হনুমান এরপর লঙ্কা নগরীর ফটক দেখলেন । একবার ভাবলেন এক পদাঘাতে ফটক ভেঙ্গে ঢুকে গোটা লঙ্কা নগরী তুলে সমুদ্রে নিক্ষেপ করে মাতা সীতাকে স্কন্ধে বহন করে নিয়ে যাই। কিন্তু পর মুহূর্তে ভাবলেন প্রভু তো তাহাকে দূত করে পাঠিয়েছেন। দূতের কাজ শান্তি পূর্বক সংবাদ প্রদান করা। তাই এমন করা ঠিক হবে না। দেখলেন রাক্ষসেরা সব পাহারা দিচ্ছে। তিনি মক্ষিকা আকৃতি ক্ষুদ্র হয়ে লঙ্কা নগরীতে দেখলেন। ঢুকেই লঙ্কা নগরী দেখে তার ঘিনঘিন করতে লাগলো। সম্পূর্ণ অশাস্ত্রীয় নগরী। কোথাও বিষ্ণুধ্বজা দেখতে পেলেন না। কোথাও আধ্যাত্মিক পরিবেশ নেই । তবে সেই নগরী অন্যদিকে অতি সুন্দর ছিলো। বিশাল চওড়া রাজপথে স্বর্ণ রথ সকল উন্নতমানের অশ্বের আকর্ষণে প্রহরা দিচ্ছে। চারিদিকে কেবল রম্য কানন , প্রতিটি গৃহ যেনো স্বর্ণ দিয়ে তৈরী, স্তম্ভ গুলিতে অতি দুর্মূল্য ও দুস্পাপ্র্য হীরা, মুক্তা খচিত । বাগিচা গুলো নানা মিষ্ট ফলে সুশোভিত। দীঘি গুলি অতি সুন্দর টলটলে জল দ্বারা পূর্ণ, দুচারটে নদী দেখলেন। দেখলেন চতুর্দিকে বিকট রাক্ষস, রাক্ষসীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের লজ্জা, শ্রী নেই। অর্ধ উলঙ্গ হয়ে ঘুরছে। কিন্তু তারা অতি সুন্দর অলঙ্কারাদি দ্বারা সুশোভিত । তাহাদিগের বিকট চেহারা দেখলে হাড় হিম করা ভয় উৎপন্ন হয় । হনুমানজী ভাবতে লাগলেন এত বাগিচার মধ্যে কোনটি যে অশোক বাগিচা। সম্পাতি বলেছে অশোক বাগিচাতে বন্দিনী হয়ে আছেন মাতা সীতা। এখানে সব বাগিচাই এত সুন্দর ও রম্য যে বোঝাই যাচ্ছে না যে কোনটি অশোক বাগিচা। হনুমান প্রতিটি বাগিচা ঘুরে ঘুরে দেখলেন। মক্ষিকা সমান ক্ষুদ্র হবার জন্য রাক্ষস রাক্ষসীরা একফোটাও টের পেলো না । হনুমান দেখলো রাক্ষস রাক্ষসীরা কেউ ঈশ্বরের নাম পর্যন্ত করছে না। সকলে ভোগ বিলাসাদির কথা বলছে। আর দেখলেন স্থানে স্থানে অগণিত রথ, অশ্ব, হস্তী, পদাতিক, ঘাতক অস্ত্র মজুত ও সেনা রাখা। এবার বোঝা গেলো কেন রাবণকে দেখে সকলে এত ভয় পায় । এখানে প্রতিটি বাড়ী যেনো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবাড়ী। সকল বাড়ীতে রাক্ষসদের মহিষ চিহ্ন পতাকা শোভা পাচ্ছে ।
করি জতন ভট কোটিনহ বিকট
তন নগর চহুঁ দিসি রচ্ছহীঁ ।
কহুঁ মহিষ মানুষ ধেনু খর
অজ খল নিসাচর ভচ্ছহীঁ ।।
( তুলসীদাসী রামায়ণ )
আর দেখলেন নানা ঘাতক অস্ত্র ধারন করে রাক্ষস সেনারা পাহাড়া দিচ্ছেন এই লঙ্কাকে । আরোও দেখলেন স্থানে স্থানে কসাইখানা বা মাংসের দোকান । তুলসীদাসী রামায়নে এরূপ বর্ণনা আছে । রাক্ষসেরা মহিষ, মানুষ, ধেনু , খর, অজ ভক্ষণ করেছে। কিছু জায়গাতে রাক্ষসেরা সামুদ্রিক মৎস্য পরম প্রীতি সহকারে ভোজন করছেন। হনুমান দেখে বিলাপ করে বলতে লাগলেন- “হা প্রভু! কোন পাপে আমি এই সকল দৃশ্য দেখছি। হা ঈশ্বর! সেই দুষ্ট রাবণ মাতা সীতাকে এই পাপপুরীতে রেখেছে। না জানি মা সীতা কিভাবে জীবন ধারন করে আছেন এখানে। এই নরক ক্ষেত্র ধ্বংস হোক।” মাংস আহারী রাক্ষসেরা মহানন্দে মাংস ভক্ষণ করে সুখ বিলাস করছিলো । এরপর হনুমান গেলেন আরোও কিছু জায়গাতে । রাত নেমে এলো । হনুমান দেখলেন রাবণের বিশাল স্বর্ণ মহল । যেনো স্বর্গকে নিয়ে এসে রাবন লঙ্কাতে স্থাপন করেছেন । অতি বীর যোদ্ধা নানা ঘাতক অস্ত্র নিয়ে মহলে প্রহরা দিচ্ছে । হনুমান দেখলো দেবকণ্যারা বন্দী । তারা রাবণের মহলে দাসীবৃত্তি করছে । গন্ধর্ব কন্যারা রাবণের শত রানীর সেবায় নিমগ্ন । প্রতি কক্ষে ঢুকে তিনি দেখতে লাগলেন । সমস্ত জায়গা যেনো স্বর্ণ দিয়ে মোড়া। হীরা, মাণিক্য, মণি, মুক্তা ইত্যাদি দামী আভূষণে রাবণের মহল সুশোভিত । রাবণের প্রধানা স্ত্রী মন্দাদোরীর কক্ষে গেলেন। দেখলেন স্বর্ণ আদি মণি মুক্তায় মন্দাদোরী সুসজ্জিতা। দেবকণ্যারা তার সেবা করছেন ।
হনুমান এক মুহূর্তের জন্য ভাবলেন ইনিই কি সীতাদেবী? পড়ে ভাবলেন ইনি সীতাদেবী হতেই পারেন না। প্রভুর বিহনে মাতা সীতা কিভাবে এত অলঙ্কারে সজ্জিতা হয়ে আনন্দে দিন যাপন করতে পারবেন? ইনি নিশ্চয়ই রাবণের প্রধানা স্ত্রী হবেন । এইভেবে হনুমান প্রস্থান করলেন । একস্থানে দেখলেন সেখানে হরিনাম হচ্ছে। “ভজ মন নারায়ণ হরি হরি, অবিরত বোল হরি হরি।” হনুমান সেই হরিনাম শুনে পরম শান্তি পেলেন । ভাবলেন এই পাপ ক্ষেত্রে কে প্রভুর নাম করছেন ? এই ভেবে হনুমান একটি বাটীতে প্রবেশ করলেন। দেখলেন সেখানে এক রাক্ষস সর্বাঙ্গে তিলক ধারন করে বিষ্ণু পূজো করছেন । হনুমান ভাবলেন একবার সাক্ষাৎ করাই যাক । পড়ে ভাবলেন এও তো রাক্ষস! ভক্ত হলে হবে কি? রাবণ নিজেও ত শিব ভক্ত- তবুও সে নির্দয় আর নিষ্ঠুর। সুতরাং হরি ভক্ত হলেই যে সদয় হবে এমন ভাবার কারণ নেই। সেটি ছিলো ধর্মাত্মা বিভীষণের বাটি । হনুমান সেখান থেকে বিদায় নিলেন । রাতের অন্ধকারে সুন্দর একটি বাগানে প্রবেশ করলেন । নানারকম পুস্পের সুবাসে আমোদিত ছিলো কানন । বাগিচার নানা স্থানে তিনি স্বর্ণ দ্বারা রচিত স্তম্ভ ও চূড়া দেখতে পেলেন । আর দেখলেন সেখানে কোন পুরুষ রাক্ষস নেই । কেবল রাক্ষসী সেনা পাহার দিচ্ছে। এখানে ওখানে অর্ধ উলঙ্গ হয়ে রাক্ষসী সেনারা শয়ন করছে বিকট শব্দে নাসিকা গর্জন করে। তাহাদের তীক্ষ্ণ সমান দন্ত যুগল দেখলে ভয়ার্ত হতে হয়। আর সেখানে অনেক মিষ্ট ফলের গাছ। গাছগুলি ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে। এত ফল গাছ গুলিতে যে পত্র গুলি ঢাকা পড়েছে । সেখানে অনেক সরোবর ও আয়ুর্বেদিক ঔষধের বৃক্ষ দেখতে পেলেন হনুমান । একস্থানে দেখলেন একজন বন্দিনী নারী ক্রমাগত “হা রাম!” জপ করছেন। রূপে তিনি লক্ষ্মী সদৃশা। সর্বাঙ্গ দিয়ে দিব্য জ্যোতি বিচ্ছুরণ হচ্ছে, পদ্মের ন্যায় কোমল তিনি, অঙ্গে নানা শ্রী প্রস্ফুটিত। হনুমান জী বুঝলেন ইনিই প্রভুর স্ত্রী সীতাদেবী। হনুমান দূর থেকে প্রনাম করে সেই বৃক্ষে উঠলেন, যার তলায় মাতা সীতা বসে বসে রোদন করে রঘুবীরকে স্মরণ করছিলেন ।
( ক্রমশঃ )
আপনাদের জানিয়ে রাখি হনুমানের চরণ চিহ্ন এখনও শ্রীলঙ্কাতে আছে । আপনারা নেট সার্চ করে দেখতে পারেন । এই থেকে প্রমানিত- রামায়ন সত্য, রাম কথা সত্য, হিন্দু ধর্ম সত্য ।
করি জতন ভট কোটিনহ বিকট
তন নগর চহুঁ দিসি রচ্ছহীঁ ।
কহুঁ মহিষ মানুষ ধেনু খর
অজ খল নিসাচর ভচ্ছহীঁ ।।
( তুলসীদাসী রামায়ণ )
আর দেখলেন নানা ঘাতক অস্ত্র ধারন করে রাক্ষস সেনারা পাহাড়া দিচ্ছেন এই লঙ্কাকে । আরোও দেখলেন স্থানে স্থানে কসাইখানা বা মাংসের দোকান । তুলসীদাসী রামায়নে এরূপ বর্ণনা আছে । রাক্ষসেরা মহিষ, মানুষ, ধেনু , খর, অজ ভক্ষণ করেছে। কিছু জায়গাতে রাক্ষসেরা সামুদ্রিক মৎস্য পরম প্রীতি সহকারে ভোজন করছেন। হনুমান দেখে বিলাপ করে বলতে লাগলেন- “হা প্রভু! কোন পাপে আমি এই সকল দৃশ্য দেখছি। হা ঈশ্বর! সেই দুষ্ট রাবণ মাতা সীতাকে এই পাপপুরীতে রেখেছে। না জানি মা সীতা কিভাবে জীবন ধারন করে আছেন এখানে। এই নরক ক্ষেত্র ধ্বংস হোক।” মাংস আহারী রাক্ষসেরা মহানন্দে মাংস ভক্ষণ করে সুখ বিলাস করছিলো । এরপর হনুমান গেলেন আরোও কিছু জায়গাতে । রাত নেমে এলো । হনুমান দেখলেন রাবণের বিশাল স্বর্ণ মহল । যেনো স্বর্গকে নিয়ে এসে রাবন লঙ্কাতে স্থাপন করেছেন । অতি বীর যোদ্ধা নানা ঘাতক অস্ত্র নিয়ে মহলে প্রহরা দিচ্ছে । হনুমান দেখলো দেবকণ্যারা বন্দী । তারা রাবণের মহলে দাসীবৃত্তি করছে । গন্ধর্ব কন্যারা রাবণের শত রানীর সেবায় নিমগ্ন । প্রতি কক্ষে ঢুকে তিনি দেখতে লাগলেন । সমস্ত জায়গা যেনো স্বর্ণ দিয়ে মোড়া। হীরা, মাণিক্য, মণি, মুক্তা ইত্যাদি দামী আভূষণে রাবণের মহল সুশোভিত । রাবণের প্রধানা স্ত্রী মন্দাদোরীর কক্ষে গেলেন। দেখলেন স্বর্ণ আদি মণি মুক্তায় মন্দাদোরী সুসজ্জিতা। দেবকণ্যারা তার সেবা করছেন ।
হনুমান এক মুহূর্তের জন্য ভাবলেন ইনিই কি সীতাদেবী? পড়ে ভাবলেন ইনি সীতাদেবী হতেই পারেন না। প্রভুর বিহনে মাতা সীতা কিভাবে এত অলঙ্কারে সজ্জিতা হয়ে আনন্দে দিন যাপন করতে পারবেন? ইনি নিশ্চয়ই রাবণের প্রধানা স্ত্রী হবেন । এইভেবে হনুমান প্রস্থান করলেন । একস্থানে দেখলেন সেখানে হরিনাম হচ্ছে। “ভজ মন নারায়ণ হরি হরি, অবিরত বোল হরি হরি।” হনুমান সেই হরিনাম শুনে পরম শান্তি পেলেন । ভাবলেন এই পাপ ক্ষেত্রে কে প্রভুর নাম করছেন ? এই ভেবে হনুমান একটি বাটীতে প্রবেশ করলেন। দেখলেন সেখানে এক রাক্ষস সর্বাঙ্গে তিলক ধারন করে বিষ্ণু পূজো করছেন । হনুমান ভাবলেন একবার সাক্ষাৎ করাই যাক । পড়ে ভাবলেন এও তো রাক্ষস! ভক্ত হলে হবে কি? রাবণ নিজেও ত শিব ভক্ত- তবুও সে নির্দয় আর নিষ্ঠুর। সুতরাং হরি ভক্ত হলেই যে সদয় হবে এমন ভাবার কারণ নেই। সেটি ছিলো ধর্মাত্মা বিভীষণের বাটি । হনুমান সেখান থেকে বিদায় নিলেন । রাতের অন্ধকারে সুন্দর একটি বাগানে প্রবেশ করলেন । নানারকম পুস্পের সুবাসে আমোদিত ছিলো কানন । বাগিচার নানা স্থানে তিনি স্বর্ণ দ্বারা রচিত স্তম্ভ ও চূড়া দেখতে পেলেন । আর দেখলেন সেখানে কোন পুরুষ রাক্ষস নেই । কেবল রাক্ষসী সেনা পাহার দিচ্ছে। এখানে ওখানে অর্ধ উলঙ্গ হয়ে রাক্ষসী সেনারা শয়ন করছে বিকট শব্দে নাসিকা গর্জন করে। তাহাদের তীক্ষ্ণ সমান দন্ত যুগল দেখলে ভয়ার্ত হতে হয়। আর সেখানে অনেক মিষ্ট ফলের গাছ। গাছগুলি ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে। এত ফল গাছ গুলিতে যে পত্র গুলি ঢাকা পড়েছে । সেখানে অনেক সরোবর ও আয়ুর্বেদিক ঔষধের বৃক্ষ দেখতে পেলেন হনুমান । একস্থানে দেখলেন একজন বন্দিনী নারী ক্রমাগত “হা রাম!” জপ করছেন। রূপে তিনি লক্ষ্মী সদৃশা। সর্বাঙ্গ দিয়ে দিব্য জ্যোতি বিচ্ছুরণ হচ্ছে, পদ্মের ন্যায় কোমল তিনি, অঙ্গে নানা শ্রী প্রস্ফুটিত। হনুমান জী বুঝলেন ইনিই প্রভুর স্ত্রী সীতাদেবী। হনুমান দূর থেকে প্রনাম করে সেই বৃক্ষে উঠলেন, যার তলায় মাতা সীতা বসে বসে রোদন করে রঘুবীরকে স্মরণ করছিলেন ।
( ক্রমশঃ )
আপনাদের জানিয়ে রাখি হনুমানের চরণ চিহ্ন এখনও শ্রীলঙ্কাতে আছে । আপনারা নেট সার্চ করে দেখতে পারেন । এই থেকে প্রমানিত- রামায়ন সত্য, রাম কথা সত্য, হিন্দু ধর্ম সত্য ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন