১২ মে ২০১৩

"সগুন সাকার উপাসনা ও রামানুজাচার্য্যের বিশিষ্ট অদ্বৈতবাদ"- জয় রায়


শ্রীশ্রী গীতার দ্বাদশ অধ্যায়ের প্রথম শ্লোকেই অর্জুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করেছেন যে, “নিরাকার ও সগুণ সাকার উপাসনার মধ্য শ্রেষ্ঠ কোন উপাসনা?” তাঁর উত্তরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে, সগুণ সাকার উপাসনাই শ্রেষ্ঠকারণ, নির্গুণ নিরাকার উপাসনা অত্যন্ত কঠিনসগুণ সাকার উপাসনাই ভক্তগণের নিকট অনেক প্রিয়

ভক্ত কে? তাঁর লক্ষণ কি? এই বিষয়েও দ্বাদশ অধ্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিস্তারিত বর্ণনা করেছেনএখানে ভগবান স্বাধীন স্বার্থশূন্য, নিলিপ্ত থেকেও ভক্তাধীন হয়েছেনএ কারণে ঈশ্বর সাধনায় ভক্ত হওয়া এবং ভক্তের উপাসনাই শ্রেষ্ঠ
         কারণ, ঈশ্বর সকল বাঁধা অতিক্রম করলেও ভক্তের নিকট ঠিকই বাঁধা পড়েন
  
এখানে, সগুন সাকার উপাসক হিসেবে মহাত্মা রামানুজাচার্য্যের একটি কাহিনী তুলে ধরা হলঃ-

                                 “ব্রহ্ম ও জীব স্বতন্ত্র। যেখানে, ব্রহ্ম এক, অদ্বিতীয় এবং সর্বব্যাপী; কিন্তু, জীব এক নয়, জীব বহু, প্রতি শরীরে বিভিন্ন- এটাই হচ্ছে রামানুজাচার্য্যের বিশিষ্ট অদ্বৈতবাদ।

অদ্বৈতবাদী রামানুজ বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ মতকে যেভাবে সাজিয়েছিলেন তা হলো- “অদ্বৈতবাদকে অস্বীকার করে নয়, স্বীকার করেই বলছি যে কালের সমুদ্রে যত স্বল্প সময়ই হোক আমার একটা অস্তিত্ব আছে এই পরিণামশীল জগতে। সমুদ্রের জগতে ঢেউয়ের অস্তিত্ব অস্বীকার করা যায় না, তার স্থিতিকাল যতটুকুই হোক।” মূলত, এ মতবাদই বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ। সেই রামানুজের কাহিনীটি এরূপঃ

“রামানুজ অদ্বৈতবাদী হলেও মূর্তিপূজা করতেন। তাঁর শিষ্যগণ স্বভাবতই একটু দ্বিধান্বিত ছিলেন গুরু মহারাজ এর উপর। কারণ, রামানুজ সকলকে শিক্ষা দিচ্ছেন অদ্বৈতবাদ আর নিজে চর্চা করছেন দ্বৈতবাদ। একদিন সকালে রামানুজ পূজায় বসেছেন, শীতের সকাল। এক শিষ্য তাঁর পূজার কাছে গিয়ে বসলো। ইচ্ছা এই বিষয়ে গুরুদেব এর কাছ থেকে নিঃসংশয় হবেন। গুরুদেব রামানুজ শিষ্যকে বললেন, “আগুন নিয়ে আসো”। শিষ্য দৌড়ে গিয়ে একটি জ্বলন্ত কাঠ নিয়ে আসলো। রামানুজ দেখে বললেন, “প্রজ্বলিত কাঠ কেন এনেছ? আগুন নিয়ে আসো”। শিষ্য বুঝতে পারলো না যে এ উপায় ছাড়া আর কিভাবে আগুন আনা সম্ভব?

রামানুজ বললেন, “দেখ, এই পৃথিবীর সর্বত্রই আগুন আছে। এই আগুনকে আমাদের কাজে লাগাতে হলে তাকে বসার আসন দিতে হয়, যেমন- কাঠ। ঐ কাঠে বসেই সে আমাদের প্রয়োজনীয় কাজ করে দেয়। সেরূপ ঈশ্বর সর্বত্রই আছন। তার কাছে আমাদের প্রার্থনা জানাতে হলে তাকে বসবার আসন দিতে হবে। তার বসবার আসন হল এই মূর্তি। এখানে বসেই তিনি আমার প্রার্থনা শুনে যা করার তাই করবেন।””

সগুন সাকার উপাসনা সম্পর্কে এর চেয়ে ভাল উদাহরণ আর কি হতে পারে???  

"জয় রায়"

Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।