদাঁড়া সোজা রাখুন। হাত জড়ো করে কোলের উপর রাখুন। মাটিতে বসতে যদি খুব অসুবিধা হয়, তাহলে ধীরে ধীরে একটি নির্দিষ্ট ছন্দে হাঁটুন। সমস্ত চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করুন।
৪) মনঃসংযোগের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে সামনে একটি জ্বলন্ত মোমবাতি রাখতে পারেন।
৫) নিজেই একটা মন্ত্র বানান। চোখ বন্ধ করে বার বার আউড়ে চলুন সেটা। মনের বলুন শান্ত হতে। মনের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ান।
৬) অন্ধকার ঘরে শুয়ে শবাসন করে শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে নাভির উচু-নিচু হওয়ার প্রতি মনোযোগ দিন।
৭) ত্রাটক ও অশ্বিনী মুদ্রা সহযোগে জপ করুন।
--- মূল কথা 'আজ্ঞাচক্র' বা গুরুশরণ নিতে হবে।
----------------------------------
[**** এগুলো শুরু করার আগে বিশেষজ্ঞের সাহায্য অবশ্যই নেবেন, নয়তো ক্ষতি হবে।***]
----------------------------------
উপরোক্ত প্রক্রিয়ায় আজ্ঞাচক্র জাগরিত হয় আমাদের দেহস্থিত 'পিনিয়াল গ্রন্থি'-র সক্রিয়তায়। আসুন জেনে নিই পিনিয়াল গ্রন্থির বিষয়ে -----
২৪ ঘণ্টায় দেহের হরমোন ক্ষরণের চক্রের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে এই 'দেহঘড়ি'। মানুষের মাঝে কয়েক ধরনের চক্র গড়ে উঠতে পারে। তবে আসল বিষয় লুকিয়ে রয়েছে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস নামক অংশে। হাইপোথ্যালামাসকে বলা হয় 'Master of Glands' অর্থাৎ গ্রন্থিদের গুরু।
মানুষের চোখে বিশেষ ধরনের ফটোসেনসিটিভ কোষ রয়েছে। সাধারণ দৃষ্টিশক্তি দিতে ব্যবহৃত হয় 'রডস' এবং 'কোনস' নামের কোষ। যখন চোখে আলো আসে তখন এই কোষগুলো মস্তিস্কের হাইপোথ্যালামাস অংশকে সতর্ক করে। এরাই এ তথ্য দেয় যে এখন দিন নাকি রাত? যখন হাইপোথ্যালামাস সিদ্ধান্ত দেয় যে এটা রাত, তখন পিনিয়াল গ্রন্থি মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরণ করে। এটি মানুষকে ঘুম এনে দেয়।
ঘুমে আছন্ন হয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া এবং ঘুম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জেগে ওঠার কাজটা দেহের যে গ্রন্থি করে থাকে তার নাম পিনিয়াল গ্রন্থি যাকে বিজ্ঞানীগণ নাম দিয়েছে 'তৃতীয় নয়ন' হিসাবে। কারন এই গ্রন্থি আলোতে সংবেদনশীল। এই গ্রন্থি এক ধরনের হরমোন নিঃসরন করে যাকে বলা হয় মেলাটোনিন। এই মেলাটোনিন নিঃসরন হওয়ার সাথে সাথে দেহের মধ্যে এক ধরনের রাসায়নিক ক্রিয়া শুরু হয় তখন মানুষ ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এই গ্রন্থিটি অন্ধকারে ক্রিয়াশীল। সাধারত সন্ধ্যা হওয়ার পর থেকে এর নিঃসরন শুরু হয় যা ভোরের আলো না দেখা পর্যন্ত চলতে থাকে। ভোরের আলো দেখামাত্র এর নিঃসরন বন্ধ হয়ে যায় তখন ঘুমন্ত মানুষ সয়ংক্রিয়ভাবে জেগে ওঠে। শহুরে মানুষ এবং গ্রামের মানুষের ঘুমের মধ্যে অনেক তফাৎ দেখা যায়। যেমন-শহুরে মানুষ অনেক রাত পর্যন্ত জেগে টিভি দেখে বা বই পড়ে যার কারনে তাদের পিনিয়াল গ্রন্থি আলোর কারনে ক্রিয়াশীল হতে পারে না। পক্ষান্তরে গ্রামের মানুষেরা সন্ধ্যায় অন্ধকার হয়ে আসলে তাদের পিনিয়াল গ্রন্থি থেকে মেলাটোনিন হরমোন নিঃসরন হতে শুরু করে এবং তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে। শেষ রাতে ভোরের আলো দেখা গেলেই পিনিয়ালের নিঃসরন বন্ধ হয়ে যায় এবং ঘুমন্ত মানুষ এমনিতেই জেগে যায়। এটাকেই বলে 'নিদ্রার দেহ ঘড়ি'। একবার যদি আপনার দেহ ঘড়ির কার্য্যকারীতা কমে যায় তখন ঘুম আসার জন্য আপনার ভিতর অস্থিরতা দেখা দেবে এবং মানসিক চাপের সৃষ্টি হবে। এর থেকে পরিত্রান পেতে অনিদ্রা আক্রান্ত ব্যাক্তি ঘুমের পিলের দাযরস্থ হয়।
লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন