ঢাকেশ্বরী মন্দির কত পুরাতন তা সঠিক ভাবে কেহই বলতে পারেনি । বহুবছর অাগে এখানে কিছু কাঠুরে জঙ্গলে কাঠ কাটতে এসে একটি অষ্টভূজা দূর্গা দেবীর মুর্তি লতাপাতা দ্বারা অাবৃত অবস্থায় দেখতে পান । তারপর তারা সেখানে কুড়ে ঘড়ের মন্দির নির্মাণ করে এবংস্থানটি বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত বলে উক্ত দেবীকে গঙ্গা দেবী রূপে পূজা অর্চনা শুরু করেন । এখানে ঈশ্বরী লতা পাতায় ঢাকা ছিল বিধায় উক্ত মন্দিরটি ঢাকা+ঈশ্বরী = ঢাকেশ্বরী মন্দির বলা হয় । ধীরে ধীরে এখানে ভক্ত সমাগম বাড়তে থাকে ।
বহুকাল পরে ১১০০ খ্রিষ্টাব্দে সেন অামলে রাজা বল্লাল সেন এর মাতা রাজা বিজয় সেনের স্ত্রী অষ্টমী স্নান করার জন্য লাঙ্গলবন্দ এসেছিলেন । এখানে রাত্রিবাসকালীন তিনি দেবী দূর্গার সপ্নাদেষ পান তার স্নান সিদ্ধ হওয়ার জন্য দেবী দর্শন অাবশ্যক। তখন তিনি লোকজনের থেকে খোঁজ নিয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে অাসেন এবং মায়ের দর্শন লাভ করে তীর্থ পূর্ণ করেন । তিনি সেই সময় ঢাকেশ্বরীতে অষ্ট ধাতু দিয়ে মায়ের দশভূজা দূর্গা মুর্তি স্থাপন করেন । বিগ্রহের উচ্চতা দেড় ফুটের মতো ,দেবীর দশ হাত, কাত্যায়নী মহিষাসুরমর্দিনী দূর্গা রূপী, পাশে লক্ষী-সরস্বতী ও নিচে কার্তিক-গণেশ ।বাহন রূপে পশুরাজ সিংহ দন্ডায়মান যার ওপর দাঁড়িয়ে দেবী মহিষাসুরকে বধ করেছেন ।
এবং তিনি এক কক্ষ বিশিষ্ট স্থায়ী মন্দির নির্মাণ করেন, যাহা বর্তমানে মূল মন্দিরের মধ্যের কক্ষ । এবং তিনি ভক্তদের জলের সুবিধার জন্য তিনটি জলকূপও খনন করেন । স্থানীয় লোকজনের নিজ চোখে দেখা এই তিনটি কুপের একটিতে গভীর রাতে দেবী দূর্গা লাল পাইড়ের সাদা শাড়ি পরে স্নান করে অাবার মন্দিরে প্রবেশ করে অদৃশ্য হয়ে যেতেন । প্রচলিত নিয়ম অনুসারে প্রত্যেক ভক্তই তাদের অষ্টমী স্নানের পূর্ণতা পাওয়ার জন্য স্নানের পর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে অাসতেন ।
পরবর্তীতে মোঘল অামলে সম্রাট অাকবরের সেনাপতি মানসিংহ সোনারগাঁও এ বারো ভূইয়াদের বিদ্রোহ দমন করতে বাংলায় অাসেন এবং ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ভগ্নাদশা দেখে তিনি তার ব্যক্তিগত তহবিলের অর্থে তার নিজ এলাকা সুদূর রাজস্থান থেকে মিস্ত্রি ও শ্রমিক এনে রাজস্থানী ঘরোনার নকশা অনুযায়ী মূল মন্দিররটি তিন কক্ষ বিশিষ্ট করেন এবং দেবী দূর্গার দুই পাশের কক্ষে শিবলিঙ্গ স্থাপন করেন । মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য দুইটি প্রবেশ দ্বার নির্মান করেন । তিনি ভক্তদের বসবাসের জন্য একটি ধর্মশালাও নির্মান ও একটি পুকুর খনন করেন সর্বশেষ তিনি তার চার বার বাংলা অাগমনের নিদর্শন স্বরূপ চারটি শিব মঠ স্থাপন করেন । মানসিংহ এই বিগ্রহ ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করার পর আজমগড়ের এক তিওয়ারি পরিবারকে সেবায়েত এবং বাংলাদেশের জনৈক দাস পরিবারকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিযুক্ত করেন ।
পরবর্তীতে ভাওয়ালের জমিদার রাজা রাজেন্দ্রনারায়ন রায়বাহাদুর ভাওয়াল ষ্টেটের মালিকানা নির্ধারনের জন্য মন্দির রক্ষণাবেক্ষণকা
রী সুধীর কুমার দাস গং কে ৫ শতাংশ মালিকানা এবং সেবায়েত গং দের ১ আনি ভোগত্বর সহ ঢাকেশ্বরী মন্দিরকে ২০ বিঘা জায়গা দেবোত্তর হিসেবে সিএস রেকর্ডভূক্ত করিয়া দেন ।
দেবী ঢাকেশ্বরী আসল ৮০০ বছরের পুরোনো অাদি বিগ্রহটি ৪৮ সালে দেশভাগ-পরবর্তী হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার সময় অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেড় ধরে সেবায়েত তিওয়ারী পরিবারের শেষ বংশধর বিশাল তেওয়ারীর স্ত্রী কর্তৃক ভারতে নিয়ে যাওয়া হয় । মূর্তিটি বর্তমানে কলকাতার কুমারটুলি অঞ্চলে দুর্গাচারণ স্ট্রিটে বিরাজ করছে । সেখানেও মন্দিরের নাম শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী মাতার মন্দির | এখন যে বিগ্রহটি ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আছে তা হলো মূল মূর্তির প্রতিরূপ। কলকাতায় বিগ্রহটি আনার পর প্রথম দু'বছর হরচন্দ্র মল্লিক স্ট্রিটে দেবেন্দ্রনাথ চৌধুরির বাড়িতে দেবী পূজিতা হন । পরে ১৯৫০ নাগা ব্যাবসায়ী দেবেন্দ্রনাথ চৌধুরী কুমোরটুলি অঞ্চলে দেবীর মন্দির নির্মাণ করে দেন ও প্রতিষ্ঠা করে দেবীর নিত্য সেবার জন্য কিছু দেবোত্তর সম্পত্তি দান করেন এবং অদ্যবধি এখানেই দেবী পূজিতা হয়ে চলেছেন ।
১৯৬৪ সালে সেই পরিবারের বংশধরেরাই কলকাতায় এসে পুনরায় সেবায়েত নিযুক্ত হন, এখনো তারাই দেবীর নিত্য সেবা করেন । এই ঢাকেশ্বরী দেবীর পূজা পদ্ধাতিও বাংলার চিরপুরাতন পদ্ধতির চেয়ে আলাদা । শারদীয়া দুর্গাপূজার সময় দেবীর পূজা হয় উত্তর ভারতের নবরাত্রির বিধি মেনে । দেবীকে যেভাবে অলংকারহীন এবং প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় লুকিয়ে আনা হয়েছিল, তার ছবিও এই মন্দিরে সংরক্ষিত আছে। ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রচারের আলোয় ঢাকা পড়ে গেছে কলকাতার ঢাকেশ্বরী মাতার মন্দির। শোভাবাজার ছাড়িয়ে কুমোরটুলির এক অপরিসর গলিতে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে নীরবে নিভৃতে বিরাজমান এই ঢাকেশ্বরী মাতা । ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের আদি বিগ্রহ এখানেই প্রতিষ্ঠিত ।
মায়ের অলৌকিক সব ঘটনা বিজড়িত মূল ঢাকেশ্বরী মন্দিরটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত । প্রতিদিন বহূ পূণ্যার্থীর অাগমন ঘটে এখানে । ৪৭ এর দেশভাগ, ৬৪ এর দাঙ্গা, ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ, ৯০ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাসহ বহু ঘাতপ্রতিঘাত, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগের ইতিহাস বুকে নিয়ে সুধীর কুমার দাস ও মন্দিরে বসবাসকারী হিন্দুদের অাত্ম ত্যাগের বিনিময়ে ঢাকেশ্বরী মন্দির আজও সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে.....।
জঁয় মা ঢাকেশ্বরী
পল্টন দাস, সেবায়েত,
শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী মাতার মন্দির ।
written by: Deb Prosad
বহুকাল পরে ১১০০ খ্রিষ্টাব্দে সেন অামলে রাজা বল্লাল সেন এর মাতা রাজা বিজয় সেনের স্ত্রী অষ্টমী স্নান করার জন্য লাঙ্গলবন্দ এসেছিলেন । এখানে রাত্রিবাসকালীন তিনি দেবী দূর্গার সপ্নাদেষ পান তার স্নান সিদ্ধ হওয়ার জন্য দেবী দর্শন অাবশ্যক। তখন তিনি লোকজনের থেকে খোঁজ নিয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে অাসেন এবং মায়ের দর্শন লাভ করে তীর্থ পূর্ণ করেন । তিনি সেই সময় ঢাকেশ্বরীতে অষ্ট ধাতু দিয়ে মায়ের দশভূজা দূর্গা মুর্তি স্থাপন করেন । বিগ্রহের উচ্চতা দেড় ফুটের মতো ,দেবীর দশ হাত, কাত্যায়নী মহিষাসুরমর্দিনী দূর্গা রূপী, পাশে লক্ষী-সরস্বতী ও নিচে কার্তিক-গণেশ ।বাহন রূপে পশুরাজ সিংহ দন্ডায়মান যার ওপর দাঁড়িয়ে দেবী মহিষাসুরকে বধ করেছেন ।
এবং তিনি এক কক্ষ বিশিষ্ট স্থায়ী মন্দির নির্মাণ করেন, যাহা বর্তমানে মূল মন্দিরের মধ্যের কক্ষ । এবং তিনি ভক্তদের জলের সুবিধার জন্য তিনটি জলকূপও খনন করেন । স্থানীয় লোকজনের নিজ চোখে দেখা এই তিনটি কুপের একটিতে গভীর রাতে দেবী দূর্গা লাল পাইড়ের সাদা শাড়ি পরে স্নান করে অাবার মন্দিরে প্রবেশ করে অদৃশ্য হয়ে যেতেন । প্রচলিত নিয়ম অনুসারে প্রত্যেক ভক্তই তাদের অষ্টমী স্নানের পূর্ণতা পাওয়ার জন্য স্নানের পর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে অাসতেন ।
পরবর্তীতে মোঘল অামলে সম্রাট অাকবরের সেনাপতি মানসিংহ সোনারগাঁও এ বারো ভূইয়াদের বিদ্রোহ দমন করতে বাংলায় অাসেন এবং ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ভগ্নাদশা দেখে তিনি তার ব্যক্তিগত তহবিলের অর্থে তার নিজ এলাকা সুদূর রাজস্থান থেকে মিস্ত্রি ও শ্রমিক এনে রাজস্থানী ঘরোনার নকশা অনুযায়ী মূল মন্দিররটি তিন কক্ষ বিশিষ্ট করেন এবং দেবী দূর্গার দুই পাশের কক্ষে শিবলিঙ্গ স্থাপন করেন । মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য দুইটি প্রবেশ দ্বার নির্মান করেন । তিনি ভক্তদের বসবাসের জন্য একটি ধর্মশালাও নির্মান ও একটি পুকুর খনন করেন সর্বশেষ তিনি তার চার বার বাংলা অাগমনের নিদর্শন স্বরূপ চারটি শিব মঠ স্থাপন করেন । মানসিংহ এই বিগ্রহ ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করার পর আজমগড়ের এক তিওয়ারি পরিবারকে সেবায়েত এবং বাংলাদেশের জনৈক দাস পরিবারকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিযুক্ত করেন ।
পরবর্তীতে ভাওয়ালের জমিদার রাজা রাজেন্দ্রনারায়ন রায়বাহাদুর ভাওয়াল ষ্টেটের মালিকানা নির্ধারনের জন্য মন্দির রক্ষণাবেক্ষণকা
রী সুধীর কুমার দাস গং কে ৫ শতাংশ মালিকানা এবং সেবায়েত গং দের ১ আনি ভোগত্বর সহ ঢাকেশ্বরী মন্দিরকে ২০ বিঘা জায়গা দেবোত্তর হিসেবে সিএস রেকর্ডভূক্ত করিয়া দেন ।
দেবী ঢাকেশ্বরী আসল ৮০০ বছরের পুরোনো অাদি বিগ্রহটি ৪৮ সালে দেশভাগ-পরবর্তী হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার সময় অভ্যন্তরীণ বিরোধের জেড় ধরে সেবায়েত তিওয়ারী পরিবারের শেষ বংশধর বিশাল তেওয়ারীর স্ত্রী কর্তৃক ভারতে নিয়ে যাওয়া হয় । মূর্তিটি বর্তমানে কলকাতার কুমারটুলি অঞ্চলে দুর্গাচারণ স্ট্রিটে বিরাজ করছে । সেখানেও মন্দিরের নাম শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী মাতার মন্দির | এখন যে বিগ্রহটি ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আছে তা হলো মূল মূর্তির প্রতিরূপ। কলকাতায় বিগ্রহটি আনার পর প্রথম দু'বছর হরচন্দ্র মল্লিক স্ট্রিটে দেবেন্দ্রনাথ চৌধুরির বাড়িতে দেবী পূজিতা হন । পরে ১৯৫০ নাগা ব্যাবসায়ী দেবেন্দ্রনাথ চৌধুরী কুমোরটুলি অঞ্চলে দেবীর মন্দির নির্মাণ করে দেন ও প্রতিষ্ঠা করে দেবীর নিত্য সেবার জন্য কিছু দেবোত্তর সম্পত্তি দান করেন এবং অদ্যবধি এখানেই দেবী পূজিতা হয়ে চলেছেন ।
১৯৬৪ সালে সেই পরিবারের বংশধরেরাই কলকাতায় এসে পুনরায় সেবায়েত নিযুক্ত হন, এখনো তারাই দেবীর নিত্য সেবা করেন । এই ঢাকেশ্বরী দেবীর পূজা পদ্ধাতিও বাংলার চিরপুরাতন পদ্ধতির চেয়ে আলাদা । শারদীয়া দুর্গাপূজার সময় দেবীর পূজা হয় উত্তর ভারতের নবরাত্রির বিধি মেনে । দেবীকে যেভাবে অলংকারহীন এবং প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় লুকিয়ে আনা হয়েছিল, তার ছবিও এই মন্দিরে সংরক্ষিত আছে। ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রচারের আলোয় ঢাকা পড়ে গেছে কলকাতার ঢাকেশ্বরী মাতার মন্দির। শোভাবাজার ছাড়িয়ে কুমোরটুলির এক অপরিসর গলিতে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে নীরবে নিভৃতে বিরাজমান এই ঢাকেশ্বরী মাতা । ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরের আদি বিগ্রহ এখানেই প্রতিষ্ঠিত ।
মায়ের অলৌকিক সব ঘটনা বিজড়িত মূল ঢাকেশ্বরী মন্দিরটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত । প্রতিদিন বহূ পূণ্যার্থীর অাগমন ঘটে এখানে । ৪৭ এর দেশভাগ, ৬৪ এর দাঙ্গা, ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ, ৯০ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাসহ বহু ঘাতপ্রতিঘাত, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগের ইতিহাস বুকে নিয়ে সুধীর কুমার দাস ও মন্দিরে বসবাসকারী হিন্দুদের অাত্ম ত্যাগের বিনিময়ে ঢাকেশ্বরী মন্দির আজও সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে.....।
জঁয় মা ঢাকেশ্বরী
পল্টন দাস, সেবায়েত,
শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী মাতার মন্দির ।
written by: Deb Prosad
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন