মহাভারতের আমার দৃষ্টিতে ৬ জন আছেন যাঁদের কাজ, জ্ঞান, গুন ও শক্তি অন্যদের থেকে অনেক অনেক বেশি। এই ছয় জন হলেন পিতামহ ভীষ্ম, শ্রী কৃষ্ণ, অর্জুন, কর্ণ, যুধিষ্ঠির, অভিমন্যু। পিতামহ ভীষ্ম ও শ্রী কৃষ্ণ বাদে বাকিরা নিজে গুন নিয়ে বীর হতে পারেনি বা তাঁদের পদক্ষেপ গুলি নির্ভুল বা ধর্ম প্রতিষ্ঠায় সর্বাধিক উপযোগী ছিলো না। নিচে একটি বিশ্লেষণাত্মক আলোচনা করছি।
অর্জুনঃ
নিসন্দেহে বড় বীর এবং ঐ যুগের সর্ব শ্রেষ্ঠ তীরন্দাজ। যুদ্ধ বিদ্যায় সর্বাধিক পারদর্শী নির্ভীক এক জন বীর। বীরত্বের সব পরীক্ষায় সব সময় প্রথম। কিন্তু কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ পরিচালনায় বা ধর্ম প্রতিষ্ঠায় একক ভাবে জয়লাভ করার মত সর্ব গুণী ছিলেন না। তিনি সর্ব গুণীর সহায়কদের মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ ছিলেন। তাই তাঁকে সর্ব শ্রেষ্ঠ বলার উপায় নেয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিজ্ঞা করেছেন কিন্তু সেই প্রতিজ্ঞা পালন করতে গিয়ে ধর্ম প্রতিষ্ঠা বিলম্বিত হয়েছে এবং অপ্রয়োজনে অন্য বীরকে প্রাণ দান করতে হয়েছে।
কর্ণঃ
মাতৃ স্নেহ বঞ্চিত হয়ে সূর্য পুত্র কুরু বংশে বেড়ে উঠেন কিন্তু জন্ম সুত্রে পাণ্ডব ছিলেন। সূর্য দেবার কৃপায় মৃত্যুঞ্জয় কবজ লাভ করেন। দান ধর্মে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। অর্জুনের কাছাকাছি কোন বীরের নাম উচ্চারণ করতে হলে কর্ণের নামই উচ্চারণ করতে হয়। কিন্তু ধর্ম যুদ্ধে তিনি বিভিন্ন কারনে কুরু বংশের হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তাই ধর্ম প্রতিষ্ঠায় তিনি বিপরীত শ্রোতের পক্ষে ছিলেন (যদিও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কুরু বংশের পক্ষ নিতে বাধ্য হয়েছিলেন বলতে হবে) -- দান ধর্ম মেনে চলতে গিয়ে নিজের রক্ষা কবজ (মৃত্যুঞ্জয় কবজ) পর্যন্ত দান করে দিতে দ্বিধা করেননি তিনি। এই কারণে তাঁকে দাতা কর্ণ নামে ডাকা হয়। চক্রব্যূহ রচনা করে বালক অভিমন্যু কে অন্নায় যুদ্ধে হত্যায় ভূমিকা রেখে যথেষ্ট সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি।
যুধিষ্ঠিরঃ
পাণ্ডবদের জৈষ্ট ভ্রাতা ধর্ম পুত্র যুধিষ্ঠির। সত্যবাদী, ন্যায় পরায়ণ, জ্ঞানী এমন গুনে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়। ধর্ম প্রতিষ্ঠায় সত্য নিষ্ঠ এক বিরল চরিত্র। ধর্ম জ্ঞানে তিনি অতুলনীয় ছিলেন। প্রয়োজনে যুদ্ধ বিদ্যায় ও নিপুন ছিলেন। কিন্তু ধর্ম যুদ্ধ একক ভাবে পরিচালনায় যে গুন প্রয়োজন সেই গুন তার মধ্যে সর্বাধিক ছিলোনা।
অভিমন্যুঃ
অর্জুন পুত্র। বালক বয়সেই তিনি ছিলেন মহা বীর। চক্রব্যূহ ভেঙ্গে যুদ্ধ করতে পারেন এমন সামর্থ্য ছিলো শুধু মাত্র ২ জনের। এক জন অর্জুন অন্য জন অভিমন্যু। অর্জুন চক্রব্যূহ ভেদ করে বের হতে পারতেন কিন্তু অভিমন্যু বের হবার উপায় জান্তেন না। ধর্ম যুদ্ধে যখন অর্জুন অন্য কুরু মহারথীদের এক এক করে বিনাশ করছিলেন তখন কুরুরা চক্রব্যূহ আহ্বান করেন। সেই চক্রব্যূহ ভেদ করার আর কেউ ছিলনা বলে নির্ভীক বালক বীর অভিমন্যু নিজে প্রবেশ করেন চক্রব্যূহে। প্রবল পরাক্রম শালী এই বীর চক্রব্যূহের সাত মহারথী কে এক এক করে সাতবার পরজিত করেন। পরাজিত কুরুরা শকুনি মামার কুপরামর্শে দুর্যোধনের নেতৃত্বে অন্যায় ভাবে সাত জনে মিলে এক সাথে আক্রমণ করলে বীর অভিমন্যু ঐ সাত মহারথীকে ও একক ভাবে পরাজিত করেন। কিন্তু দুষ্ট দুর্যোধন ও কুচক্রী শকুনি পেছন থেকে আক্রমণ করে বীর বালককে হত্যা করে। তিনি যে বীরত্বের সাক্ষর রাখেন তা শুধু মাত্র কুরুক্ষেত্র কেন সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর যুগের সব বীরদের বীরত্বকে ও মলীন করে দেয়। তিনি বীর কিন্তু ধর্ম প্রতিষ্ঠায় যে সব গুণাবলী থাকা প্রয়োজন সেই গুণাবলীর সর্বাধিক ধারক নন।
বাকি থাকছে পিতামহ ভীষ্ম ও শ্রী কৃষ্ণ। এই দুই নায়কের বিশ্লেষণ পড়ের পোষ্ট এ করছি। যেহেতু এই পোষ্ট বেশি দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে।
ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করুন
গর্বের সাথে বলুন আমরা বৈদিক, আমরা সনাতন, আমরা হিন্দু।
# লিঙ্কন #
----------------------------
লেখাটি পড়ে আপনার মন্তব্য জানান
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন