১৩ সেপ্টেম্বর ২০১২

"গুড়পুকুরের মেলা ও বিশ্বকর্মা পূজা"- ডা. সুব্রত ঘোষ


সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুরের মেলাসম্ভবত দ্বাদশ শতকের প্রথমদিকে এই মেলার সূচনাএই মেলার ইতিহাস ও উৎপত্তি সম্পর্কে কয়েকটি কিংবদন্তী প্রচলিত আছেগুড়পুকুর মূলত সাতক্ষীরা জেলার অন্তর্গত একটি ঐতিহাসিক স্থানসাতক্ষীরা এক সময় সুন্দরবনের মতোই বনবেষ্ঠিত ছিলবন কেটে বসত করার ফলে এখন বন অনেকটাই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছেএইসব এলাকার একটি নাম পাওয়া যায় বুড়নঅর্থাৎ ওই অঞ্চল যে জলাভমি ছিল, তার প্রমাণ এই নাম থেকেই পাওয়া যাচ্ছেমনসা মঙ্গল’ -এর বেহুলা লখিন্দরের কাহিনীও এই অঞ্চলকে স্পর্শ করেছেবেহুলা যখন সর্পদষ্ট মৃত স্বামীর লাশ কলার ভেলায় করে জলপথে যাচ্ছিলেন, পথিমধ্যে যে ঘাটে তাঁর দেখা হয়েছিল গোদা পাটনির সঙ্গে, সেই গোদা পাটনির নামে গড়ে ওঠে গোদাঘাটনামে একটি গ্রামতার এক মাইল দূরে আরেকটি জায়গার নাম হরো রেহুলার ঝোড়সর্পসঙ্কুল সাতক্ষীরায় বেহুলা লখিন্দরের কাহিনী নিয়ে প্রতি বছরই মনসা পূজাঅনুষ্ঠিত হয়এসব এলাকায় প্রতি বছরই সর্পদংশনে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়এখানকার অধিবাসীদের বিশ্বাস, সর্পদেবঅ মনসাকে পূজা করলে সাপের উপদ্রব থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শেষ তারিখে গুড়পুকুরের ধারে যে বিশাল বটবৃক্ষ ছিল, তার বাঁধানো চাতালে মনসা পূজা হয়সেই উপলক্ষে হয় গুড়পুকুরের মেলাগুড়পুকুরের সেই প্রাচীন বটবৃক্ষটি এখন আর নেইতদস্থলে একটি নতুন বটগাছ রোপণ করা হয়েছেগুড়পুকুর কেন নামকরণ করা হয়েছে, এ নিয়েও একাধিক কিংবদন্তী প্রচলিত রয়েছেগুড়পুকুর নামক এই পুকুরে নাকি একসময় মোটেই পানি থাকত নাতখন স্থানীয় কেউ স্বপ্ন দেখেন, ওই পুকুরে একশ ভাড় গুড় ঢাললে পানি উঠবে এবং কখনো শুকাবে নাস্বপ্ন অনুযায়ী পুকুরে গুনে গুনে একশ ভাড় গুড় ঢালা হলোআর অমনি পুকুরের তলদেশ থেকে পানি উঠে পুকুরটি কানায় কানায় ভরে গেলোপলাশপোল এলাকার প্রবীণদের কাছ থেকে আর এক রকম কিংবদন্তী শোনা যায়এখানকার অত্যন্ত প্রবীণ পরিবারদের অন্যতম খান চৌধুরী পরিবারএই পরিবারের পূর্বপুরুষেরা ব্রহ্মণ ছিলেন এবং তারা ছিলেন গৌর বর্ণের অধিকারীউত্তরাধিকার সূত্রে গৌরবর্ণের অধিকারী ছিলেন তারাওগৌরবর্ণের অধিকারী খান চৌধুরীরা ওই পুকুরের মালিক বিধায় পুকুরের নাম হয়েছে গুড়পুকুরগৌড়লোক মুখে ঘুরতে ঘুরতে গুড়েরূপান্তরিত হয়েছে বলে মনে করা হয়গুড়পুকুরের মেলাটা মূলত মনসা পূজা’ -কে কেন্দ্র করেই কারো কারো মতে ওটা হবে বিশ্বকর্মা পূজাপঞ্জিকা অনুযায়ী ভাদ্রের শেষ তারিখে বিশ্বকর্মা পূজা হওয়াই সঙ্গতকেননা মনসা পূজা হয় শ্রাবণ সংক্রান্তিতে অর্থাৎ শ্রাবণের শেষ তারিখেগুড়পুকুরের মেলার স্থানীয় উচ্চারণ গুড়পুকুরির মিলাসাতক্ষীরা জেলার সবচেয়ে বড় ও উল্লেখযোগ্য এই মেলাভাদ্র মাসের শেষ তারিখে মনসা পূজা উপলক্ষে গুড়পুকুর থেকে ইটাগাছা-কামাননগর পর্যন্ত বিশাল এলাকা জুড়ে মেলা বসেমূল মেলা এক দিনের হলেও তা একমাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়এই মেলার অন্যতম প্রদান বৈশিষ্ট হলো, বিভিন্ন প্রজাতির আম-জাম-লিচু-কাঠালের কলম ও চারার ব্যাপক সমারোহএছাড়া আরও অনেক ফল-ফলারীর চারাও উঠে এখানেকলমের চারার দোকানগুলো বসে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়েআরও একটি ুজুনস আমদানি হয় এখানেআম-জাম-সেগুন গাছের আসবাবপত্র তৈরীর কাঠ ও তৈরী আসবাবপত্রএই কাঠ বিশেষকরে সুন্দবন এলাকা থেকে আসেআগে কাঠের তৈরী আসবাবপত্র এই মেলায় আসত নদীপথেএগুলো আসত ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল প্রভৃতি অঞ্চল থেকেতখন সাতক্ষীরার প্রাণ-সায়ার খালে প্রাণের ¯্রােত বইতএখন সে খাল শুকিয়ে যাওয়ায় সেসব পণ্যের আমদানির একমাত্র মাধ্যম স্থলপথমেলার বিশেষ একটি আকর্ষন ছিল বিনোদনমূলক ব্যবস্থাএগুলোর মধ্যে নাগরদোলা, যাদু, পুতুলনাচ, মৃত্যুকূপ, সার্কাস, যাত্রাগান উল্লেখযোগ্য

মূল শহরের কোলহল থেকে একটু দূরে সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কে পলাশপোল স্কুলের উত্তর-পশ্চিম কোণের বটতলায় গুড়পুকুরের ঠিক পাশেই সংরক্ষিত জায়গায় প্রায় তিনশ বছরের ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুরের মেলা মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের মনসা পূজাকে কেন্দ্র করে হলেও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এক মিলনমেলায় পরিনত হয়ে ওঠেআগেকার দিনে মেলা উপলক্ষে আত্মীয়-স্বপন চলে আসত সাতক্ষীরায়বাড়ি বাড়ি পড়ে যেত সাজ সাজ রবঈদ, দূর্গাপূজা কিংবা অন্যান্য অনেক উল্লেখযোগ্য পার্বনকে ছাপিয়ে এ মেলাই হয়ে উঠত সকলের মিলন মেলা- প্রাণের উৎসবেবিভিন্ন ব্যবসায়ীরাও সারা বছর প্রস্তুতি নিত এই মেলাকে ঘিরেকাঠের মিস্ত্রীরা এই মেলাকে ঘিরে সারাবছর ধরে তৈরী করত কাঠের আসবাবপত্র, কামার রা সারা বছর গায়ের ঘাম ঝরাত এই মেলাকে উপলক্ষ করেইআবাল বৃদ্ধবনিতা সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকত এই মেলার জন্যকোন এক সময় কলকাতা, লন্ডন প্রভৃতি শহরসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও ব্যবসায়ীরা আসত এই মেলায় অংশগ্রহনের জন্যবর্তমানে মেলার মূলস্থানের আশেপাশে স্থায়ী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা, শহরের প্রধান প্রধান সড়কের ফুটপাত বেদখল হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে মেলাটি তার জৌলুস হারিয়ে ফেলেছেএই সব ছোটখাট সমস্যাকে অতিক্রম করে মেলার চূড়ান্ত সমাধি রচিত হয় ২০০২ সালেস্থানীয় প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী শক্তিরা আগে থেকেই মেলাটি বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করে আসছিল২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এরই অংশ হিসেবে মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে একটি সিনেমা হলে শো ও স্টেডিয়ামে সার্কাস চলাকালীন দুইটি শক্তিশালী বোমার বিষ্ফোরণ ঘটায়বোমা হামলায় ৩ জন নিহত হয়আহত হয় নারী-শিশুসহ কয়েক শতাধিক মানুষঅনেকেই পঙ্গু হয়ে এখনো সেই হামলার দুর্বিষহ স্মৃতি বহন করে বেড়াচ্ছেবর্বর এই হামলার পর থেকে মেলাটি এক প্রকার বন্ধই হয়ে যায়পূজা আর দায়সারাভাবে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়েই সাতক্ষীরার সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী মেলাটি পালিত হতে থাকেমেলার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো মেলাটি বিশেষ কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে আন্তঃধর্মীয় ভ্রাতৃত্ববোধের মিলনমেলায় পরিণত হতোগুড়পুকুরের মেলা কেবল একটি পূজা নয় মাত্র সাতক্ষীরাবাসীয় চিরায়ত ঐতিহ্যের ধারক ও বাহকব্যাক্তি-স্থান-কাল-পাত্রকে ছাড়িয়ে এ মেলার আবেদন সার্বজনীনআমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয় স্থানীয় জেলা প্রশাসন এবারে মাসব্যাপী জাকজমকভাবে মেলাটি আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেগুড়পুকুরের মেলা আগের জৌলুসে ফিরে আসুক এটাই কাম্য

বারমাসে তের পার্বনের অন্যতম প্রধান পূজা বিশ্বকর্মাবিষ্ণু পুরাণ মতে বিশ্বকর্মা একজন দেবশিল্পীবেদে পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বকর্মা বলা হয়েছেতাঁর পিতার নাম প্রভাষপ্রভাষ হচ্ছেন অষ্ট বসুর মধ্যে সপ্তম বসুঅষ্টবসু মানে আটজন গণদেবতাতাঁর হলেনঃ ধর, ধ্রুব, সোম, অনিল, অনল, প্রত্যুষ, প্রভাষ ও দ্যুএই অষ্টবসু দক্ষরাজার কন্যা বসুর পুত্রধর্মের ঔরসে বসু ভার্য্যার গর্ভের সন্তানতবে শাস্ত্রে নয় শ্রেণী গণদেবতার উল্লেখ রয়েছেঃ ১. আদিত্য ১২ জন, ২. ডবশ্বদেব ১০ জন, ৩. বসু ৮ জন, ৪. তুষিত ৩৬ জন, ৫. আভাশ্বর. ৬৪ জন, ৬. অনিল ৪৯ জন, ৭. মহারাজিক ২২০ জন, ৮. সাধ্য ১২ জন ও ৯. রুদ্র ১১ জননয় শ্রেণীর গণদেবতা সকলেই শিবের অনুচরএই নয় শ্রেণীর গণদেবতার নেতা হচ্ছেন গনেশগণদেবতারা গণপর্বত কৈলাসে বসবাস করেনবিশ্বকর্মার মাতার নাম যোগসিদ্ধাযোগসিদ্ধা হচ্ছেন দেবগুরু বৃহস্পতির বোনবৃহস্পতি ও শুক্র দুই ভাইব্রহ্মা তনয় কশ্যপ ঋষির ঔরসে অদিতির গর্ভের সন্তান বৃহস্পতি এবং কশ্যপ ঋষির ঔরসে দিতির গর্ভের সন্তান শুক্রবৃহস্পতি দেবতাদের গুরু এবং শুক্র অসুরদের গুরুদেবতা ও অসুর কোন পৃথক জাতি নয়মহাভারত ও পুরাণ মতে তারা একই পিতার ঔরসজাত সন্তানকশ্যপের অপর পতœী দনুর গর্ভজাত সন্তান দানবদেবতাদের সন্তান প্রসব একটি জ্যোতি মাত্রএই জ্যোতি নাভি স্পর্শ হলেই সঙ্গে সঙ্গে সন্তান প্রসব হয়আর তৎকালীন ব্রাহ্মনদের সন্তান হতে সময় লাগত একমাস এবং ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রের সন্তান প্রসব হতে সময় ক্ষেপন হয় ১০ মাস ১০ দিনতবে ব্রাহ্মনদের বর্তশান সন্তান প্রসব প্রক্রিয়া ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রের অনুরূপঋকবেদে উল্লেখ আছে যে, বিশ্বকর্মা সর্বদর্শী ভগবানতাঁর চক্ষু, মুখমন্ডল, বাহু ও পদদ্বয় সর্বদিক ব্যাপিয়া রয়েছেবাহু ও পদদ্বয়ের সাহায্যে তিনি স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল অর্থাৎ ত্রিভবন নির্মাণ করেছেনবিশ্বকর্মা শিল্প সমূহের প্রকাশক, অলংকারের ¯্রষ্টা এবং দেবতাদের বিমান ও রথ নির্মাতাতাঁর অশেষ কৃপায় মানবজাতি শিল্প কলায় পারদর্শিতা লাভ করেছেউপবেদ, স্থাপত্যবেদ এর রচয়িতা এবং চতুঃষষ্ঠী কলার অধিষ্ঠাতা হচ্ছেন বিশ্বকর্মাতিনি প্রাসাদ, ভবন, উদ্যান প্রভৃতির শিল্প প্রজাপতিবিশ্বকর্মা কেবল দেবশিল্পীউ নন, দেবতার অস্ত্রাদিও প্রস্তুত করেছেনসকল আগ্নেয়াস্ত্র তাঁরই নির্মিতমহাভারত মতে তিনি শিল্পের শ্রেষ্ঠকর্তা, সহ¯্র শিল্পের আবিস্কারক এবং সর্বপ্রকার কারুকার্য নির্মাতাপুরাণ অনুসাওে বিশ্বকর্মা রাক্ষসপুরী লঙ্কা নগরীর নির্মাতানল নামধারী বানর বিশ্বকর্মার পুত্রত্রেতাযুগের অবতার রামচন্দ্র সমুদ্রের সেতু বন্ধান নির্মাণকালে বিশ্বকর্মা নল বানরকে সৃষ্টি করেছিলেনপুরাণের কল্পনা অনুসারে নলের জন্মকালে বিশ্বকর্মাও বানর ছিলেনপরবর্তীকালে বিশ্বকর্মার যে মূর্তিটি পরিচিত হয়েছে, সেটি ছিল হস্তীবাহনপক্ষান্তরে হরপ্পা সংস্কৃতির শীলমোহরে হাতীর চিহ্ন বহুবারই পাওয়া গিয়েছেবিশ্বকর্মা দেবতাদের পুস্পক রথের নির্মাতা, আগ্নেয়াস্ত্রের ¯্রষ্টা, শ্রীবিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিবের ত্রিশূল, লক্ষ্মীর কোষাধ্যক্ষ কুবেরের কুবের পাশ, কার্তিক বল, পঞ্চপানডবের ইন্দ্রপ্রস্থ নগরী তৈরী এবং শ্রী ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ জগন্নাথের বিগ্রহ নির্মাতা সহ¯্র শিল্প বিদ্যার অধিকারী বিশ্বকর্মা যবিষ্ঠ বা অগ্নিরূপে কথিততাঁর হস্তীবাহন মূর্তির হাতে মশালও রয়েছে হাতুরীর সঙ্গে

বিশ্বকর্মা সৃষ্টিশক্তির রূপক নামতিনি ধাতা, বিশ্ব দ্রষ্টা ও প্রজাপতিতিনি পিতা, সর্বজ্ঞ দেবতাদের নাম দাতা এবং মর্ত্যজীবের অনধিগম্যবিশ্বকর্মা সর্বমেধ যজ্ঞে নিজেকে নিজের কাছে বলি দিয়েছেনতিনি বাচস্পতি, মনোজব, বদান্য, কল্যাণ কর্মা ও বিধাতাকোন এক পুরাণ মতে বিশ্বকর্মা বৈদিক ত্বষ্টা দেবতাদের কর্মশক্তিও আত্মসাৎ করেছিলেনএইজন্য তিনি ত্বষ্টা নামেও অভিহিতবৈদিক দেবতা ত্বষ্টার বিভিন্ন গুণ ছিলত্বষ্টা, বিশ্বকর্মা এবং বিস্মৃতনামা হরপ্পীয় শিল্প দেবতা একাকার হয়ে মিলেমিশে গিয়েছেবিশ্বকর্মা নিজের কন্যা সজ্ঞাকে সূর্য্যরে সঙ্গে বিবাহ দেনেরামায়ণ ও মহাভারত মতে সূর্য হচ্ছে কশ্যপ ঋষির ঔরসে অদিতির গর্ভের সন্তানঅদিতির নাম অনুসারে সূর্যের আরেক নাম আদিত্যসজ্ঞা সূর্য্যরে প্রখর তাপ সহ্য করতে পারেন নাই, তাই সজ্ঞার পিতা বিশ্বকর্মা শান চক্র স্থাপন করে সূর্য্যওে উজ্জ্বলতার এক অষ্টমাংশ কর্তন করেনএই কর্তিত অংশ পৃথিবীর উপর পতিত হলে উক্ত অংশের দ্বারা বিশ্বকর্মা দেবতাদের বিভিন্ন অস্ত্র তৈরী করে দিয়েছেনবিশ্বকর্মা পূজা ভাদ্র সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয়ভাদ্র সংক্রান্তিতেই কেন তার পূজা করা হয় এ সম্পর্কে বৃহৎ সংহিতাতে উল্লেখ রয়েছে, গ্রীষ্মের শেষে সূর্য মেঘ রচনা করে কর্মের মাধ্যমে বিশ্বের কর্ম অর্থাৎ কৃষি সংরক্ষণ করেনতাই তিনি হচ্ছেন বিশ্বকর্মাভাদ্র মাসের শেষের দিকে বর্ষা শেষ হয়ে যায়তখন কৃষি কর্মের পূর্ণতা হয় এবং তখন কৃষকেরা ফসলের জন্য প্রতিক্ষা করেনতাই সেই কর্ম ক্ষান্তিতে অর্থাৎ ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে তাঁকে পূজা করে কৃতজ্ঞতা নিবেদন করেনএমতাবস্থায় দেখা যায়, বিশ্বকর্মা শুধু শ্রমিকের নয়, কৃষকদেরও উপাস্য দেবতাবিশ্বকর্মা শুধু দেবশিল্পী নন, তিনি মর্ত্যবাসী মানবদেরও শিল্প প্রজাপতিতাঁর আশীর্বাদে মর্ত্যবাসীগণ শিল্পকাজে যথেষ্ট পারদর্শী হয়েছেনতিনি বর্তমান শ্রীলংকা নগরীর নির্মাতা এবং পঞ্চপান্ডবের প্রসাদও নির্মাণ করেছেনতাই দেবশিল্পী বিশ্বকর্মাকে পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তারূপে আখ্যায়িত করা হয়েছেঋকবেদেও বিশ্বকর্মাকে সর্বদর্শী ভগবান বলা হয়েছে

(তথ্যসূত্রঃ হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন গ্রন্থাবলী)

লেখকঃ কলামিস্ট, সংগঠক, চিকিৎসক ও সমাজকর্মী
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।