পাঠকগন গীতার দশম অধ্যায়ে এসেই যেন দিশেহারা হয়ে যায়!
শ্রোতাগন ‘গীতা’ শব্দ শুনলেই আর কোন প্রশ্ন উৎপন্ন করতে পারেন না। এই অধ্যায়টি বিভূতি যোগ। পরমব্রহ্মের ঐশ্বর্য বর্ণনা হয়েছে এই অধ্যায়ে।
যাইহোক, গীতার ১০/২০ শ্লোকটি ভগবান বলছেন... ‘‘অর্জুন! আমিই সর্বভূতের হৃদয়ে অবস্থিত সকলের আত্মা এবং সমস্ত ভূতের আদি, মধ্য, এবং অন্ত আমিই। অর্থাৎ জন্ম, মৃত্যু এবং জীবনও আমি।’’
এবার এই শ্লোকের পরের শ্লোকটি দেখুন,
‘‘অদিতির দ্বাদশ পুত্রমধ্যে আমি বিষ্ণু এবং জ্যোতিসমূহের মধ্য আমি প্রকাশমান সূর্য। বায়ুর মধ্য আমি মরীচি নামক বায়ু এবং আমি নক্ষত্রসমূহের মধ্যে চন্দ্র।’’ (১০/২১)।।
প্রশ্ন হলো, ১০/২০ শ্লোকে ভগবান বলেই দিয়েছেন, আমি সমস্ত ভূতের আদি, মধ্য তথা অন্তু। অর্থাৎ সর্ব কিছুই উনি, সর্বভূতেষু। তাহলে ১০/২১ শ্লোকে এসে পুনরায় কেন আলাদা আলাদা ভাবে বর্ণনা শুরু করলেন ?
শুধু ১০/২১ শ্লোকেই নয়, ১০/২১ থেকে ১০/৩৮ শ্লোক পর্যন্তই ভগবান একই ভাবে বলতে লাগলেন....
বেদের মধ্য আমি সামবেদ,
দেবগনের মধ্য আমি ইন্দ্র,
একদশ রুদ্রের মধ্য আমি শঙ্কর,
যক্ষ ও রাক্ষসের মধ্য আমি কুবের,
অষ্টবসুর মধ্য আমি অগ্নি,
পর্বতের মধ্য আমি সুমেরু,
পুরোহিত গনের মধ্য আমি বৃহস্পতি,
সেনাপতি মধ্য আমি কার্তিকেয়,
বৃক্ষের মধ্য আমি অশ্বত্থ,
অশ্বগনের মধ্য আমি উচ্চৈঃশ্রবাঃ,
হস্তিগনের মধ্য আমি ঐরাবত,
মনুষ্যগণের মধ্য আমি রাজা,
গাভীদের মধ্য আমি কামধেনু.......................... ইত্যদি ইত্যাদি।
এখানে ছোট একটা প্রশ্ন, সবকিছুর মধ্য যদি উনি কেবল ভালো গুলো হয়ে থাকেন তাহলে আমরা কি নদীর জলে ভেসে আসছি ?
যেমন ভগবান বললেন, আমি মনুষ্যগনের মধ্য রাজা।
তাহলে যারা প্রজা তাদের মাঝে কি পরমেশ্বরের অংশ নেই ? কিংবা কামধেনু ছাড়া অন্যসকল গাভীদের মাঝে কি জীবাত্মা নেই ?
তাহলে এই গুলো বলে ভগবান আসলে কি বুঝাতে চেয়েছেন সেটিই মুখ্য। কারণ, আমরা জানি গীতায় ভগবান একই সংলাপ দুইবার বলেননি। যখন উনি প্রথমেই বললেন
‘‘আমি সর্বভূতেষু’’ তখন এই ভাবে খণ্ড খণ্ড করে পুণরায় বর্ণনা করে সকলের মধ্য বিভেদ সৃষ্টি করার কি প্রয়োজনীয়তা ছিল ?
কিছু গীতা অনুধাবন করে আমি যা পাইলাম তা হলো, আপেক্ষিক ভাবে আমরা এখানে যা বুঝি আসলে ভগবান তা বলেন নাই! আর অর্জুনও আমাদের মত উপলব্ধি করেনি। উনি ভগবানের বর্ণনা সঠিক রপ্ত করতে পেরেছিলেন।
চলুন দেখাযাক ভগবান কি বুঝাতে চাইছেন....
একাদশ রুদ্রের মধ্য শঙ্কর। অর্থাৎ, (শঙ্ক অরঃ স শঙ্কর) সমস্ত শঙ্কা থেকে আমি মুক্ত।
পর্বতের মধ্য সুমেরু। অর্থাৎ, সমস্ত শুভের মিলন। এটিই সর্বোপরি শৃঙ্গ। মূলত এই সমস্তই যোগ-সাধনার প্রতীক, যৌগিক শব্দ।
পুরোহিতগনের মধ্য বৃহস্পতি। অর্থাৎ, যার থেকে দৈবী সম্পদের সঞ্চার হয় তিনিই বৃহস্পতি।
সেনাপতি মধ্য আমি কার্তিকেয়। অর্থাৎ, যার আচরণ করলে চরাচরের সংহার, প্রলয় এবং ইষ্ট লাভ হয়।
সিদ্ধপুরুষ মধ্য কপিল। অর্থাৎ, যখন একাগ্র হওয়া সম্ভব হয় সেই সময় তিনিই কপিল।
অশ্বগণের মধ্য উচ্চৈঃশ্রবাঃ। অর্থাৎ, গতীর প্রতীক। আত্মতত্ত্ব গ্রহণ করার জন্য মন যখন গতিময় হয় তখন তিনিই এখানে উচ্চৈঃশ্রবাঃ।
মনুষ্য মধ্য রাজা। অর্থাৎ, মহাপুরুষই রাজা।
গাভী মধ্য কামধেনু। অর্থাৎ, যে দুধের পরিবর্তে মনের মত ব্যঞ্জন পরিবেশন করেন।
নাগ মধ্য শেষনাগ। এখানে এই শেষ নাগ এটি কোন সাপ নয়। ভাগবতে এর রুপের বর্ণনা করা হয়েছে যে, পৃথিবী থেকে ত্রিশ হাজার যোজন দূরে পরমাত্মার শক্তি বিদ্যমান। যার অগ্রভাগে এই পৃথিবী সরষের দানার মত ভারশুণ্য অবস্থাতে রয়েছে। সে যুগে যোজনের মানদণ্ড যাই ছিল, তবুও এই দূরত্ব পর্যাপ্ত। মূলত এটা আকর্ষণ - শক্তির চিত্রণ। বৈজ্ঞানিকগন ইহাকে ইথার বলে স্বিকার করেছেন! গ্রহ উপগ্রহ যাবতীয় জ্যেতিষ্ক এই শক্তির উপর নির্ভর করেই আছে।
দৈত্য মধ্য প্রহ্লাদ। অর্থাৎ, পরের জন্য আহ্লাদ। মূলত প্রেমেই প্রহ্লাদ।
গণনাকারী মধ্য সময়। অর্থাৎ, এক, দুই, তিন বা দিন, পক্ষ, মাস ইত্যাদি সময় নয়। পরমব্রহ্ম চিন্তনে যে সময় ব্যতীত হয়।
নারী মধ্য আমি যশ, শক্তি, বাকপটুতা, স্মৃতি, মেধা। অর্থাৎ বুদ্ধি, ধৈর্য এবং ক্ষমা।
ছন্দ সমূহ মধ্য গায়ত্রী। অর্থাৎ, যা পাঠ করলে মুক্তি লাভ হয়।
(ওঁ ভূর্ভূবঃ স্বঃ তৎসবিতুর্বরেণ্যং ভার্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ)।
আমি বৃষ্ণিবংশীয় বাসুদেব। অর্থাৎ, সর্বত্র যিনি বাস করেন (পরমাত্মা)।
পাণ্ডব মধ্য আমি ধনঞ্জয়। অর্থাৎ, পুণ্যই পাণ্ডু। পুণ্যদ্বারা প্রেরিত হয়ে আত্মিক সম্পত্তি যিনি সংগ্রহ করেন তিনিই ধনঞ্জয় (এখানে ভগবান অর্জুনকে কিছু বলেন নি)।
‘‘সর্বভূতের উৎপত্তির কারণ আমি’’ (১০/৩৯)।
অর্থাৎ, সকল কিছুই পরমাত্মার অংশ।
এখানে ‘খারাপের মধ্য আমি ভালো’ এই রুপ কিছু বলা হয়নি।
প্রণিপাত। জয় গীতা।।
বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ স্বামী অড়গড়ানন্দ।
Courtesy : Tusar Sarker
শ্রোতাগন ‘গীতা’ শব্দ শুনলেই আর কোন প্রশ্ন উৎপন্ন করতে পারেন না। এই অধ্যায়টি বিভূতি যোগ। পরমব্রহ্মের ঐশ্বর্য বর্ণনা হয়েছে এই অধ্যায়ে।
যাইহোক, গীতার ১০/২০ শ্লোকটি ভগবান বলছেন... ‘‘অর্জুন! আমিই সর্বভূতের হৃদয়ে অবস্থিত সকলের আত্মা এবং সমস্ত ভূতের আদি, মধ্য, এবং অন্ত আমিই। অর্থাৎ জন্ম, মৃত্যু এবং জীবনও আমি।’’
এবার এই শ্লোকের পরের শ্লোকটি দেখুন,
‘‘অদিতির দ্বাদশ পুত্রমধ্যে আমি বিষ্ণু এবং জ্যোতিসমূহের মধ্য আমি প্রকাশমান সূর্য। বায়ুর মধ্য আমি মরীচি নামক বায়ু এবং আমি নক্ষত্রসমূহের মধ্যে চন্দ্র।’’ (১০/২১)।।
প্রশ্ন হলো, ১০/২০ শ্লোকে ভগবান বলেই দিয়েছেন, আমি সমস্ত ভূতের আদি, মধ্য তথা অন্তু। অর্থাৎ সর্ব কিছুই উনি, সর্বভূতেষু। তাহলে ১০/২১ শ্লোকে এসে পুনরায় কেন আলাদা আলাদা ভাবে বর্ণনা শুরু করলেন ?
শুধু ১০/২১ শ্লোকেই নয়, ১০/২১ থেকে ১০/৩৮ শ্লোক পর্যন্তই ভগবান একই ভাবে বলতে লাগলেন....
বেদের মধ্য আমি সামবেদ,
দেবগনের মধ্য আমি ইন্দ্র,
একদশ রুদ্রের মধ্য আমি শঙ্কর,
যক্ষ ও রাক্ষসের মধ্য আমি কুবের,
অষ্টবসুর মধ্য আমি অগ্নি,
পর্বতের মধ্য আমি সুমেরু,
পুরোহিত গনের মধ্য আমি বৃহস্পতি,
সেনাপতি মধ্য আমি কার্তিকেয়,
বৃক্ষের মধ্য আমি অশ্বত্থ,
অশ্বগনের মধ্য আমি উচ্চৈঃশ্রবাঃ,
হস্তিগনের মধ্য আমি ঐরাবত,
মনুষ্যগণের মধ্য আমি রাজা,
গাভীদের মধ্য আমি কামধেনু.......................... ইত্যদি ইত্যাদি।
এখানে ছোট একটা প্রশ্ন, সবকিছুর মধ্য যদি উনি কেবল ভালো গুলো হয়ে থাকেন তাহলে আমরা কি নদীর জলে ভেসে আসছি ?
যেমন ভগবান বললেন, আমি মনুষ্যগনের মধ্য রাজা।
তাহলে যারা প্রজা তাদের মাঝে কি পরমেশ্বরের অংশ নেই ? কিংবা কামধেনু ছাড়া অন্যসকল গাভীদের মাঝে কি জীবাত্মা নেই ?
তাহলে এই গুলো বলে ভগবান আসলে কি বুঝাতে চেয়েছেন সেটিই মুখ্য। কারণ, আমরা জানি গীতায় ভগবান একই সংলাপ দুইবার বলেননি। যখন উনি প্রথমেই বললেন
‘‘আমি সর্বভূতেষু’’ তখন এই ভাবে খণ্ড খণ্ড করে পুণরায় বর্ণনা করে সকলের মধ্য বিভেদ সৃষ্টি করার কি প্রয়োজনীয়তা ছিল ?
কিছু গীতা অনুধাবন করে আমি যা পাইলাম তা হলো, আপেক্ষিক ভাবে আমরা এখানে যা বুঝি আসলে ভগবান তা বলেন নাই! আর অর্জুনও আমাদের মত উপলব্ধি করেনি। উনি ভগবানের বর্ণনা সঠিক রপ্ত করতে পেরেছিলেন।
চলুন দেখাযাক ভগবান কি বুঝাতে চাইছেন....
একাদশ রুদ্রের মধ্য শঙ্কর। অর্থাৎ, (শঙ্ক অরঃ স শঙ্কর) সমস্ত শঙ্কা থেকে আমি মুক্ত।
পর্বতের মধ্য সুমেরু। অর্থাৎ, সমস্ত শুভের মিলন। এটিই সর্বোপরি শৃঙ্গ। মূলত এই সমস্তই যোগ-সাধনার প্রতীক, যৌগিক শব্দ।
পুরোহিতগনের মধ্য বৃহস্পতি। অর্থাৎ, যার থেকে দৈবী সম্পদের সঞ্চার হয় তিনিই বৃহস্পতি।
সেনাপতি মধ্য আমি কার্তিকেয়। অর্থাৎ, যার আচরণ করলে চরাচরের সংহার, প্রলয় এবং ইষ্ট লাভ হয়।
সিদ্ধপুরুষ মধ্য কপিল। অর্থাৎ, যখন একাগ্র হওয়া সম্ভব হয় সেই সময় তিনিই কপিল।
অশ্বগণের মধ্য উচ্চৈঃশ্রবাঃ। অর্থাৎ, গতীর প্রতীক। আত্মতত্ত্ব গ্রহণ করার জন্য মন যখন গতিময় হয় তখন তিনিই এখানে উচ্চৈঃশ্রবাঃ।
মনুষ্য মধ্য রাজা। অর্থাৎ, মহাপুরুষই রাজা।
গাভী মধ্য কামধেনু। অর্থাৎ, যে দুধের পরিবর্তে মনের মত ব্যঞ্জন পরিবেশন করেন।
নাগ মধ্য শেষনাগ। এখানে এই শেষ নাগ এটি কোন সাপ নয়। ভাগবতে এর রুপের বর্ণনা করা হয়েছে যে, পৃথিবী থেকে ত্রিশ হাজার যোজন দূরে পরমাত্মার শক্তি বিদ্যমান। যার অগ্রভাগে এই পৃথিবী সরষের দানার মত ভারশুণ্য অবস্থাতে রয়েছে। সে যুগে যোজনের মানদণ্ড যাই ছিল, তবুও এই দূরত্ব পর্যাপ্ত। মূলত এটা আকর্ষণ - শক্তির চিত্রণ। বৈজ্ঞানিকগন ইহাকে ইথার বলে স্বিকার করেছেন! গ্রহ উপগ্রহ যাবতীয় জ্যেতিষ্ক এই শক্তির উপর নির্ভর করেই আছে।
দৈত্য মধ্য প্রহ্লাদ। অর্থাৎ, পরের জন্য আহ্লাদ। মূলত প্রেমেই প্রহ্লাদ।
গণনাকারী মধ্য সময়। অর্থাৎ, এক, দুই, তিন বা দিন, পক্ষ, মাস ইত্যাদি সময় নয়। পরমব্রহ্ম চিন্তনে যে সময় ব্যতীত হয়।
নারী মধ্য আমি যশ, শক্তি, বাকপটুতা, স্মৃতি, মেধা। অর্থাৎ বুদ্ধি, ধৈর্য এবং ক্ষমা।
ছন্দ সমূহ মধ্য গায়ত্রী। অর্থাৎ, যা পাঠ করলে মুক্তি লাভ হয়।
(ওঁ ভূর্ভূবঃ স্বঃ তৎসবিতুর্বরেণ্যং ভার্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ)।
আমি বৃষ্ণিবংশীয় বাসুদেব। অর্থাৎ, সর্বত্র যিনি বাস করেন (পরমাত্মা)।
পাণ্ডব মধ্য আমি ধনঞ্জয়। অর্থাৎ, পুণ্যই পাণ্ডু। পুণ্যদ্বারা প্রেরিত হয়ে আত্মিক সম্পত্তি যিনি সংগ্রহ করেন তিনিই ধনঞ্জয় (এখানে ভগবান অর্জুনকে কিছু বলেন নি)।
‘‘সর্বভূতের উৎপত্তির কারণ আমি’’ (১০/৩৯)।
অর্থাৎ, সকল কিছুই পরমাত্মার অংশ।
এখানে ‘খারাপের মধ্য আমি ভালো’ এই রুপ কিছু বলা হয়নি।
প্রণিপাত। জয় গীতা।।
বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ স্বামী অড়গড়ানন্দ।
Courtesy : Tusar Sarker
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন