শ্রীশ্রী গীতার দ্বাদশ অধ্যায়ের প্রথম শ্লোকেই অর্জুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে প্রশ্ন করেছেন যে, “নিরাকার ও সগুণ সাকার উপাসনার মধ্য শ্রেষ্ঠ কোন উপাসনা?” তাঁর উত্তরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে, সগুণ সাকার উপাসনাই শ্রেষ্ঠ। কারণ, নির্গুণ নিরাকার উপাসনা অত্যন্ত কঠিন। সগুণ সাকার উপাসনাই ভক্তগণের নিকট অনেক প্রিয়।
ভক্ত কে? তাঁর লক্ষণ কি? এই বিষয়েও দ্বাদশ অধ্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। এখানে ভগবান স্বাধীন স্বার্থশূন্য, নিলিপ্ত থেকেও ভক্তাধীন হয়েছেন। এ কারণে ঈশ্বর সাধনায় ভক্ত হওয়া এবং ভক্তের উপাসনাই শ্রেষ্ঠ।
কারণ, ঈশ্বর সকল বাঁধা অতিক্রম করলেও ভক্তের নিকট ঠিকই বাঁধা পড়েন।
এখানে, সগুন সাকার উপাসক হিসেবে মহাত্মা রামানুজাচার্য্যের একটি কাহিনী তুলে ধরা হলঃ-
“ব্রহ্ম ও জীব স্বতন্ত্র। যেখানে, “ব্রহ্ম এক, অদ্বিতীয় এবং সর্বব্যাপী”; কিন্তু, “জীব এক নয়, জীব বহু, প্রতি শরীরে বিভিন্ন”।” - এটাই হচ্ছে রামানুজাচার্য্যের বিশিষ্ট অদ্বৈতবাদ।
অদ্বৈতবাদী রামানুজ বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ মতকে যেভাবে
সাজিয়েছিলেন তা হলো- “অদ্বৈতবাদকে অস্বীকার করে নয়, স্বীকার করেই বলছি যে কালের
সমুদ্রে যত স্বল্প সময়ই হোক আমার একটা অস্তিত্ব আছে এই পরিণামশীল জগতে। সমুদ্রের
জগতে ঢেউয়ের অস্তিত্ব অস্বীকার করা যায় না, তার স্থিতিকাল যতটুকুই হোক।” মূলত, এ
মতবাদই বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ। সেই রামানুজের কাহিনীটি এরূপঃ
“রামানুজ অদ্বৈতবাদী হলেও মূর্তিপূজা করতেন। তাঁর
শিষ্যগণ স্বভাবতই একটু দ্বিধান্বিত ছিলেন গুরু মহারাজ এর উপর। কারণ, রামানুজ সকলকে
শিক্ষা দিচ্ছেন অদ্বৈতবাদ আর নিজে চর্চা করছেন দ্বৈতবাদ। একদিন সকালে রামানুজ পূজায়
বসেছেন, শীতের সকাল। এক শিষ্য তাঁর পূজার
কাছে গিয়ে বসলো। ইচ্ছা এই বিষয়ে গুরুদেব এর কাছ থেকে নিঃসংশয় হবেন। গুরুদেব রামানুজ শিষ্যকে বললেন, “আগুন নিয়ে আসো”। শিষ্য দৌড়ে গিয়ে
একটি জ্বলন্ত কাঠ নিয়ে আসলো। রামানুজ দেখে বললেন, “প্রজ্বলিত কাঠ কেন এনেছ? আগুন
নিয়ে আসো”। শিষ্য বুঝতে পারলো না যে এ উপায় ছাড়া আর কিভাবে আগুন আনা সম্ভব?
রামানুজ বললেন, “দেখ, এই পৃথিবীর সর্বত্রই আগুন আছে। এই
আগুনকে আমাদের কাজে লাগাতে হলে তাকে বসার আসন দিতে হয়, যেমন- কাঠ। ঐ কাঠে বসেই সে
আমাদের প্রয়োজনীয় কাজ করে দেয়। সেরূপ ঈশ্বর সর্বত্রই আছেন। তার কাছে আমাদের প্রার্থনা জানাতে হলে তাকে বসবার আসন
দিতে হবে। তার বসবার আসন হল এই মূর্তি। এখানে বসেই তিনি আমার প্রার্থনা শুনে যা
করার তাই করবেন।””
সগুন সাকার উপাসনা সম্পর্কে এর চেয়ে ভাল উদাহরণ আর কি
হতে পারে???
"জয় রায়"
1 Comments:
জয় রাম
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন