খড় ও দূষণ সহ সব রাক্ষসেরা মৃত হয়েছে। দেবতাদের রাম স্তুতি ও মুনি ঋষিদিগের আনন্দ হর্ষের ধ্বনি শুনে শূর্পনাখা বুঝতে পেরেছিলো। এ কেমন বলশালী ! খড়, দূষণ কেউ বধ করলো। এই স্থানে থাকা আর সুরক্ষিত নয়। অনার্য সংস্কৃতিকে লুপ্ত করে ঐ দুই কুমার আর্য সংস্কৃতি স্থাপন করেছে । রামচন্দ্র একাকী সেই সব রাক্ষসের সংহার করেছেন বলে মুনি ও অমর বৃন্দদের স্তবে জানতে পেরে রাক্ষসী মায়া দ্বারা পাখসাট মেরে সোজা শ্রীলঙ্কাতে চলে গেলো । রাবণ সেখানে সেই সময় পাত্রমিত্র অমাত্যদের সাথে আলোচনা করছিলো। হঠাত সেখানে রোদন করতে করতে শূর্পনাখা এলো। শূর্পনাখার মধ্যে প্রতিশোধের অগ্নি জ্বলছিল। রাক্ষসীর মুখ আচ্ছাদিত দেখে দশানন বলল- “ভগিনী! তুমি মুখমণ্ডল আবৃত কেন করে রেখেছ?” রাক্ষসী অনেক অনুরোধে মুখ খুলে বলল- “দেখো দাদা! তোমার ভগিনীর কি দুরবস্থা ! এই মুখ আমি কাকে দেখাবো? আমার এখন সাগরে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করতে মন চাইছে।” রাবণ ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে বলল- “কোন মূঢ়মতি তোমার এই অবস্থা করেছে?”শূর্পনাখা সকল ঘটনা ব্যক্ত করে বলল- “সেই অযোধ্যার রাজকুমার রাম বনবাসে পত্নী সহিত এসেছেন। তার আদেশে তার ভ্রাতা লক্ষণ আমার এই অবস্থা করেছে। সে নির্দয় ভাবে আমার নাসিকা কর্ণ ছেদন করেছে। আমি এর বিচার চাই ভ্রাতা। শুধু এই নয়, ঐ রাম খড়, দূষণ ও তাদের আশ্রিত চৌদ্দ বীর রাক্ষস, ত্রিশিরা এমনকি যত মায়াবী রাক্ষস ছিলো, সবকে বধ করেছে। একটি রাক্ষসও আর বেঁচে নেই। বিরাধ বধ হয়েছে।” শুনে রাবণ খুবুই রোদন করলো খড় আর দূষণের জন্য । রাক্ষসেরা অবাক হল যে এক মানব এসে খড় আর দূষণ কে সমূলে বধ করল। কে এই মানব। এত শক্তি যে সে রাক্ষস বিনাশ করে। এখনই একে বধ করা উচিৎ। নাহলে রাক্ষসদের বীরত্ব নিয়ে ত্রিলোকে সন্দেহ করবে।
শূর্পনাখা বলল- “দাদা! রামচন্দ্রের সাথে তার সুন্দরী স্ত্রী সীতা এসেছেন। বড়ই অপূর্ব সুন্দরী সে। ভ্রাতা ! সেই অমূল্য রত্ন কেবল আপনার গলাতেই শোভা পাবে। রামচন্দ্র অযোগ্য। আপনি রাম, লক্ষণ কে বধ করে সেই সুন্দরী সীতাকে লঙ্কায় নিয়ে আসুন। তিনি আপনার অর্ধাঙ্গিনী হয়ে আপনার বামে অধিষ্ঠান করুক।” শুনে রাবণ ভাবল, বহুকাল পূর্বে জনক রাজার গৃহে অপমানিত হবার ঘটনা- জনকদুহিতার নামও তো সীতা ছিলো। তখন তাকে বিবাহ করা হয়নি, কিন্তু এখন সুযোগ এসেছে। শূর্পনাখা রাক্ষসী বলল- “ অগ্রজ! সেই নারীর তুলনা কি দেবো ? শতকোটি রতিদেবীর সৌন্দর্যের থেকেও সেই নারীর সৌন্দর্য অনেক। বিরিঞ্চিদেব ত্রিলোকের সকল সৌন্দর্য তাঁর রূপে ঢেলে দিয়েছেন। কি রম্ভা, কি মেনকা, কি চিত্রলেখা এমনকি সর্বসুন্দরী উর্বশী থেকেও তিনি কোটি সুন্দর। রামের স্ত্রী সীতা সাক্ষাৎ পদ্মিনী। তিনি সাক্ষাৎ সর্ব অপেক্ষা সুন্দরী। পদ্ম পত্রের ন্যায় আয়ত নয়ন তার, ক্ষুদ্র নাসিকা রন্ধ, উন্নত বক্ষ, দীর্ঘ কেশ, ক্ষীণ কটি , কৃশাঙ্গী। তাঁর কন্ঠস্মর মধুর। পদ্মের ন্যায় তার তনুর সুবাস, তিনি উজ্জ্বলা । পূর্ণ চন্দ্রের ন্যায় তার বদন, নখ উন্নত রক্তবর্ণ, কেশ-নাসা-উরু-রূপ অতি মনোহর, সেই দেবীসীতা, লক্ষ্মীর ন্যায় সৌন্দর্যময়ী । পূর্বে আমি এত সুন্দর ললনা দেখিনি। সেই সীতা যার পত্নী, সেই সীতা যাহাকে আলিঙ্গন করে সে সব মানব, প্রাণী এমনকি ইন্দ্র অপেক্ষাও অধিক সুখে কালযাপন করে। সেই অনুপমা কন্যা আপনারই স্ত্রী হবার উপযুক্তা। মন্দাদোরী নয়, সেই সীতাই লঙ্কার রাণী হবার উপযুক্ত।” শুনে রাবণ অতি কামাতুর হয়ে বলল- “অবশ্যই বিধাতা এই নারীকে আমার জন্যই নির্মিত করেছেন। সেই সীতাকে অবশ্যই আমি লঙ্কায় নিয়ে আসবো। তাকেই বিবাহ করবো।” রাবণের অট্টহাস্যে ত্রিলোক কম্পিত হল। বিভীষণ বলল- “দাদা! আপনি এমন করবেন না। অন্যের বিবাহ স্ত্রীকে হরণ করা মহাপাপ। বিশ্বশ্রবা মুনির পুত্র হয়ে আপনি এমন করলে ত্রিলোকে কলঙ্ক হবে। আর মনে হয় সীতাদেবী সাক্ষাৎ মা লক্ষ্মী, রামচন্দ্র নারায়ণ । নারায়নের সাথে শত্রুতা করবেন না।”
রাবণ বলল- “হোক রাম নারায়ণ! সেই বৈকুণ্ঠের নারায়ণকে আমি বধ করবো। আর সীতাকে আমি বিবাহ করবো।” মন্দাদোরী অনেক বুঝালে রাবণ ক্রুদ্ধ হয়ে স্ত্রীকে বকাঝকা করে বলল- “তোমার ঈর্ষা হচ্ছে যে তোমার স্থান আমি অন্য কাউকে দিচ্ছি। সতীন নিয়ে সংসার করাই তোমার ভাগ্যে লেখা আছে। চিন্তা করো না- সীতা পাটরানী হলেও, তুমিও রানীর মতোই সকল সুখ ঐশ্বর্য প্রাপ্তি করবে।” এই বলে রাবণ পুস্পক বিমানে চড়ে সুদুর শ্রীলঙ্কা থেকে ভারতের গোদাবরী তীরে দণ্ডকারণ্যে আসলো । সেই সময় রাম, লক্ষণ গোদাবোরীতে স্নানাদি করছিলেন । রাবণ সেই রাম, লক্ষণ কে দেখে বধ করার ইচ্ছা করলেন। বহু আগে ভগবান শিব চন্দ্রহাস খড়গ প্রদান করেছিলেন । ভগবান রুদ্রকে স্মরণ করে দশানন সেই চন্দ্রহাস খড়গ রাম, লক্ষণের উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করলেন । অপরদিকে চন্দ্রহাস খড়গ ধেয়ে আসছে দেখে ভগবান রাম বললেন- “লক্ষণ! কোনো অসাধু আমাদের পানে ভগবান শিবের চন্দ্রহাস খড়গ নিক্ষেপ করেছেন। এর কোন প্রতিকার নেই। একমাত্র ভগবান শিবকে স্মরণ করলেই এই অস্ত্র বিফল হবে। এসো আমরা ভগবান মহেশ্বরকে স্মরণ করি।” ভগবান রাম ও লক্ষণ উভয়ে চক্ষু মুদ্রিত করে ভগবান শিবকে স্মরণ করতে লাগলেন । রামের প্রভু শিব, শিবের প্রভু রাম। ভগবান শিব প্রদত্ত চন্দ্রহাস খড়গ রাম লক্ষণকে পরিক্রমা করে কৈলাসে ফিরে গেলো। ভগবান শিব চন্দ্রহাস প্রদানের সময় বলেছিলেন- “রাবণ! আমার ভক্তের ওপর এই অস্ত্র নিক্ষেপ করলে এই অস্ত্র বিফল হয়ে আমার কাছে চলে আসবে।” ঠিক তাই হল। চন্দ্রহাস খড়গ হারিয়ে রাবণ রাগে ফেটে পড়লো। অপরদিকে সে দেখলো সীতাদেবী বনের মৃগ, কাঠবিড়ালী, পক্ষী দের অতি যত্নে আহার দিচ্ছেন, আদর দিচ্ছেন। রাবণ মনে মনে ভাবল- এই রূপসী সত্যি অনুপমা। অনেক সুন্দরী। একে চাই। আর একে প্রাপ্তি করতে গেলে ছল- কৌশল অবলম্বন করতে হবে। রাক্ষস মারীচ মায়া দ্বারা পশুর দেহ ধারন ভালোই করতে পারে। অতএব মারীচ কে এখন কাজে লাগাতে হবে।
( ক্রমশঃ )
শূর্পনাখা বলল- “দাদা! রামচন্দ্রের সাথে তার সুন্দরী স্ত্রী সীতা এসেছেন। বড়ই অপূর্ব সুন্দরী সে। ভ্রাতা ! সেই অমূল্য রত্ন কেবল আপনার গলাতেই শোভা পাবে। রামচন্দ্র অযোগ্য। আপনি রাম, লক্ষণ কে বধ করে সেই সুন্দরী সীতাকে লঙ্কায় নিয়ে আসুন। তিনি আপনার অর্ধাঙ্গিনী হয়ে আপনার বামে অধিষ্ঠান করুক।” শুনে রাবণ ভাবল, বহুকাল পূর্বে জনক রাজার গৃহে অপমানিত হবার ঘটনা- জনকদুহিতার নামও তো সীতা ছিলো। তখন তাকে বিবাহ করা হয়নি, কিন্তু এখন সুযোগ এসেছে। শূর্পনাখা রাক্ষসী বলল- “ অগ্রজ! সেই নারীর তুলনা কি দেবো ? শতকোটি রতিদেবীর সৌন্দর্যের থেকেও সেই নারীর সৌন্দর্য অনেক। বিরিঞ্চিদেব ত্রিলোকের সকল সৌন্দর্য তাঁর রূপে ঢেলে দিয়েছেন। কি রম্ভা, কি মেনকা, কি চিত্রলেখা এমনকি সর্বসুন্দরী উর্বশী থেকেও তিনি কোটি সুন্দর। রামের স্ত্রী সীতা সাক্ষাৎ পদ্মিনী। তিনি সাক্ষাৎ সর্ব অপেক্ষা সুন্দরী। পদ্ম পত্রের ন্যায় আয়ত নয়ন তার, ক্ষুদ্র নাসিকা রন্ধ, উন্নত বক্ষ, দীর্ঘ কেশ, ক্ষীণ কটি , কৃশাঙ্গী। তাঁর কন্ঠস্মর মধুর। পদ্মের ন্যায় তার তনুর সুবাস, তিনি উজ্জ্বলা । পূর্ণ চন্দ্রের ন্যায় তার বদন, নখ উন্নত রক্তবর্ণ, কেশ-নাসা-উরু-রূপ অতি মনোহর, সেই দেবীসীতা, লক্ষ্মীর ন্যায় সৌন্দর্যময়ী । পূর্বে আমি এত সুন্দর ললনা দেখিনি। সেই সীতা যার পত্নী, সেই সীতা যাহাকে আলিঙ্গন করে সে সব মানব, প্রাণী এমনকি ইন্দ্র অপেক্ষাও অধিক সুখে কালযাপন করে। সেই অনুপমা কন্যা আপনারই স্ত্রী হবার উপযুক্তা। মন্দাদোরী নয়, সেই সীতাই লঙ্কার রাণী হবার উপযুক্ত।” শুনে রাবণ অতি কামাতুর হয়ে বলল- “অবশ্যই বিধাতা এই নারীকে আমার জন্যই নির্মিত করেছেন। সেই সীতাকে অবশ্যই আমি লঙ্কায় নিয়ে আসবো। তাকেই বিবাহ করবো।” রাবণের অট্টহাস্যে ত্রিলোক কম্পিত হল। বিভীষণ বলল- “দাদা! আপনি এমন করবেন না। অন্যের বিবাহ স্ত্রীকে হরণ করা মহাপাপ। বিশ্বশ্রবা মুনির পুত্র হয়ে আপনি এমন করলে ত্রিলোকে কলঙ্ক হবে। আর মনে হয় সীতাদেবী সাক্ষাৎ মা লক্ষ্মী, রামচন্দ্র নারায়ণ । নারায়নের সাথে শত্রুতা করবেন না।”
রাবণ বলল- “হোক রাম নারায়ণ! সেই বৈকুণ্ঠের নারায়ণকে আমি বধ করবো। আর সীতাকে আমি বিবাহ করবো।” মন্দাদোরী অনেক বুঝালে রাবণ ক্রুদ্ধ হয়ে স্ত্রীকে বকাঝকা করে বলল- “তোমার ঈর্ষা হচ্ছে যে তোমার স্থান আমি অন্য কাউকে দিচ্ছি। সতীন নিয়ে সংসার করাই তোমার ভাগ্যে লেখা আছে। চিন্তা করো না- সীতা পাটরানী হলেও, তুমিও রানীর মতোই সকল সুখ ঐশ্বর্য প্রাপ্তি করবে।” এই বলে রাবণ পুস্পক বিমানে চড়ে সুদুর শ্রীলঙ্কা থেকে ভারতের গোদাবরী তীরে দণ্ডকারণ্যে আসলো । সেই সময় রাম, লক্ষণ গোদাবোরীতে স্নানাদি করছিলেন । রাবণ সেই রাম, লক্ষণ কে দেখে বধ করার ইচ্ছা করলেন। বহু আগে ভগবান শিব চন্দ্রহাস খড়গ প্রদান করেছিলেন । ভগবান রুদ্রকে স্মরণ করে দশানন সেই চন্দ্রহাস খড়গ রাম, লক্ষণের উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করলেন । অপরদিকে চন্দ্রহাস খড়গ ধেয়ে আসছে দেখে ভগবান রাম বললেন- “লক্ষণ! কোনো অসাধু আমাদের পানে ভগবান শিবের চন্দ্রহাস খড়গ নিক্ষেপ করেছেন। এর কোন প্রতিকার নেই। একমাত্র ভগবান শিবকে স্মরণ করলেই এই অস্ত্র বিফল হবে। এসো আমরা ভগবান মহেশ্বরকে স্মরণ করি।” ভগবান রাম ও লক্ষণ উভয়ে চক্ষু মুদ্রিত করে ভগবান শিবকে স্মরণ করতে লাগলেন । রামের প্রভু শিব, শিবের প্রভু রাম। ভগবান শিব প্রদত্ত চন্দ্রহাস খড়গ রাম লক্ষণকে পরিক্রমা করে কৈলাসে ফিরে গেলো। ভগবান শিব চন্দ্রহাস প্রদানের সময় বলেছিলেন- “রাবণ! আমার ভক্তের ওপর এই অস্ত্র নিক্ষেপ করলে এই অস্ত্র বিফল হয়ে আমার কাছে চলে আসবে।” ঠিক তাই হল। চন্দ্রহাস খড়গ হারিয়ে রাবণ রাগে ফেটে পড়লো। অপরদিকে সে দেখলো সীতাদেবী বনের মৃগ, কাঠবিড়ালী, পক্ষী দের অতি যত্নে আহার দিচ্ছেন, আদর দিচ্ছেন। রাবণ মনে মনে ভাবল- এই রূপসী সত্যি অনুপমা। অনেক সুন্দরী। একে চাই। আর একে প্রাপ্তি করতে গেলে ছল- কৌশল অবলম্বন করতে হবে। রাক্ষস মারীচ মায়া দ্বারা পশুর দেহ ধারন ভালোই করতে পারে। অতএব মারীচ কে এখন কাজে লাগাতে হবে।
( ক্রমশঃ )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন