ভাগবতে বর্ণনা করা হয়েছে পান্ডব ও কৌরব পক্ষের মধ্যে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ হয়েছিল । কুরুক্ষেত্র নামক একটি স্থানে যুদ্ধ হয়েছিল এজন্য এই যুদ্ধের নাম কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ । হস্তিনাপুর(বর্তমান দিল্লী) ছিল রাজধানী অর্থাৎ কৌরব এবং পান্ডবদের বাসস্থান । হস্তিনাপুর থেকে কুরুক্ষেত্রের দূরত্ব ছিল ১৮ যোজন বা ১৪৪ মাইল । কৌরবদের পিতার নাম ধৃতরাষ্ট্র, তিনি জন্ম থেকে অন্ধ ছিলেন । ধৃতরাষ্ট্র হস্তিনাপুর রাজপ্রসাদে বসে যুদ্ধের ধারা বিবরণী শুনার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন । সঞ্জয় তখন একটি দিব্য আয়োজন করলেন যার মাধ্যমে তিনি হস্তিনাপুরে রাজপ্রসাদে বসে যুদ্ধের অত্যন্ত নিখুঁত বর্ণনা করেছিলেন যা ধৃতরাষ্ট্র শুনলেন ।
সঞ্জয় ও ধৃতরাষ্ট্রের মধ্যে কথোপকথন
ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে সমবেতা যুযুৎসবঃ ।
মামকাঃ পান্ডুবাশ্চৈব কিমকুবর্ত সঞ্জয় ।।(গীতা ১/১)
অনুবাদ
ধৃতরাষ্ট্র জিজ্ঞাসা করলেন – হে সঞ্জয় ! ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ করিবার মানসে সমবেত হইয়া আমার পুত্র এবং পান্ডুর পুত্রেরা তারপর কি করল ?
এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয় থেকে যুদ্ধের সংবাদ জানতে চাইলেন ।
যুদ্ধ বিষয়ে সঞ্জয়ের বিবরণ
দৃষ্টা তু পান্ডবানীকং ব্যূঢ়ং দুর্যোধনস্তদা ।
আচার্যমুপসঙ্গম্য রাজা বচনমব্রবীৎ ।।(গীতা ১/২)
অনুবাদ
সঞ্জয় বললেন – হে রাজন ! পান্ডবদের সৈন্যসজ্জা দর্শন করিয়া রাজা দুর্যোধন দ্রোণাচার্যের কাছে গিয়া বলিলেন ।
এই শ্লোকে সঞ্জয় যুদ্ধের প্রাথমিক আয়োজনের কথা বর্ণনা করলেন ।
এই আলোচনা থেকে উপলব্ধি করা যায় সঞ্জয় ১৪৪ মাইল দূরে বসে দিব্য আয়োজনের মাধ্যমে যুদ্ধের ধারা বিবরনী দেখতে ও শুনতে পেলেন । আধুনিক যুগে আমরা টেলিভিশনের মাধ্যমে হাজার হাজার মাইল দূরের খেলা ও অনুষ্ঠান দেখতে ও শুনতে পাই । আমরা ইরাকে মার্কিন হামলা টিভির মাধ্যমে দেখতে পেয়েছিলাম ।
সুতরাং সিধান্ত করা যায় ভাগবতের দিব্য আয়োজনকে আধুনিক বিজ্ঞানীরা টেলিভিশন ও রেডিও নামকরণ করেছে ।
দিব্য আয়োজন সম্বন্ধে ভাগবতের বর্ণনা
ভাগবতে বর্ণনা করা হয়েছে দিব্য আয়োজনের মাধ্যমে আরো কাজ করা সম্ভব । যেমন
জড় জগত দর্শন
আমরা জানি এই জড় জগত অনন্ত কোটি ব্রহ্মান্ড নিয়ে গঠিত আমরা খালি চোখে সামান্য কিছু অংশ দেখতে পাই কিন্তু দিব্য আয়োজনের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মান্ড দেখা সম্ভব । আধুনিক বিজ্ঞানীরা দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে মহাবিশ্বের অনেক কিছু দেখতে সক্ষম হয়েছেন ।
দিব্য আয়োজনের মাধ্যমে চিন্ময় বস্তু দেখা যায়
আমরা এই জগতে বসবাস করি এর নাম জড় জগত, আমরা আমাদের চক্ষু দ্বারা জড় জগতের বস্তু দেখতে পাই, চিন্ময় জগতের কোন বস্তু দেখতে পাই না যেমন আত্মা চিন্ময় বস্তু তাকে আমরা দেখতে পাই না, ভগবান আত্মা বা চিন্ময় বস্তু দ্বারা তৈরী সেজন্য আমরা তাকে দেখতে পারি না । কিন্তু দিব্য আয়োজনের মাধ্যমে আত্মা বা ভগবানের দেখা যায় ।
অর্জুনকে দিব্য চক্ষু প্রদান করা হল
ন তু মাং শক্যসে দ্রষ্টুমনেনৈব স্বচক্ষুষা ।
দিব্যং দদামি তে চক্ষুঃ পশ্য মে যোগমৈশ্বরম্ ।।(গীতা ১১/৮)
অনুবাদ
কিন্তু তুমি তোমার বর্তমান চক্ষুর দ্বারা আমাকে দর্শন করিতে সক্ষম হইবে না । তাই, আমি তোমাকে দিব্যচক্ষু প্রদান করিতেছি । তুমি আমার অচিন্ত্য যোগৈশ্বর্য দর্শন কর !
এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে দিব্য চক্ষুদান করলেন যার মাধ্যমে তিনি সবকিছু দেখার সুযোখ পেলেন ।
দিব্যচক্ষু দ্বারা সব কিছু দর্শন
ইহৈকস্থং জগৎ কৃৎস্নং পশ্যাদ্য সচারাচম্ ।
মম দেহে গুড়াকেশ যচ্চান্যদ্ দ্রষ্টুমিচ্ছসি ।।(গীতা ১১/৭)
অনুবাদ
হে অর্জুন ! আমার এই বিরাট শরীরে একত্রে অবস্থিত সমগ্র স্থাবর – জঙ্গমাত্মক বিশ্ব এবং অন্য যাহা কিছু দেখিতে ইচ্ছা কর, তাহা এক্ষণে দর্শন কর ।
এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে অর্জুন যা ইচ্ছা তা দর্শন করতে পারবেন । দিব্য আয়োজনের প্রভাব এতো শক্তিশালী যে এর মাধ্যমে জড় এবং চিন্ময় সকল বস্তু দর্শন করা যায় । এইভাবে সিধান্ত করা যায় দিব্য আয়োজনের মাধ্যমে যা দেখা সম্ভব আধুনিক বিজ্ঞানীরা তা আবিষ্কার করতে পারে নাই । অনেকে বলে থাকেন আমরা ভগবানকে দেখি না কেন ? তিনি তো সর্বত্র বিদ্যমান, এই প্রশ্নের উত্তর এখানে প্রদান করা হয়েছে সেটা হল ভগবানকে দেখার জন্য দিব্য আয়োজনের দরকার । সেটা না হলে আমরা ভগবানকে দেখতে পারব না ।
বৈদিক যুগে ওয়ারলেস বা মোবাইল এর ব্যবহার
ইতি শত্রুং বিষীদন্তমাহ বাগশরীরিণী ।
নায়ং শুষ্কৈরথো নার্দ্রৈর্বধর্মহতি দানবঃ ।।(ভাগবত ৮/১১/৩৭)
অনুবাদ
শুকদেব গোস্বামী বলিলেন – ইন্দ্র যখন এইভাবে বিষাদগ্রস্ত হইয়া শোক করিতেছিলেন, তখন একটি দৈবযোগ হইয়াছিল, “এই অসুর নমুচি কোন শুষ্ক অথবা আর্দ্র বস্তুর দ্বারা নিহিত হইবে না ।”
এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে ইন্দ্র একটি দৈবযোগের মাধ্যমে যুদ্ধের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্বন্ধে জানতে পারলেন । দৈবযোগ হল এক জাতীয় পদ্ধতি যার দ্বারা দূর থেকে কোন সংবাদ প্রাপ্ত হওয়া যায় যেখানে সরাসরি কোন যোগাযোগ নাই । আধুনিক যুগের আবিষ্কৃত মোবাইল ফোনকে বৈদিক যুগে দৈবযোগ বলত । এই জাতীয় দৈবযোগের ঘটনা বৈদিক শাস্ত্রে অসংখ্য রয়েছে । এখান থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি বৈদিক যুগে মোবাইল ফোন বা ওয়ারলেস এর মত ব্যবস্থা ছিল ।
ভাগবতে আলোকে ইথার
আমরা গীতা ও ভাগবতের মাধ্যমে জানতে পারি ভগবানের শক্তি ২ রকমের…….
১. অপরা(নিকৃষ্টা)জড়া শক্তি (Inferior Material Energy)
২. পরা(উৎকৃষ্টা)চিন্ময় শক্তি (Superior Spiritual Energy)
ভূমিরাপোহনলো বায়ুঃ খং মনো বুদ্ধিরেব চ ।
অহঙ্কারং ইতীয়ং মে ভিন্না প্রকৃতিরষ্টধা ।। (গীতা ৭/৪)
অনুবাদ
ভূমি, জল, বায়ু, অগ্নি, আকাশ, মন, বুদ্ধি এবং অহংকার এই অষ্ট প্রকারে আমার ভিন্না জড়া প্রকৃতি বিভক্ত ।
এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে ভগবানের ২ শক্তির মধ্যে একটি হল অপরা(নিকৃষ্টা)জড়া শক্তি, যার ২টি উপাদান একটি হল স্থুল উপাদান(Gross Elements) আরেকটি হল সূক্ষ্ম উপাদান(Subtle Elements), আর এই ২ উপাদান দিয়ে এই জড় জগতটা ও সমস্ত ৮৪ লক্ষ জীবপ্রজাতি তৈরি হয়েছে । স্থুল উপাদানগুলো দেখা যায় কিন্তু সূক্ষ্ম উপাদানগুলো দেখা না গেলেও বুঝা যায় ।
স্থূল উপাদান ৫ রকমের
১. ভূমি (শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ)
২. জল (শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস)
৩. অগ্নি (শব্দ, স্পর্শ, রূপ)
৪. বায়ু (শব্দ, স্পর্শ)
৫. আকাশ (শব্দ)
আর সূক্ষ্ম উপাদান ৩ রকমের
১. মন
২. বুদ্ধি
৩. অহংকার
এখানে আমি ব্যাখ্যা করব কিভাবে আকাশ বা ইথার নামক অদৃশ্য উপাদান থেকে ক্রমান্বয়ে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য স্থূল পদার্থ অভিব্যক্ত হয় । ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতার মাত্রা অনুসারে ৫টি পদার্থ বা পঞ্চ মহাভূত (শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ) পাঁচটি স্তরে রয়েছে । যেমন –
ভূমি বা মাটির মধ্যে শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ উপস্থিত যেখানে পাঁচটি ইন্দ্রিয় অনুভবযোগ্য । মাটি থেকে আরো সূক্ষ্ম জল যেখানে ৪টি ইন্দ্রিয় অনুভবযোগ্য শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস । এখানে গন্ধ অনুপস্থিত । জলের থেকে আরো সূক্ষ্ম অগ্নি বা আগুন যেখানে ৩টি ইন্দ্রিয় অনুভবযোগ্য শব্দ, স্পর্শ, রূপ । এখানে রস ও গন্ধ অনুপস্থিত । আগুন থেকে আরো সূক্ষ্ম বায়ু বা বাতাস যেখানে ২টি ইন্দ্রিয় অনুভবযোগ্য শব্দ, স্পর্শ । বাতসে রূপ, রস ও গন্ধ নেই । বাতাস থেকে আরো সূক্ষ্ম আকাশ বা ইথার যেখানে শব্দের উপস্থিতি আছে । আকাশে স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ নেই । এভাবে আকাশ থেকে আরো সূক্ষ্ম মন, মন থেকে আরো সূক্ষ্ম বুদ্ধি আর বুদ্ধি থেকে আরো সূক্ষ্ম অহংকার ।
ভাগবতে ২/৫/২৬-২৯ নং শ্লোকে দেখা যাচ্ছে আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল এবং মাটি ক্রমবিকাশের সাথে সাথে শব্দ থেকে স্পর্শ, স্পর্শ থেকে রূপ, রূপ থেকে রস, রস থেকে গন্ধের উৎপত্তি হয় । বিজ্ঞানীরা স্থূল উপাদানের এই ৫টি বিষয় কাজে লাগিয়ে প্রচুর অর্থনৈতিক উন্নতি করছে যা আমরা মনে করি তা বিজ্ঞানীদের দান কিন্তু বৈদিক সমাজ ব্যবস্থা এখনকার সমাজ থেকে অনেক অনেক উন্নত ছিল যা বর্তমান বিজ্ঞানীদের ধারনার বাইরে ।
অনেকে মনে করে আকাশ বা ইথার আবিষ্কারের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা রেডিও, টিভি, ফোন সহ অনেক কিছু আবিষ্কার করেছেন । বিজ্ঞানীরা আকাশ বা ইথারকে শক্তি চলাচলের মাধ্যম হিসাবে বর্ণনা করেছেন যা কোন পদার্থ নয় এবং ওজনহীন ।
ভাগবতে আকাশ বা ইথারকে বলা হয় ব্যোম যা পরমাণু দ্বারা গঠিত কোন পদার্থ নয় । এটা আলোক তরঙ্গ শক্তি প্রবাহিত হওয়ার মাধ্যম বিশেষ । বিজ্ঞানীদের আকাশ বা ইথার এর ধারণা এবং ভাগবতের আকাশ বা ইথার এর ধারনা এক । সুতরাং কেউ যদি মনে করে থাকে আকাশ বা ইথার আবিষ্কারের মাধ্যমে সব কিছু আবিষ্কার হয়েছে তা হলে ভাগবত অগ্রগামী ।
সঞ্জয় ও ধৃতরাষ্ট্রের মধ্যে কথোপকথন
ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে সমবেতা যুযুৎসবঃ ।
মামকাঃ পান্ডুবাশ্চৈব কিমকুবর্ত সঞ্জয় ।।(গীতা ১/১)
অনুবাদ
ধৃতরাষ্ট্র জিজ্ঞাসা করলেন – হে সঞ্জয় ! ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ করিবার মানসে সমবেত হইয়া আমার পুত্র এবং পান্ডুর পুত্রেরা তারপর কি করল ?
এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয় থেকে যুদ্ধের সংবাদ জানতে চাইলেন ।
যুদ্ধ বিষয়ে সঞ্জয়ের বিবরণ
দৃষ্টা তু পান্ডবানীকং ব্যূঢ়ং দুর্যোধনস্তদা ।
আচার্যমুপসঙ্গম্য রাজা বচনমব্রবীৎ ।।(গীতা ১/২)
অনুবাদ
সঞ্জয় বললেন – হে রাজন ! পান্ডবদের সৈন্যসজ্জা দর্শন করিয়া রাজা দুর্যোধন দ্রোণাচার্যের কাছে গিয়া বলিলেন ।
এই শ্লোকে সঞ্জয় যুদ্ধের প্রাথমিক আয়োজনের কথা বর্ণনা করলেন ।
এই আলোচনা থেকে উপলব্ধি করা যায় সঞ্জয় ১৪৪ মাইল দূরে বসে দিব্য আয়োজনের মাধ্যমে যুদ্ধের ধারা বিবরনী দেখতে ও শুনতে পেলেন । আধুনিক যুগে আমরা টেলিভিশনের মাধ্যমে হাজার হাজার মাইল দূরের খেলা ও অনুষ্ঠান দেখতে ও শুনতে পাই । আমরা ইরাকে মার্কিন হামলা টিভির মাধ্যমে দেখতে পেয়েছিলাম ।
সুতরাং সিধান্ত করা যায় ভাগবতের দিব্য আয়োজনকে আধুনিক বিজ্ঞানীরা টেলিভিশন ও রেডিও নামকরণ করেছে ।
দিব্য আয়োজন সম্বন্ধে ভাগবতের বর্ণনা
ভাগবতে বর্ণনা করা হয়েছে দিব্য আয়োজনের মাধ্যমে আরো কাজ করা সম্ভব । যেমন
জড় জগত দর্শন
আমরা জানি এই জড় জগত অনন্ত কোটি ব্রহ্মান্ড নিয়ে গঠিত আমরা খালি চোখে সামান্য কিছু অংশ দেখতে পাই কিন্তু দিব্য আয়োজনের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মান্ড দেখা সম্ভব । আধুনিক বিজ্ঞানীরা দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে মহাবিশ্বের অনেক কিছু দেখতে সক্ষম হয়েছেন ।
দিব্য আয়োজনের মাধ্যমে চিন্ময় বস্তু দেখা যায়
আমরা এই জগতে বসবাস করি এর নাম জড় জগত, আমরা আমাদের চক্ষু দ্বারা জড় জগতের বস্তু দেখতে পাই, চিন্ময় জগতের কোন বস্তু দেখতে পাই না যেমন আত্মা চিন্ময় বস্তু তাকে আমরা দেখতে পাই না, ভগবান আত্মা বা চিন্ময় বস্তু দ্বারা তৈরী সেজন্য আমরা তাকে দেখতে পারি না । কিন্তু দিব্য আয়োজনের মাধ্যমে আত্মা বা ভগবানের দেখা যায় ।
অর্জুনকে দিব্য চক্ষু প্রদান করা হল
ন তু মাং শক্যসে দ্রষ্টুমনেনৈব স্বচক্ষুষা ।
দিব্যং দদামি তে চক্ষুঃ পশ্য মে যোগমৈশ্বরম্ ।।(গীতা ১১/৮)
অনুবাদ
কিন্তু তুমি তোমার বর্তমান চক্ষুর দ্বারা আমাকে দর্শন করিতে সক্ষম হইবে না । তাই, আমি তোমাকে দিব্যচক্ষু প্রদান করিতেছি । তুমি আমার অচিন্ত্য যোগৈশ্বর্য দর্শন কর !
এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে দিব্য চক্ষুদান করলেন যার মাধ্যমে তিনি সবকিছু দেখার সুযোখ পেলেন ।
দিব্যচক্ষু দ্বারা সব কিছু দর্শন
ইহৈকস্থং জগৎ কৃৎস্নং পশ্যাদ্য সচারাচম্ ।
মম দেহে গুড়াকেশ যচ্চান্যদ্ দ্রষ্টুমিচ্ছসি ।।(গীতা ১১/৭)
অনুবাদ
হে অর্জুন ! আমার এই বিরাট শরীরে একত্রে অবস্থিত সমগ্র স্থাবর – জঙ্গমাত্মক বিশ্ব এবং অন্য যাহা কিছু দেখিতে ইচ্ছা কর, তাহা এক্ষণে দর্শন কর ।
এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে অর্জুন যা ইচ্ছা তা দর্শন করতে পারবেন । দিব্য আয়োজনের প্রভাব এতো শক্তিশালী যে এর মাধ্যমে জড় এবং চিন্ময় সকল বস্তু দর্শন করা যায় । এইভাবে সিধান্ত করা যায় দিব্য আয়োজনের মাধ্যমে যা দেখা সম্ভব আধুনিক বিজ্ঞানীরা তা আবিষ্কার করতে পারে নাই । অনেকে বলে থাকেন আমরা ভগবানকে দেখি না কেন ? তিনি তো সর্বত্র বিদ্যমান, এই প্রশ্নের উত্তর এখানে প্রদান করা হয়েছে সেটা হল ভগবানকে দেখার জন্য দিব্য আয়োজনের দরকার । সেটা না হলে আমরা ভগবানকে দেখতে পারব না ।
বৈদিক যুগে ওয়ারলেস বা মোবাইল এর ব্যবহার
ইতি শত্রুং বিষীদন্তমাহ বাগশরীরিণী ।
নায়ং শুষ্কৈরথো নার্দ্রৈর্বধর্মহতি দানবঃ ।।(ভাগবত ৮/১১/৩৭)
অনুবাদ
শুকদেব গোস্বামী বলিলেন – ইন্দ্র যখন এইভাবে বিষাদগ্রস্ত হইয়া শোক করিতেছিলেন, তখন একটি দৈবযোগ হইয়াছিল, “এই অসুর নমুচি কোন শুষ্ক অথবা আর্দ্র বস্তুর দ্বারা নিহিত হইবে না ।”
এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে ইন্দ্র একটি দৈবযোগের মাধ্যমে যুদ্ধের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্বন্ধে জানতে পারলেন । দৈবযোগ হল এক জাতীয় পদ্ধতি যার দ্বারা দূর থেকে কোন সংবাদ প্রাপ্ত হওয়া যায় যেখানে সরাসরি কোন যোগাযোগ নাই । আধুনিক যুগের আবিষ্কৃত মোবাইল ফোনকে বৈদিক যুগে দৈবযোগ বলত । এই জাতীয় দৈবযোগের ঘটনা বৈদিক শাস্ত্রে অসংখ্য রয়েছে । এখান থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি বৈদিক যুগে মোবাইল ফোন বা ওয়ারলেস এর মত ব্যবস্থা ছিল ।
ভাগবতে আলোকে ইথার
আমরা গীতা ও ভাগবতের মাধ্যমে জানতে পারি ভগবানের শক্তি ২ রকমের…….
১. অপরা(নিকৃষ্টা)জড়া শক্তি (Inferior Material Energy)
২. পরা(উৎকৃষ্টা)চিন্ময় শক্তি (Superior Spiritual Energy)
ভূমিরাপোহনলো বায়ুঃ খং মনো বুদ্ধিরেব চ ।
অহঙ্কারং ইতীয়ং মে ভিন্না প্রকৃতিরষ্টধা ।। (গীতা ৭/৪)
অনুবাদ
ভূমি, জল, বায়ু, অগ্নি, আকাশ, মন, বুদ্ধি এবং অহংকার এই অষ্ট প্রকারে আমার ভিন্না জড়া প্রকৃতি বিভক্ত ।
এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে ভগবানের ২ শক্তির মধ্যে একটি হল অপরা(নিকৃষ্টা)জড়া শক্তি, যার ২টি উপাদান একটি হল স্থুল উপাদান(Gross Elements) আরেকটি হল সূক্ষ্ম উপাদান(Subtle Elements), আর এই ২ উপাদান দিয়ে এই জড় জগতটা ও সমস্ত ৮৪ লক্ষ জীবপ্রজাতি তৈরি হয়েছে । স্থুল উপাদানগুলো দেখা যায় কিন্তু সূক্ষ্ম উপাদানগুলো দেখা না গেলেও বুঝা যায় ।
স্থূল উপাদান ৫ রকমের
১. ভূমি (শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ)
২. জল (শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস)
৩. অগ্নি (শব্দ, স্পর্শ, রূপ)
৪. বায়ু (শব্দ, স্পর্শ)
৫. আকাশ (শব্দ)
আর সূক্ষ্ম উপাদান ৩ রকমের
১. মন
২. বুদ্ধি
৩. অহংকার
এখানে আমি ব্যাখ্যা করব কিভাবে আকাশ বা ইথার নামক অদৃশ্য উপাদান থেকে ক্রমান্বয়ে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য স্থূল পদার্থ অভিব্যক্ত হয় । ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতার মাত্রা অনুসারে ৫টি পদার্থ বা পঞ্চ মহাভূত (শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ) পাঁচটি স্তরে রয়েছে । যেমন –
ভূমি বা মাটির মধ্যে শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ উপস্থিত যেখানে পাঁচটি ইন্দ্রিয় অনুভবযোগ্য । মাটি থেকে আরো সূক্ষ্ম জল যেখানে ৪টি ইন্দ্রিয় অনুভবযোগ্য শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস । এখানে গন্ধ অনুপস্থিত । জলের থেকে আরো সূক্ষ্ম অগ্নি বা আগুন যেখানে ৩টি ইন্দ্রিয় অনুভবযোগ্য শব্দ, স্পর্শ, রূপ । এখানে রস ও গন্ধ অনুপস্থিত । আগুন থেকে আরো সূক্ষ্ম বায়ু বা বাতাস যেখানে ২টি ইন্দ্রিয় অনুভবযোগ্য শব্দ, স্পর্শ । বাতসে রূপ, রস ও গন্ধ নেই । বাতাস থেকে আরো সূক্ষ্ম আকাশ বা ইথার যেখানে শব্দের উপস্থিতি আছে । আকাশে স্পর্শ, রূপ, রস ও গন্ধ নেই । এভাবে আকাশ থেকে আরো সূক্ষ্ম মন, মন থেকে আরো সূক্ষ্ম বুদ্ধি আর বুদ্ধি থেকে আরো সূক্ষ্ম অহংকার ।
ভাগবতে ২/৫/২৬-২৯ নং শ্লোকে দেখা যাচ্ছে আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল এবং মাটি ক্রমবিকাশের সাথে সাথে শব্দ থেকে স্পর্শ, স্পর্শ থেকে রূপ, রূপ থেকে রস, রস থেকে গন্ধের উৎপত্তি হয় । বিজ্ঞানীরা স্থূল উপাদানের এই ৫টি বিষয় কাজে লাগিয়ে প্রচুর অর্থনৈতিক উন্নতি করছে যা আমরা মনে করি তা বিজ্ঞানীদের দান কিন্তু বৈদিক সমাজ ব্যবস্থা এখনকার সমাজ থেকে অনেক অনেক উন্নত ছিল যা বর্তমান বিজ্ঞানীদের ধারনার বাইরে ।
অনেকে মনে করে আকাশ বা ইথার আবিষ্কারের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা রেডিও, টিভি, ফোন সহ অনেক কিছু আবিষ্কার করেছেন । বিজ্ঞানীরা আকাশ বা ইথারকে শক্তি চলাচলের মাধ্যম হিসাবে বর্ণনা করেছেন যা কোন পদার্থ নয় এবং ওজনহীন ।
ভাগবতে আকাশ বা ইথারকে বলা হয় ব্যোম যা পরমাণু দ্বারা গঠিত কোন পদার্থ নয় । এটা আলোক তরঙ্গ শক্তি প্রবাহিত হওয়ার মাধ্যম বিশেষ । বিজ্ঞানীদের আকাশ বা ইথার এর ধারণা এবং ভাগবতের আকাশ বা ইথার এর ধারনা এক । সুতরাং কেউ যদি মনে করে থাকে আকাশ বা ইথার আবিষ্কারের মাধ্যমে সব কিছু আবিষ্কার হয়েছে তা হলে ভাগবত অগ্রগামী ।
Susanta banda
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন