১৬ মে ২০১৯

কিছু লোকজন প্রশ্ন করে কেন বিয়ের পর মেয়েরা শাখা,সিদুর,নোয়া পড়ে?

দাম্পত্য জীবনের মঙ্গল কামনার জন্য যদি এইগুলো পড়েন! তবে শহুড়ে মানুষেরা এইগুলো পড়েনা বলে কি মঙ্গল হয়না? কেন এটা মেয়েদেরই পড়তে হয়? বিবাহের চিহ্ন তো পুরুষের ক্ষেত্রেও থাকা উচিৎ! তবে কেন নয়?

প্রথমেই বলে রাখা ভালো,
যদি কেউ এই সিঁদুর পরিধান না করে, তবে তার কারনে তাকে নরক বাস করতে হবে! এমন কোন বিষয় পাওয়া যায়নি। তবে যদি আপনি সনাতনধর্মাবলম্বী হোন, তবে আপনার রীতিতে বিশ্বাস প্রাধান্য থাকা আবশ্যিক। আর আরেকটি বিষয় হলো,

যদি কোন প্রথা বা রীতির কারনে ক্ষতি সাধন হয়। তবে সেটাকে প্রশ্ন বিদ্ধ করে, বাদ দেওয়া ধর্ম স্থাপনার মতো একটি মহৎ কাজ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্ত আপনি কি এই প্রথার আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত কোন এমন ঘটনার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ পাবেন? যেটার দ্বারা প্রমানিত করা যায়, এইগুলো দেওয়া একটি খারাপ বিষয়?

নিশ্চিত থাকতে পারেন, আপনি একটাও উল্লেখ্যযোগ্য বিষয় তুলে ধরতে পারবেন নাহ। তবে আমি এইগুলো নিয়ে অনেক গুলো যৌক্তিক ও ভালো দিক তুলে ধরতে পারবো। এই বিষয় গুলোকে সনাতনধর্ম অনেক প্রবিত্র হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। আমি এই বিষয় গুলো সম্পরকে কিছু বিষয় তুলে ধরি,

সিঁদুর,শাখা,নোয়া হলো সনাতনী বিবাহিত নারীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সিঁদুর যা বিবাহিত নারীরা তাদের সিথিতে দিয়ে থাকেন। সিঁদুর কে শাস্ত্র ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোনে রজঃগুন হিসেবে ধরা হয়। আর এই রজঃগুন এর সাথে রজঃস্রাব তথা ঋতুস্রাব (মাসিকের) সম্পর্ক ও আছে,

এই সিঁদুরে মার্কারি তথা পারদের মতো ধাতু পাওয়া যায়। আর শাখা যার মধ্যে ক্যালসিয়াম নিহিত আছে আর নোয়া থেকে পাওয়া যায় আয়রন। এই তিনটি যা নারীর রজঃস্রাব এর ক্ষতিপূরণ সাধনে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। এই মাসিক তথা ঋতুস্রাব কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে,

অন্ধ্রপ্রদেশে এখনও একটা রীতি প্রচলিত আছে যে, কোন মেয়ে যদি প্রথমবার মাসিক তথা ঋতুস্রাব হয়। তবে তাকে পুজো সহ অনুষ্ঠান করা হয়, এই উপলক্ষ্যে। এই বিষয়টি সৃষ্টির অন্যতম এক মহাকারন। তাই এটিকে অতি প্রবিত্রতার সহিত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরে। এই বিষয়গুলো নারীদের পড়ার রীতি প্রচলিত।

আর যেহুতু এই ঋতুস্রাব নারীদেরই হয়, তাদের জন্য এইগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা পুরুষদের পড়ার প্রয়োজন হয়না। তবে এই সিঁদুর বা টীকা দেওয়ার বিষয়ে নারীর মতো পুরুষেরও কিছু উল্লেখ্য পাওয়া যায়। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না যে,

প্রাচীন ভারতে কুঙকুমচর্চা ছিলো। যা নারী ও পুরুষের উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রাধান্য দেওয়া হতো। ব্রহ্মচর্য কালে মাথায় টিকি বা শিখার সহিত মাথায় সিঁদুর বা তিলকের দ্বারা অংকিত রাখা হতো কপাল কে। আর বিবাহের পর যারা ব্রহ্মচর্য থেকে সাময়িক বিরতি নিত। তখন তার শিখা কে সাময়িক বিরতি দিত।

এখনও বিয়ের সময় পৃথিবীর একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবে উপাধি পাওয়া নেপালে রীতি আছে, বিবাহের সময় স্বামী ও স্ত্রীর উভয়েরই কারো কপাল, কারো সীঁথি কে সিঁদুর দ্বারা অংকিত করার। আর এখনও অনেক সাধু-সন্ন্যাসী তাদের কপাল সহ সীঁথি কে সিঁদুর, গেরুয়া রঙ কিংবা তিলক দ্বারা আবৃত করে রাখেন।

তবে উল্লেখ্য শাক্ত মতে এখনও সিঁদুর কে নারী পুরুষ উভয়েই কেউ কপালে, কেউ সীথিতে ধারন করেন। আমি নিজেও পূজা, কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সিঁদুর অথবা তিলক দ্বারা কপাল অংকিত করি। আর এটা আজকাল অনেকেই করে। তবে আমরা সব প্রশ্নের ক্লিয়ার উত্তর পেলেও ওখানে যে প্রশ্নের সমাধান দেওয়া হয়নি তা হলো,

কেউ যদি সিঁদুর পড়তে না চান! তবে সেটা তার একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্ত শহুড়ে ও আধুনিকতার জীবন গুলোতেই কিন্ত সাংসারিক বিচ্ছেদ অনেক বেশী। সংবাদমাধ্যম এর জরিপে উঠে এসেছে, শহুরে জীবন তথা যেখানে আধুনিকতার নামে ধর্মীয় বিষয়গুলো মানা হয়না, সেখানে বিবাহ বিচ্ছেদ খুব বেশী পরিমানে হয়ে থাকে। সত্যতা জানতে অনলাইন তথ্য ও অনলাইন পোর্টাল দেখুন।

এই সিঁদুর পড়লে বুঝা যায়, নারী বিবাহিত। আর পূর্বে শিখা রাখা হতো, ব্রহ্মচর্য পালনের প্রতীক হিসেবে। এখন কি বলা যাবে, নারীরা সিঁদুর পড়বে, ছেলেরা পড়বেনা! এটা অনুচিত। তবে তো এটাও বলতে হয়, ছেলেরা শিখা রাখতো ব্রহ্মচর্য তথা সংযত এর জন্য! তার মানে কি মেয়েরা রাখেনা, সংযত নয়।

আসলে এইগুলো হলো একপ্রকার মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা। বিবাহ হলো প্রবিত্র বন্ধন। এখানে কে কি পরিধান করবে না করবে সেটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ অপেক্ষা, দুজনদুজনকে ভালবাসা ও বিশ্বাস দ্বারা আজীবন আগলে রাখবে সেটাই হলো মুল বিষয়। পুরুষের ঋতুচক্র এর মত বিষয় থাকলে, তবে তাদেরও এইগুলো পড়া উচিত ছিল।

মনস্তাত্ত্বিক বিষয় হলো,
সিঁদুর যেরুপ নারীকে অপর পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি ও পরকীয়া থেকে রক্ষা করছে। আর এর জন্য নারীদের প্রতি অবনত কৃতজ্ঞতা! তারা এই পুরুষের লোলুপ দৃষ্টিকে উপেক্ষা করছেন। যদিও পুরুষদের এমন হওয়া অনুচিত। কিন্ত তারা আমাদের জন্য ত্যাগ স্বীকারের মত সিঁদুর পরিধান করে, আমাদের লোলুপ দৃষ্টি প্রতিহত করছেন।

আর বিশ্বাসই সম্পর্ক এর মুল ভরসা। বাকীসব সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার মাধ্যম মাত্র।

আরো অনেক কিছু বলার ছিলো। কিন্ত আর টাইপিং সম্ভব না বলে লিখতে পারছিনা। এর জন্য দুঃখিত।
আশাকরি পাঠকগন সকলে বুঝবেন বিষয়টি। আর তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা, যারা আমার লেখাসমুহ প্রতিনিয়ত পড়েন।

ধন্যবাদ
ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Collected from :
Rupon Kumar Dev
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।