একসময়,
স্বর্গের মন্দাকিনীর তীরে শ্রীনারদমুনি মহাদেবের কাছে শ্রীকৃষ্ণমন্ত্র লাভ
করলেন । তারপর নারদ ও মহাদেব শিব একস্থানে এসে পৌছলেন যেখানে পার্বতীদেবী,
কার্ত্তিক ও গনেশ বসেছিলেন । সেখানে মহাকাল, নন্দী, বীরভদ্র,
সিদ্ধ
মহর্ষিগণ ও সনকাদি মুনিগণ এসে বসলেন ।বাক্যালাপে প্রসঙ্গ ক্রমে নারদমুনি
মহাদেবকে বললেন, হে ভগবান, যে জ্ঞান কর্মফলচক্রে আবদ্ধ করায় না, যে জ্ঞান
সর্ববেদের সার, সেই বিষয়ে আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে আমাকে বলুন ।
মহাদেব বললেন, হে নারদ, পঞ্চরাত্র নামে এক অনুপম জ্ঞান পূর্বে গোলকে বিরজার তটে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মাকে প্রদান করেছিলেন , তারপর নিরাময় ব্রহ্মালোকে ব্রহ্মা আমাকে সে জ্ঞান প্রদান করেন , সেই সর্ব-অভিষ্ট সর্বজ্ঞানপ্রদ প্রবিত্র জ্ঞান আমি তোমাকে দান করছি, পরে তুমি ব্যাসদেবকে প্রদান করবে । আর সেই ব্যাসদেব পরে তার পু্ত্র শুকদেবকে দান করবে ।
হে নারদ, এই জ্ঞান সবার আদি, সর্ববেদের সার, অতি মনোহর । জগৎ সংসারে যত মত আছে, যত কর্ম আছে, যত মন্ত্র আছে, যত কর্মচক্র আছে – সেই সমস্ত কিছুর সারাৎসার, সর্বকর্মচক্রের মুক্তির পন্থা হচ্ছে একমাত্র পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মসেবা । নিখিল মহাবিশ্বে একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই বিদ্যমান । আর অন্য সমস্ত কিছুই তার প্রয়োজন সিদ্ধির জন্যই উৎপন্ন হয়েছে । বিশ্বের সবাই তার মায়ায় মোহিত । এক কৃষ্ণ তার অনন্ত রূপ, তার অনন্ত গুন, তার অনন্ত কীর্তি এবং তার অনন্ত জ্ঞান ।
হে নারদ, তার সৃষ্ট জড় বিচিত্র বিশ্বও অনন্ত । এই বিশ্বের সব জায়গা ক্ষুদ্র, বৃহৎ, মধ্যম নানা জাতীয় জীবে পরিপূর্ণ । সেই জীবগুলো কর্মশীল । কর্মের ফলস্বরূপ তারা সুখ দুঃখ ভোগ করছে ।
সর্বান্তরাত্মা ভগবান প্রত্যেক জীবের সাক্ষীরূপে বিদ্যমান । জীবের বুদ্ধি আছে । সেই বুদ্ধিশক্তি নিদ্রা, তন্দ্রা, দয়া, শ্রদ্ধা, তুষ্টি, পুষ্টি, হ্মমা, হ্মুধা, লজ্জা, তৃষ্ণা, ইচ্ছা, শান্তি, চিনতা, জরা, জড়া প্রভৃতি নাম ধারন করে । অনুচরেরা যেমন রাজার অনুগামী হয়, সেই রকম এই সব শক্তি জীবের অনুগামী হয়ে থাকে । চিন্তা ও জরা সর্বদা জীবের শোভা ও পুষ্টির ব্যাঘাত করে । ব্রহ্মাণ্ডমধ্যে জীব যে স্থুল দেহ ধারন করে কর্ম করছে সেই দেহটি পাঞ্চভৌতিক অর্থাৎ মাটি, জল, আগুন, বাতাস ও আকাশ দিয়ে তৈরি । এই দেহ ধ্বংস হলে দেহটি পঞ্চভূতের মধ্যে মিশে যায় । প্রায় জীবই এই জগৎ সংসারে ভ্রান্তিবশে মায়ামোহিত হয়ে রোদন করতে থাকে । কিন্তু যারা সাধু ব্যক্তি, তারা নিত্য সত্য অভয়প্রদ এবং জম্মমৃত্যুজরা-অপহারী শ্রীকৃষ্ণের চরণকমল সেবা করেন ।
হে নারদ, এই বিশ্ব স্বপ্নের মতো অনিত্য । অতএব এতে বিমোহিত না হয়ে আনন্দের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্ম ভজনা করো । এই হচ্ছে প্রথম জ্ঞান ।
এবার দ্বিতীয় জ্ঞানের কথা শ্রবণ করো । জ্ঞানী ব্যক্তিরা মুক্তির বাসনা করেন । সাধু পণ্ডিত ব্যক্তিদের পরমামুক্তি সততই বাঞ্ছিত । কিন্তু সমস্ত মুক্তি শ্রীকৃষ্ণভক্তির কাছে অত্যন্ত তু্চ্ছ বিষয় । মুক্তি কৃষ্ণভক্তির ষোলভাগের একভাগও আকর্ষনীয় নয় । কৃষ্ণভক্ত-সংসর্গের ফলে কারও হৃদয়ে ঐকান্তিক কৃষ্ণভক্তি জাগ্রত হয় ।
মাঠের মাঝে বৃক্ষের বীজ যেমন অঙ্কুরিত হয় জল পেলে, তেমনই হৃদয় মধ্যে ভক্তিবৃক্ষের অঙ্কুর প্রকাশিত হয় ভক্তসঙ্গ পেলে । ভক্তসঙ্গে কৃষ্ণকথা আলাপে ভক্তি জাগ্রত হয় । আবার রৌদ্র মধ্যে অঙ্কুর যেমন শুকিয়ে যায়, তেমনি অভক্তজনের সঙ্গে সর্বদা সংলাপে ভক্তি শুষ্কতা প্রাপ্ত হয় । এই জন্যে বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা সর্বদা ভক্তজনের সাথে আলাপ করেন ।
হে নারদ, সোনা যেমন নিকৃষ্ট ধাতুর সংযোগে মলিনতা প্রাপ্ত হয়, তেমনি সৎ ব্যক্তিও সংসারের দুর্বুদ্ধি লোকের সংস্পর্শে মন্দ হয়ে যায় ।এজন্য সর্বদা নিরন্তর ভক্তিপূর্বক শ্রীকৃষ্ণভজনে যুক্ত থাকাই কর্তব্য । ভক্তিপূর্বক কৃষ্ণভক্ত বৈষ্ণবের কাছ থেকে তার কৃষ্ণমন্ত্র গ্রহন করা উচিত । কখনও অভক্ত অবৈষ্ণবের কাছ থেকে নয় । সংসারে যারা কৃষ্ণনিন্দুক, কৃষ্ণবিমুখ, কৃষ্ণভক্ত নিন্দুক, তারা অশুচি ও পাপিষ্ঠ । কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষিত ব্যক্তি শত পুরুষ সহ নিজেকে উদ্ধার করে ।
by অমিত সরকার শুভমহাদেব বললেন, হে নারদ, পঞ্চরাত্র নামে এক অনুপম জ্ঞান পূর্বে গোলকে বিরজার তটে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মাকে প্রদান করেছিলেন , তারপর নিরাময় ব্রহ্মালোকে ব্রহ্মা আমাকে সে জ্ঞান প্রদান করেন , সেই সর্ব-অভিষ্ট সর্বজ্ঞানপ্রদ প্রবিত্র জ্ঞান আমি তোমাকে দান করছি, পরে তুমি ব্যাসদেবকে প্রদান করবে । আর সেই ব্যাসদেব পরে তার পু্ত্র শুকদেবকে দান করবে ।
হে নারদ, এই জ্ঞান সবার আদি, সর্ববেদের সার, অতি মনোহর । জগৎ সংসারে যত মত আছে, যত কর্ম আছে, যত মন্ত্র আছে, যত কর্মচক্র আছে – সেই সমস্ত কিছুর সারাৎসার, সর্বকর্মচক্রের মুক্তির পন্থা হচ্ছে একমাত্র পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মসেবা । নিখিল মহাবিশ্বে একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই বিদ্যমান । আর অন্য সমস্ত কিছুই তার প্রয়োজন সিদ্ধির জন্যই উৎপন্ন হয়েছে । বিশ্বের সবাই তার মায়ায় মোহিত । এক কৃষ্ণ তার অনন্ত রূপ, তার অনন্ত গুন, তার অনন্ত কীর্তি এবং তার অনন্ত জ্ঞান ।
হে নারদ, তার সৃষ্ট জড় বিচিত্র বিশ্বও অনন্ত । এই বিশ্বের সব জায়গা ক্ষুদ্র, বৃহৎ, মধ্যম নানা জাতীয় জীবে পরিপূর্ণ । সেই জীবগুলো কর্মশীল । কর্মের ফলস্বরূপ তারা সুখ দুঃখ ভোগ করছে ।
সর্বান্তরাত্মা ভগবান প্রত্যেক জীবের সাক্ষীরূপে বিদ্যমান । জীবের বুদ্ধি আছে । সেই বুদ্ধিশক্তি নিদ্রা, তন্দ্রা, দয়া, শ্রদ্ধা, তুষ্টি, পুষ্টি, হ্মমা, হ্মুধা, লজ্জা, তৃষ্ণা, ইচ্ছা, শান্তি, চিনতা, জরা, জড়া প্রভৃতি নাম ধারন করে । অনুচরেরা যেমন রাজার অনুগামী হয়, সেই রকম এই সব শক্তি জীবের অনুগামী হয়ে থাকে । চিন্তা ও জরা সর্বদা জীবের শোভা ও পুষ্টির ব্যাঘাত করে । ব্রহ্মাণ্ডমধ্যে জীব যে স্থুল দেহ ধারন করে কর্ম করছে সেই দেহটি পাঞ্চভৌতিক অর্থাৎ মাটি, জল, আগুন, বাতাস ও আকাশ দিয়ে তৈরি । এই দেহ ধ্বংস হলে দেহটি পঞ্চভূতের মধ্যে মিশে যায় । প্রায় জীবই এই জগৎ সংসারে ভ্রান্তিবশে মায়ামোহিত হয়ে রোদন করতে থাকে । কিন্তু যারা সাধু ব্যক্তি, তারা নিত্য সত্য অভয়প্রদ এবং জম্মমৃত্যুজরা-অপহারী শ্রীকৃষ্ণের চরণকমল সেবা করেন ।
হে নারদ, এই বিশ্ব স্বপ্নের মতো অনিত্য । অতএব এতে বিমোহিত না হয়ে আনন্দের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্ম ভজনা করো । এই হচ্ছে প্রথম জ্ঞান ।
এবার দ্বিতীয় জ্ঞানের কথা শ্রবণ করো । জ্ঞানী ব্যক্তিরা মুক্তির বাসনা করেন । সাধু পণ্ডিত ব্যক্তিদের পরমামুক্তি সততই বাঞ্ছিত । কিন্তু সমস্ত মুক্তি শ্রীকৃষ্ণভক্তির কাছে অত্যন্ত তু্চ্ছ বিষয় । মুক্তি কৃষ্ণভক্তির ষোলভাগের একভাগও আকর্ষনীয় নয় । কৃষ্ণভক্ত-সংসর্গের ফলে কারও হৃদয়ে ঐকান্তিক কৃষ্ণভক্তি জাগ্রত হয় ।
মাঠের মাঝে বৃক্ষের বীজ যেমন অঙ্কুরিত হয় জল পেলে, তেমনই হৃদয় মধ্যে ভক্তিবৃক্ষের অঙ্কুর প্রকাশিত হয় ভক্তসঙ্গ পেলে । ভক্তসঙ্গে কৃষ্ণকথা আলাপে ভক্তি জাগ্রত হয় । আবার রৌদ্র মধ্যে অঙ্কুর যেমন শুকিয়ে যায়, তেমনি অভক্তজনের সঙ্গে সর্বদা সংলাপে ভক্তি শুষ্কতা প্রাপ্ত হয় । এই জন্যে বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা সর্বদা ভক্তজনের সাথে আলাপ করেন ।
হে নারদ, সোনা যেমন নিকৃষ্ট ধাতুর সংযোগে মলিনতা প্রাপ্ত হয়, তেমনি সৎ ব্যক্তিও সংসারের দুর্বুদ্ধি লোকের সংস্পর্শে মন্দ হয়ে যায় ।এজন্য সর্বদা নিরন্তর ভক্তিপূর্বক শ্রীকৃষ্ণভজনে যুক্ত থাকাই কর্তব্য । ভক্তিপূর্বক কৃষ্ণভক্ত বৈষ্ণবের কাছ থেকে তার কৃষ্ণমন্ত্র গ্রহন করা উচিত । কখনও অভক্ত অবৈষ্ণবের কাছ থেকে নয় । সংসারে যারা কৃষ্ণনিন্দুক, কৃষ্ণবিমুখ, কৃষ্ণভক্ত নিন্দুক, তারা অশুচি ও পাপিষ্ঠ । কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষিত ব্যক্তি শত পুরুষ সহ নিজেকে উদ্ধার করে ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন