লঙ্কায় অগ্নি সংযোগ করে হনুমান প্রবল বেগে পুনঃ ফিরে গেলো । পেছনে যতদূর দেখা গেলো লঙ্কার সমগ্র স্থানে কেবল আগুন আর আগুন। লেলিহান শিখা থেকে সমানে ভস্ম উড়ে চতুর্দিকে আচ্ছন্ন হয়েছে । হনুমান রাম নাম জপ করতে করতে উড়ে আসলো । আবার সেই সমুদ্রের নীল জলরাশি , মেঘের রাজ্যে বকের সারি, সমুদ্রের প্রবল ঢেউ । এই পথেই সে এসেছিলো। পথে ছিলো নানা বিপত্তি । এখন সেসব নেই । নীচে দেখলো অগাধ তরঙ্গ । হনুমান বায়ুর বেগে আসতে থাকলো । একসময়ে এসে পৌছালো সমুদ্রতটে । সেখানে দেখলো জাম্বুবান, নল- নীল, গবাক্ষ। অঙ্গদ ও অনেক কপি অপেক্ষা করে আছে । হনুমানকে আসতে দেখেই সকলে আনন্দে জয়ধ্বনি করলো । হনুমান নেমে এসে প্রসন্ন বদনে জাম্বুবানকে আলিঙ্গন করলো । জাম্বুবান বলল- “পবন নন্দন ! তোমার এই প্রসন্ন ভাব ব্যক্ত করছে যে কার্যসিদ্ধি হয়েছে । বল মাতা সীতার দর্শন লাভ করেছো ত? ওনাকে প্রভুর নিদর্শন প্রদান করেছো ত? অবাক কাণ্ড হনুমান। তোমারো মুখ পোড়া। কিছুক্ষণ আগে দেখলাম সকল হনুমান প্রজাতির মুখ পুড়ে গেছে। এ কি ভাবে হল? ” হনুমান তখন যাত্রা পথের সকল ঘটনা বলল। নাগদেবী সুরসার পরীক্ষা, মৈনাকের সেবা, সিংহিকা বধ, চামুণ্ডা দেবীর সাথে সাক্ষাৎ , রাবণের স্বর্ণ লঙ্কার দর্শন , অশোকবনে মাতা সীতার প্রতি রাবণের হুমকি, দেবী সীতাকে প্রভু রামের নিদর্শন প্রদান, মাতা সীতার নিদর্শন আনা, অশোক বন নষ্ট করা, রাবণের পুত্র অক্ষয় কুমার ও চার রাক্ষস যোদ্ধা ও বহু রাক্ষস সেনার হতাহত হওয়া, রাবণকে বুঝিয়ে বিফল হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি । হনুমান বলল- “দুর্মতি দশানন রাবণ যুদ্ধ চায়। সে মাতা সীতাকে ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করেছে। আর বলেছে দুমাসের মধ্যে মাতা সীতা বিবাহে রাজী না হলে , তাকে হত্যা করা হবে।” শুনে বানরেরা বলল- “যদি রাবণ যুদ্ধ চায়, তাহলে আমরা যুদ্ধ করবো। লঙ্কা আক্রমণ করবো।”
হনুমান বলল- “রাবণের পুত্র অক্ষয় ও রাক্ষস সেনাদের বধ করার অপরাধে রাবণের অপর পুত্র মেঘনাদ আমাকে ব্রহ্মাস্ত্রে বন্দী করে দরবারে নিয়ে যায়। সেখানে রাবণ আমাকে হত্যার আদেশ দেয়। কিন্তু রাবণের ভ্রাতা ধর্মপ্রাণ বিভীষণের কথা মেনে পরে রাবণ আমার পুচ্ছ পুড়িয়ে দেবার আদেশ দেয়। রাবণ আমার পুচ্ছে যে অগ্নি দিয়েছিলো, তা দিয়েই আমি সমগ্র লঙ্কা ভস্ম করি। রাবণের স্বর্ণ লঙ্কা এখন ভস্ম। আমি রাবণের অস্ত্রাগার, অশ্বশালা , হস্তীশালা, রথ অনেক অনেক পুড়িয়েছি। এখন রাবণের শক্তি কমেছে । তার চোখের সামনে তার লঙ্কাকে আমি ধূম্রতে ছেয়ে দিয়েছি। তবুও সেই মহাপাপী বিন্দু মাত্র শোচনা করে নি। সে জানিয়েছে মাতা সীতাকে ফিরিয়ে দেবে না। সেই অগ্নি নির্বাপিত করতে আমি মুখে লাঙুল দিতেই মুখ পুড়ে গেলো। স্বজাতির কাছে মুখ দেখাই কেমন করে এমন ভাবতেই মাতা সীতা অভয় দিলেন যে হনুমান জাতির সকলেরই মুখ পোড়াই থাকবে। তাই এমন হয়েছে । লঙ্কেশ ভেবেছিলো আমাকে লাঙুরহীন করে স্বজাতির কাছে উপহাসের পাত্র বানাবে। কিন্তু সেই দুর্মতি সফল হয় নি। ” সোনার লঙ্কা পুড়ে ভস্ম হয়েছে শুনে বানরেরা আনন্দে জয় ধ্বনি করলো । হনুমানের জয়ধ্বনিতে আকাশবাতাস ভরিয়ে দিলো । সকলে আনন্দে কেউ কেউ সমুদ্র বালুকাতে গড়াগড়ি খেলো। কেউ হনুমানের চতুর্দিকে তালি দিয়ে নৃত্য করতে লাগলো। কেউ একে অপরকে অভিবাদন জানালো। দুন্দুভি, ন্যাকড়া বাজিয়ে আনন্দ প্রকাশ করলো । বানরদের এই আনন্দ দেখে অতি উচ্ছ্বাসিত হল মারুতি হনুমান । বানরেরা জানালো তারা এখানে বহুদিন ধরে অপেক্ষা করতে করতে ক্ষুধার্ত । এখন তাহাদিগের আহারের প্রয়োজন । অপরদিকে হনুমান চাইছিলেন সত্ত্বর গিয়ে প্রভু রামকে সকল সংবাদ দিতে। কিন্তু বানরকুলের আহারের প্রয়োজন । সত্যই এরা না খেয়ে আছে । সকলের আবদার মেনে নিলো হনুমান ।
কিস্কিন্ধ্যা পৌছাতে বানরগণ চাইলো বালির “মধুবন” ভঞ্জন করতে । এটি বালির প্রিয় বাগান ছিলো। এখানে তাল, চালতা, কদলী, পনস , আম্র, সবেদা, পেয়ারা নানাবিধ বারোমাসের মিষ্ট ফল ধরত । এই বনে বেশ কয়েকটি প্রকাণ্ড মৌচাক ছিলো, যাতে মিষ্ট মধু এত অতিমাত্রায় ছিলো যে মাঝে মাঝে নীচে বিন্দু বিন্দু পতিত হত । এছাড়া বনে নানান মিষ্ট কন্দ ছিলো। এখানে সুগ্রীবের মাতুল দধিমুখ বানর তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে থাকতো । হনুমান, অঙ্গদের সাথে বানরেরা মিষ্টি ফলের গাছ দেখতেই ঝাঁপিয়ে পড়লো। আগুনের ধোয়া সৃষ্টি করে মৌমাছি তাড়িয়ে মনের আনন্দে মিষ্ট মধু সেবন করতে লাগলো । বড় বড় ফলের গাছে বানরেরা উঠে মনের সুখ ফল খেতে লাগলো । কেউ কেউ ডাল ভাঙ্গলো, কেউ গোটা কদলী বৃক্ষ উপরে এনে খেতে লাগলো। এদিক ওদিক অর্ধেক ফল খেয়ে ঢিলাতে আরম্ভ করলো । তাল গাছে উঠে তাল পেড়ে সেবা করতে লাগলো । অঙ্গদ কয়েকশো কলার কাঁদি জড় করে ভক্ষণ করতে লাগলো । গাছের ডালে বানরেরা বসে ফল খাচ্ছিল্ল, আর তাদের পুচ্ছ গুলি কেবল সর্পের ন্যায় নীচে ঝুলছিলো । বানরেরা কেউ কেউ মিষ্টি কন্দ, মিষ্টি বীজ আহার করলো । মধু খেয়ে পেট ফুলিয়ে একে অপরের গায়ে হেলান দিয়ে ঘুমাতে লাগলো । এক গাছের শাখা হতে ঝুপ ঝুপ করে আর এক গাছে বসে বানরেরা ফল খাছিল্ল । যত না খেলো তার অধিক ছড়ালো । লাঙুর, মর্কট , শিম্পাঞ্জী , ভল্লুক , বানর প্রভৃতিরা মনের সুখে ফলমূলাদি আহার করতে লাগলো । বৃদ্ধ বানর দধিমুখের অনুচরেরা এসব দেখে রে রে করে তেরে আসলো । বনের মাঝে দুদল বানরের মধ্যে ভয়ানক যুদ্ধ বাঁধলো । একে অপরকে আঁচর , কামড়, পুচ্ছ দিয়ে প্রহার , মুষ্টাঘ্যাত করতে লাগলো । হনুমান তখন বলল- “তোমরা মনের সুখে ফল খাও। যে তোমাদের বাধা দেবে তাদের হত্যা করবো।” এই বলে হনুমান দধিমুখের অনুচরদের পিটিয়ে তাড়ালো ।
( ক্রমশঃ )
হনুমান বলল- “রাবণের পুত্র অক্ষয় ও রাক্ষস সেনাদের বধ করার অপরাধে রাবণের অপর পুত্র মেঘনাদ আমাকে ব্রহ্মাস্ত্রে বন্দী করে দরবারে নিয়ে যায়। সেখানে রাবণ আমাকে হত্যার আদেশ দেয়। কিন্তু রাবণের ভ্রাতা ধর্মপ্রাণ বিভীষণের কথা মেনে পরে রাবণ আমার পুচ্ছ পুড়িয়ে দেবার আদেশ দেয়। রাবণ আমার পুচ্ছে যে অগ্নি দিয়েছিলো, তা দিয়েই আমি সমগ্র লঙ্কা ভস্ম করি। রাবণের স্বর্ণ লঙ্কা এখন ভস্ম। আমি রাবণের অস্ত্রাগার, অশ্বশালা , হস্তীশালা, রথ অনেক অনেক পুড়িয়েছি। এখন রাবণের শক্তি কমেছে । তার চোখের সামনে তার লঙ্কাকে আমি ধূম্রতে ছেয়ে দিয়েছি। তবুও সেই মহাপাপী বিন্দু মাত্র শোচনা করে নি। সে জানিয়েছে মাতা সীতাকে ফিরিয়ে দেবে না। সেই অগ্নি নির্বাপিত করতে আমি মুখে লাঙুল দিতেই মুখ পুড়ে গেলো। স্বজাতির কাছে মুখ দেখাই কেমন করে এমন ভাবতেই মাতা সীতা অভয় দিলেন যে হনুমান জাতির সকলেরই মুখ পোড়াই থাকবে। তাই এমন হয়েছে । লঙ্কেশ ভেবেছিলো আমাকে লাঙুরহীন করে স্বজাতির কাছে উপহাসের পাত্র বানাবে। কিন্তু সেই দুর্মতি সফল হয় নি। ” সোনার লঙ্কা পুড়ে ভস্ম হয়েছে শুনে বানরেরা আনন্দে জয় ধ্বনি করলো । হনুমানের জয়ধ্বনিতে আকাশবাতাস ভরিয়ে দিলো । সকলে আনন্দে কেউ কেউ সমুদ্র বালুকাতে গড়াগড়ি খেলো। কেউ হনুমানের চতুর্দিকে তালি দিয়ে নৃত্য করতে লাগলো। কেউ একে অপরকে অভিবাদন জানালো। দুন্দুভি, ন্যাকড়া বাজিয়ে আনন্দ প্রকাশ করলো । বানরদের এই আনন্দ দেখে অতি উচ্ছ্বাসিত হল মারুতি হনুমান । বানরেরা জানালো তারা এখানে বহুদিন ধরে অপেক্ষা করতে করতে ক্ষুধার্ত । এখন তাহাদিগের আহারের প্রয়োজন । অপরদিকে হনুমান চাইছিলেন সত্ত্বর গিয়ে প্রভু রামকে সকল সংবাদ দিতে। কিন্তু বানরকুলের আহারের প্রয়োজন । সত্যই এরা না খেয়ে আছে । সকলের আবদার মেনে নিলো হনুমান ।
কিস্কিন্ধ্যা পৌছাতে বানরগণ চাইলো বালির “মধুবন” ভঞ্জন করতে । এটি বালির প্রিয় বাগান ছিলো। এখানে তাল, চালতা, কদলী, পনস , আম্র, সবেদা, পেয়ারা নানাবিধ বারোমাসের মিষ্ট ফল ধরত । এই বনে বেশ কয়েকটি প্রকাণ্ড মৌচাক ছিলো, যাতে মিষ্ট মধু এত অতিমাত্রায় ছিলো যে মাঝে মাঝে নীচে বিন্দু বিন্দু পতিত হত । এছাড়া বনে নানান মিষ্ট কন্দ ছিলো। এখানে সুগ্রীবের মাতুল দধিমুখ বানর তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে থাকতো । হনুমান, অঙ্গদের সাথে বানরেরা মিষ্টি ফলের গাছ দেখতেই ঝাঁপিয়ে পড়লো। আগুনের ধোয়া সৃষ্টি করে মৌমাছি তাড়িয়ে মনের আনন্দে মিষ্ট মধু সেবন করতে লাগলো । বড় বড় ফলের গাছে বানরেরা উঠে মনের সুখ ফল খেতে লাগলো । কেউ কেউ ডাল ভাঙ্গলো, কেউ গোটা কদলী বৃক্ষ উপরে এনে খেতে লাগলো। এদিক ওদিক অর্ধেক ফল খেয়ে ঢিলাতে আরম্ভ করলো । তাল গাছে উঠে তাল পেড়ে সেবা করতে লাগলো । অঙ্গদ কয়েকশো কলার কাঁদি জড় করে ভক্ষণ করতে লাগলো । গাছের ডালে বানরেরা বসে ফল খাচ্ছিল্ল, আর তাদের পুচ্ছ গুলি কেবল সর্পের ন্যায় নীচে ঝুলছিলো । বানরেরা কেউ কেউ মিষ্টি কন্দ, মিষ্টি বীজ আহার করলো । মধু খেয়ে পেট ফুলিয়ে একে অপরের গায়ে হেলান দিয়ে ঘুমাতে লাগলো । এক গাছের শাখা হতে ঝুপ ঝুপ করে আর এক গাছে বসে বানরেরা ফল খাছিল্ল । যত না খেলো তার অধিক ছড়ালো । লাঙুর, মর্কট , শিম্পাঞ্জী , ভল্লুক , বানর প্রভৃতিরা মনের সুখে ফলমূলাদি আহার করতে লাগলো । বৃদ্ধ বানর দধিমুখের অনুচরেরা এসব দেখে রে রে করে তেরে আসলো । বনের মাঝে দুদল বানরের মধ্যে ভয়ানক যুদ্ধ বাঁধলো । একে অপরকে আঁচর , কামড়, পুচ্ছ দিয়ে প্রহার , মুষ্টাঘ্যাত করতে লাগলো । হনুমান তখন বলল- “তোমরা মনের সুখে ফল খাও। যে তোমাদের বাধা দেবে তাদের হত্যা করবো।” এই বলে হনুমান দধিমুখের অনুচরদের পিটিয়ে তাড়ালো ।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন