আমাদের সনাতন ধর্মে একটিই ভগবান। তিনি পরমেশ্বর। তিনিই ব্রহ্ম, তিনি নিরাকার। কিন্তু, আমাদের অনেকের মনে খটকা লাগে যে আমাদের ধর্মে এত দেবদেবী কেন? তাহলে, তাকে সাকার বলি না কেন? তবে কার পূজো করা বেশি শ্রেয়? তখনি হয় গন্ডোগল। সবকিছু গুলিয়ে গিয়ে ভক্তিটাই চলে যায়। তার চেয়ে বরং ধীরে ধীরে এগোনই ভালো। প্রকৃত পক্ষে ঈশ্বর নিরাকার।কিন্তু, তিনি নানা রূপে নানা সময় নানা কার্য করেন। ঠিক যেমন বিদ্যুৎ। একই স্থান দিয়ে বাড়িতে এসে নানা কাজে লাগে। কখন পাখা, কখন আলো আবার কখন টিভি ইত্যাদিতে। আমাদের শাস্ত্রকারগন আমাদের এযুগের মানুষদের থেকে বহুগুনে উন্নত মস্তিষ্কসম্পন্ন ছিলেন। তাঁদের চিন্তা ও কল্পনা ও ব্যখ্যাশক্তিও ছিল অসাধারন। তাই তাঁরা বিভিন্ন রূপকের মাধ্যমে সমস্ত ধর্মকে ব্যখ্যা করেছিলেন।যেমন, ঠাকুর রামকৃষ্ণ মহাত্মা ছিলেন। তিনি তাঁর কথাবার্তার মাঝে ও তত্তকথা বোঝাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নানা উপমা দিতেন? কেন জানেন? কারন একমাত্র এতেই সহজে ধর্মকে বোঝা যায়। আর ঠিক তেমনই সেই যুগের মুনি ঋষিরা নানান উপমার ব্যবহারে ধর্মকথা শাস্ত্রে লিখে গেছেন। কিন্তু এটা মন থেকে মানুন যে তা কিন্তু সবটাই মানুষের উপকারের উদ্দেশ্যে। মনে করেন, একটি পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট আছে যেখান থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়। এখন সেই বিদ্যুৎ আপনার বাড়িতে একটি মেন পয়েন্ট থেকে এসে বাড়িতে পাখা চলে, আলো জ্বলে। এবার আপনিই বলেন পাখার কারেন্টটা বড়? নাকি আলোরটা? কোনটা আসল?
এই আমাদের ধর্মের আসল কথা। গোড়ার কথা। ঈশ্বর এক। একটাই শক্তি। একটাই উৎস। কিন্তু তার বিভিন্ন রূপে আত্মপ্রকাশ। কখন আলো জ্বালাতে চান তো কখন জল গরম করতে চান। তেমনি কখনো মা কালী রূপে বা শিব রূপে ধ্বংস করেন, কখনো বা বিষ্ণুরূপে পালন করেন। ব্রম্মারূপে সৃষ্টি করেন ইত্যাদি। রজগুণে যিনি বিষ্ণু তমগুণে তিনি শিব আবার স্বত্ব গুণে তিনিই ব্রহ্মা। কিন্তু উৎস এক। সেই পরব্রম্ম পরমাত্মা। তাই, ঈশ্বরকে নিরাকার বলা হয়েছে।