১৩ অক্টোবর ২০১৩

ব্রহ্মা

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে ইনি আদি দেবতার একজন এর অপরাপর নাম- অ, অউম, জ্ঞ, ব্রহ্মা।

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে ইনি আদি দেবতার একজন সৃষ্টির আদিতে ব্রহ্ম এই দেবতাকে সৃষ্টি করেন। শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের তৃতীয় অধ্যায়ের ১৮ সংখ্যক শ্লোকে বলা হয়েছে- যিনি সৃষ্টির প্রথমে ব্রহ্মাকে সৃষ্টি করিয়াছেন, যিনি তাঁহার উদ্দেশ্যে বেদবিদ্যা প্রেরণ করিয়াছেন, আত্মবিষয়ক বুদ্ধির প্রকাশময় সেই পরমেশ্বরের নিকট মুক্তিকামী আমি শরণাপন্ন হইয়াছি।

মহাভারতের মতে 'প্রথমতঃ এই বিশ্বসংসার কেবল ঘোরতর অন্ধকারে আবৃত ছিল। অনন্তর সমস্ত বস্তুর বীজভূত এক অণ্ড প্রসূত হইল। ঐ অণ্ডে অনাদি, অনন্ত, অচিন্তনীয়, অনির্ব্বচনীয়, সত্যস্বরূপ, নিরাকার, নির্ব্বিকার, জ্যোতির্ময় ব্রহ্ম প্রবিষ্ট হইলেন। অনন্তর ঐ অণ্ডে ভগবান্ প্রজাপতি ব্রহ্মা স্বয়ং জন্ম পরিগ্রহ করিলেন।'  [ সৃষ্টিবর্ণন, অনুক্রমণিকাধ্যায়, আদিপর্ব, মহাভারত]

মহাভারতের
শান্তিপর্ব অষ্টাধিকদ্বিশততম অধ্যায়ের প্রজাপতিবিবরণ-সৃষ্টিবিস্তারে বলা হয়েছে 'প্রথমে কেবল একমাত্র সনাতন ভগবান্ ব্রহ্মা বিদ্যামান ছিলেন। অনন্তর তাঁহার মরীচি, অত্রি, অঙ্গিরা, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রতু ও বশিষ্ট এই সাত অগ্নিতুল্য পুত্রের উৎপত্তি হয়।

সমগ্র বিশ্ব এক ঘোরতর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল
, পরমব্রহ্ম নিজ তেজে সেই অন্ধকার দূর করে জল সৃষ্টি করলেনসেই জলে সৃষ্টির বীজ নিক্ষেপ করলে একটি অতিকায় সুবর্ণ অণ্ড বা ডিম সৃষ্টি হয়সেই অণ্ডের মধ্যে পরমব্রহ্ম স্বয়ং প্রবেশ করেন এবং এরপর অণ্ড দুই ভাগে বিভক্ত হয়এর একভাগ দ্বারা আকাশ ও অপর ভাগ দ্বারা ভূমণ্ডল তৈরি হয়এরপর ব্রহ্মা মন থেকে দশজন প্রজাপতি সৃষ্টি করেনএই দশজন প্রজাপতি হলেন- অঙ্গিরা, অত্রি, ক্রতু, দক্ষ, নারদ, পুলস্ত্য, পুলহ, বশিষ্ঠ, ভৃগু ও মরীচিব্রহ্মার আদেশে এঁরা বিভিন্ন প্রাণী সৃষ্টি করলেনবাকি একজন অর্থাৎ নারদকে সৃষ্টি রক্ষার ভার দিলেন। কিন্তু ব্রহ্ম-সাধনায় বিঘ্ন হবে বলে নারদ সে ভার গ্রহণ করলেন না এই কারণে ব্রহ্মা তাঁকে মানুষ ও গন্ধর্বরূপে জন্মগ্রহণ করার অভিশাপ দিলেন 


৪৩২ কোটি বত্সরে ব্রহ্মার একটি রাত এবং সম পরিমাণ সময় নিয়ে ব্রহ্মার দিন হয়এই হিসাবে ৮৬৪ কোটি বত্সর নিয়ে এক অহোরাত্রি হয়ব্রহ্মা সমগ্র দিনে যা তৈরি করেন, রাত্রে তা ধ্বংস করেনব্রহ্মার এই এক অহোরাত্রিই হলো- এক কল্পঅন্য হিসাবে বলা হয়, ৩৬০ অহোরাত্রে এক দিব্যবর্ষ১২,০০০ দিব্যবর্ষে এক দৈবযুগ এবং ১০০০ দৈবযুগে ব্রহ্মার একদিনব্রহ্মার ৩০ অহোরাত্রে এক মাস, ১২ মাসে এক বত্সরএই হিসাবে ব্রহ্মার আয়ু ১০০ বৎসর 
আদিতে তাঁর পাঁচটি মাথা ছিলকিন্তু একবার মহাদেবের প্রতি অসম্মানজনক উক্তি করায় মহাদেব তাঁর নখ দিয়ে ব্রহ্মার একটি মাথা বিচ্ছিন্ন করেনসেই থেকে ইনি চার মাথার অধিকারী হন এঁর চারটি বাহু এবং শরীর রক্তবর্ণ এঁর বাহন হংসএঁর স্ত্রীর নাম সরস্বতী এবং তাঁর দুই কন্যার নাম দেবসেনা ও দৈত্যসেনা
বেদে ব্রহ্মা শব্দটি নেইসেখানে সৃষ্টিকর্তাকে হিরণ্যগর্ভা প্রজাপতি হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছেব্রহ্মাকে তপস্যার দ্বারা সন্তুষ্ট করলে ইনি অমরত্ব ছাড়া সকল বরই প্রদান করেনএই কারণে বিভিন্ন সময় তাঁর বর লাভ করে দৈত্য, দানব ও অসুরেরা বহু অকল্যাণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেনতবে প্রতিটি বরের মধ্যেই ছিল একটি গোপন ফাঁকআর সেই ফাঁক বের করে দেবতারা দৈত্য, দানব ও অসুরদের দমন বা হত্যা করতে সক্ষম হয়েছেন
এঁর হৃদয় থেকে অনঙ্গ জন্মগ্রহণ করে পরে অনঙ্গের শরে জর্জরিত হয়ে ইনি নিজ কন্যা শতরূপাকে বিবাহ করেনপরে ব্রহ্মার অভিশাপেমহাদেবের ক্রোধে অনঙ্গ ভস্মীভূত হন।   দেখুন : অনঙ্গ, শতরূপা।  
দশরথ পুত্রকামনায় যে পুত্রেষ্টি যজ্ঞ সম্পন্ন করেছিলেন। সেই  যজ্ঞে দেবতারা তাঁদের যজ্ঞভাগ গ্রহণের জন্য উপস্থিত ছিলেন। এই সময় দেবতারা রাবণের অত্যাচারের কথা বলে প্রতিকার প্রার্থনা করেন। এই সময় বিষ্ণু উপস্থিত হলে- ইনি বিষ্ণুকে চার অংশে বিভক্ত হয়ে দশরথের তিনি স্ত্রীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন। যাতে এই পুত্ররা কিভাবে রাবণকে হত্যা করবেন তার উপায় জানান। [ষোড়শ সর্গ। বালখণ্ড। রামায়ণ]
পূর্ব-যুগে ঋক্ষরাজ জাম্ববানকে ব্রহ্মা সৃষ্টি করেছিলেন। ব্রহ্মার হাই তোলার সময় মুখ থেকে জাম্ববান জন্মগ্রহণ করেন। [ষোড়শ সর্গ। বালখণ্ড। রামায়ণ] এর অপর নাম জাম্বুবান।

এর অপরাপর নাম : , অকার, অগজন্ম, অঘ্ন, অক্তিঅব্জজ, অব্যক্ত, অম্বুজাসন, অম্ভোজন্মজনি, অম্ভোজযোনি, অযোনি, অযোনিজ, অষ্টকর্ণ, অষ্টাশ্রবাঃ, কঞ্জ, কঞ্জর, কমলযোনি, কমলাসন, চতুরানন, চতুর্বক্ত, চতুর্মুখ, চিদাকাশ, চিদাত্মা, চিদানন্দ, চিদাম্ব, চিদ্রূপ, জগদীশ্বর, জয়পালত্রিগুণাতীত, পদ্মপাণি, পদ্মভূ, পদ্মযোনি, পদ্মলাঞ্ছন, পদ্মেশয়, পদ্মোদ্ভব, পরব্রহ্মপরমেষ্ঠী, প্রজাপতি, প্রজাসৃক, প্রপিতামহ, বিধাতৃ, বিভূ, বিরিঞ্চি, লোকনাথ, লোকপিতা, লোকেশ, সনৎ, সনাতন, সৃষ্টিকর্তা, স্বভূ, স্বয়ম্ভু, স্রষ্টা, হংসবাহন, হিরণ্ময়, হিরণ্যগর্ভ, হেমাঙ্গ
Share:

Total Pageviews

বিভাগ সমুহ

অন্যান্য (91) অবতারবাদ (7) অর্জুন (4) আদ্যশক্তি (68) আর্য (1) ইতিহাস (30) উপনিষদ (5) ঋগ্বেদ সংহিতা (10) একাদশী (10) একেশ্বরবাদ (1) কল্কি অবতার (3) কৃষ্ণভক্তগণ (11) ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু (21) ক্ষুদিরাম (1) গায়ত্রী মন্ত্র (2) গীতার বানী (14) গুরু তত্ত্ব (6) গোমাতা (1) গোহত্যা (1) চাণক্য নীতি (3) জগন্নাথ (23) জয় শ্রী রাম (7) জানা-অজানা (7) জীবন দর্শন (68) জীবনাচরন (56) জ্ঞ (1) জ্যোতিষ শ্রাস্ত্র (4) তন্ত্রসাধনা (2) তীর্থস্থান (18) দেব দেবী (60) নারী (8) নিজেকে জানার জন্য সনাতন ধর্ম চর্চাক্ষেত্র (9) নীতিশিক্ষা (14) পরমেশ্বর ভগবান (25) পূজা পার্বন (43) পৌরানিক কাহিনী (8) প্রশ্নোত্তর (39) প্রাচীন শহর (19) বর্ন ভেদ (14) বাবা লোকনাথ (1) বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম (39) বিভিন্ন দেশে সনাতন ধর্ম (11) বেদ (35) বেদের বানী (14) বৈদিক দর্শন (3) ভক্ত (4) ভক্তিবাদ (43) ভাগবত (14) ভোলানাথ (6) মনুসংহিতা (1) মন্দির (38) মহাদেব (7) মহাভারত (39) মূর্তি পুজা (5) যোগসাধনা (3) যোগাসন (3) যৌক্তিক ব্যাখ্যা (26) রহস্য ও সনাতন (1) রাধা রানি (8) রামকৃষ্ণ দেবের বানী (7) রামায়ন (14) রামায়ন কথা (211) লাভ জিহাদ (2) শঙ্করাচার্য (3) শিব (36) শিব লিঙ্গ (15) শ্রীকৃষ্ণ (67) শ্রীকৃষ্ণ চরিত (42) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (9) শ্রীমদ্ভগবদগীতা (40) শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (4) শ্রীমদ্ভাগব‌ত (1) সংস্কৃত ভাষা (4) সনাতন ধর্ম (13) সনাতন ধর্মের হাজারো প্রশ্নের উত্তর (3) সফটওয়্যার (1) সাধু - মনীষীবৃন্দ (2) সামবেদ সংহিতা (9) সাম্প্রতিক খবর (21) সৃষ্টি তত্ত্ব (15) স্বামী বিবেকানন্দ (37) স্বামী বিবেকানন্দের বাণী ও রচনা (14) স্মরনীয় যারা (67) হরিরাম কীর্ত্তন (6) হিন্দু নির্যাতনের চিত্র (23) হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র ও অন্যান্য অর্থের পরিচিতি (8) হিন্দুত্ববাদ. (83) shiv (4) shiv lingo (4)

আর্টিকেল সমুহ

অনুসরণকারী

" সনাতন সন্দেশ " ফেসবুক পেজ সম্পর্কে কিছু কথা

  • “সনাতন সন্দেশ-sanatan swandesh" এমন একটি পেজ যা সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে সবার সামনে তুলে ধরার জন্য অসাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে গঠন করা হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য নিজের ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা, পাশাপাশি অন্য ধর্মকেও সম্মান দেওয়া। আমাদের লক্ষ্য সনাতন ধর্মের বর্তমান প্রজন্মের মাঝে সনাতনের চেতনা ও নেতৃত্ত্ব ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা কুসংষ্কারমুক্ত একটি বৈদিক সনাতন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এ পথচলায় আপনাদের সকলের সহযোগিতা কাম্য । এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। সনাতন ধর্মের যে কেউ লাইক দিয়ে এর সদস্য হতে পারে।