রাবণ লক্ষণরেখা অতিক্রম করতে পারেনি। সীতাকে সে সেই গণ্ডীর বাহিরে আনবার জন্য পুনঃ ছলাকলার আশ্রয় নিলো। একজন সন্ন্যাসীর ছদ্দবেশ ধারণ করলো। হাতে নিলো কমণ্ডলু , দণ্ড । ৯ মস্তক অদৃশ্য করলো। কুটীরের বাইরে থেকে বলল- “ভিক্ষাম দেহি।” রাবণের এমন ডাকে সীতাদেবী বাহিরে আসলেন । দেখলেন এক সাধু দণ্ডায়মান । সীতাদেবী প্রণাম জানিয়ে বললেন- “হে মহাত্মা, আপনি খানিক বিশ্রাম গ্রহণ করুন। আমার পতি ও দেবর গভীর অরণ্যে গেছেন। আমার স্বামী বোধ হয় কোন বিপদে পড়েছেন। ঈশ্বরের কৃপায় দুজনে কুশলে আগমন করলেই আপনাকে ভিক্ষা দেবো।” রাবণ বলল- “হে বালিকে! আমি শিব উপাসক। বহুদিন যাবত ভগবান চন্দ্রশেখরের আরাধনা করে আমি বড়ই ক্ষুধার্ত । সন্ন্যাসী অভুক্ত অবস্থায় যে গৃহ থেকে প্রস্থান করে সেই গৃহের অকল্যাণ হয়।” অকল্যাণের নাম শুনে সীতাদেবী ভয় পেলেন। স্বামী, দেবর দুইজনেই বণে। এই সন্ন্যাসী রুষ্ট হলে যদি তাহাদিগের কোন সঙ্কট হয়! এই ভেবে সীতাদেবীর ভয়ে বুক দুরুদুরু করতে লাগলো । তখুনি গৃহ থেকে ঝুঁড়ি তে ফল, মূল, কন্দ সাজিয়ে নিয়ে এলো। কিন্তু লক্ষণ এই গণ্ডী টেনে তাঁকে এর বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন । সীতাদেবী বললেন- “হে মহাত্মা! আপনি গণ্ডীর ভেতরে এসে দয়া করে ভিক্ষা গ্রহণ করুন। আমার দেবর আমার সুরক্ষার জন্য এই সীমারেখা রচনা করে গেছে। এর বাহিরে আমাকে গমন করতে নিষেধ করেছে। দয়া করে এই রেখার মধ্যে এসে ভিক্ষা গ্রহণ করুন ।” কিন্তু রাবণ ভালোমতোই জানে, যে সে ঐ সীমার মধ্যে প্রবেশ করতে পারবে না । বলল- “হে দেবী! আমি সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী। গৃহস্থের সীমায় আমার প্রবেশ বর্জনীয় । অতএব তুমি এই গণ্ডী অতিক্রম করে এসে আমাকে ভিক্ষা প্রদান করো। নচেৎ আমি অভুক্ত অবস্থায় ফিরে যাবো।” সীতাদেবী ভাবলেন তিনি কি করে লক্ষণের আদেশ অমান্য করেন। অপরদিকে স্বামীর সেই আর্তনাদ, তাঁহাকে খুঁজতে লক্ষণের গমন- যদি এই সন্ন্যাসী ভিক্ষা না পেয়ে শাপ প্রদান করে বসেন ত! কি কুক্ষণেই যে রঘুবীরকে সেই হরিণ ধরে আনবার অনুরোধ করেছিলাম।
সীতাদেবী ভাবলেন ইনি তো সন্ন্যাসী। এঁনার থেকে ভয় কি? শিবভক্ত সন্ন্যাসীর সেবা করলে সন্ন্যাসী আশীর্বাদ করবেন। ভক্তের সেবা করলে ভগবান শিব ও মাতা গৌরীদেবী সন্তুষ্ট হবেন । অতএব আর দেরী না করে ফলের ঝুড়ি নিয়ে সীতাদেবী লক্ষণের রচিত গণ্ডী পার করে ছদ্দবেশী দশাননকে ভিক্ষা দিতে গেলেন । দশানন এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলো। সীতার হস্ত ধরে স্বরূপ ধরলেন। দশমুখ, ভীমকায় চেহারা দেখে সীতাদেবী ভীত হলেন। দশানন অট্টহাস্য করে বললেন- “হে দেবী সীতা! তোমাকে আমি এই নরক থেকে বহুদূরে আমার রাজ্যে নিয়ে যাবো। সেখানে তোমাকে বিবাহ করবো। কথা দিচ্ছি স্বর্ণ অলঙ্কারে ভূষিতা পাঁচশো দাসী নিরন্তর তোমার সেবা করবে। দেবকণ্যারা তোমার আদেশবাহিকা হয়ে থাকবে।” সীতাদেবী ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন- “রে দুরাচারী! আমায় ছেড়ে দে। নচেৎ রঘুপতির হাতে তোর ধ্বংস হবে। সামান্য রাক্ষস হয়ে এত সাহস যে সিংহের মুখ থেকে দন্ত উৎপাটন করে নিয়ে যেতে চাস? অগ্নিকে বস্ত্রে বেধে নিয়ে যেতে চাস? বিষাক্ত সর্পের মুখ থেকে দন্ত উৎপাটন করতে চাস? সূচাগ্র দ্বারা নয়ন পরিষ্কার করতে চাস? জিহ্বা দ্বারা ছোড়ায় শান দিতে চাস? আমাকে বিবাহ করবার সাধ তোর কদাপি পূর্ণ হবে না। তুই ধ্বংস হবি।” দশানন অট্টহাস্য করে বলল- “ওহে সুন্দরী সীতা, জনক রাজ্যে হরধনু খণ্ড করতে না পেরে আমি তোমাকে হারিয়েছি, এবার তোমায় বল পূর্বক লঙ্কায় নিয়ে গিয়ে বিবাহ করবো। কেউ আমাকে রোধ করতে পারবে না। আমি দশানন রাবণ! আমার ভয়ে দেবতা, গন্ধর্ব, পন্নগ , যক্ষেরা অবধি পলায়ন করে, আর তোমার ঐ বনবাসী ভিক্ষুক স্বামী আমার কি করবে?” এই বলে রাবণ সীতাদেবীর কেশ আকর্ষণ করে পুস্পক বিমানে নিয়ে তুলল । সীতাদেবী ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন- “হে দশানন! তুমি আমার কেশ স্পর্শ করে মহাপাপ করেছো। আমি অভিশাপ দিচ্ছি, আজ হতে যদি কোন পুরুষ নিজের স্ত্রী ভিন্ন অপর নারীর কেশ স্পর্শ করবে তবে তার আয়ুস্কাল অর্ধেক ক্ষয় হয়ে যাবে। আর আমাকে বিবাহ করবার ইচ্ছা তোমার কদাপি পূর্ণ হবে না। এই পাপেই রঘুপতির হস্তে তুমি বিনাশ হবে।” পুস্পক বিমান ভূমি ছেড়ে ঊর্ধ্বে গগনে উঠলো। রাবণের হাত হতে মুক্তিলাভের জন্য এবার সীতাদেবী কাঁতর কন্ঠে বলল- “হে রক্ষরাজ ! তুমি অতীব পরাক্রমী বীর! তোমাকে দেখে দেবতারা পর্যন্ত ভয় পায়। তুমি নবগ্রহকে পরাজিত করেছো। এইভাবে অপরের বিবাহিতা স্ত্রীকে অপহরণ করলে তোমার নামে কলঙ্ক বৃদ্ধি পাবে। কৃপা করে আমাকে মুক্ত করো।” এত বলি সীতাদেবী কাকুতি মিনতি করতে লাগলো।
রাবণের মণ গলে গেলো না। পুস্পক রথ লঙ্কার পাণে যেতে লাগলো। সীতাদেবী কাঁতর কণ্ঠে বললেন- “হে রঘুবীর! দেবর লক্ষণ ! আপনারা সব কোথায়? এই দুরাচারীর হস্ত থেকে আমাকে রক্ষা করুন। হে রঘুনাথ, আপনার সীতা বড়ই বিপদে। আমাকে রক্ষা করুন নাথ। হায় ! আমি লক্ষণ কে কেন কটু কথা বলে অরণ্যে প্রেরন করলাম! হায় ! কেন রঘুপতিকে সেই হরিণ ধরে আনতে অরণ্যে প্রেরন করলাম! আমার এই আবদার, আমার সর্বনাশ ডেকে আনলো।” এত বলি সীতাদেবী রোদন করতে লাগলেন । রাবণ বলল- “ওহে সুন্দরী সীতা! তোমার চিৎকারে কেউ আসবে না। কার এত বড় সাহস যে রাবণকে বাধা দেয়? আর তোমার স্বামী আর দেবরকে ইচ্ছা করে আমি বনে পাঠিয়েছি, যাতে নির্বিঘ্নে তোমাকে তুলে আনা যায়। সেই হরিণ আমার অনুচর মারীচ। হে সীতে! শ্রবন করো, তুমি লঙ্কায় গিয়ে আমাকে বিবাহ করো। ত্রিলোকের সকল ঐশ্বর্য তোমার পদানত হবে। ত্রিলোকের রাণী হয়ে আমার বামে অধিষ্ঠান করে সর্ব সুখ ভোগ করবে।” শুনে জানকী দেবী ঘৃনায় বললেন- “ছি দশানন! তোমার বুদ্ধিকে ধিক্ ! তুমি অত্যন্ত অসভ্য নীচ প্রবৃত্তির পাশব দানব! অন্যের বিবাহিত স্ত্রীকে বিবাহের প্রস্তাব দিতে তোমার লজ্জা বোধ করে না? শুনে রাখ দুরাচারী! আমি প্রাণ দেবো, কিন্তু রঘুপতি ভিন্ন কখনো অন্য পুরুষ আমার মনে স্থান পাবে না।” সীতাদেবীর কথা শুনে রাবণ হাসতে হাসতে নিজ দম্ভ প্রকাশ করলো। সীতাদেবী কাঁতর স্বরে সাহায্যের জন্য বলল- “হে বনদেবী ! এই মহাপাপীর হাত থেকে আমাকে মুক্ত করুন। হে দেবতাগণ ! আমাকে উদ্ধার করুন। এই পাপীষ্ঠির বিনাশ করে আমাকে মুক্ত করুন ! হে যমদেবতা কৃপা করে আমাকে এখুনি মৃত্যু দান করুন। যাতে এই দুরাচারীর হস্ত থেকে নিস্কৃতি পাই। হে দেবতাগণ আপনারা কি বধির হয়ে গেছেন? কোথায় আপনারা ?” দেবতারা আর কি করেন ! রাবনের ভয়ে তারা ত্রস্ত। নবগ্রহ এখন রাবণের হস্তে বন্দী। তাঁরাই কিছু করতে পারছে না। সীতাদেবী বললেন- “এমন কি কোন বীর নেই যে এই অভাগী সীতাকে উদ্ধার করে?” অপরদিকে বনে গিয়ে রাম ও লক্ষণের সাক্ষাৎ হল। রাম বললেন- “লক্ষণ! বোধ হয় আমাদের বিরূদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছে । তুমি কেন কুটিরে সীতাকে একলা ফেলে আসলে? আমার কিছুই ভালো বোধ হচ্ছে না। কেন সেই রাক্ষস মৃগ রূপ ধরে আমাকে এত দূরে নিয়ে এসে মরবার আগে আমার কণ্ঠ নকল করে তোমাকে ডাকল ?” লক্ষণ বলল- “আমি কি ইচ্ছায় এসেছি? আজ বৌঠান আমাকে যেসব বাক্য বলেছেন এরপর আমার বেঁচে থাকবার ইচ্ছাই নেই। আমি কুটিরে বৌঠানকে রেখে দুর্ভেদ্য ও অভেদ্য গণ্ডী টেনে এসেছি।” রামচন্দ্র বললেন- “চল লক্ষণ! শীঘ্র কুটিরে চলো! আমার কিছুই ভালো বোধ হচ্ছে না।” এই বলে রাম ও লক্ষণ দ্রুত কুটিরের দিকে আসতে লাগলেন । নানা জায়গায় তারা অশুভ চিহ্ন দেখতে পেলেন । পথে লক্ষণ সব কিছু বললেন।
( ক্রমশঃ )
সীতাদেবী ভাবলেন ইনি তো সন্ন্যাসী। এঁনার থেকে ভয় কি? শিবভক্ত সন্ন্যাসীর সেবা করলে সন্ন্যাসী আশীর্বাদ করবেন। ভক্তের সেবা করলে ভগবান শিব ও মাতা গৌরীদেবী সন্তুষ্ট হবেন । অতএব আর দেরী না করে ফলের ঝুড়ি নিয়ে সীতাদেবী লক্ষণের রচিত গণ্ডী পার করে ছদ্দবেশী দশাননকে ভিক্ষা দিতে গেলেন । দশানন এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলো। সীতার হস্ত ধরে স্বরূপ ধরলেন। দশমুখ, ভীমকায় চেহারা দেখে সীতাদেবী ভীত হলেন। দশানন অট্টহাস্য করে বললেন- “হে দেবী সীতা! তোমাকে আমি এই নরক থেকে বহুদূরে আমার রাজ্যে নিয়ে যাবো। সেখানে তোমাকে বিবাহ করবো। কথা দিচ্ছি স্বর্ণ অলঙ্কারে ভূষিতা পাঁচশো দাসী নিরন্তর তোমার সেবা করবে। দেবকণ্যারা তোমার আদেশবাহিকা হয়ে থাকবে।” সীতাদেবী ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন- “রে দুরাচারী! আমায় ছেড়ে দে। নচেৎ রঘুপতির হাতে তোর ধ্বংস হবে। সামান্য রাক্ষস হয়ে এত সাহস যে সিংহের মুখ থেকে দন্ত উৎপাটন করে নিয়ে যেতে চাস? অগ্নিকে বস্ত্রে বেধে নিয়ে যেতে চাস? বিষাক্ত সর্পের মুখ থেকে দন্ত উৎপাটন করতে চাস? সূচাগ্র দ্বারা নয়ন পরিষ্কার করতে চাস? জিহ্বা দ্বারা ছোড়ায় শান দিতে চাস? আমাকে বিবাহ করবার সাধ তোর কদাপি পূর্ণ হবে না। তুই ধ্বংস হবি।” দশানন অট্টহাস্য করে বলল- “ওহে সুন্দরী সীতা, জনক রাজ্যে হরধনু খণ্ড করতে না পেরে আমি তোমাকে হারিয়েছি, এবার তোমায় বল পূর্বক লঙ্কায় নিয়ে গিয়ে বিবাহ করবো। কেউ আমাকে রোধ করতে পারবে না। আমি দশানন রাবণ! আমার ভয়ে দেবতা, গন্ধর্ব, পন্নগ , যক্ষেরা অবধি পলায়ন করে, আর তোমার ঐ বনবাসী ভিক্ষুক স্বামী আমার কি করবে?” এই বলে রাবণ সীতাদেবীর কেশ আকর্ষণ করে পুস্পক বিমানে নিয়ে তুলল । সীতাদেবী ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন- “হে দশানন! তুমি আমার কেশ স্পর্শ করে মহাপাপ করেছো। আমি অভিশাপ দিচ্ছি, আজ হতে যদি কোন পুরুষ নিজের স্ত্রী ভিন্ন অপর নারীর কেশ স্পর্শ করবে তবে তার আয়ুস্কাল অর্ধেক ক্ষয় হয়ে যাবে। আর আমাকে বিবাহ করবার ইচ্ছা তোমার কদাপি পূর্ণ হবে না। এই পাপেই রঘুপতির হস্তে তুমি বিনাশ হবে।” পুস্পক বিমান ভূমি ছেড়ে ঊর্ধ্বে গগনে উঠলো। রাবণের হাত হতে মুক্তিলাভের জন্য এবার সীতাদেবী কাঁতর কন্ঠে বলল- “হে রক্ষরাজ ! তুমি অতীব পরাক্রমী বীর! তোমাকে দেখে দেবতারা পর্যন্ত ভয় পায়। তুমি নবগ্রহকে পরাজিত করেছো। এইভাবে অপরের বিবাহিতা স্ত্রীকে অপহরণ করলে তোমার নামে কলঙ্ক বৃদ্ধি পাবে। কৃপা করে আমাকে মুক্ত করো।” এত বলি সীতাদেবী কাকুতি মিনতি করতে লাগলো।
রাবণের মণ গলে গেলো না। পুস্পক রথ লঙ্কার পাণে যেতে লাগলো। সীতাদেবী কাঁতর কণ্ঠে বললেন- “হে রঘুবীর! দেবর লক্ষণ ! আপনারা সব কোথায়? এই দুরাচারীর হস্ত থেকে আমাকে রক্ষা করুন। হে রঘুনাথ, আপনার সীতা বড়ই বিপদে। আমাকে রক্ষা করুন নাথ। হায় ! আমি লক্ষণ কে কেন কটু কথা বলে অরণ্যে প্রেরন করলাম! হায় ! কেন রঘুপতিকে সেই হরিণ ধরে আনতে অরণ্যে প্রেরন করলাম! আমার এই আবদার, আমার সর্বনাশ ডেকে আনলো।” এত বলি সীতাদেবী রোদন করতে লাগলেন । রাবণ বলল- “ওহে সুন্দরী সীতা! তোমার চিৎকারে কেউ আসবে না। কার এত বড় সাহস যে রাবণকে বাধা দেয়? আর তোমার স্বামী আর দেবরকে ইচ্ছা করে আমি বনে পাঠিয়েছি, যাতে নির্বিঘ্নে তোমাকে তুলে আনা যায়। সেই হরিণ আমার অনুচর মারীচ। হে সীতে! শ্রবন করো, তুমি লঙ্কায় গিয়ে আমাকে বিবাহ করো। ত্রিলোকের সকল ঐশ্বর্য তোমার পদানত হবে। ত্রিলোকের রাণী হয়ে আমার বামে অধিষ্ঠান করে সর্ব সুখ ভোগ করবে।” শুনে জানকী দেবী ঘৃনায় বললেন- “ছি দশানন! তোমার বুদ্ধিকে ধিক্ ! তুমি অত্যন্ত অসভ্য নীচ প্রবৃত্তির পাশব দানব! অন্যের বিবাহিত স্ত্রীকে বিবাহের প্রস্তাব দিতে তোমার লজ্জা বোধ করে না? শুনে রাখ দুরাচারী! আমি প্রাণ দেবো, কিন্তু রঘুপতি ভিন্ন কখনো অন্য পুরুষ আমার মনে স্থান পাবে না।” সীতাদেবীর কথা শুনে রাবণ হাসতে হাসতে নিজ দম্ভ প্রকাশ করলো। সীতাদেবী কাঁতর স্বরে সাহায্যের জন্য বলল- “হে বনদেবী ! এই মহাপাপীর হাত থেকে আমাকে মুক্ত করুন। হে দেবতাগণ ! আমাকে উদ্ধার করুন। এই পাপীষ্ঠির বিনাশ করে আমাকে মুক্ত করুন ! হে যমদেবতা কৃপা করে আমাকে এখুনি মৃত্যু দান করুন। যাতে এই দুরাচারীর হস্ত থেকে নিস্কৃতি পাই। হে দেবতাগণ আপনারা কি বধির হয়ে গেছেন? কোথায় আপনারা ?” দেবতারা আর কি করেন ! রাবনের ভয়ে তারা ত্রস্ত। নবগ্রহ এখন রাবণের হস্তে বন্দী। তাঁরাই কিছু করতে পারছে না। সীতাদেবী বললেন- “এমন কি কোন বীর নেই যে এই অভাগী সীতাকে উদ্ধার করে?” অপরদিকে বনে গিয়ে রাম ও লক্ষণের সাক্ষাৎ হল। রাম বললেন- “লক্ষণ! বোধ হয় আমাদের বিরূদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হয়েছে । তুমি কেন কুটিরে সীতাকে একলা ফেলে আসলে? আমার কিছুই ভালো বোধ হচ্ছে না। কেন সেই রাক্ষস মৃগ রূপ ধরে আমাকে এত দূরে নিয়ে এসে মরবার আগে আমার কণ্ঠ নকল করে তোমাকে ডাকল ?” লক্ষণ বলল- “আমি কি ইচ্ছায় এসেছি? আজ বৌঠান আমাকে যেসব বাক্য বলেছেন এরপর আমার বেঁচে থাকবার ইচ্ছাই নেই। আমি কুটিরে বৌঠানকে রেখে দুর্ভেদ্য ও অভেদ্য গণ্ডী টেনে এসেছি।” রামচন্দ্র বললেন- “চল লক্ষণ! শীঘ্র কুটিরে চলো! আমার কিছুই ভালো বোধ হচ্ছে না।” এই বলে রাম ও লক্ষণ দ্রুত কুটিরের দিকে আসতে লাগলেন । নানা জায়গায় তারা অশুভ চিহ্ন দেখতে পেলেন । পথে লক্ষণ সব কিছু বললেন।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন