ভগবান বিষ্ণুর বাহন গড়ুর পক্ষী মাংসাশী পক্ষী । তিনি সর্প আহার করেন। বোধ হয় বাজ- ঈগল এই সমস্ত মাংসাশী পক্ষী দেখে পুরাণ রচয়িতা গড়ুর পক্ষীর চরিত্র আনয়ন করেছেন । গড়ুরের পুত্র জটায়ু আর সম্পাতি পিতার ন্যায় মাংস ভক্ষণ করতেন । সব পাখী কিন্তু ফলমূল দানা খায় না। ঈগল- বাজ- চিল- গৃধ এই ধরণের খেচর অপর প্রানীর মাংস আহার করে। সম্পাতির ডানা সূর্যের তেজে বহু আগেই জ্বলে ভস্ম হয়ে গিয়েছিলো। সেই প্রানী লাফাতে লাফাতে ঐ বানর দলের কাছাকাছি এসে তাদের বার্তা আলাপ শ্রবন করতে লাগলেন । হনুমান বলছিলেন- “এই জীবন বৃথা। কি লাভ এইহেন অপদার্থ জীবন রেখে? আমরা মাতা সীতার সন্ধানই পেলাম না। না জানি দুষ্ট রাক্ষস কোথায় নিয়ে গেছে ? প্রভু বড় আশা করেছিলেন আমার ওপর। আশা করেছিলেন আমিই সীতামাতার সন্ধান এনে দেবো। এই কারণে প্রভু আমাকে অঙ্গুরীয় প্রদান করেছিলেন। আমি এই বিফল মুখ প্রভুকে দেখাতে পারবো না। এই সাগরের জলে ঝাঁপ দিয়ে মরবো।” অনান্য বানরেরা বলল- “ঠিক তাই! মাতা সীতার সন্ধান পেলাম না তখন আর এই জীবন রেখে কি কাজ?” সম্পাতি সেই বানরদের কথা শুনছিল । জাম্বুবান বলল- “জটায়ু অনেক ভাগ্যবান । সেই পক্ষী মা সীতাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের ডানা হারিয়ে জীবন দিয়েও রাবণকে রুদ্ধ করবার চেষ্টা করছিলো- যদিও সে সফল হয় নি। তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবুও সে নিজের জীবন ধন্য করেছে।” এই কথা শোনা মাত্রই সম্পাতির মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো। এই বানরেরা বলে কি? তাঁর ভ্রাতা জটায়ু তাহলে আর জীবিত নেই? সম্পাতি বলল- “ওহে কপি গণ! তোমরা কি বললে আবার বল। আমিই জটায়ুর ভ্রাতা সম্পাতি। আমার দাদা আর জীবিত নেই? হা ঈশ্বর! কোন দুরাত্মা আমার দাদাকে বধ করেছে?” বানরেরা বলল- “অযোধ্যার রাজকুমার শ্রীরাম তার ভ্রাতাসহিত এবং পত্নী সীতাদেবীকে নিয়ে পিতৃসত্য পালনের নিমিত্ত বনে এসেছিলেন । সেখান থেকে লঙ্কারাজ দশানন রাবণ, সীতামাতাকে হরণ করে লঙ্কায় নিয়ে গেছে। সেইসময় জটায়ু বাধা দিলে রাবণ খুব নীরিহ নির্দয় ভাবে জটায়ুর ডানাচ্ছেদ করে, বধ করে। আমরা সীতামাতাকে খুঁজছি। না জানি সেই দুরাচারী কোথায় সীতামাতাকে নিয়ে গেছে আর লঙ্কাই বা কোথায়? এত সন্ধান করেও পেলাম না।”
সম্পাতি ক্রন্দন করতে করতে বলল- “জটায়ু আমার ভ্রাতা ছিলো। আমরা বিষ্ণু দেবের বাহন গড়ুরের পুত্র । একবার উড়তে উড়তে আমি সূর্যের নিকট গিয়েছিলাম। সেখানেই আমি আমার ভ্রাতাকে বাঁচাতে গিয়ে ডানা হারিয়েছি। এখানে বসে আমি ‘রাম’ নাম জপ করছি। তোমাদের আহার করতে ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তোমাদের কথা শূনে আমি একেবারে ভেঙ্গে পড়েছি। আমি লঙ্কারাজ রাবণকে কিছুদিন পূর্বে এক নারীকে পুস্পক বিমানে নিয়ে যেতে দেখছি। সেই অপূর্বা নারী ক্রমাগত ‘হা রাম!’। ‘হা লক্ষ্মণ’ বলে ক্রন্দন করে সাহায্য চাইছিলেন। আমি নিশ্চিত তিনিই সীতাদেবী।” বানরেরা আশা নিয়ে বলল- “তাই? সেই রাবণ কোথায় কোনদিকে গেলো? বল। সেই রাবণকে বধ করে প্রভু শ্রীরাম সীতামাতাকে উদ্ধার করবেন।” এইভাবে বানরেরা বোঝালে সম্পাতি বলল- “আমি বৃদ্ধ। তবে ভাইয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবোই। যখন শ্রীরাম, রাবণকে বধ করবেন- তা দেখে আমি আনন্দ পাবো। আমার ভ্রাতার আত্মা শান্তি পাবে। পক্ষীর দৃষ্টি শক্তি প্রবল হয়। আমি এখানে বসেই দেখতে পাচ্ছি- রাবণের লঙ্কাতে অশোকবণে মা সীতা সুরক্ষিত ও নির্ভয়ে আছেন। রাবন ওনাকে অশোক বনে বন্দী করে ক্রমাগত বিবাহের জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। বিকট চেহারার রাক্ষসীরা দিবারাত্র সীতাকে নানান ভাবে ভয় দেখায়। কেবল একটি রাক্ষসী উদার চিত্তের, সেই রাক্ষসী সীতাকে কন্যার মতো আগলে রেখেছে।” এই বলে সম্পাতি আরোও বলল-“ আপনারা আমার নিকট শ্রীরামের মহিমা কীর্তন করুন।” হনুমান বলল – “ওহে পক্ষী! তোমার পিতা গড়ুর যাঁকে স্কন্ধে বহন করেন তিনিই শ্রীরাম রূপে বর্তমানে এসেছেন । এই ক্ষুদ্র মুখে রাম নামের মহিমা কি বলিব- পাছে যদি ত্রুটি হয় । সেই অগাধ জলরাশির সামান্য বিন্দু কেবল কহিতেছি । দস্যু রত্নাকর নিষ্ঠুর হত্যাকারী ছিলো। একটুকরো বস্ত্রের জন্যও অনেক লোক হত্যা করে লুটপাট করতো। সেই ডাকাত “রাম” নাম জপ করে মহর্ষি বাল্মিকী হয়ে “রামচন্দ্রের লীলা” রচনা করছেন । দশরথ রাজা অজ্ঞাতে তিনটি ব্রহ্মহত্যার দায়ী ছিলেন । তিনবার রাম নাম নিতে বলায় বশিষ্ঠ মুনি তাঁর পুত্র বামদেবকে শাপ দিয়ে চণ্ডাল কুলে জন্ম দিয়েছেন। রাম নামে এত সংশয় ? একবার “রাম” নামেই কোটি ব্রহ্মহত্যা পাপ নাশ হয় । রামচন্দ্র দশরথের গৃহে জন্মালেন । বাল্যেই তাড়কা, সুবাহু নামক ভয়ানক রাক্ষসী, রাক্ষস বধ করে মারীচকে তাড়িয়ে বিশ্বামিত্রর তপোবন রক্ষা করেছেন। রাম নাম জপ করেই শাপিত অহল্যা দেবী প্রস্তর থেকে হলেন জীবন্ত মানবী। শিবের ধনুক যা রাবণ অবধি তুলতে পারেনি- সেই ধনুক খণ্ড করে প্রভু রাম, সীতাদেবীকে বিবাহ করলেন । এরপর পিতৃসত্য পালনের জন্য স্ত্রী সীতাদেবী ও ভ্রাতা লক্ষণ সহিত বণে আসলেন। কত ভক্ত প্রভুর দর্শন পেয়ে উদ্ধার হল। বিরাধ, খড়, দূষণ, ত্রিশিরা, কবন্ধ, মারীচ আদি রাক্ষস পিশাচেরা তাঁর হস্তে নিধন হয়ে মুক্তিলাভ করেছে। বালি নিজেও তাঁর হস্তে নিধন হয়ে বৈকুণ্ঠ লাভ করেছে। শ্রীরামের এমনই মহিমা”।
এই কথা শোনামাত্রই সম্পাতির ডানা গজিয়ে উঠলো। এই চমৎকার দেখে কপিরা অবাক হল। একই তাজ্জব ঘটনা । সম্পাতি বলল- “রাম নাম জপ করেই আমার এই ডানা উৎপন্ন হল পুনর্বার। রামলীলা শুনেই আমার দুঃখের অবসান হল। প্রভু শ্রীরামের এমনই মহিমা। যে রামলীলা শ্রবন করবে- সে মানব, পক্ষী যেই হোক- অগাধ সুখের অধিকারী হয়ে মুক্তিলাভ করবে । তোমরা এবার মাতা সীতার কাছে যাবার উদ্যোগ করো।” এই বলে সম্পাতি বললেন-
নানাবর্ণ রাক্ষসী সীতারে করে রক্ষা ।
শত যোজনের পথ সাগর পরিখা ।।
একলাফে পার হও সকল বানর ।
সীতাদেবী দেখিয়া সকলে যাহ ঘর ।।
মহাবল ধর সবে কি কর ভাবনা ।
হইয়া সাগর পার পুরাও কামনা ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
অর্থাৎ ভারতের শেষপ্রান্ত থেকে লঙ্কার দূরত্ব শত যোজন । কিন্তু মাঝে বিশাল অগাধ সমুদ্র । অন্তহীন নীল জলরাশি যতদূর চোখ যায় । আর বিশাল ঢেউ- যার গর্জন শুনলেই তরাশ লাগে । তার মধ্যে তিমি, হাঙর, মকর, কুমীর এমন মাংসাশী প্রানী। একবার গভীর জলে পতিত হলে সাঁতার দিয়েও বাঁচা অসম্ভব । এই সাগর কে পার করবে ? সকলে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। রাক্ষসেরা মায়া দ্বারা আকাশ ভ্রমণে সমর্থ । কিন্তু এই বিদ্যা তো বানর বা সাধারন মানবেরা জানে না । এখন আবার সম্পাতি বললেন-
জো নাঘই সত যোজন সাগর ।
করই সো রাম কাজ মতি আগর ।।
মোহি বিলোকি ধরহু মন ধীরা ।
রাম কৃঁপা কস ভয়উ সরীরা ।।
পাপিউ জা কর নাম সুমিরহীঁ ।
অতি অপার ভবসাগর তরহীঁ ।।
তাসু দূত তুমহু তজি কদরাঈঁ ।
রাম হৃদয়ঁ ধরি করহু উপাঈ ।।
( তুলসীদাসী রামায়ণ )
এর অর্থ- যে শত যোজন ( চার শত ক্রোশ ) সাগর লঙ্ঘন করতে পারবে সেই শ্রীরামচন্দ্রের কার্য সম্পাদন করতে পারবে । ( আশা ছেড়ো না ) আমাকে দেখে সাহস রাখো! দেখো! শ্রীরামচন্দ্রের কৃপায় ( দেখতে দেখতে ) আমার দেহে কেমন পরিবর্তন আসল ( ডানা ছাড়া আমি অক্ষম ছিলাম এখন ডানা পেতেই কেমন সক্ষম হলাম)। অতি বড় পাপিষ্ঠ তাঁর নাম স্মরণ করে দুস্তর ভবসাগর অতিক্রম করে যায় আর তোমরা হলে তাঁর দূত । অতএব কাপুরুষতা বর্জন করো আর প্রভু শ্রীরামচন্দ্রকে হৃদয়ে ধারন করে ( সীতাদেবীর নিকটে উপস্থিত হওয়ার ) পথ খুঁজে বার করো।
সম্পাতি আরোও জানালো সেই লঙ্কা বহু পূর্বে ভগবান শিবের নির্দেশে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা তৈরী করেছিলেন। সোনা, হীরা, মুক্তা, মাণিক্য দিয়ে সেই লঙ্কা নগরী রচিত । সেই স্থানকে তাই “স্বর্ণ লঙ্কা” বলে । এই বলে সম্পাতি উড়ে চলে গেলো।
( ক্রমশঃ )
সম্পাতি ক্রন্দন করতে করতে বলল- “জটায়ু আমার ভ্রাতা ছিলো। আমরা বিষ্ণু দেবের বাহন গড়ুরের পুত্র । একবার উড়তে উড়তে আমি সূর্যের নিকট গিয়েছিলাম। সেখানেই আমি আমার ভ্রাতাকে বাঁচাতে গিয়ে ডানা হারিয়েছি। এখানে বসে আমি ‘রাম’ নাম জপ করছি। তোমাদের আহার করতে ইচ্ছা ছিল। কিন্তু তোমাদের কথা শূনে আমি একেবারে ভেঙ্গে পড়েছি। আমি লঙ্কারাজ রাবণকে কিছুদিন পূর্বে এক নারীকে পুস্পক বিমানে নিয়ে যেতে দেখছি। সেই অপূর্বা নারী ক্রমাগত ‘হা রাম!’। ‘হা লক্ষ্মণ’ বলে ক্রন্দন করে সাহায্য চাইছিলেন। আমি নিশ্চিত তিনিই সীতাদেবী।” বানরেরা আশা নিয়ে বলল- “তাই? সেই রাবণ কোথায় কোনদিকে গেলো? বল। সেই রাবণকে বধ করে প্রভু শ্রীরাম সীতামাতাকে উদ্ধার করবেন।” এইভাবে বানরেরা বোঝালে সম্পাতি বলল- “আমি বৃদ্ধ। তবে ভাইয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবোই। যখন শ্রীরাম, রাবণকে বধ করবেন- তা দেখে আমি আনন্দ পাবো। আমার ভ্রাতার আত্মা শান্তি পাবে। পক্ষীর দৃষ্টি শক্তি প্রবল হয়। আমি এখানে বসেই দেখতে পাচ্ছি- রাবণের লঙ্কাতে অশোকবণে মা সীতা সুরক্ষিত ও নির্ভয়ে আছেন। রাবন ওনাকে অশোক বনে বন্দী করে ক্রমাগত বিবাহের জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। বিকট চেহারার রাক্ষসীরা দিবারাত্র সীতাকে নানান ভাবে ভয় দেখায়। কেবল একটি রাক্ষসী উদার চিত্তের, সেই রাক্ষসী সীতাকে কন্যার মতো আগলে রেখেছে।” এই বলে সম্পাতি আরোও বলল-“ আপনারা আমার নিকট শ্রীরামের মহিমা কীর্তন করুন।” হনুমান বলল – “ওহে পক্ষী! তোমার পিতা গড়ুর যাঁকে স্কন্ধে বহন করেন তিনিই শ্রীরাম রূপে বর্তমানে এসেছেন । এই ক্ষুদ্র মুখে রাম নামের মহিমা কি বলিব- পাছে যদি ত্রুটি হয় । সেই অগাধ জলরাশির সামান্য বিন্দু কেবল কহিতেছি । দস্যু রত্নাকর নিষ্ঠুর হত্যাকারী ছিলো। একটুকরো বস্ত্রের জন্যও অনেক লোক হত্যা করে লুটপাট করতো। সেই ডাকাত “রাম” নাম জপ করে মহর্ষি বাল্মিকী হয়ে “রামচন্দ্রের লীলা” রচনা করছেন । দশরথ রাজা অজ্ঞাতে তিনটি ব্রহ্মহত্যার দায়ী ছিলেন । তিনবার রাম নাম নিতে বলায় বশিষ্ঠ মুনি তাঁর পুত্র বামদেবকে শাপ দিয়ে চণ্ডাল কুলে জন্ম দিয়েছেন। রাম নামে এত সংশয় ? একবার “রাম” নামেই কোটি ব্রহ্মহত্যা পাপ নাশ হয় । রামচন্দ্র দশরথের গৃহে জন্মালেন । বাল্যেই তাড়কা, সুবাহু নামক ভয়ানক রাক্ষসী, রাক্ষস বধ করে মারীচকে তাড়িয়ে বিশ্বামিত্রর তপোবন রক্ষা করেছেন। রাম নাম জপ করেই শাপিত অহল্যা দেবী প্রস্তর থেকে হলেন জীবন্ত মানবী। শিবের ধনুক যা রাবণ অবধি তুলতে পারেনি- সেই ধনুক খণ্ড করে প্রভু রাম, সীতাদেবীকে বিবাহ করলেন । এরপর পিতৃসত্য পালনের জন্য স্ত্রী সীতাদেবী ও ভ্রাতা লক্ষণ সহিত বণে আসলেন। কত ভক্ত প্রভুর দর্শন পেয়ে উদ্ধার হল। বিরাধ, খড়, দূষণ, ত্রিশিরা, কবন্ধ, মারীচ আদি রাক্ষস পিশাচেরা তাঁর হস্তে নিধন হয়ে মুক্তিলাভ করেছে। বালি নিজেও তাঁর হস্তে নিধন হয়ে বৈকুণ্ঠ লাভ করেছে। শ্রীরামের এমনই মহিমা”।
এই কথা শোনামাত্রই সম্পাতির ডানা গজিয়ে উঠলো। এই চমৎকার দেখে কপিরা অবাক হল। একই তাজ্জব ঘটনা । সম্পাতি বলল- “রাম নাম জপ করেই আমার এই ডানা উৎপন্ন হল পুনর্বার। রামলীলা শুনেই আমার দুঃখের অবসান হল। প্রভু শ্রীরামের এমনই মহিমা। যে রামলীলা শ্রবন করবে- সে মানব, পক্ষী যেই হোক- অগাধ সুখের অধিকারী হয়ে মুক্তিলাভ করবে । তোমরা এবার মাতা সীতার কাছে যাবার উদ্যোগ করো।” এই বলে সম্পাতি বললেন-
নানাবর্ণ রাক্ষসী সীতারে করে রক্ষা ।
শত যোজনের পথ সাগর পরিখা ।।
একলাফে পার হও সকল বানর ।
সীতাদেবী দেখিয়া সকলে যাহ ঘর ।।
মহাবল ধর সবে কি কর ভাবনা ।
হইয়া সাগর পার পুরাও কামনা ।।
( কৃত্তিবাসী রামায়ণ )
অর্থাৎ ভারতের শেষপ্রান্ত থেকে লঙ্কার দূরত্ব শত যোজন । কিন্তু মাঝে বিশাল অগাধ সমুদ্র । অন্তহীন নীল জলরাশি যতদূর চোখ যায় । আর বিশাল ঢেউ- যার গর্জন শুনলেই তরাশ লাগে । তার মধ্যে তিমি, হাঙর, মকর, কুমীর এমন মাংসাশী প্রানী। একবার গভীর জলে পতিত হলে সাঁতার দিয়েও বাঁচা অসম্ভব । এই সাগর কে পার করবে ? সকলে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। রাক্ষসেরা মায়া দ্বারা আকাশ ভ্রমণে সমর্থ । কিন্তু এই বিদ্যা তো বানর বা সাধারন মানবেরা জানে না । এখন আবার সম্পাতি বললেন-
জো নাঘই সত যোজন সাগর ।
করই সো রাম কাজ মতি আগর ।।
মোহি বিলোকি ধরহু মন ধীরা ।
রাম কৃঁপা কস ভয়উ সরীরা ।।
পাপিউ জা কর নাম সুমিরহীঁ ।
অতি অপার ভবসাগর তরহীঁ ।।
তাসু দূত তুমহু তজি কদরাঈঁ ।
রাম হৃদয়ঁ ধরি করহু উপাঈ ।।
( তুলসীদাসী রামায়ণ )
এর অর্থ- যে শত যোজন ( চার শত ক্রোশ ) সাগর লঙ্ঘন করতে পারবে সেই শ্রীরামচন্দ্রের কার্য সম্পাদন করতে পারবে । ( আশা ছেড়ো না ) আমাকে দেখে সাহস রাখো! দেখো! শ্রীরামচন্দ্রের কৃপায় ( দেখতে দেখতে ) আমার দেহে কেমন পরিবর্তন আসল ( ডানা ছাড়া আমি অক্ষম ছিলাম এখন ডানা পেতেই কেমন সক্ষম হলাম)। অতি বড় পাপিষ্ঠ তাঁর নাম স্মরণ করে দুস্তর ভবসাগর অতিক্রম করে যায় আর তোমরা হলে তাঁর দূত । অতএব কাপুরুষতা বর্জন করো আর প্রভু শ্রীরামচন্দ্রকে হৃদয়ে ধারন করে ( সীতাদেবীর নিকটে উপস্থিত হওয়ার ) পথ খুঁজে বার করো।
সম্পাতি আরোও জানালো সেই লঙ্কা বহু পূর্বে ভগবান শিবের নির্দেশে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা তৈরী করেছিলেন। সোনা, হীরা, মুক্তা, মাণিক্য দিয়ে সেই লঙ্কা নগরী রচিত । সেই স্থানকে তাই “স্বর্ণ লঙ্কা” বলে । এই বলে সম্পাতি উড়ে চলে গেলো।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন