সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুরের মেলা। সম্ভবত দ্বাদশ শতকের
প্রথমদিকে এই মেলার সূচনা। এই মেলার ইতিহাস ও উৎপত্তি সম্পর্কে কয়েকটি কিংবদন্তী প্রচলিত
আছে। গুড়পুকুর মূলত সাতক্ষীরা
জেলার অন্তর্গত একটি ঐতিহাসিক স্থান। সাতক্ষীরা এক সময় সুন্দরবনের মতোই বনবেষ্ঠিত ছিল। বন কেটে বসত করার ফলে
এখন বন অনেকটাই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। এইসব এলাকার একটি নাম পাওয়া যায় ‘বুড়ন’। অর্থাৎ ওই অঞ্চল যে জলাভ’মি ছিল, তার প্রমাণ এই নাম থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। ‘মনসা মঙ্গল’ -এর বেহুলা লখিন্দরের কাহিনীও এই অঞ্চলকে স্পর্শ করেছে। বেহুলা যখন সর্পদষ্ট মৃত স্বামীর লাশ কলার
ভেলায় করে জলপথে যাচ্ছিলেন, পথিমধ্যে যে ঘাটে তাঁর
দেখা হয়েছিল গোদা পাটনির সঙ্গে, সেই গোদা পাটনির নামে
গড়ে ওঠে ‘গোদাঘাট’ নামে একটি গ্রাম। তার এক মাইল দূরে আরেকটি জায়গার নাম হরো ‘রেহুলার ঝোড়’। সর্পসঙ্কুল সাতক্ষীরায় বেহুলা লখিন্দরের কাহিনী নিয়ে প্রতি বছরই ‘মনসা পূজা’ অনুষ্ঠিত হয়। এসব এলাকায় প্রতি বছরই
সর্পদংশনে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। এখানকার অধিবাসীদের বিশ্বাস, সর্পদেবঅ মনসাকে পূজা করলে সাপের উপদ্রব থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। প্রতি বছর ভাদ্র মাসের
শেষ তারিখে গুড়পুকুরের ধারে যে বিশাল বটবৃক্ষ ছিল, তার বাঁধানো চাতালে মনসা পূজা হয়। সেই উপলক্ষে হয় গুড়পুকুরের মেলা। গুড়পুকুরের সেই প্রাচীন বটবৃক্ষটি এখন আর
নেই। তদস্থলে একটি নতুন
বটগাছ রোপণ করা হয়েছে। গুড়পুকুর কেন নামকরণ করা হয়েছে, এ নিয়েও একাধিক
কিংবদন্তী প্রচলিত রয়েছে। গুড়পুকুর নামক এই পুকুরে নাকি একসময় মোটেই পানি থাকত না। তখন স্থানীয় কেউ স্বপ্ন
দেখেন, ওই পুকুরে একশ ভাড় গুড় ঢাললে পানি উঠবে এবং
কখনো শুকাবে না। স্বপ্ন অনুযায়ী পুকুরে গুনে গুনে একশ ভাড় গুড় ঢালা হলো। আর অমনি পুকুরের তলদেশ থেকে পানি উঠে পুকুরটি
কানায় কানায় ভরে গেলো। পলাশপোল এলাকার প্রবীণদের কাছ থেকে আর এক রকম কিংবদন্তী শোনা যায়। এখানকার অত্যন্ত প্রবীণ
পরিবারদের অন্যতম খান চৌধুরী পরিবার। এই পরিবারের পূর্বপুরুষেরা ব্রহ্মণ ছিলেন এবং তারা ছিলেন গৌর
বর্ণের অধিকারী। উত্তরাধিকার সূত্রে গৌরবর্ণের অধিকারী ছিলেন তারাও। গৌরবর্ণের অধিকারী খান চৌধুরীরা ওই পুকুরের
মালিক বিধায় পুকুরের নাম হয়েছে ‘গুড়পুকুর’। ‘গৌড়’ লোক মুখে ঘুরতে ঘুরতে ‘গুড়ে’ রূপান্তরিত হয়েছে বলে মনে করা হয়। গুড়পুকুরের মেলাটা
মূলত ‘মনসা পূজা’ -কে কেন্দ্র করেই কারো কারো মতে ওটা হবে ‘বিশ্বকর্মা পূজা’। পঞ্জিকা অনুযায়ী ভাদ্রের শেষ তারিখে বিশ্বকর্মা পূজা হওয়াই সঙ্গত। কেননা মনসা পূজা হয়
শ্রাবণ সংক্রান্তিতে অর্থাৎ শ্রাবণের শেষ তারিখে। গুড়পুকুরের মেলার স্থানীয় উচ্চারণ ‘গুড়পুকুরির মিলা’। সাতক্ষীরা জেলার সবচেয়ে বড় ও উল্লেখযোগ্য এই মেলা। ভাদ্র মাসের শেষ তারিখে
মনসা পূজা উপলক্ষে গুড়পুকুর থেকে ইটাগাছা-কামাননগর পর্যন্ত বিশাল এলাকা জুড়ে মেলা বসে। মূল মেলা এক দিনের
হলেও তা একমাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই মেলার অন্যতম প্রদান বৈশিষ্ট হলো, বিভিন্ন প্রজাতির আম-জাম-লিচু-কাঠালের কলম ও চারার ব্যাপক সমারোহ। এছাড়া আরও অনেক ফল-ফলারীর
চারাও উঠে এখানে। কলমের চারার দোকানগুলো বসে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। আরও একটি ুজুনস আমদানি হয় এখানে। আম-জাম-সেগুন গাছের
আসবাবপত্র তৈরীর কাঠ ও তৈরী আসবাবপত্র। এই কাঠ বিশেষকরে সুন্দবন এলাকা থেকে আসে। আগে কাঠের তৈরী আসবাবপত্র
এই মেলায় আসত নদীপথে। এগুলো আসত ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল প্রভৃতি অঞ্চল থেকে। তখন সাতক্ষীরার প্রাণ-সায়ার খালে প্রাণের ¯্রােত বইত। এখন সে খাল শুকিয়ে যাওয়ায় সেসব পণ্যের আমদানির একমাত্র মাধ্যম
স্থলপথ। মেলার বিশেষ একটি আকর্ষন ছিল বিনোদনমূলক ব্যবস্থা। এগুলোর মধ্যে নাগরদোলা, যাদু, পুতুলনাচ, মৃত্যুকূপ, সার্কাস, যাত্রাগান উল্লেখযোগ্য।
মূল শহরের কোলহল থেকে একটু দূরে সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ
সড়কে পলাশপোল স্কুলের উত্তর-পশ্চিম কোণের বটতলায় গুড়পুকুরের ঠিক পাশেই সংরক্ষিত জায়গায়
প্রায় তিন’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী গুড়পুকুরের মেলা মূলত
হিন্দু সম্প্রদায়ের মনসা পূজাকে কেন্দ্র করে হলেও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এক মিলনমেলায়
পরিনত হয়ে ওঠে। আগেকার দিনে মেলা উপলক্ষে আত্মীয়-স্বপন চলে আসত সাতক্ষীরায়। বাড়ি বাড়ি পড়ে যেত
সাজ সাজ রব। ঈদ, দূর্গাপূজা কিংবা অন্যান্য অনেক উল্লেখযোগ্য
পার্বনকে ছাপিয়ে এ মেলাই হয়ে উঠত সকলের মিলন মেলা- প্রাণের উৎসবে। বিভিন্ন ব্যবসায়ীরাও
সারা বছর প্রস্তুতি নিত এই মেলাকে ঘিরে। কাঠের মিস্ত্রীরা এই মেলাকে ঘিরে সারাবছর ধরে তৈরী করত কাঠের
আসবাবপত্র, কামার রা সারা বছর গায়ের ঘাম ঝরাত এই মেলাকে
উপলক্ষ করেই। আবাল বৃদ্ধবনিতা সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকত এই মেলার জন্য। কোন এক সময় কলকাতা,
লন্ডন প্রভৃতি শহরসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও ব্যবসায়ীরা
আসত এই মেলায় অংশগ্রহনের জন্য। বর্তমানে মেলার মূলস্থানের আশেপাশে স্থায়ী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান
গড়ে ওঠা, শহরের প্রধান প্রধান সড়কের ফুটপাত বেদখল হওয়াসহ
বিভিন্ন কারণে মেলাটি তার জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে। এই সব ছোটখাট সমস্যাকে অতিক্রম করে মেলার
চূড়ান্ত সমাধি রচিত হয় ২০০২ সালে। স্থানীয় প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী শক্তিরা আগে থেকেই মেলাটি বন্ধ
করার জন্য বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করে আসছিল। ২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এরই অংশ হিসেবে মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে
একটি সিনেমা হলে শো ও স্টেডিয়ামে সার্কাস চলাকালীন দুইটি শক্তিশালী বোমার বিষ্ফোরণ
ঘটায়। বোমা হামলায় ৩ জন নিহত
হয়। আহত হয় নারী-শিশুসহ
কয়েক শতাধিক মানুষ। অনেকেই পঙ্গু হয়ে এখনো সেই হামলার দুর্বিষহ স্মৃতি বহন করে বেড়াচ্ছে। বর্বর এই হামলার পর
থেকে মেলাটি এক প্রকার বন্ধই হয়ে যায়। পূজা আর দায়সারাভাবে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়েই সাতক্ষীরার সবচেয়ে
ঐতিহ্যবাহী মেলাটি পালিত হতে থাকে। মেলার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো মেলাটি বিশেষ কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে
সীমাবদ্ধ না থেকে আন্তঃধর্মীয় ভ্রাতৃত্ববোধের মিলনমেলায় পরিণত হতো। গুড়পুকুরের মেলা কেবল
একটি পূজা নয় মাত্র সাতক্ষীরাবাসীয় চিরায়ত ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। ব্যাক্তি-স্থান-কাল-পাত্রকে
ছাড়িয়ে এ মেলার আবেদন সার্বজনীন। আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয় স্থানীয় জেলা প্রশাসন এবারে
মাসব্যাপী জাকজমকভাবে মেলাটি আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গুড়পুকুরের মেলা আগের জৌলুসে ফিরে আসুক এটাই
কাম্য।
বারমাসে তের পার্বনের অন্যতম প্রধান পূজা
বিশ্বকর্মা। বিষ্ণু পুরাণ মতে বিশ্বকর্মা একজন দেবশিল্পী। বেদে পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বকর্মা বলা
হয়েছে। তাঁর পিতার নাম প্রভাষ। প্রভাষ হচ্ছেন অষ্ট
বসুর মধ্যে সপ্তম বসু। অষ্টবসু মানে আটজন গণদেবতা। তাঁর হলেনঃ ধর, ধ্রুব,
সোম, অনিল, অনল, প্রত্যুষ, প্রভাষ ও দ্যু। এই অষ্টবসু দক্ষরাজার কন্যা বসুর পুত্র। ধর্মের ঔরসে বসু ভার্য্যার
গর্ভের সন্তান। তবে শাস্ত্রে নয় শ্রেণী গণদেবতার উল্লেখ রয়েছেঃ ১. আদিত্য ১২ জন, ২. ডবশ্বদেব ১০ জন, ৩. বসু ৮ জন,
৪. তুষিত ৩৬ জন, ৫. আভাশ্বর.
৬৪ জন, ৬. অনিল ৪৯ জন, ৭. মহারাজিক ২২০ জন, ৮. সাধ্য ১২ জন ও ৯.
রুদ্র ১১ জন। নয় শ্রেণীর গণদেবতা সকলেই শিবের অনুচর। এই নয় শ্রেণীর গণদেবতার নেতা হচ্ছেন গনেশ। গণদেবতারা গণপর্বত
কৈলাসে বসবাস করেন। বিশ্বকর্মার মাতার নাম যোগসিদ্ধা। যোগসিদ্ধা হচ্ছেন দেবগুরু বৃহস্পতির বোন। বৃহস্পতি ও শুক্র দুই
ভাই। ব্রহ্মা তনয় কশ্যপ
ঋষির ঔরসে অদিতির গর্ভের সন্তান বৃহস্পতি এবং কশ্যপ ঋষির ঔরসে দিতির গর্ভের সন্তান
শুক্র। বৃহস্পতি দেবতাদের
গুরু এবং শুক্র অসুরদের গুরু। দেবতা ও অসুর কোন পৃথক জাতি নয়। মহাভারত ও পুরাণ মতে তারা একই পিতার ঔরসজাত
সন্তান। কশ্যপের অপর পতœী দনুর গর্ভজাত সন্তান দানব। দেবতাদের সন্তান প্রসব
একটি জ্যোতি মাত্র। এই জ্যোতি নাভি স্পর্শ হলেই সঙ্গে সঙ্গে সন্তান প্রসব হয়। আর তৎকালীন ব্রাহ্মনদের সন্তান হতে সময় লাগত
একমাস এবং ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রের সন্তান প্রসব হতে সময় ক্ষেপন
হয় ১০ মাস ১০ দিন। তবে ব্রাহ্মনদের বর্তশান সন্তান প্রসব প্রক্রিয়া ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রের অনুরূপ। ঋকবেদে উল্লেখ আছে যে, বিশ্বকর্মা সর্বদর্শী ভগবান। তাঁর চক্ষু, মুখমন্ডল, বাহু ও পদদ্বয় সর্বদিক ব্যাপিয়া রয়েছে। বাহু ও পদদ্বয়ের সাহায্যে
তিনি স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল অর্থাৎ ত্রিভ’বন নির্মাণ করেছেন। বিশ্বকর্মা শিল্প সমূহের প্রকাশক, অলংকারের ¯্রষ্টা এবং দেবতাদের বিমান ও রথ নির্মাতা। তাঁর অশেষ কৃপায় মানবজাতি
শিল্প কলায় পারদর্শিতা লাভ করেছে। উপবেদ, স্থাপত্যবেদ এর রচয়িতা
এবং চতুঃষষ্ঠী কলার অধিষ্ঠাতা হচ্ছেন বিশ্বকর্মা। তিনি প্রাসাদ, ভবন, উদ্যান প্রভৃতির শিল্প প্রজাপতি। বিশ্বকর্মা কেবল দেবশিল্পীউ
নন, দেবতার অস্ত্রাদিও প্রস্তুত করেছেন। সকল আগ্নেয়াস্ত্র তাঁরই নির্মিত। মহাভারত মতে তিনি শিল্পের
শ্রেষ্ঠকর্তা, সহ¯্র শিল্পের আবিস্কারক এবং সর্বপ্রকার কারুকার্য নির্মাতা। পুরাণ অনুসাওে বিশ্বকর্মা রাক্ষসপুরী লঙ্কা
নগরীর নির্মাতা। নল নামধারী বানর বিশ্বকর্মার পুত্র। ত্রেতাযুগের অবতার রামচন্দ্র সমুদ্রের সেতু বন্ধান নির্মাণকালে
বিশ্বকর্মা নল বানরকে সৃষ্টি করেছিলেন। পুরাণের কল্পনা অনুসারে নলের জন্মকালে বিশ্বকর্মাও বানর ছিলেন। পরবর্তীকালে বিশ্বকর্মার
যে মূর্তিটি পরিচিত হয়েছে, সেটি ছিল হস্তীবাহন। পক্ষান্তরে হরপ্পা
সংস্কৃতির শীলমোহরে হাতীর চিহ্ন বহুবারই পাওয়া গিয়েছে। বিশ্বকর্মা দেবতাদের পুস্পক রথের নির্মাতা,
আগ্নেয়াস্ত্রের ¯্রষ্টা,
শ্রীবিষ্ণুর সুদর্শন চক্র, শিবের ত্রিশূল, লক্ষ্মীর কোষাধ্যক্ষ কুবেরের কুবের পাশ,
কার্তিক বল, পঞ্চপানডবের ইন্দ্রপ্রস্থ
নগরী তৈরী এবং শ্রী ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ জগন্নাথের বিগ্রহ নির্মাতা সহ¯্র শিল্প বিদ্যার অধিকারী বিশ্বকর্মা যবিষ্ঠ বা অগ্নিরূপে কথিত। তাঁর হস্তীবাহন মূর্তির
হাতে মশালও রয়েছে হাতুরীর সঙ্গে।
বিশ্বকর্মা সৃষ্টিশক্তির রূপক নাম। তিনি ধাতা,
বিশ্ব দ্রষ্টা ও প্রজাপতি। তিনি পিতা, সর্বজ্ঞ দেবতাদের নাম দাতা এবং মর্ত্যজীবের অনধিগম্য। বিশ্বকর্মা সর্বমেধ যজ্ঞে নিজেকে নিজের কাছে
বলি দিয়েছেন। তিনি বাচস্পতি, মনোজব, বদান্য, কল্যাণ কর্মা ও বিধাতা। কোন এক পুরাণ মতে বিশ্বকর্মা
বৈদিক ত্বষ্টা দেবতাদের কর্মশক্তিও আত্মসাৎ করেছিলেন। এইজন্য তিনি ত্বষ্টা নামেও অভিহিত। বৈদিক দেবতা ত্বষ্টার
বিভিন্ন গুণ ছিল। ত্বষ্টা, বিশ্বকর্মা এবং বিস্মৃতনামা হরপ্পীয় শিল্প
দেবতা একাকার হয়ে মিলেমিশে গিয়েছে। বিশ্বকর্মা নিজের কন্যা সজ্ঞাকে সূর্য্যরে সঙ্গে বিবাহ দেনে। রামায়ণ ও মহাভারত মতে
সূর্য হচ্ছে কশ্যপ ঋষির ঔরসে অদিতির গর্ভের সন্তান। অদিতির নাম অনুসারে সূর্যের আরেক নাম আদিত্য। সজ্ঞা সূর্য্যরে প্রখর
তাপ সহ্য করতে পারেন নাই, তাই সজ্ঞার পিতা বিশ্বকর্মা
শান চক্র স্থাপন করে সূর্য্যওে উজ্জ্বলতার এক অষ্টমাংশ কর্তন করেন। এই কর্তিত অংশ পৃথিবীর
উপর পতিত হলে উক্ত অংশের দ্বারা বিশ্বকর্মা দেবতাদের বিভিন্ন অস্ত্র তৈরী করে দিয়েছেন। বিশ্বকর্মা পূজা ভাদ্র
সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয়। ভাদ্র সংক্রান্তিতেই কেন তার পূজা করা হয় এ সম্পর্কে বৃহৎ সংহিতাতে
উল্লেখ রয়েছে, গ্রীষ্মের শেষে সূর্য মেঘ রচনা করে কর্মের
মাধ্যমে বিশ্বের কর্ম অর্থাৎ কৃষি সংরক্ষণ করেন। তাই তিনি হচ্ছেন বিশ্বকর্মা। ভাদ্র মাসের শেষের
দিকে বর্ষা শেষ হয়ে যায়। তখন কৃষি কর্মের পূর্ণতা হয় এবং তখন কৃষকেরা ফসলের জন্য প্রতিক্ষা
করেন। তাই সেই কর্ম ক্ষান্তিতে
অর্থাৎ ভাদ্র মাসের সংক্রান্তিতে তাঁকে পূজা করে কৃতজ্ঞতা নিবেদন করেন। এমতাবস্থায় দেখা যায়,
বিশ্বকর্মা শুধু শ্রমিকের নয়, কৃষকদেরও উপাস্য দেবতা। বিশ্বকর্মা শুধু দেবশিল্পী নন, তিনি মর্ত্যবাসী মানবদেরও শিল্প প্রজাপতি। তাঁর আশীর্বাদে মর্ত্যবাসীগণ শিল্পকাজে যথেষ্ট
পারদর্শী হয়েছেন। তিনি বর্তমান শ্রীলংকা নগরীর নির্মাতা এবং পঞ্চপান্ডবের প্রসাদও নির্মাণ করেছেন। তাই দেবশিল্পী বিশ্বকর্মাকে
পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তারূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ঋকবেদেও বিশ্বকর্মাকে সর্বদর্শী ভগবান বলা
হয়েছে।
(তথ্যসূত্রঃ হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন গ্রন্থাবলী)
লেখকঃ কলামিস্ট, সংগঠক, চিকিৎসক ও সমাজকর্মী।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন