গুরুর যে বিরাট মহিমা তা বলে শেষ করা যায় না। গুরুর মহিমা সম্বন্ধে একটি গল্প বলি --
এক ভক্ত নিষ্ঠাসহকারে প্রাণ দিয়ে তাঁর গুরুকে সেবা করত। কিন্তু ভক্তের আয়ু শেষ হয়ে গেলে যমদূত তাকে নিতে আসে। ভক্ত বুঝতে পেরে অনবরত গুরুবন্দনা করতে থাকে। ভক্ত গুরুবন্দনায় রত থাকা অবস্থাতেই যমদূত তাকে যমের কাছে ধরে নিয়ে এসেছে। যম তাকে দেখে চমকে উঠলেন। তাঁর দূতকে তিনি বললেন -- “এ তুমি কী করেছ? যে গুরুবন্দনা করছে তাকে তুমি কেন আনলে?”
এই বলে যমও তার সঙ্গে গুরুবন্দনা শুরু করে দিলেন, কারণ গুরু একজনই।
গুরুবন্দনার রহস্য হল যে একজন যদি গুরুবন্দনা করে তবে সঙ্গে সঙ্গে যারা গুরুবরণ করেছে তাদেরও গুরুবন্দনা করতে হয়। নয়তো গুরুর প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করা হয়।
যম খুব বিপদে পড়ে গেলেন। এদিকে লোকটির আয়ুও শেষ হয়ে গেছে, সুতরাং তাকে নিতেই হবে। আবার ওদিকে সে এমনভাবে গুরুবন্দনা করে চলেছে যে তাকে তিনি ছুঁতেও পারছেন না। আবার, যদি তাকে আয়ু দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সংসারে, তাহলেও তাকে ভূত ভেবে সমাজে আত্মীয়-পরিজনেরা কেউ গ্রহণ করতে পারবে না।
নিরুপায় হয়ে তিনি তখন বিষ্ণুর কাছে গেলেন পরামর্শ নিতে এবং সাহায্য চাইতে।
বিষ্ণু বললেন -- “আমি তো কিছুই করতে পারব না, কারণ আমিই তো জগতে গুরুবাদ রেখে এসেছি। সেটি তো তাহলে অপবাদে পরিণত হবে। আমি নিজেও তো সেই এক গুরুকেই বন্দনা করছি”।
বিষ্ণু কোন উপায় না দেখে তাঁর গুরু মহেশ্বরকে অহ্বান করলেন। মহেশ্বর বিষ্ণুর কাছে উপস্থিত হয়েই গুরুবন্দনা শুরু করলেন। বিষ্ণুও তাঁর গুরু মহেশ্বরকে বন্দনা করতে লাগলেন।
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রবর্তিত নিয়ম সবকিছুই রয়েছে এই গল্পটির মধ্যে। এই গল্পটি সবাই মনে রাখার মত। এই নিয়মগুলি এতই তাৎপর্যপূর্ণ যে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরও ভঙ্গ করতে পারেন না।
গুরু শুধু ব্যক্তি নয় এবং নাম-রূপ বা ভাবও নয় তিনি 'বিশুদ্ধবোধের বিগ্রহ'। ভিন্ন ভিন্ন নামে এই এক গুরুকেই আমরা সকলে সেবা করে যাচ্ছি। এই গুরুকেই ইষ্ট, মা, আত্মা, ব্রহ্ম বা ভগবান বলে কেউ, আবার কেউ বলে রাম বা কৃষ্ণ।
গুরু মানে মহৎ, প্রতিটি উন্নতি এই গুরুই করছেন। অথচ তাঁর কাছ থেকে পেয়েও সবাই তাঁকেই অবজ্ঞা করে। গুরু হলেন অখণ্ড সত্তা, শক্তি, জ্ঞান, আনন্দ ও প্রেম। এই গুরুর কাছ থেকেই সবাই সব কিছু পায়।
ভক্ত সেজন্য কারোকে অবজ্ঞা করে না। সে নিজে সব সহ্য করে কিন্তু অপরের দোষ বা ত্রুটি দেখে না।
জয় গুরু।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন