অমরনাথ গুহার বয়স আনুমানিক ৫০০০ বছর। পুরাণ অনুসারে, শিব পার্বতীকে অমরত্ব শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে অমরনাথ গুহাকে বেছে নিয়েছিলেন। পহেলগাঁও, যেখান থেকে অমরনাথ যাত্রা শুরু হয়, সেই স্থানে শিব তাঁর ষাঁড় নন্দীকে রেখে গিয়েছিলেন। চন্দনওয়াড়িতে তিনি তাঁর শিরস্থ চন্দ্রকে রেখে যান এবং শেষনাগে তিনি তাঁর দেহে বিচরণরত সর্পকুলকে রাখেন। গণেশকে রাখেন মহাগণেশ পর্বতে। তার পরে বায়ু, অগ্নি, জল, মৃত্তিকাকে রাখেন পঞ্জতরণী নামক স্থানে। প্রায় সব নির্মোক ত্যাগ করেই তিনি পার্বতীকে নিয়ে অমরনাথের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
যখন শিব পার্বতীকে অমরত্ব সম্পর্কে জ্ঞানদান করছিলেন, তখন সেখানে কোনও জীবিত প্রাণী ছিল না। কেবলমাত্র একটি পায়রার ডিম সেখানে থেকে গিয়েছিল। কথিত আছে এই ডিম থেকে একজোড়া পায়রা জন্মায় এবং তারা অবধারিতভাবে অমরত্ব লাভ করে। এদের নাকি আজও গুহার ভিতরে দেখা যায়।
অমরনাথ গুহাটি আবিষ্কার করেন বুটা মালিক নামে এক মুসলমান মেষপালক। তিনি এখানে এক সন্ন্যাসীর দেখা পান। সন্ন্যাসী তাঁকে একটা থলিতে কিছু কয়লা দান করেন। পরে সেই কয়লা সোনায় পরিণত হয়। বুটা সেই স্থানে ফিরে যান। কিন্তু সেই সন্ন্যাসীকে আর দেখতে পাননি। বদলে তিনি অমরনাথ লিঙ্গ দেখাতে পান।
অমরনাথ তুষারলিঙ্গের বৃদ্ধি চন্দ্রকলার উপরে নির্ভরশীল। শিবলিঙ্গ ছাড়াও আরও দু’টি লিঙ্গ এই গুহায় রয়েছে। এদের পার্বতী ও গণেশ মনে করা হয়।
অমরনাথে কবে থেকে তীর্থ যাত্রা শুরু হয় তা জানা যায় না। একটি তথ্যসুত্র থেকে ধারণা করা হয় কিংবদন্তী রাজা আরজরাজা( খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ সাল) বরফ নির্মিত শিবলিঙ্গে পূজা দিতেন। ধারণা করা হয়, রাণী সূর্যমতি ১১ শতকে অমরনাথের এই ত্রিশূল, বাণলিঙ্গ ও অন্যান্য পবিত্র জিনিস উপহার দেন। এছাড়াও পুরাতন বিভিন্ন বই থেকে আরও বেশ কিছু ভিন্ন ভিন্ন এ সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়।
ধারণা করা হয় মধ্যযুগে অমরনাথের কথা মানুষে ভুলে গিয়েছিল কিন্তু ১৫ শতকে তা আবার আবিষ্কৃত হয়। প্রচলিত আছে কাশ্মীর একসময় জলে প্লাবিত হয়ে যায় এবং কাশ্যপ মুনি সে জল নদীর মাধ্যমে বের করে দেন। এরপর ভৃগু মুনি অমরনাথ বা শিবের দেখা পান। এভাবে আবার অমরনাথের প্রচার শুরু হয়। বর্তমানে প্রতি বছর কয়েক লাখ মানুষ অমরনাথ যাত্রা করে।
জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর ১৪১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই তীর্থে যেতে পহেলগাঁও শহর অতিক্রম করতে হয়।পহেলগাঁও থেকে অমরনাথ যেতে পাঁচ দিন সময় লাগে। অমরনাথে যাওয়ার জন্য আগে প্রত্যেক যাত্রীর রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। শ্রী অমরনাথ শ্রাইন বোর্ড (SASB) যাত্রা শুরুর মোটামুটি মাসখানেক আগে যাত্রা শুরুর ও শেষের তারিখ ঘোষণা করে। জম্মু-কাশ্মীর ব্যাঙ্ক থেকে ফর্ম সংগ্রহ করতে হয়। পূরণ করা ফর্মটি ২টি পাসপোর্ট ছবি ও শারীরিক সক্ষমতার ডাক্তারি প্রশংসাপত্র সহ নিকটবর্তী জম্মু-কাশ্মীর ট্যুরিজমের অফিসে জমা দিতে হয়।
তীর্থ যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন মন্দির, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন যাত্রা পথে বিনা মুল্যে খাবার, চিকিৎসাসেবা ও বিশ্রামের জন্য তাঁবু সরবরাহ করে থাকে। মন্দিরের কাছে স্থানীয়রা শত শত তাঁবুর ব্যবস্থা করে তীর্থযাত্রীদের রাত্রি যাপনের জন্য। জম্মু থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরবর্তী কাটরা পর্যন্ত বাস ও ভাড়া গাড়ি চলে। শেষ ১৪ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পৌঁছতে হয় মন্দিরে। যাঁরা হাঁটতে পারেন না তাঁদের জন্য রয়েছে ডান্ডি ও ঘোড়ার ব্যবস্থা। কাটরা শহরের ট্যুরিস্ট রিসেপশন সেন্টার থেকে যাত্রা-স্লিপ অর্থাৎ 'পরচি' সংগ্রহ করতে হয়।
পুজোর উপকরণ আর নগদ টাকা পয়সা ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে মন্দির চত্বরে প্রবেশ নিষেধ। নিকটতম রেলস্টেশন জম্মু। জম্মু থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরবর্তী কাটরায় নিয়মিত বাস যায়। জম্মু বা কাটরা থেকে হেলিকপ্টারেও বৈষ্ণোদেবী ঘুরে আসা যায়। জম্মু থেকে প্রতিদিন ২টি ও কাটরা থেকে ৫টি পবনহংস ফ্লাইট রয়েছে। জম্মু যাওয়ার আগে জেনে নিতে হবে উড়ান চালু আছে কিনা।
এই তীর্থ যাত্রা রাজ্য সরকার ও শ্রী অমরনাথ যাত্রা ট্রাস্ট যৌথ ভাবে আয়োজন করে থাকে। ( সমাপ্ত )
জয় বাবা অমরনাথ।
Courtesy by: Radhakanta Let
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন