শিবোহং, শিবোহং, শিবোহং, শিবোহং
আমাদের মৃত্যু হতে অমৃতে নিয়ে যাও
-----------------------------------------------
সত্যম্, শিবম্, সুন্দরম্।
আমরা জানি ও মানি -- শিব সত্য ও সুন্দর। আবার এ ও জানি -- যত্র জীব তত্র শিব।
'মনো বুধ্যহংকার চিত্তানি নাহং
ন চ শ্রোত্র জিহ্বা ন চ ঘ্রাণনেত্রম্।
ন চ ব্যোম্ ভূমির্ন তেজো ন বায়ুঃ
চিদানন্দ রূপঃ শিবোহং শিবোহম্।।'
--- আমি মন, বুদ্ধি, চিত্ত, অহংকার, কর্ণ, জিহ্বা, নাসিকা, চোখ, ক্ষিতি, বায়ু, অগ্নি, ব্যোম বা বায়ু নই, আমি চিদাত্মা, চিদানন্দ স্বরূপ শিব -- শিবোহম্।
'অহং ভবানয়ঞ্চৈব রুদ্রোহয়ং যো ভবিষ্যতি।
একং রূপং ন ভেদোহস্তি ভেদে চ বন্ধনং ভবেৎ।।
তথাপীহ মদীয়ং শিবরূপং সনাতনম্।
মূলভূতং সদা প্রোক্তং সত্যং জ্ঞানমনন্তকম্।।' (জ্ঞানসংহিতা)।
--- আমি, তুমি, এই ব্রহ্মা এবং রুদ্র নামে যিনি উৎপন্ন হবেন, এই সকলই এক। এদের মধ্যে কোনো ভেদ নাই, ভেদ থাকলে বন্ধন হত। তথাপি আমার শিবরূপ সনাতন এবং সকলের মূল স্বরূপ বলে কথিত হয়, যা সত্য জ্ঞান ও অনন্ত স্বরূপ।
"যদাহতমস্তন্ন দিবা ন রাত্রির্নসন্ন চাসচ্ছিব এব কেবলঃ।" --- যখন আলো ছিল না, অন্ধকারও ছিল না; দিন ছিল না, রাত্রিও ছিল না; সৎ ছিল না, অসৎ ও ছিল না -- তখন কেবলমাত্র ভগবান শিবই ছিলেন। শিব ব্যতীত কারো সম্পর্কে এভাবে বলা হয়নি। শুধুমাত্র শিবের ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে -- "শিব এব কেবলঃ"। সুতরাং সৃষ্টির পূর্বে একমাত্র শিবই বর্তমান ছিলেন।
সেই নিরাকার, সর্বব্যাপী পরমব্রহ্ম অমর ও আদি, যিনি রামেরও উপাস্য আবার যিনি রাবনেরও উপাস্য। যিনি শান্ত সদাশিব, যিনি অশান্ত রুদ্র, যিনি অজ্ঞানীর জ্ঞান, সেই তাঁকে একবার পাবার আশায় যুগ থেকে যুগে মানবকুল হিমালয়কে অতিক্রম করে চলেছেন মানস সরোবর ও কৈলাসে।
মর্তলোকের সীমান্তে দন্ডায়মান হয়ে মানুষ অমরত্বের সন্ধানে, অমৃতের পুত্র কন্যাগন অমর্ত্যলোকের দ্বারে যাওয়ার বাসনায় মগ্ন থাকেন -- তুষারসমাকীর্ণ যে স্থানে মহাদেব বাস করেন বলে বিশ্বাস, যে পথে স্বয়ং মহাদেব মহামায়াকে নিয়ে চলাচল করেন। সম্মুখে অমরাবতী কৈলাস আর পিছনে যাত্রীরা দীর্ঘ পথে মৃত্যুকে ত্যাগ করে এসেছেন। অসত্যের থেকে সত্যকে, ভয় কে জয় করেছেন, তাই জয়ধ্বনি বিঘোষিত হয় --‘অসতো মা সদগময়,
তমসো মা জ্যোতির্গময়,
মৃত্যোর্মাহমৃতং গময়।
আবিরাবির্ম এধি,
রুদ্র যত্তে দক্ষিণং মুখং তেন মাং পাহি নিত্যম্।’
— আমাদেরকে অসত্য হতে সত্যে নিয়ে যাও, আমাদের আঁধার হতে জ্যোতিতে নিয়ে যাও, আমাদের মৃত্যু হতে অমৃতে নিয়ে যাও, আমাদের নিকট আবির্ভূত হও, আবির্ভূত হও আমাদের নিকট আগমন কর। হে রুদ্র, তোমার যে করুণাপূর্ণ দক্ষিণমুখ, তদ্দ্বারা আমাদেরকে নিত্য রক্ষা কর।
হাজার হাজার বছর ধরে সনাতন হিন্দু ধর্ম 'সর্বপথ সম্ভব' দর্শনে বিশ্বাস করে।
নানা মত সঙ্গে নিয়ে চলাই সনাতন হিন্দুর ঐতিহ্য।
সনাতন হিন্দু ধর্ম বলে -- 'সত্য একটাই'।
সনাতন হিন্দু ধর্ম বলেছেন --
'সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ
সর্বে সন্তু নিরাময়ঃ
সর্বে ভদ্রাণি পশ্যন্তু মা কশ্চিদ্ দুঃখভাগভবেৎ।'
--- সবাই সুখী হোক, সবাই হোক নীরোগ, সবার মঙ্গল হোক, কেউ যেন দুঃখ না পায়।
সনাতন হিন্দু কখনও বলেনি শুধু হিন্দুরা সুখে থাক, সনাতন ধর্ম চেয়েছে সকলকে সুখী রাখতে।
সনাতন হিন্দুরা কখনও কোনও মতকে আক্রমণ করেনি, পৃথিবীর কোনও ধর্মীয় সমাজকে তলোয়ার নিয়ে আঘাত করেনি।
সম্প্রসারণবাদ ভারতের রক্তে নেই।
সনাতন হিন্দু দেশের সমাজ 'বসুধৈব কুটুম্বকম' আদর্শ নিয়েই বাঁচে।
আমাদের গর্ব করা উচিত আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে। মহামারী থেকে বাঁচতে, রোগের জ্বালা থেকে সকলকে সুস্থ্য হয়ে উঠতে, করোনার মৃত্যুভ্রুকুটি থেকে বাঁচতে, মৃত্যুর অন্ধকারকে মুছে দিতে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিজেদের প্রয়াসে আলো জ্বালাতে বলেছেন।
আসলে তিনি আমাদের হৃদয়ে সঞ্জীবনী আলোকবর্তিকা জ্বালাতে বলেছেন।
আমাদের মৃত্যুঞ্জয়ী হতে বলেছেন।
সকলকে সত্য ও সুন্দরের প্রতিভূ স্বরূপ শিব হতে বলেছেন।
সকলে বলুন --- আমরাই তো অমৃতের পুত্র, আমরাই শিব -- শিবোহং, শিবোহং, শিবোহং, শিবোহং, শিবোহং, শিবোহং।
লিখেছেনঃ Prithwish Ghosh
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন