০২ জুলাই ২০১৮

শ্ৰীকৃষ্ণের আবিৰ্ভাব ও নন্দ মহারাজের ব্ৰত

নন্দ মহারাজের সভায় স্নিগ্ধকন্ঠ এবং মধুকন্ঠ নামে দুজন কবি নিত্যই গীত-নৃত্য করতেন। " স্নিগ্ধকণ্ঠ ” অৰ্থে স্নেহ-মাখা কন্ঠস্বর , আর মধুকণ্ঠ ” অৰ্থে মধু-মাখা কণ্ঠস্বর।

একদিন তারা সভা মধ্যে কিভাবে নন্দ মহারাজ পুত্ৰ প্ৰাপ্ত হলেন সেই বিষয়ে গীত গাইতে লাগলেন । পুত্ৰ লাভের উদ্দেশ্যে নন্দ মহারাজ বহু যাগ-যজ্ঞ সব করেছিলেন , কিন্তু তবুও কোনো পুত্ৰ হলো না । সমস্ত ব্ৰজবাসী আর তার যত বন্ধুজন ছিলেন তারা সবাই কত ব্ৰত করালেন যাতে নন্দ মহারাজ একটি পুত্ৰ প্ৰাপ্ত হন । তবুও যশোদার কোনো পুত্ৰ হলো না । নন্দ মহারাজের রানী যশোমতী অত্যন্ত দুঃখ - শোকে ভোজনাদি ত্যাগ করলেন, আর সর্বদা অধোমুখে ভূমিতে বসে নিরন্তর অশ্ৰপাত করে আপন মনে কাঁদতে থাকেন । নন্দ মহারাজ তা দেখে মনে বড় দুঃখ পান । তিনি নানা উপায়ে তাকে প্ৰবোধ দিয়ে বলতে লাগলেন , “ বিধাতার যা ইচ্ছা তাই হবে । আমরা যে-পুত্ৰ কামনা করছি , তা যজ্ঞ করে হবে না''। 

তখন যশোধা মাতা বললেন , “ শুন প্ৰাণেশ্বর , আমার হৃদয়ের কথা তোমাকে বলছি । আমরা যাগ-যজ্ঞ করেছি এবং সব ব্ৰতও করেছি । কিন্তু আমরা দ্বাদশী পরম-ব্ৰত পালন করিনি''।
এ কথা শুনে নন্দ মহারাজ আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে তখন বললেন , “হে প্রিয়ে , তুমি খুব ভালো কথা শোনালে , সত্যি সত্যি আমরা এই ব্ৰতটি পালন করিনি, তা অবশ্যই পালন করব। তাহলে আমাদের মন-কামনা পূৰ্ণ হবে, দুঃখ দুর হবে''।
অতঃপর নন্দ মহারাজ তার পুরোহিতকে ডেকে এনে দাদ্বাদশী ব্রত পালনের বিধি বুঝে নিলেন ।

স্নিগ্ধকন্ঠ বললেন ,
“ ভাই , তারপর কি হলো । সেই সব এই সভায় খুলে বল''।

তারপর নন্দ মহারাজ এবং যশোমতী রানী এই দ্বাদশীব্রত এক বছর পালন করলেন । ব্রত পালনের শেষে নন্দ মহারাজ এক বড় সূস্বপ্ন দেখেন ।
স্বয়ং শ্ৰীহরি আবিভুত হয়ে তার প্রতি প্রসন্ন হয়ে বললেন , “হে নন্দ মহারাজ ! তোমার মনস্কামনা অচিরে পূণ হবে। প্রতি কল্পে আমি তোমার পুত্ৰ -রুপে এসে থাকি এবং এই কল্পেও আমি তোমার পুত্ররুপে আসব । তোমাদের গৃহে আমি , শিশুরুপে বিহার করব । প্ৰতিদিন তুমি আমাকে দৰ্শন করতে পারবে এবং তোমার আশ পূৰ্ণ হবে''।
নন্দ মহারাজ এরকম মধুর স্বপ্ন দেখলেন । অতঃপর নন্দ মহারাজ প্ৰভাত হলে মনস্থ করলেন যে, রানী যশোমতী সহ যমুনাতে স্নান করতে যাবেন । তারপর তারা যমুনাতে স্নান করতে আসার সময় দান দেওয়ার জন্য বহুধন সঙ্গে করে নিয়ে এলেন ।

দেবদেবীগন, মুনি , ঋষিগণ সব সেকথা জানতে পেরে ভিক্ষুক বেশে নন্দ মহারাজের কাছ থেকে দান গ্ৰহণ করার জন্য এলেন । যথাবিধি স্নান করে রানীসহ নন্দ মহারাজ নিজ হাতে দান দিতে শুরু করলেন । সবাই নন্দ মহারাজের হাতে দান পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন । তারা সব উচ্চৈঃস্বরে জয়ধ্বনি দিতে লাগলেন , “ নন্দ মহারাজ কি জয় ! যশোমতী রানী কি জয়''।

তারপর নন্দ মহারাজ গৃহে ফিরে এসে শ্ৰীবিষ্ণুর পূজা করলেন । তার নিত্য কমবিধি যত সব সমাপ্ত করার পর তারা দুজনে অতি শীঘ্ৰ সভায় প্ৰবেশ করে গুরু, দ্বিজ এবং পূজ্য জনের বন্দনা করলেন।

তখন স্নিগ্ধ কণ্ঠ হাসতে হাসতে বললেন , তারপর কি হলো ?
অতঃপর মধুকণ্ঠ কথা বলতে শুরু করলেন।

তারপর রাজসভায় নন্দ মহারাজ যেই উপবেশন করলেন এমন সময় দ্বাররক্ষী এসে বলল , “ মহারাজ, একজন তাপসী ব্ৰক্ষাচারিণী এসে অপেক্ষা করছেন''।
সে কথা শুনে নন্দ মহারাজ গাত্ৰোখান করে স্বাগত-পূর্বক তাপসী ব্রহ্মচারিণীকে নিয়ে গিয়ে দিব্যাসনে উপবেসন করালেন । অতঃপর নন্দ মহারাজ তার পাদধৌত করে পূজা করলেন ।

যশোধা মাতা তাপসী ব্রহ্মচারিণীর চরনে পতিত হয়ে কঁদতে থাকেন। যোগিনী যশোধারানীকে উঠিয়ে কোলেতে নিয়ে শুভ আশীৰ্বাদ করে বললেন , “ হে রানী দুঃখ কর না, দুঃখ পরিহার কর। অতি শীঘ্র এক জগৎপতি সুন্দর পুত্ৰ সন্তান তোমার গৰ্ভ হতে জন্ম নেবে''।

সে কথা শুনে উপস্থিত সকল গোপ - গোপীগণ আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উচ্চৈঃস্বরে জয়ধ্বনি দিয়ে বলে উঠলেন , “ নন্দরানী কি জয়''।
নন্দ মহারাজের বড় ভাই উপানন্দ সেই কথা শুনে হেসে হেসে
,বলতে লাগলেন , “এই গোকুল বন দৈত্য-দানব মুক্ত হয়ে মহাতীৰ্থ রুপে পরিগণিত হবে''।

তাপসী ব্ৰহ্মচারিণীর ভবিষ্যৎ বাণী শুনে সকল ব্ৰজবাসীরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে তারা সব একের পর এক এসে যোগিনী তথা তাপসী ব্ৰহ্মাচারিণীর পাদদ্বয়ে প্ৰণতি করে স্তুতি করলেন । তারপর তারা অতি শিঘ্র তাপসী ব্ৰহ্মচারিণীর থাকার জন্য একটি বিশাল কুটির নির্মাণ করে দিলেন ।

এদিকে নন্দ-মহারাজের অবশ্যই এক সুন্দর পুত্ৰ সন্তান হবে যিনি হবেন সকল জগতের পতি, তা জেনে সবার মনে সুখোদয় হলো।
স্নিগ্ধকন্ঠ ও মধুকন্ঠ দুজনের গলা ধরে নৃত্য কীর্তন করতে লাগল।

'' হে কৃষ্ণ করুনার সিন্ধো দ্বিনবন্ধো জগৎপতে,
গোপেশ গোপিকাকান্ত রাধাকান্ত নমোহস্তু তে''।। (কৃষ্ণ প্রনাম মন্ত্র)

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন এই ধরা ধামে আসেন ?
কারন তিনি হচ্ছেন, ''সুহৃদং সর্বভূতানাম্‌'' অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ
সমস্ত জীবের সুহৃদ, একমাত্র মঙ্গলাকারী বন্ধু।
তিনি সমস্ত জগতের মঙ্গলের জন্য এখানে আবির্ভূত হন।। 
হরেকৃষ্ণ।।

Collected/courtesy by: Sodkirti Das
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।