শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব আরম্ভের পূর্বদিন ‘গুণ্ডিচা মার্জন’ অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। গৌড়ীয়া মতে রথযাত্রায় প্রভু জগন্নাথ তাঁর মন্দির ছেড়ে গুণ্ডিচা মন্দিরে আগমন করেন । এটা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মথুরা নগর ছেড়ে বৃন্দাবনে আগমনের মতো । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্রজে ফিরবেন , এই কথা শ্রবন করে সবচেয়ে আনন্দিত হয়েছিলেন গোপিনীগণ ও ব্রজেশ্বরী শ্রীমতী রাইকিশোরী । মহাপ্রভুর মধ্যে রাধাভাব প্রকট, তিনি পার্ষদগণকে নিয়ে স্বহস্তে গুন্ডিচা মন্দির মার্জন করতেন। শ্রী চৈতন্য চরিতামৃতে শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী এই সম্বন্ধে বিস্তৃত বিবরণ দিয়েছেন ।
মহাপ্রভু ভক্তগণের সঙ্গে নিরন্তর কীৰ্ত্তন-রঙ্গে ক্রীড়া করেন। আচাৰ্য্যাদি ভক্তগণ মহাপ্রভুকে নিমন্ত্রণ করেন, মহাপ্ৰভু সেই সেই স্থানে ভক্তগণকে নিয়ে ভিক্ষা করেন। এই মত নানা রঙ্গে কিছুদিন যাপন করলেন । ক্রমে শ্ৰীজগন্নাথ দেবের রথযাত্রার দিন উপস্থিত হল। তখন মহাপ্রভু প্রথমে কাশীমিশ্রকে ডেকে এনে তাকে দিয়ে পড়িছা পাত্র ও সার্বভৌমকে ডাকিয়ে আনলেন। মহাপ্রভু হেসে তিনজনকে বললেন — “ আপনারা আমাকে গুণ্ডিচা মন্দির মার্জনের সেবা দিন ” । মহাপ্রভু এই সেবা প্রার্থনা করলে পড়িছা বললেন, “আমরা সকলে আপনার সেবক, আপনার যা ইচ্ছা , সেই অনুযায়ী কাজ করা আমার কর্তব্য, বিশেষতঃ মহারাজ আমাকে আদেশ করেছেন , আপনার ইচ্ছার যেন যথাযথ পালন হয় । তবে প্রভু ! মন্দির-মার্জন আপনার যোগ্য সেবা নয় , এটি আপনার একটি লীলা । গুণ্ডিচা মার্জনের জন্য কলসী ও ঝাড়ু অনেক আবশ্যক , — তবে আজ্ঞা দিন আজ সেই সব জিনিস এই স্থানে নিয়ে আসি ” । এই কথা বলে পড়িছা নূতন একশত মাটির কলসী ও একশত ঝাড়ু এনে প্রভুর সামনে অপর্ণ করলেন।
পর দিন প্রাতঃকালে প্ৰভু শ্রীহস্তে নিজ ভক্তগণের অঙ্গে চন্দন লেপন করলেন । প্রত্যেকের হাতে এক একটি মার্জনী দিয়ে সকলকে সঙ্গে নিয়ে গুণ্ডিচা মন্দিরে গেলেন । গুণ্ডিচা মন্দির মার্জন করতে গিয়ে প্রথমে ঝাড়ু দিয়ে মার্জন করতে লাগলেন । ভিতর মন্দির এবং উপরিভাগ সব পরিস্কার করে সিংহাসন মার্জন করে চারি ভিত শোধন করার পর শ্রীজগমোহন পরিস্কার করলেন । চারপাশে শত ভক্ত হাতে ঝাড়ু নিয়েছেন , মহাপ্রভু নিজে ভালমতে শোধন করে সকলকে শিক্ষা দিতে লাগলেন, মহাপ্ৰভু প্রেমোল্লাসে গৃহ শোধন ও কৃষ্ণ নাম করছেন এবং ভক্তগণও কৃষ্ণ নাম উচ্চারণ করতে করতে নিজেদের কাজ করতে লাগলেন । মহাপ্রভুর ধূলায় ধূসর তনু দেখতে অতীব সুন্দর, কোন কোন ভক্ত অশ্রু জলে মার্জন করছেন। অনন্তর ভক্তগণ ভোগমণ্ডপ শোধন করে প্রাঙ্গণ শোধন করলেন। ক্রমে সমুদায় গৃহ শোধন করে তৃণ, ধূলি ও কাঁকর একত্র করে ভক্তগণ নিজেদের বস্ত্রে করে পরমানন্দে তৃণ ও ধূলি সকল বাইরে ফেলতে লাগলেন ।
তখন প্রভু বললেন , কে কত মার্জন করেছ, খড়কুটা ও ধূলির পরিমাণ দেখে পরিশ্রম বিচার করব । এই বলে সকলের ঝাড়ু দেওয়া বোঝা একত্র করলেন। সবচেয়ে মহাপ্রভুর বোঝাই অধিক হল । গৃহ মধ্যে মার্জন করার পর পুনৰ্ব্বার সকলকে কাজ বণ্টন করে দিয়ে বললেন , “তোমরা সকলে সূক্ষ্ম ধূলি ও কাঁকর দূর করে ভাল করে পরিস্কার কর ” । সমস্ত বৈষ্ণব দুইবার শোধন করলেন, তা দেখে মহাপ্রভূর মন সস্তুষ্ট হল। তখন অন্য শত জন শত ঘট পূর্ণ করে এনে রাখলেন । যখন মহাপ্ৰভু বললেন ‘জল আন’ তখন ভক্তগণ মহাপ্রভুর সামনে জলপূর্ণ শত ঘট এনে দিলেন । মহাপ্রভু প্রথমে মন্দির প্রক্ষালন করলেন, তারপরে, গৃহের উর্দ্ধ, অধঃ, ভিত, গৃহের মধ্য ও সিংহাসন ধৌত করলেন, তৎপশ্চাৎ খাপরা (খোলা) ভরে জল উর্দ্ধদেশে নিক্ষেপ করে সেইজলে উৰ্দ্ধ শোধন করে ভিত প্রক্ষালন করলেন । প্রভু প্রথমে মন্দির প্রক্ষালন, তারপরে শ্রীহস্তে সিংহাসনের মার্জন করলেন। ভক্তগণ গৃহ -মধ্য প্রক্ষালন এবং নিজ নিজ হস্তে মন্দির মার্জন করতে লাগলেন । নিত্যানন্দ প্রভু, অদ্বৈতাচার্য্য, স্বরূপ ভারতী আর পুরী বিনা আর সকলে জল বয়ে আনে ।
কোন ভক্ত মহাপ্রভুর হস্তে জলঘট দেয় , কেহবা মহাপ্রভুর চরণ উপরে জল নিক্ষেপ করে গোপনে সেই জল পান করে , কেহ বা সেই জল প্রার্থনা করে এবং কেহবা সেই জল অন্যকে দান করতে লাগলেন । তাতে সমস্ত প্রাঙ্গণ জলে পরিপূর্ণ হয়ে রইল। ভক্তগণ নিজ নিজ বস্ত্রে গৃহ সংসাজ্জন এবং প্রভু নিজ বস্ত্রে সিংহাসন মাৰ্জ্জন করলেন । শত ঘট জলে মন্দির মার্জিত হল । নিজেদের মনের মত করে মন্দির শোধন করলেন , মন্দিরকে নিৰ্ম্মল শীতল ও স্নিগ্ধ করে আপনার হৃদয়কে যেন প্রকাশিত করলেন । শতশত লোক সরোবরে জল ভরেন, ঘাটে স্থান না পেয়ে কেহবা কূপে জল ভরতে লাগলেন, একশত ভক্ত পূর্ণ কুম্ভ নিয়ে আসতে লাগলেন, অার শত ভক্ত শূন্য ঘট নিয়ে যেতে লাগলেন । ঘটে ঘটে ঠোকর লেগে কত ঘট ভেঙ্গে গেল, লোকেরা আবার শত শত ঘট এনে উপস্থিত করল ।
মহাপ্রভু ভক্তগণের সঙ্গে নিরন্তর কীৰ্ত্তন-রঙ্গে ক্রীড়া করেন। আচাৰ্য্যাদি ভক্তগণ মহাপ্রভুকে নিমন্ত্রণ করেন, মহাপ্ৰভু সেই সেই স্থানে ভক্তগণকে নিয়ে ভিক্ষা করেন। এই মত নানা রঙ্গে কিছুদিন যাপন করলেন । ক্রমে শ্ৰীজগন্নাথ দেবের রথযাত্রার দিন উপস্থিত হল। তখন মহাপ্রভু প্রথমে কাশীমিশ্রকে ডেকে এনে তাকে দিয়ে পড়িছা পাত্র ও সার্বভৌমকে ডাকিয়ে আনলেন। মহাপ্রভু হেসে তিনজনকে বললেন — “ আপনারা আমাকে গুণ্ডিচা মন্দির মার্জনের সেবা দিন ” । মহাপ্রভু এই সেবা প্রার্থনা করলে পড়িছা বললেন, “আমরা সকলে আপনার সেবক, আপনার যা ইচ্ছা , সেই অনুযায়ী কাজ করা আমার কর্তব্য, বিশেষতঃ মহারাজ আমাকে আদেশ করেছেন , আপনার ইচ্ছার যেন যথাযথ পালন হয় । তবে প্রভু ! মন্দির-মার্জন আপনার যোগ্য সেবা নয় , এটি আপনার একটি লীলা । গুণ্ডিচা মার্জনের জন্য কলসী ও ঝাড়ু অনেক আবশ্যক , — তবে আজ্ঞা দিন আজ সেই সব জিনিস এই স্থানে নিয়ে আসি ” । এই কথা বলে পড়িছা নূতন একশত মাটির কলসী ও একশত ঝাড়ু এনে প্রভুর সামনে অপর্ণ করলেন।
পর দিন প্রাতঃকালে প্ৰভু শ্রীহস্তে নিজ ভক্তগণের অঙ্গে চন্দন লেপন করলেন । প্রত্যেকের হাতে এক একটি মার্জনী দিয়ে সকলকে সঙ্গে নিয়ে গুণ্ডিচা মন্দিরে গেলেন । গুণ্ডিচা মন্দির মার্জন করতে গিয়ে প্রথমে ঝাড়ু দিয়ে মার্জন করতে লাগলেন । ভিতর মন্দির এবং উপরিভাগ সব পরিস্কার করে সিংহাসন মার্জন করে চারি ভিত শোধন করার পর শ্রীজগমোহন পরিস্কার করলেন । চারপাশে শত ভক্ত হাতে ঝাড়ু নিয়েছেন , মহাপ্রভু নিজে ভালমতে শোধন করে সকলকে শিক্ষা দিতে লাগলেন, মহাপ্ৰভু প্রেমোল্লাসে গৃহ শোধন ও কৃষ্ণ নাম করছেন এবং ভক্তগণও কৃষ্ণ নাম উচ্চারণ করতে করতে নিজেদের কাজ করতে লাগলেন । মহাপ্রভুর ধূলায় ধূসর তনু দেখতে অতীব সুন্দর, কোন কোন ভক্ত অশ্রু জলে মার্জন করছেন। অনন্তর ভক্তগণ ভোগমণ্ডপ শোধন করে প্রাঙ্গণ শোধন করলেন। ক্রমে সমুদায় গৃহ শোধন করে তৃণ, ধূলি ও কাঁকর একত্র করে ভক্তগণ নিজেদের বস্ত্রে করে পরমানন্দে তৃণ ও ধূলি সকল বাইরে ফেলতে লাগলেন ।
তখন প্রভু বললেন , কে কত মার্জন করেছ, খড়কুটা ও ধূলির পরিমাণ দেখে পরিশ্রম বিচার করব । এই বলে সকলের ঝাড়ু দেওয়া বোঝা একত্র করলেন। সবচেয়ে মহাপ্রভুর বোঝাই অধিক হল । গৃহ মধ্যে মার্জন করার পর পুনৰ্ব্বার সকলকে কাজ বণ্টন করে দিয়ে বললেন , “তোমরা সকলে সূক্ষ্ম ধূলি ও কাঁকর দূর করে ভাল করে পরিস্কার কর ” । সমস্ত বৈষ্ণব দুইবার শোধন করলেন, তা দেখে মহাপ্রভূর মন সস্তুষ্ট হল। তখন অন্য শত জন শত ঘট পূর্ণ করে এনে রাখলেন । যখন মহাপ্ৰভু বললেন ‘জল আন’ তখন ভক্তগণ মহাপ্রভুর সামনে জলপূর্ণ শত ঘট এনে দিলেন । মহাপ্রভু প্রথমে মন্দির প্রক্ষালন করলেন, তারপরে, গৃহের উর্দ্ধ, অধঃ, ভিত, গৃহের মধ্য ও সিংহাসন ধৌত করলেন, তৎপশ্চাৎ খাপরা (খোলা) ভরে জল উর্দ্ধদেশে নিক্ষেপ করে সেইজলে উৰ্দ্ধ শোধন করে ভিত প্রক্ষালন করলেন । প্রভু প্রথমে মন্দির প্রক্ষালন, তারপরে শ্রীহস্তে সিংহাসনের মার্জন করলেন। ভক্তগণ গৃহ -মধ্য প্রক্ষালন এবং নিজ নিজ হস্তে মন্দির মার্জন করতে লাগলেন । নিত্যানন্দ প্রভু, অদ্বৈতাচার্য্য, স্বরূপ ভারতী আর পুরী বিনা আর সকলে জল বয়ে আনে ।
কোন ভক্ত মহাপ্রভুর হস্তে জলঘট দেয় , কেহবা মহাপ্রভুর চরণ উপরে জল নিক্ষেপ করে গোপনে সেই জল পান করে , কেহ বা সেই জল প্রার্থনা করে এবং কেহবা সেই জল অন্যকে দান করতে লাগলেন । তাতে সমস্ত প্রাঙ্গণ জলে পরিপূর্ণ হয়ে রইল। ভক্তগণ নিজ নিজ বস্ত্রে গৃহ সংসাজ্জন এবং প্রভু নিজ বস্ত্রে সিংহাসন মাৰ্জ্জন করলেন । শত ঘট জলে মন্দির মার্জিত হল । নিজেদের মনের মত করে মন্দির শোধন করলেন , মন্দিরকে নিৰ্ম্মল শীতল ও স্নিগ্ধ করে আপনার হৃদয়কে যেন প্রকাশিত করলেন । শতশত লোক সরোবরে জল ভরেন, ঘাটে স্থান না পেয়ে কেহবা কূপে জল ভরতে লাগলেন, একশত ভক্ত পূর্ণ কুম্ভ নিয়ে আসতে লাগলেন, অার শত ভক্ত শূন্য ঘট নিয়ে যেতে লাগলেন । ঘটে ঘটে ঠোকর লেগে কত ঘট ভেঙ্গে গেল, লোকেরা আবার শত শত ঘট এনে উপস্থিত করল ।
ভক্তগণ জল ভরেন , গৃহধৌত করেন এবং হরিধ্বনি করেন । কৃষ্ণ ও হরিধ্বনি ছাড়া আর কিছুই শুনতে পাওয়া যায় না । ভক্তগণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে ঘট সমপর্ণ এবং কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে ঘট প্রার্থনা করতে লাগলেন । সকল কৰ্ম্মেই কৃষ্ণনাম সঙ্কেত হয়ে উঠল । মহাপ্ৰভু প্রেমাবেশে কৃষ্ণ কৃষ্ণ নাম উচ্চারণ করতে করতে একাকী শত লোকের কৰ্ম্ম করতে লাগলেন, শত হস্তে যেন ক্ষালন ও মার্জন করেন এবং প্রত্যেক লোকের নিকট গিয়ে তাদেরকে কার্য্যের শিক্ষা প্রদান করেন । যে ব্যক্তি ভাল কৰ্ম্ম করেন, তাকে প্রশংসা এবং মনোমত না হলে তাকে মিষ্ট ভর্ৎসনা করেন । অন্যকে বলেন ,_“ তুমি ভাল কাজ করছ , প্রভু জগন্নাথের সেবাকার্য্য কিভাবে উত্তমরূপে করতে হয় , অন্যকেও শিখিয়ে দাও ”। এই কথা শুনে সকলে সঙ্কুচিত হয়ে মনোনিবেশ সহকারে ভালভাবে কাজ করতে লাগল ৷ এর পর মহাপ্রভু জগমোহন (মন্দিরের নিকট ক্ষুদ্র মন্দির ) প্রক্ষালন করে ভোগমণ্ডপ প্রক্ষালন করলেন । তারপর নাটশালা ধুয়ে চত্বর ও প্রাঙ্গণ ধুলেন, পাকশাল , মন্দিরের চতুর্দিক এবং সমুদায় অন্তঃপুর উত্তম রূপে ধৌত করালেন ।
এই সময়ে একজন সরল বুদ্ধি গৌড়ীয়া মহাপ্রভুর চরণে এক ঘট জল অর্পণ করে সেই জল নিজে পান করল, তা দেখে মহাপ্রভুর মনে দুঃখ ও রোষ উৎপন্ন হল । যদিও মহাপ্রভু তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, তথাপি শিক্ষার জন্য বাইরে রোষ প্রকাশ করলেন ৷
এই সময়ে একজন সরল বুদ্ধি গৌড়ীয়া মহাপ্রভুর চরণে এক ঘট জল অর্পণ করে সেই জল নিজে পান করল, তা দেখে মহাপ্রভুর মনে দুঃখ ও রোষ উৎপন্ন হল । যদিও মহাপ্রভু তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, তথাপি শিক্ষার জন্য বাইরে রোষ প্রকাশ করলেন ৷
Collected: Dolon Das
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন