মেবারের রাজধানী চিতোরের রানা রাওয়াল রতন সিং -এর রানী পদ্মিনী অসম্ভব রূপবতী ছিলেন |তাঁর রূপের কথা শুনে দিল্লীর সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি ১৩০৩ সালের ২৮ জানুয়ারি রাজপুতদের সবচেয়ে শক্ত ঘাঁটি মেবারের উদ্দেশে সসৈন্যে রওনা করেন | কিন্তু মেবারে পৌঁছে তিনি হতাশ হলেন | মেবারের দুর্গটি অতীব সুরক্ষিত | তিনি রতন সিং কে খবর পাঠালেন যে তিনি তাঁর রানী পদ্মিনী কে একটিবার দেখতে চান | রতন সিং সুলতানের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই প্রস্তাবে রাজি হলেন |
রানী পদ্মিনী রাজি হলেন সুলতানকে দেখা দিতে আয়নায় প্রতিবিম্বের মাধ্যমে | সুলতান তাঁর কিছু ধূর্ত সৈনিকদের সঙ্গে দুর্গে এলেন এবং তাঁদের নির্দেশ দিলেন প্রাসাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা বিশদভাবে লক্ষ্য করতে | পদ্মিনীকে দেখে সুলতান ঠিক করলেন তাঁকে যেভাবেই হোক তাঁর চাই | তিনি রতন সিংকে কারারুদ্ধ করে পদ্মিনীকে রতন সিং - এর কাছে দাবি করলেন |
এ খবর রাজপুতদের কাছে পৌঁছার পর রাজপুত সেনাপতিরা কূটকৌশলে সুলতানকে পরাজিত করার ফন্দি আঁটেন | তাঁরা সুলতানকে জানালেন, পরদিন সকালে পদ্মিনীকে তার কাছে হস্তান্তর করা হবে | নির্দিষ্ট সকালে রাজপুতদের দেড়শ’ পাল্কি আলাউদ্দিনের তাঁবুর দিকে যাত্রা করল | পাল্কিগুলো তাঁবুর কাছে এমন জায়গায় থামল যেখানে পদ্মিনীর স্বামী রাজা রতন সিং বন্দি আছেন | আকস্মিকভাবে পাল্কি থেকে রানী পদ্মিনী ও তার পরিচারিকাদের পরিবর্তে নেমে এল সশস্ত্র সৈন্যবাহিনী | তারা রতন সিংকে মুক্ত করে নিয়ে যান আলাউদ্দিন কিছু বুঝে ওঠার আগে |
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ সুলতান চিতোর গড় তছনছ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেন | তিনি চিতোর দুর্গ অবরোধ করে রইলেন | এ অবস্থায় রাজা রতন সিং দুর্গের ফটক খুলে দিয়ে শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়ার জন্য রাজপুতদের নির্দেশ দিলেন | রাজার এই নির্দেশে রানী পদ্মিনী হতচকিত হয়ে পড়লেন | তিন বুঝতে পারলেন যে সুলতানের শক্তিশালী বাহিনীর সঙ্গে তাঁদের লড়াই করে জেতা সম্ভব নয় | এ অবস্থায় তাঁর সামনে দুটো পথ খোলা ছিল | হয় জহরপানে আত্মহত্যা, নয়তো রাজপুত রমণীসহ নিজেকে সুলতানের কাছে সমর্পণ করা | এদিকে প্রাসাদের বাইরে লড়াইয়ে রাজপুতদের পরাজয় ঘনিয়ে আসছিল | আলাউদ্দিন সদলবলে চিতোর দুর্গে ঢুকে পড়লেন |
নগর রক্ষার্থে রাজপুতগণ প্রাণপণে যুদ্ধ করে নিহত হলেন | দুর্গের অভ্যন্তরে রানী পদ্মিনীর সঙ্গে তেরো হাজার রাজপুত রমণী ‘জহরব্রতের’ অনুষ্ঠান করে প্রাণ বিসর্জন করলেন | তাঁরা জীবন্ত অগ্নিকুণ্ডে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করলেন |
আত্মহত্যা করা সৈন্য ও রানীদের ছাইভস্ম দেখে আলাউদ্দিন হতাশ হয়ে পড়েন | চিতোর গড় দখল করলেও রানীকে না পাওয়ার বেদনা তাকে প্রচণ্ড আহত করে |তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হন হিন্দু নারীদের কাছে সম্মান জীবনের চাইতেও বড় |
এই আত্মমর্যাদাপুর্ণ পরম সাহসী রানীকে এস আমরা সবাই প্রনাম জানাই |
ক্ষত্রিয়-নন্দন || অতএব রণভূমে চল ত্বরা যাই হে, চল ত্বরা যাই | দেশহিতে মরে যেই তুল্য তার নাই হে, তুল্য তার নাই || যদিও যবনে মারি চিতোর না পাই হে, চিতোর না পাই | স্বর্গসুখে সুখী হব, এস সব ভাই হে, এসো সব ভাই || *********************** ‘পদ্মিনী উপাখ্যান’ কাব্য থেকে নেওয়া।
আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের ইতিহাস আমরা ঠিক ভাবে জানি না বা কেউ আমাদের শেখায় না। আমাদের শিখতে হয় হিন্দুরাজারা ছিল অত্যাচারী আর আরব তুর্কি থেকে আক্রমণকারী বহিরাগত দস্যুরা আমাদের উদ্ধারকর্তা। আমরা শিখি সোমনাথ মন্দির লুটকারী গজনি অধিপতি মাহমুদ নাকি প্রকৃত রাজা। তাজমহল প্রেমের প্রতিক। অথচ শাহজাহান মমতাজের স্বামীকে হত্যা করেছিলেন মমতাজকে বিয়ে করার জন্য। মমতাজ ছিলেন শাহজাহানের সাতবিবির চার নম্বর। তিনি ১৪তম প্রসবের সময় মারা যান এবং তারপর শাহজাহান তার বোনকে বিয়ে করেন।
পৃথ্বীরাজ চৌহানকে পরাজিত দেখানো হয়। কিন্তু ঘোরিকে ১১৯১ সালে তরাইনের প্রথম যুদ্ধে পরাজিত করার পর পর তিনি ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। অসুরদের ক্ষমা করার ফল তিনি পেয়েছিলেন যখন ১১৯২ সালে আবার ঘোরি অন্যায়যুদ্ধে তাঁকে পরাজিত এবং হত্যা করেন। কিন্তু পৃথ্বীরাজ চৌহান অন্যায়ের কাছে কখনও চোখ নামান নাই।
@bangali hindu post.
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন