০৭ জানুয়ারী ২০১৯

সনাতন ধর্মে জন্মান্তরবাদের ব্যাখ্যা

সনাতন বৈদিক বা হিন্দুধর্মের জন্মান্তরবাদ (পুনর্জন্ম) সম্পর্কে  কিছু জানার জন্য আমাদের কিছু ব্যাখ্যার প্রয়োজন। ব্যাখ্যা গুলো এমন-

  •  হিন্দুধর্ম বিশ্বাস করে যে জীবের মৃত্যুর পর জীব পুনরায় জন্মগ্রহন করে। হিন্দুধর্মে পুনর্জন্মকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, কিন্তু সকলেই মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে বিশ্বাসী। পুনর্জন্মের অর্থ হলো-
“জীবের মৃত্যুর পর আত্মা পুনরায় নতুন দেহ ধারণ করে”।
 
  • যদিও বহু ধর্ম পুনর্জন্মে বিশ্বাসী, তবু একমাত্র হিন্দুধর্মেই এই জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী। আত্মার নতুন দেহ ধারণের মূলে রয়েছে। আত্মা যে এক শাশ্বত সত্ত্বা, এই ধারণা। বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্যেও আত্মা এক অবিনাশী সত্ত্বা- এই বিশ্বাস না থাকলে জীবের পুনর্জন্মের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। সেই কারণে হিন্দু জড়বাদী তত্ত্ববাদীগণ কোন শাশ্বত আত্মার অস্তিত্বে, মুত্যু পরবর্তী জীবনে এবং আত্মার পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেনা।
  •   হিন্দুধর্মে জীবাত্মা এক অপরিবর্তনীয় সত্ত্বা। যার প্রকৃতি হলো ঐশ্বরিক। যেমন অগ্নি থেকে নির্গত অগ্নি স্ফুলিঙ্গ অগ্নির সংঙ্গে অভিন্ন, তেমনি যে জীবাত্মা ঈশ্বর থেকে উদ্ভূত সেই জীবাত্মা ঈশ্বরের সঙ্গে অভিন্ন। জীবাত্মার এই প্রকৃতি স্বীকার করে নিলেই জীবাত্মার জন্মান্তর গ্রহণ এবং জন্মান্তরের মধ্য দিয়ে তার বিবর্তনকে সমর্থন করা চলে। আত্মা নিত্য, শাশ্বত সত্ত্বা হওয়াতে, আত্মার জন্ম ও মৃত্যুকে যথাক্রমে সম্পূর্ণ নতুন প্রারম্ভ বা পরিপূর্ণ বিনাশ রূপে গ্রহণ করা চলে না। বরং জীবাত্মার পুনর্জন্ম অর্থ হলো নতুন দেহধারণ এবং মৃত্যু অর্থ হলো জীর্ণ দেহ পরিত্যাগ করাকে বোঝায়।
  •   গীতায় বলা হয়েছে-
“যেমন মনুষ জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত্র গ্রহণ করে সেই রূপে
আত্মা জীর্ণ শরীর পরিত্যাগ করে অন্য নতুন শরীর পরিগ্রহ করে”।

আত্মার শাশ্বত প্রকৃতি যেমন জীবের জন্মান্তর গ্রহণ সম্ভব করে তোলে, ঈশ্বরের সঙ্গে জীবাত্মার অভিন্নতা জন্মান্তর গ্রহণের বিষয়টিকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে। বেদে, উপনিষদে এবং ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে যে, জীবাত্মা স্বরূপতঃ ঈশ্বরের সঙ্গে অভিন্ন। কিন্তু জাগতিক বস্তুর প্রতি আসক্তি বশতঃই আত্মাকে দেহ ধারণ করতে হয়।

  •   জীবের একাধিক জন্ম-গ্রহণের কারণ হলো তার ভোগাকাঙ্ক্ষা। গীতায় বলা হয়েছে-
“পুরুষ প্রকৃতির সংসর্গ বশতঃ প্রকৃতির গুণ অর্থাৎ সত্ত্ব, রজঃ, তমো গুণের ধর্ম সুখ দুঃখ মোহাদিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েন এবং আমি সুখী, আমি দুঃখী, আমি কর্তা, আমার কর্ম ইত্যাদি অভিমান করতঃ কর্ম নাশে আবদ্ধ হন। এই সকল কর্ম ফলভোগের জন্য তাকে বার বার জন্ম গ্রহন করতে হয়।"

সুতরাং 'এই প্রকৃতির সংসর্গ থেকে মুক্ত হতে না পরলে, তার জন্মকর্মের বন্ধন থেকে নিস্তার নেই।'

  •   আত্মা পরমাত্মা থেকে ভিন্ন এবং দেহ-মন সংগঠনের সঙ্গে অভিন্ন, এই ভ্রান্ত ধারণার জন্যই আত্মার পুনঃ পুনঃ দেহধারণ। জীবাত্মা তার যথাযথ স্বরূপ সাময়িকভাবে বিস্মৃত হয় সত্য, কিন্তু জীবাত্মার ঐশ্বরিক প্রকৃতি লুপ্ত হয় না এবং জীবাত্মাকে তার সুপ্ত ঐশ্বরিক প্রকৃতিকে লাভ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। জীব পুনঃ পুনঃ জন্ম গ্রহণের মধ্য দিয়ে তার লক্ষ্য লাভ করার দিকে চালিত হয়। অর্থাৎ জীবের সঙ্গে তার ঐশ্বরিক প্রকৃতির তাদত্ম্যের উপলব্ধি- এই লক্ষ্যে উপনীত না হওয়া পর্যন্ত জীবের পুনর্জন্মের নিরোধ ঘটে না। বস্তত: এই ধারণাই পুনর্জন্মের বিষয়টিকে তাৎপর্যময় করে তোলে। সকল বদ্ধ জীবই এই পুনর্জন্মের অধীন। আর পুনর্জন্ম বন্ধ বা না হওয়ার অর্থ জীবাত্মার পরমাত্মায় বিলীন বা মহামিলন হওয়া।
  •   কাজেই পুনর্জন্ম কোনী রহস্যময় অদৃষ্টের খেয়াল খুশীর ব্যাপার নয়। বরং এক ঐশ্বরিক পরিকল্পনার বা জগতের নৈতিক শৃঙ্খলার অংশ স্বরূপ। যা সকল প্রাণীতেই সংঘটিত হয়ে থাকে, তা সে বিশ্বাস করুক আর না-ই করুক।

 পরমকরুনাময় গোলোকপতি সচ্চিদানন্দ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর একান্ত হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতী রাধারাণীসহ সকল পূণ্য- মহাত্মাদের চরণকমলে সবারই মঙ্গলময়, কল্যাণময়, সুন্দরময়, শান্তিময় আর আনন্দময় জীবনের প্রার্থনা আমাদের।

"হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে!!"
!!জয় হোক সকল ভক্তদের!!
!!জয় শ্রীকৃষ্ণ!! জয় রাধে!!

Post courtesy: দেবেন্দ্র
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।