দেবীভাগবতে বর্ণিত মনিদ্বীপের দেবী হৃল্লেখা(হ্রীং) মন্ত্রের স্বরুপশক্তি এবং সৃষ্টির ক্রমপর্যায়ে মহালক্ষ্মীস্বরুপা আদিশক্তি ভাগবতী ভুবনেশ্বরী হচ্ছেন দেবাদিদেব মহাদেবের সমস্ত লীলাবিভূতির সহচরী। জগদম্বা ভুবনেশ্বরীর স্ব-রুপ হচ্ছে সৌমা এবং অঙ্গকান্তি অরুণবর্ণা। ভক্তদের অভয় প্রদান ও সর্বসিদ্ধি প্রদান করাই হল এর স্বাভাবিক গুণ। দশ মহাবিদ্যার মধ্যে ইনি পঞ্চম স্থানাধিকারি। দেবীপুরাণ অনুসারে মূলা প্রকৃতির অপর নামই ভুবনেশ্বরী। ঈশ্বরের জাগতিক ব্যবহার সুপ্ত থাকে সেই সময় একমাত্র ব্রহ্ম ই অব্যক্ত প্রকৃতিসহ অবশিষ্ট বা বর্তমান থাকেন,সেই সময় সেই ঈশ্বর রাত্রির অধিষ্ঠাত্রী দেবীর নাম ভুবনেশ্বরী। অঙ্কুশ এবং পাশ এর মুখ্য অস্ত্র। অঙ্কুশ হল নিয়ন্ত্রনের প্রতীক আর পাশ হল রাগ অর্থাৎ অনুরাগ বা আসক্তির প্রতীক। এইভাবে সর্বরুপে মূল প্রকৃতিই হচ্ছেন ভুবনেশ্বরী, যিনি বিশ্বকে বমন বা উদগীরন করার জন্য বামা,শিবময়ী হওয়ায় জেষ্ঠা এবং কর্মনিয়ন্ত্রন,ফলপ্রদান ও দণ্ডদান করার জন্য হলেন রৌদ্রী। ভগবান শিবের বাম অঙ্গকেই ভুবনেশ্বরী বলা হয়।)
মহানির্বাণতন্ত্র মতে সব কটি মহাবিদ্যাই ভাগবতী ভুবনেশ্বরীর সেবায় সদাই নিরত থাকেন। সাত কোটী মহামন্ত্র সর্বদা এর আরাধনা করে। দশ মহাবিদ্যাই দশটী ধাপ। কালী তত্ত্ব থেকে সুরু করে কমলাতত্ত্ব পর্যন্ত দশটী স্থিতি আছে, যার থেকে অব্যক্ত ভুবনেশ্বরী ব্যক্তরুপে ব্রহ্মাণ্ডের রুপ ধারন করতে পারেন আবার প্রলয় কালে কমলার থেকে অর্থাৎ ব্যক্ত জগৎ থেকে ক্রমশ লয় হয়ে কালীরুপে প্রকৃতিতে অধিষ্ঠিতা হন। এইজন্য একে কাল এর জননীও বলা হয়।
শ্রীশ্রীচণ্ডীর একাদশ অধ্যায়ে মঙ্গলাচরণেও বলা হয়েছে যে ---- "আমি ভুবনেশ্বরী দেবীর ধ্যান করি। তার শ্রী অঙ্গের শোভা নবারুন সদৃশ অরুনাভ। তার শিরে ত্রিনয়না দেবীর শ্রীমুখে মৃদু হাসির আভা। তার হাতে পাশ, অঙ্কুশ, বরদ এবং অভয় মুদ্রা শোভা পায়।
বৃহন্নীলতন্ত্রের এই বিবরণ পুরানের বিবরণের দ্বারাও সমর্থিত যে প্রকারন্তরে কালী ভুবনেশ্বরী অভেদাত্মক। অব্যক্ত প্রকৃতি ভুবনেশ্বরীই রক্তবর্ণা কালী, দেবীভাগবত মতে দুর্গম নামক অসুরের অত্যাচারে সন্তপ্ত হয়ে দেবতা ও ব্রাহ্মণের একত্র হয়ে হিমালয়ে অবস্থিতা সর্বকারণস্বরুপা ভাগবতী ভুবনেশ্বীরই আরাধনা করেন। সেই আরাধনায় তুষ্ট হয়ে দেবী ভুবনেশ্বরী তৎক্ষণাৎ সেখানে আবির্ভূত হন।তার হাতে বান, পদ্মফুল ও শাকমূল ছিল, তিনি নিজের চোখ থেকে সহস্র অশ্রুধারা প্রবাহিত করেন। সেই জলে পৃথিবীর সব প্রানী তৃষ্ণা নিবারণ করে। নদ নদী, সমুদ্র অজস্ত্র জলে পূর্ণ হয় এবং সমস্ত ওষধি জলে সঞ্জীবিত হয়।তার হাতে ধরা শাক ও ফলমূলে প্রাণীদের পালন করার জন্য দেবী ভুবনেশ্বরীই 'শতাহ্মা' তথা 'শাকম্ভরী' নামে খ্যাত হন। ইনিই দুর্গমাসুরকে বধ করে তার দারা অপহৃত বেদগ্রন্থ দেবতাদের হাতে ফিরিয়ে দেন। এর ফলে দেবী ভুবনেশ্বরীর এক নাম হয় দুর্গা।
-
দেবী ভুবনেশ্বরীর উপাসনা পুত্রলাভের জন্য বিশেষ ফলপ্রদ।
Written by : Pritwsih Gosh
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন