আমাদের শাস্ত্রে অন্যান্য লিঙ্গের তুলনায় বাণালিঙ্গের পূজায় বেশি প্রশংসা লক্ষ্য করা যায়। বাণ নামে এক ভক্ত অসুর ছিলেন। তিনি শিবকে তুষ্ট করার জন্য সুন্দর সুন্দর লিঙ্গ তৈরি করে বিভিন্ন জায়গায় স্থাপন করতেন। সুতরাং বাণাসুরের দ্বারা তৈরি লিঙ্গকে বাণলিঙ্গ বলে অভিহিত করা হয় । এই সম্বন্ধে পুরাণে যে কাহিনি আছে তা এরকম – অতি প্রাচীনকালে ভারতে বাণ নামে একজন ক্রোধ জয়কারী অসুর ছিলেন। তিনি সর্বদা মহাদেবেন সেবা ও পূজায় রত থাকতেন । বাণ ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ একজন শিল্পী । তিনি প্রত্যহ নিজ হাতে শিবলিঙ্গ নির্মাণ করতেন। আবার পরে তা ধুমধাম করে পূজা করে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠা করতেন। এইভাবে প্রায় শত বছর কেটে গেল।
তাঁর এরূপ ভক্তিতে স্বয়ং মহাদেব অত্যন্ত সন্তুষ্ট হলেন এবং একদিন তিনি ভক্তের কাছে আবির্ভূত হয়ে বললেন- “হে বাণ! তোমার উপর আমি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছি। তুমি কি বর চাও বল- আমি এখনই তা পূর্ণ করব।” ভক্ত বাণ মহাদেবের কথায় সন্তুষ্ট হয়ে বললেন- “হে প্রভু, শাস্ত্রমতে শুভ লক্ষণযুক্ত শিবলিঙ্গ তৈরী করতে আমার খুব কষ্ট হয়। অথচ আমি এরূপ শিবলিঙ্গ তৈরী করার ব্রত নিয়েছি। তাই আমার একান্ত প্রার্থনা- আপনি শুভ লক্ষণযুক্ত কিছু লিঙ্গ আমাকে দিন। আর ঐসব লিঙ্গের অর্চনার দ্বারা সমস্ত অভিলাষ যেন পূর্ণ হয় এবং আমি কৃতার্থ হই।” জগতের অধীশ্বর মহাদেব বাণের এরূপ প্রার্থনা শোনার পর কৈলাস পর্বতের শিখরে ফিরে গেলেন এবং সেখানে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় চৌদ্দ কোটি শিবলিঙ্গ প্রস্তুত করলেন। তারপর একদিন শুভক্ষণে নন্দি- ভৃঙ্গিদের দিয়ে ওই শুভ শিবলিঙ্গগুলি বাণাসুরকে প্রদান করলেন। বাণ লিঙ্গগুলি পেয়ে অত্যন্ত খুশি হলেন এবং তিনি আর লিঙ্গ প্রস্তুত করতে চাইলেন না। তবে এই বিশাল সংখ্যক লিঙ্গগুলি নিয়ে বাণ চিন্তায় পড়লেন। ভাবলেন- যুগে যুগে মানবদের সর্ববিধ মঙ্গলের জন্য এই লিঙ্গগুলি বেগবতী নদীর মধ্যে স্থাপন করা উচিৎ। এরূপ চিন্তা করে তিনি বিভিন্ন পবিত্র স্থানে অনেকগুলি লিঙ্গ স্থাপন করলেন এবং অন্যান্য সমস্ত লিঙ্গগুলির মধ্যে তিনকোটি কালিকাগর্তে , তিনকোটি শ্রীশৈলে , এককোটি কন্যকাশ্রমে এক কোটি নেপালে রক্ষা করেছিলেন। বাণাসুর দ্বারা স্থাপিত এসব লিঙ্গগুলি নদীর স্রোতে ভেসে আসে কিংবা পর্বতের বিভিন্ন জায়গায় এখনও কুড়িয়ে পাওয়া যায় – এইসব ভেসে আসা লিঙ্গ বা কুড়িয়ে পাওয়া লিঙ্গগুলিকে বাণলিঙ্গ বলে চিহ্নিত করা হয় । বিভিন্ন লক্ষণযুক্ত বাণলিঙ্গ আছে। তাঁর পূজানের ফলাফলও পৃথক আছে। বাণলিঙ্গ পূজনের ফলে পূজকের সত্ত্বগুণ বৃদ্ধি পায়। সুখ, সৌভাগ্য ও আরোগ্য লাভ হয়। যোগঐশ্বর্য ও বিভূতি লাভ হয় । মোট কথা সংসারে শ্রীবৃদ্ধি , আরোগ্যলাভ, সুখ শান্তি- ঐশ্বর্য সবই বানলিঙ্গ পূজা ও ভক্তি দ্বারা লাভ করা যায় ।
( শিব এবং শিবলিঙ্গ মাহাত্ম্য... স্বামী বেদানন্দ... গিরিজা পাবলিশার্স )
( শিব এবং শিবলিঙ্গ মাহাত্ম্য... স্বামী বেদানন্দ... গিরিজা পাবলিশার্স )
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন