০২ জুলাই ২০১৮

শ্রীরাধা ই শ্রীকৃষ্ণের শক্তি

রাধাকৃষ্ণ লীলা নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব করে থাকে ।কেউ বলে রাধা নামে কেউ নেই , আবার কেউ বলে রাধারাণীর কাহিনী কাল্পনিক ইত্যাদি ইত্যাদি । তাহলে আসুন জেনে নেই আমাদের কৃষ্ণপ্রেয়সী গোপীশ্রেষ্ঠা রাধা রাণী সম্পর্কেঃ


রাধা নিয়ে সাধারণত দুইটি মন্তব্য ফেসবুকে আসেঃ

১/ রাধার কোন জন্ম বৃত্তান্ত নেই।
২/ রাধা কাহিনী কাল্পনিক।

এ উত্তরে বলবো রাধার ব্যাপারে জানতে হলে আমাদেরকে একটু পেছনে যেতে হবে । ত্রেতাযুগে আজ হতে দশহাজার আটশো বছর আগে ত্রেতাযুগে নাগ লোকে নাগরাজের কন্যার নাম ছিল চন্দ্রসেনা ।সেই চন্দ্রসেনা মনে প্রাণে ভালোবাসতেন দশরথ নন্দন রামকে । এমনকি তিনি রামকে তাঁর প্রাণপতি হিসেবে মেনে নিয়েছিল  । অহিরাবণ ও মহিরাবণ দুই ভাই পাতালপতি ছিলেন  । দশানন রাবণ এই দুই ভাইকে পাতালে প্রতিষ্ঠিত করে ত্রিলোকে রাবণের আধিপত্য টিকিয়ে রাখার জন্য । একদিন অহিরাবণ ও মহিরাবণ নাগলোকে আক্রমণ করে নিজেদের আধিপত্য স্থাপন করার জন্য এবং তারা নাগলোক জয় করে।

তখন অহিরাবণ সেখানে চন্দ্রসেনাকে দেখে। আর চন্দ্রসেনার রুপে মোহিত হয়ে অহিরাবণ চন্দ্রসেনাকে হরণ করে পাতাল পুরীতে নিয়ে আসে। কিন্তু চন্দ্রসেনা পাতাল পুরীতেও রামের প্রেমের নামে মালা গলায় দিয়ে রামনাম জপ করে। তা দেখে অহিরাবণ বলে হরণকৃত নারীর পতি হলো হরণকারী অর্থাৎ আমি অহিরাবন । কিন্তু চন্দ্রসেনা বলেন, আমার তণু মন ও ঈশ্বর একমাত্র প্রভু রাম । এমন সময় লংকা থেকে রাবণের বার্তা আসে । আর অহিরাবণ ও মহিরাবণ দুই ভাই লংকার উদ্দেশ্য প্রস্থান করে । রাবণ এই দুই ভাইকে বলে সাগরের ওপারে রাম নামে এক ভিখারী লংকায় আসার চেষ্টায় আছে । তোমরা গিয়ে তাদেরকে বধ করো।

অহিরাবণ ও মহিরাবণ দুই ভাই গিয়ে বানরের বেশে রাম ও লক্ষ্মণকে অজ্ঞান করে পাতাল পুরীতে নিয়ে এসে বন্দি করে রাখে পাতাল দেবীর মন্দিরে । তারা দুই ভাই মনস্থির করে যে, আগামী পূর্ণিমাতে এই দুই জনকে পাতাল দেবীর কাছে বলি দিয়ে দেবী হতে আরো শক্তি আহোরণ করবো। অন্য দিকে হনুমান ও অন্য সবাই দেখে যে প্রভুর কক্ষে প্রভু ও ভ্রাতা লক্ষ্মণ নেই এবং কক্ষেই একটি পাতাল সুড়ংগ। অতঃপর হনুমান আর দেরি না করে সেই সুড়ংগ দিয়ে পাতালে প্রবেশ করে। হনুমান পাতাল পুরীতে এসে দেখে এক রমনী তার দাসীকে বলছে পাতাল দেবীর মন্দিরে গিয়ে রাম ও লক্ষ্মণকে অশুদ্ধ করার জন্য। যাতে পাতালপতিরা কাল পূর্ণিমায় রাম ও লক্ষ্মণকে বলি দিতে না পারে । হনুমান তখনই দাসীর পিছনে পিছনে গিয়ে প্রভু ও লক্ষ্মণকে উদ্ধার করে । জ্ঞান ফিরে রাম বলেন, অহিরাবণ ও মহিরাবণ এই দুই ভাইকে বধ ব্যতীত আমাদের পাতাল পুরী থেকে যাওয়া অসম্ভব । হেনক্ষণে দুই পাতাল পতি এসে হাজির, তখন রাম যুদ্ধের আহ্বান করে। অহিরাবণ ও মহিরাবণ, রাম ও লক্ষ্মণের সাথে যুদ্ধ শুরু হয়। এক পর্য্যায়ে রাম একে একে পাঁচবার দুই ভাইকে বধ করে।
 
কিন্তু অতঃপর তারা জীবিত হয়ে যায়। হনুমান দেখে চিন্তা করে এরা কি অমর আর যদি না হয় তাহলে এদের মৃত্যুর রহস্য কি। অতঃপর হনুমানের মনে পড়লো রমনীর কথা। তত্ক্ষণাৎ হনুমান প্রাসাদে গিয়ে চন্দ্রসেনাকে বলে মাতা, এই দুটি পাতাল পতির মৃত্যুর রহস্য কি জানেন? যদি জেনে থাকেন তাহলে বলেন।
চন্দ্রসেনা হনুমানকে বলে,হ্যাঁ জানি কিন্তু কেনো বলবো ? তাতে আমার কি লাভ, হনুমান বলেন বলুন আপনার কি চাই? চন্দ্রসেনা হনুমানকে বলেন তুমি তোমার প্রভুকে যুদ্ধ শেষে আমার কাছে নিয়ে আসবে। হনুমান প্রশ্ন করে, কেনো ? চন্দ্রসেনা বলেন, আমি দীর্ঘকাল থেকে রামের নামের প্রতি মোহিত হয়ে ওনাকে অর্জনের উদ্দেশ্যে আরাধনা করছি, উনি আমার আরাধ্য।
 
এতখন হনুমান চিন্তা করলো প্রভুতো সীতাপতি  তাহলে এ কিভাবে সম্ভব  আর যদি সত্যি প্রকাশ করি । তাহলে পাতাল পতির মৃত্যুর রহস্য কি, তা জানা অসম্ভব হবে। অতএব হনুমান বললো, ঠিক আছে আমি প্রতিজ্ঞা করছি আমি প্রভুকে নিয়ে আসবো। এবার বলুন, তখন চন্দ্রসেনা বলেন সঞ্জিবনী ভ্রমর অমৃত এনে ওদের ক্ষতস্থানে দিলে ওরা প্রাণ ফিরে পায়। যদি ঐ সঞ্জিবনী ভ্রমরকে রুখতে পারো তাহলে ওদের মৃত্যু হবে। হনুমান বুদ্ধি করে বললো, ঠিক আছে মাতা আমি আসি। আর একটি কথা=আসলে প্রভুর যেনো কোনো প্রকার অপমান না হয় । তাহলে কিন্তু প্রভু চলে যাবেন তখন আমায় কোন দোষ দিতে পারবেন না ।

অতঃপর হনুমান গিয়ে সঞ্জিবনী ভ্রমরদের অমৃত নিয়ে আসার পথে ধরে হত্যা করতে লাগলো। ভ্রমর কর্তা বলে উঠলো ,আমাদের কেনো হত্যা করছেন। হনুমান বলে দুই অসুর পাতাল পতির প্রাণ রক্ষা করছেন এইজন্য।তখন ভ্রমর বলে ঠিক আছে আমাদের হত্যা করো না। আমরা আর ওদের  অহিরাবণ ও মহিরাবণ প্রাণ রক্ষা করবো না। এবার আমাদের প্রাণ ভিক্ষা দাও। হনুমান বলে, ঠিক আছে কিন্তু একটি প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। ভ্রমর বলে, কি প্রতিশ্রুতি ? তোমরা চন্দ্রসেনার কক্ষে গিয়ে তাঁর শয়ন সজ্জার কাঠ ঘোগলা-ঝাঁঝরা করে দিতে হবে। ভ্রমর বলে,ঠিক আছে  এরপর অহিরাবণ ও মহিরাবণ মারা যায়।

তখন রাম হনুমানকে বলেন, চলো যাওয়া যাক । হনুমান বলে, না প্রভু আপনাকে চন্দ্রসেনার কক্ষে যেতে হবে। কারণ আমি পাতাল পতির মৃত্যুর রহস্য জানতে গিয়ে তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে, আপনাকে তাঁর কক্ষে নিয়ে যাবো। হনুমান রামকে বিস্তারিত ভাবে সব খুলে বলে=অতঃপর রাম চন্দ্রসেনার কক্ষে যায়=রামকে দেখে চন্দ্রসেনা রামের চরণে পুস্পাদি দিয়ে রামকে বলেন=আসন গ্রহন করুন প্রভু=রাম যখন চন্দ্রসেনার শয়নসজ্জায় বসেন=তখন শয়ন সজ্জা ভেঙে পড়ে= তত্ক্ষণাত্ রাম ক্রোধান্নিত হয়ে উঠে=অতঃপর চন্দ্রসেনা রামের পায়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে=আর বলতে থাকে=আমি আমার এই অসুচী দেহ আমার আরাধ্যকে সমর্পণ করতে যাচ্ছিলাম আমার আরাধনা সব বৃথা=রাম তখন চন্দ্রসেনাকে তুলে বলেন=দেবী আমি তোমার প্রেম ভক্তিতে প্রসন্ন=আমার কোনো ভক্তের আরাধনা বৃথা যায় না=কিন্তু এই জন্মে আমি তোমার ভক্তির প্রতিদান দিতে পারবো না=কারন আমি সীতাপতি=কিন্তু আমি তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি=আমি দ্বাপর যুগের লীলায় কৃষ্ণ হয়ে জন্ম নেবো আর তুমি রাধা নামে জন্ম নেবে=আর সেই জন্মে আমি তোমার প্রেম ভক্তি আরাধনার প্রতিদান দিবো=আর তোমার আমার সেই যুগলবন্দীকে মানবজাতি রাধাকৃষ্ণ যুগল বলে আখ্যায়িত করবে যা পৃথিবীর অন্তিম কাল পর্যন্ত অক্ষয় হয়ে থাকবে=

এইটা হচ্ছে রাধারাণীর দ্বাপর যুগের অস্তিত্বের একটা কারণ=এই জন্মের পুর্ব বৃত্তান্ত=যার উত্তর শ্রীমদ ভাগবতে নেই=সে কারণও আমরা বিভিন্ন পোস্টে বলে আসছি=তবে এই কাহিনীটি আছে রামায়ণ গ্রন্থে=এখানে অতি সংক্ষেপে লিখেছি=কারণ পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা দিতে গেলে আমাদের আরেকটা রামায়ণ লিখতে হবে=যদি কারও পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা জানতে ইচ্ছে করে তাহলে রামায়ণে রামের পাতাল বিজয় অধ্যায় পড়ে দেখবে=

এবার আসি দ্বাপর যুগে=রাধাকৃষ্ণের লীলা সবাই জানে=সম্পূর্ণ কৃতিগাঁথা ও কৃতিকথা সবার মুখস্থ=তাই নতুন করে আমাদের বলার কিছুই নেই=রাধারাণীর কাহিনী যারা কাল্পনিক বলে=তাদের জন্য কিছু প্রমান আছে নিম্ন বর্ণিত গ্রন্থে=যেমন=
=১=শ্রীমদ ভাগবতের দশম স্কন্ধের আটত্রিশতম অধ্যায় যা সম্পূর্ণ=রাধা হতে বিদায় ও রাধার বিরহ বিলাপ=
=২=রাধা অষ্টমী অধ্যায়==৩=রাধার মান ভঞ্জন=
=৪=নৌকা বিলাস ইত্যাদি=এছাড়া কিছু কিছু অংশে রাধাকৃষ্ণের লীলা কথা উল্লেখ আছে=রাধা কাহিনী যে কাল্পনিক নয়=আশাকরি আমরা সেটা ভুল প্রমাণিত করতে পেরেছি=আমরা এখানে যে অধ্যায় ও স্কন্ধের নাম উল্লেখ করেছি=তা সংস্কৃত ভাগবতে ও বাংলা সংকলিত ভাগবতে পাবে=প্রয়োজনে পড়ে দেখবে রাধাকৃষ্ণের জীবন লীলার প্রমাণ হাতেনাতে পাবে=

পরমকরুনাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণীর চরণকমলে সবার মঙ্গলময়=কল্যাণময়=শান্তিময়= সুন্দরময় আর আনন্দময় জীবনের জন্য প্রার্থনা নিরন্তর আমাদের=
======================================
"হরে"কৃষ্ণ"হরে"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"কৃষ্ণ"হরে"হরে"
"হরে"রাম"হরে"রাম"রাম"রাম"হরে"হরে"
==========================

Collected from: Adhora Ojana Adhora
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।