আজ নাগপঞ্চমী। হিন্দুরা তাহাদিগের আরাধ্য দেবদেবী রূপে বিভিন্ন পশু জন্তু পক্ষীর ধারনা করে নেয় । যেমন শিবের বাহন ষাঁড়, দুর্গার বাহন সিংহ বা বাঘ, বিষ্ণুর বাহন গরুড় পক্ষী, শণির বাহন শকুন এমনকি গণেশের বাহন রূপে ইঁদুর বলা হয়। জীবজন্তু দের প্রতি সম্মান ও বাস্তুতন্ত্রের ভিত্তি বজায় রাখতেই বোধ হয়ে শাস্ত্রে দেবদেবীর বাহন রূপে এই সব পশু পক্ষী কে বাহন রূপে লেখা হয়েছে । হিন্দুরা নাগের পূজো করে এই নিয়ে যেমন অন্য ধর্মীরা খোঁচা দেয় তেমনি হিন্দুরাও জানে না । না জেনে নিজ ধর্মকে কুসংস্কার ভাবে । সর্পের উল্লেখ বিভিন্ন পুরাণ ও তন্ত্রে পাওয়া যায় । ভগবান হরির বিছানা নাগ শয্যা, ভগবান শিবের কণ্ঠের ভূষণ নাগরাজ বাসুকী, মনসার হস্তে সর্প, দুর্গা দেবীর হস্তে সর্প, গণেশের নাগ যজ্ঞ উপবীত । তন্ত্রেও সর্পের সাথে দেবীর যোগ দেখা যায়। দেবী তারার সাথে সর্প, ছিন্নমস্তার নাগ যজ্ঞ উপবীত, গুহ্যকালীর কাছে নাগের অবস্থান ইত্যাদি ইত্যাদি । একদিকে দেখা যায় সাপেরা ইঁদুর ভক্ষণ করে , ইঁদুর গ্রামাঞ্চলে ফসলের ভীষণ ক্ষতি করে। একদিকে সর্প পূজার মাধ্যমে আছে সর্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ । বস্তুত হিন্দুধর্মে বাহন রূপে যে পশু পাখীর উল্লেখ প্রতিজনেরই সেই দেব দেবীর সাথে জড়িত তত্ত্বকথা আছে।
অপরদিকে সর্প কে কুলকুণ্ডলিনী শক্তির প্রতীক ধরা হয় । ঘুমন্ত অবস্থায় এই কুণ্ডলিনী প্যাচে পড়ে থাকে। যোগীরা যোগসাধনার মাধ্যমে এই কুলকুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণ ঘটান । জাগ্রত অবস্থায় এই কুণ্ডলিনী মহাশক্তি সর্পের মতো তির্যক গতিশীলা । এই দিক থেকে কুণ্ডলিনী শক্তির প্রতীক রূপে সর্পের আরাধনা হয় । এই কারণে দেব দেবীদের হস্তে সর্প বা নাগ যজ্ঞ উপবীত থাকে। যা কুণ্ডলিনী শক্তির প্রতীক । সাপেদের সাথে যোগীদের অনেকটা মিল আছে । নাগেরা একাচারী, অনিকেত, সাবধান ও গুহা বা গর্ত বাসী। শীতের কটি মাস সে বায়ু ভক্ষণ করে নিশ্চুপ পড়ে থাকে, হাতের সামনে যা আসে তাই খায় । পূর্বকালে যোগীরা এমন একচারী, সংসার বিষয়ে সাবধান ও গুহা বা অরণ্য বা নির্জন স্থান জঙ্গল বাসী হতেন। কুম্ভক যোগে বায়ু নিরোধ পূর্বক সাধনা করেন যোগীরা । তাঁরা এই যোগসাধনা অবলম্বন পূর্বক জাগিয়ে তুলতেন সুপ্ত কুণ্ডলিনী শক্তিকে । এই সর্পকে তাই সেই যোগসাধনার কুণ্ডলিনী শক্তি রূপে পূজা করে আসা হয় আদিকাল থেকে ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন