০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হিন্দু ধর্মের কিছু নিয়মের পেছেন কিছু যুক্তিগ্রাহ্য কারণ থাকে।

গর্ভবতী নারীদের ভূতের গল্প শুনতে নেই কেন ?

উঃ- গর্ভবতী নারীকে খুব সাবধানে থাকতে হয়। সামান্য ভুলের জন্য সন্তান এমনকি মায়ের জীবন সংশয়ও হতে পারে। ভূতের গল্প শুনে আমরা ভয় পাই । এমন কি একলা থাকলে সেই সব গল্প মনে জেগে উঠলে আমরা শঙ্কিত হই। স্বপ্ন দেখে চমকে উঠি। কারণ আমরা যা ভাবি, সেই গুলিই স্বপ্নে আসে। এখন প্রাচীন কালে বিদ্যুৎ আবিস্কার হয় নি। প্রদীপ, লণ্ঠন , হ্যাজাক ছিলো ভরসা। এই অবস্থায় ভূতের গল্প শুনে এবং একলা থাকা কালীন এসব ভেবে গর্ভবতী নারী ভয় পেলে বা স্বপ্নে চমকে উঠলে গর্ভের সন্তান ও মা দুজনের জীবন সংশয় হতে পারে। বিশেষ করে ভয় পেয়ে জ্বর হলে সেটা খারাপ। সেজন্য এই নিয়ম গর্ভবতী নারীদের ভূতের বা হিংসামূলক, খুন খারাপির গল্প শুনতে নেই।

গর্ভবতী নারীদের ঈশ্বরের কথা শোনা উচিৎ কেন ?

ঊঃ- হিন্দু পুরাণ বলে প্রহ্লাদ তাঁর মাতা কয়াদুর গর্ভে থাকাকালীন নারদ মুনির আশ্রমে হরিনাম শুনতে পেয়ে হরি ভক্ত হন। মহাভারতে বলে শুভদ্রার গর্ভে থাকাকালীন অভিমণ্যু পিতা অর্জুনের মুখের যুদ্ধবিদ্যা শুনে যুদ্ধ শিখেছিলেন। পৌরাণিক এই সকল আখ্যানের মাধ্যমে যে সত্যি পুরাণকার রা শেখাতে চেয়েছিলেন, তা হল- গর্ভকালীন অবস্থায় নারী যদি ঈশ্বরের কথা, শাস্ত্র পাঠ ইত্যাদি শোনেন- তবে তার মন প্রান উৎফুল্ল থাকবে। এটা গর্ভবতী নারীর পক্ষে উত্তম। সুস্থ, আনন্দিত থাকলে মনে ভয় টয় আসবে না। সন্তান ভালো থাকবে। তবে এই সময় পূজা পাঠ- উপোস নিষিদ্ধ, কারণ এতে শরীরের পরিশ্রম হয়। আর গর্ভবতী নারীদের বিশ্রাম নেওয়া খুব প্রয়োজন। সেজন্য গর্ভবতী নারীরা ভজন কীর্তন শুনবেন। ধার্মিক পুস্তক ও মহাপুরুষদের জীবনি পড়বেন ।

গর্ভবতী নারীদের খোলা আকাশের তলায় খেতে নেই কেন ?

ঊঃ - গর্ভবতী নারীদের খোলা আকাশের তলায় খেতে নেই। বলে খোলা আকাশের তলায় খেলে বেতাল, পিশাচ দের দৃষ্টি পড়ে গর্ভবতী নারীদের ওপর। এর কারণ আছে। গর্ভস্থ সন্তান খুব সেনসিটিভ। সামান্য ভুলে মা ও সন্তান উভয়েই মারা যেতে পারে। খোলা আকাশের তলায় খেলে উড়ন্ত পাখীর মল বা ধূলাবালি, জীবানু খাবারে পড়তেই পারে। অজান্তে তা খেলে কি হবে বোঝাই যায়। তাই গর্ভবতী নারীদের সাবধানে চলা উচিৎ।

গর্ভবতী নারীদের সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হওয়া বারণ কেন ?

ঊঃ- গর্ভবতী নারীদের সন্ধ্যার পর ঘর থেকে বের হতে দেয় না। বলে ভূত প্রেতের দৃষ্টি পড়বে গর্ভের সন্তানের ওপর। এর কারণ আছে। আসলে প্রাচীন কালে বিদ্যুৎ আবিস্কার হয় নি। তখন সন্ধ্যায় বের হলে হোঁচট খেয়ে পড়লে গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু ত হতেই পারে সাথে মায়েরও। এছাড়া সূর্যাস্তের পর কিছু জীবানু সক্রিয় হয়। সূর্যের আলো বহু প্রকার জীবানু নাশ করে। সেইজন্য সন্ধ্যার পর জীবানু শরীরে আসতে পারে। এছাড়া শীতল বাতাসে ঠাণ্ডাজনিত রোগের শিকার হতে পারে গর্ভবতী নারী। যার কুপ্রভাব সন্তানের উপরেও পড়ে। এছাড়া বিষাক্ত পোকামাকড়, সাপ, বিছা এই রাতের অন্ধকারেই বের হয় । প্রাচীন কালে ত ইলেকট্রিক আবিস্কার হয় নি। সেই জন্য এই নিয়ম ।

সন্ধ্যাকালে প্রদীপ দেওয়া হয় কেন তুলসী তলায় ?

ঊঃ- সন্ধ্যাকালে গৃহের রমণীরা তুলসী তলায় প্রদীপ দিয়ে শাঁখ বাজান। এটি হিন্দু ঐতিহ্য । যদিও এখন সন্ধ্যাবেলায় অধিকাংশ বাড়ীতে টিভির আওয়াজ শোনা যায়। প্রথমত এটি হল গৃহ আঙিনা আলোকিত করার জন্য। দ্বিতীয় সন্ধ্যার পর কিছু ফসলের ক্ষতিকারী পোকা বের হয়। যারা আগুন দেখে লম্ফ দিয়ে পুড়ে মরে। যেমন পঙ্গপাল, শ্যামাপোকা, মাজরা পোকা ইত্যাদি। ফসলের ক্ষতি কম হয়। আর প্রাচীন কালে ছিলো মাইলকে মাইল বন জঙ্গল মাঠ, তারপর একটি গ্রাম। তখন ত ইলেকট্রিক, মোবাইল গুগলি ম্যাপ এগুলো কিছুই ছিলো না। সন্ধ্যার অন্ধকারে পথিক গ্রামের দিক ভ্রষ্ট হয়ে সোজা পড়তো বিপদের মুখে কারণ সে সময় বাঘ, ডাকাত, ঠক দের উৎপাত ছিলো । এজন্য প্রদীপের আলো দেখে পথিক গ্রামের দিশা দেখতে পেতো।

কার্ত্তিক মাসে আকাশপ্রদীপ দেওয়া হয় কেন ?

ঊঃ- কার্ত্তিক মাসে আকাশ প্রদীপ দেওয়া হয়। একটা উচু বাঁশ বা উচু জায়গার মাথায় একটি প্রদীপ দেওয়া হয়। একে আকাশ প্রদীপ বলে। এর একটি কারণ কার্ত্তিক মাসে খুব পোকার উৎপাত। পোকা গুলো আগুনে এসে পুড়ে মরে। আর একটি কারণ কার্তিক মাসে কুয়াশা পড়ে অল্পস্বল্প। মাইলকে মাইল মাঠের পর একটি গ্রাম থাকতো আগের দিনে। কুয়াশাতে দিক ভ্রষ্ট হতেই পারে । পথিক যাতে দিকভ্রষ্ট না হয় তার জন্য উঁচু জায়গাতে প্রদীপ দেওয়া হত ।
ভালো লাগলে বলবেন। আবার কিছু যুক্তি কারণ নিয়ে লেখবো।
Share:

1 Comments:

নামহীন বলেছেন...

দারুন লেেগেছে

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।