এর অপরাপর নাম :
অ,
অকুল,
অক্ষত,
অক্ষমালী,
অক্ষোভ্য,
অগ্নিশেখর,
অঘোর,
অতিদেব,
অদ্ভুতস্বন,
অদ্রিনাথ,
অদ্রিপতি,
অদ্রিশ,
অদ্রীশ,
অনঙ্গারি,
অনীশ,
অন্ধকঘাতী,
অন্ধকরিপু অন্ধকান্তক,
অন্ধকারি,
অবিমুক্তেশ্বর,
অব্জবাহন,
অব্যক্ত,
অব্যয়,
অভিরূপ,
অমরাধিপ,
অমর্রে,
অমূর্ত,
অমোঘ,
অম্বরীষ,
অম্বিকনাথ,
অম্বিকাপতি,
অযুগনয়ন,
অযুগনেত্র, অযোনিজ,
অযুগ্মনয়ন,
অযুগ্মনেত্র,
অযুগ্মলোচন,
অযোনি,
অর্ধনারীশ,
অর্ধনারীশ্বর,
অর্ধমৌলি,
অর্ধেন্দুমৌলি,
অর্ধেন্দুশেখর,
অষ্টমূর্তিধর,
অসমনয়ন,
অসমনেত্র,
অসমলোচন, অস্থিধন্না,
অস্থিমালী, অহিভূষণ,
আদিদেব,
আশুতোষ,
ইন্দুভূষণ,
ইন্দুভৃৎ, ইন্দুমৌলি,
ঈশান,
উমাপতি,
উমাসহায়,
উমেশ,
উরগভূষণ,
একনাথ,
কঙ্কালমালী,
কণ্ঠনীলক,
কণ্ঠেকাল,
কন্দর্পজয়ী,
কন্দর্পমথন,
কন্দুকেশ্বর,
কপর্দী,
কপালভৃৎ, কপালমালী,
কপালী,
কপিশাঞ্জন,
কপোতেশ্বর,
কলাধর,
কলাভৃৎ,
কাপালী,
কামারি, কালকণ্ঠ,
কালনাথ,
কালনিধি,
কালঞ্জর,
কালরুদ্র,
কাশীনাথ,
কাশীশ,
কাশীশ্বর,
কাশীপতি,
কুলেশ্বর,
কৃতজ্বর,
কৃত্তিবাস,
কৃশানুরেতাঃ,
কেদার,
কেদারনাথ,
কেদারেশ্বর,
কৈলাসনাথ,
কৈলাসপতি,
কৈলাসেশ্বর, খকুন্তল,
খণ্ডপরশু,
গঙ্গাধর,
গজারি,
গণনাথ,
গণভর্তা,
গিরিজানাথ,
গিরিজাপতি, গিরিশ,
গিরীশ,
গুড়াকেশ,
চন্দ্রচূড়,
চন্দ্রপীড়,
চন্দ্রবর,
চন্দ্রমৌলি,
চন্দ্রশেখর,
চন্দ্রিল,
চন্দ্রেশ্বর,
চেকিতান,
জটাটঙ্ক,
জটাধর,
জটাধারী,
জয়ন্ত,
জ্বালী,
গৌরীকান্ত,
গৌরীনাথ,
তারকনাথ,
তারকেশ্বর,
ত্রিনয়ন,
ত্রিনাথ,
ত্রিনেত্র,
ত্রিপুরঘ্ন,
ত্রিপুরান্তক,
ত্রিপুরারি,
ত্রিলোকেশ,
ত্রিলোচন,
ত্রিশূলধারী,
ত্রিশূলী, ত্র্যক্ষ,
ত্র্যম্বক,
দিগম্বর,
দিগ্বসন,
দিগ্বস্ত্র,
দিগ্বাস,
দুর্গাধীশ,
দুর্গাপতি,
দুর্গেশ,
দেবাদিদেব, দেবেশ,
ধূর্জটি,
নটরাজ,
নটশেখর,
নটেশ্বর,
নিরঞ্জন,
নীলকণ্ঠ,
নীলগ্রীব,
নীললোহিত, পঞ্চমুখ,
পঞ্চানন,
পরমেষ্ঠী, পরান্তক,
পশুপতি,
পিঙ্গজট,
পিনাকপাণি,
পিনাকী,
পিনাকেশ,
পুরঞ্জিৎ, পুরভিদ, পুরমথন,
পুরারি,
পুরহর,
প্রমথেশ,
বভ্রূ,
বহ্নিরেতাঃ,
বিভূ,
বিভূতিভূষণ,
বিরূপাক্ষ,
বিশালাক্ষ,
বিশ্বনাথ,
বিশ্বেশ্বর,
বিষকণ্ঠ,
বিষমাক্ষ,
বীরেশ্বর,
বৃষধ্বজ,
বৃষবাহন,
ব্যোমকেশ, ভগালী,
ভবানীপতি,
ভবেশ,
ভর্গ,
ভালচন্দ্র,
ভূতনাথ,
ভূতপতি,
ভূতভাবন,
ভূতেশ,
ভৈরব,
ভোলা,
ভোলানাথ,
বহ্নিরেতাঃ,
বাণদেব,
বাণেশ্বর, বামদেব, বিরূপাক্ষ,
বীরেশ্বর,
মহাকাল,
মহাদেব,
মহানট,
মহারুদ্র, মহেশ,
মহেশান,
মহেশ্বর,
মারজিৎ,
মৃগাঙ্গমৌলি,
মৃগাঙ্গশেখর,
মৃত্যুঞ্জয়,
যজ্ঞেশ্বর, যজ্ঞারি,
যমান্তক,
যোগধারী, যোগীন্দ্র,
যোগীশ,
যোগীশ্বর, যোগেশ,
যোগেশ্বর,
রুদ্র,
লোকনাথ,
শঙ্কর,
শম্ভু,
শশীভূষণ,
শশীভৃৎ,
শশীশেখর,
শিব,
শূলপাণি,
শূলী,
শ্যামাধর, শ্রীকণ্ঠ,
সতীন্দ্র, সতীপতি,
সতীশ,
সদাশিব,
সনাতন,
সর্বেশ্বর,
সিতিকণ্ঠ,
সিদ্ধদেব,
সুরেশ্বর, সোমনাথ,
সোমেশ্বর,
স্মরজিৎ,
স্মরারি,
হ,
হর,
হিরণ্যরেতাঃ।
হিন্দু
পৌরাণিক কাহিনী মতে-তিন
প্রধান দেবতার (ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর বা মহাদেব) অন্যতম। ইনি স্বয়ম্ভূ। ইনি
ধ্বংসের অধিকর্তা। এঁর প্রধান অস্ত্র ত্রিশূল। ধনুকের নাম পিনাক। ইনি বিশ্ব
ধ্বংসকারী পাশুপাত অস্ত্রের অধিকারী। মহাপ্রলয়কালে ইনি বিষাণ ও ডমরু বাজিয়ে ধ্বংসের
সূচনা করেন। ইনি মহাযোগী,
সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী,
নির্গুণ ধ্যানের প্রতীক। ইনি
রক্তমাখা বাঘছাল নিম্নাঙ্গে ধারণ করেন,
কিন্তু উর্ধ্বাঙ্গ নগ্ন।
তবে কখনো কখনো কৃষ্ণসার হরিণের চামড়া উত্তরীয় হিসাবে উর্ধ্বাঙ্গে পরিধান করেন।
এঁর শরীর ভস্ম দ্বারা আবৃত। মাথায় বিশাল জটা। কপালের নিম্নাংশে তৃতীয় নেত্র,
উধ্বাংশে অর্ধচন্দ্র ও কণ্ঠে সাপ ও কঙ্কাল মালা।
ইনি কঠোর তপস্যার দ্বারা অসীম ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন। হিমালয়ের
কৈলাসে ইনি সিদ্ধ,
চারণ,
কিন্নর,
যক্ষ,
রাক্ষস,
অপ্সরা,
গন্ধর্ব এবং প্রমথগণ
পরিবেষ্ঠিত অবস্থায় বাস করেন। কুবের এঁর সম্পদ রক্ষা করেন। এঁর স্ত্রী সতী [দুর্গা]
। গঙ্গাও তাঁর স্ত্রী ছিলেন বলে অন্যত্র জানা যায়। তাঁর দুই পুত্রের নাম কার্তিক,
গণেশ এবং দুই কন্যার নাম লক্ষ্মী ও সরস্বতী। এঁর বাহন বৃষ ও সহচর নন্দী ও ভৃঙ্গী।
ব্রহ্মা একবার মহাদেবকে তাচ্ছিল্য করায়,
ইনি নখ দিয়ে ব্রহ্মার একটি মাথা বিচ্ছিন্ন করেন। সেই থেকে ব্রহ্মার পাঁচ মাথার
পরিবর্তে চারটি মাথা দাঁড়ায়। ইনি সকল দেবতা দ্বারা পূজিত হন। মহাভারতের মতে ব্রহ্মা
থেকে পিশাচ পর্যন্ত সবাই তাঁর পূজা করেন।
পৌরাণিক কাহিনীতে ইনি বিবিধ নামে পরিচিত। এঁর আদি নাম রুদ্র। বেদে
রুদ্রের রূপ বর্ণনায় দেখা যায়- ইনি ধ্বংসকারী শক্তি,
মর্তে ভয়ঙ্কর বৃষের মতো
আর আকাশে লোহিত বরাহের মতো। ইনি বিদ্বান,
দেবতাদের কর্মস্রষ্টা ও
স্বাক্ষী। ইনি মানুষের রোগ-শোকের কারণ। একই সাথে ইনি যখন ভয়ানক তখন রুদ্র,
আর যখন কল্যাণকর তখন
শিব। মহাকালরূপী রুদ্র সংহারকারক। প্রলয় শেষে ধ্বংসের মধ্য থেকেই তাঁর উৎপত্তি
ঘটে। সে কারণে ইনি শিব,
শঙ্কর বা
ভৈরব নামে চিহ্নিত। জনন শক্তির পরিচায়ক হিসাবে শিবলিঙ্গ। এর সাথে যোনি প্রতীক
যুক্ত হয়ে প্রজনন বা সৃষ্টিশক্তিরূপে হিন্দু ধর্মে পূজিত হয়। ধ্বংস ও সৃষ্টি উভয়েরই
কারণ বলে ইনি ঈশ্বর। ইনি অল্পে সন্তুষ্ট হন বলে- এঁর নাম আশুতোষ। পশুদের অধিপতি
বলে ইনি পশুপতি নামে খ্যাত।
সমুদ্র মন্থন করার পর,
উত্থিত অমৃত দেবতারা
গ্রহণ করার পর,
অসুররা পুনরায় তা মন্থন করে। এই
অতিরিক্ত সমুদ্র মন্থনজনীত কারণে হলাহল নামক বিষ উত্থিত হয়। এর ফলে সমগ্র চরাচরের
প্রাণীকূল বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়। এই বিষ থেকে রক্ষা পাওয়ার
জন্য দেবতারা মহাদেবের শরণাপন্ন হলে,
মহাদেব উক্ত বিষ শোষণ করেন। বিষের প্রভাবে তাঁর কণ্ঠ নীল বর্ণ ধারণ করেছিল বলে ইনি
নীলকণ্ঠ নামে পরিচিত হন।
দক্ষের কন্যা সতী’র
সাথে তাঁর বিবাহ হয়। মহাদেব দক্ষকে যথোচিত সম্মান প্রদর্শন করে নি বিবেচনা করে ইনি
ক্রমে ক্রমে মহাদেবের প্রতি বিরূপ হয়ে উঠেন। সতীর বিবাহের এক বৎসর পর,
দক্ষ এক মহাযজ্ঞের
আয়োজন করেন। এই যজ্ঞে দক্ষ মহাদেব ও সতী কাউকেই নিমন্ত্রণ করলেন না। সতী নারদের
মুখে এই যজ্ঞের কথা জানতে পেরে অযাচিতভাবে যজ্ঞে যাবার উদ্যোগ নেন। মহাদেব এই
যাত্রায় সতীকে বাধা দেন। এতে সতী ক্রুদ্ধ হয়ে- তাঁর মহামায়ার দশটি রূপ প্রদর্শন করে
মহাদেবকে বিভ্রান্ত করেন। এই রূপ দশটি ছিল- কালী,
তারা,
রাজ-রাজেশ্বরী,
ভুবনেশ্বরী,
ভৈরবী,
ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী,
বগলামূখী,
মাতঙ্গী ও মহালক্ষ্মী।
মহাদেব শেষ পর্যন্ত সতীকে দক্ষের যজ্ঞানুষ্ঠানে যাবার অনুমতি প্রদান করেন। কিন্তু
যজ্ঞস্থলে দক্ষ মহাদেবের নিন্দা করলে- সতী পতি নিন্দা সহ্য করতে না পেরে দেহত্যাগ
করেন। সতীর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ক্রুদ্ধ মহাদেব নিজের জটা ছিন্ন করলে,
সেই জটা থেকে বীরভদ্র নামক এক শক্তিশালী পুরুষের আবির্ভাব ঘটে। এরপর এই বীরভদ্র
মহাদেবের অন্যান্য অনুচরসহ দক্ষের যজ্ঞানুষ্ঠানে উপস্থিত হন। মহাদেবের আদেশে তাঁর
অনুচরেরা যজ্ঞানুষ্ঠান পণ্ড করে দেন এবং দক্ষের মুণ্ডুচ্ছেদ করেন। এরপর দক্ষের
মৃত্যুতে আকুল হয়ে দক্ষপত্নী বীরিণী ব্রহ্মার শরণাপন্ন হন। এরপর ব্রহ্মার অনুরোধে
মহাদেব দক্ষের ঘাড়ে একটি ছাগলের মুণ্ডু স্থাপন করেন।
কালিকা পুরাণের মতে- সতীর দেহত্যাগের পর,
মহাদেব তীব্র রোদন করতে
থাকলে,
তাঁর চোখ থেকে বিপুল পরিমাণ
জলরাশি নির্গত হতে থাকে। এই জলরাশি পৃথিবীতে পতিত হলে- ভূমণ্ডল দগ্ধ হবে। এই কারণে
দেবতাদের অনুরোধে শনি এই জল গ্রহণ করেন। কিন্তু শনি এই জল ধারণে অসমর্থ হয়ে- ইনি তা
জলধার নামক পর্বতে নিক্ষেপ করেন। উক্ত জলের তেজে,
ওই পর্বত বিদীর্ণ হয়ে যায় এবং এই জল পূর্ব-সাগরের পতিত হয়। কিন্তু সাগর এই জল ধারণে
অসমর্থ হলে- তা সাগরের মধ্যভাগ ভেদ করে সাগরের পূর্বকূলে উপনীত হয়। এরপর এই জলরাশি
পুষ্করদ্বীপের মধ্যভাগ দিয়ে প্রবাহিত হয়। জলাধার পর্বত ভেদ এবং সাগরের সংস্পর্শে
আসার কারণে- এই জলের তেজ অনেকাংশে প্রশমিত হয়। ফলে এই জল পৃথিবী ভেদ করতে পারে নাই।
এই জলরাশি বৈতরণী নামে যমপুরীর প্রবেশদ্বারে সম্মুখ দিয়ে প্রবাহিত। এর বিস্তার দুই
যোজন। [ ৯-৩৭। অষ্টাদশোহধ্যায়। কালিকা পুরাণ]
এরপর মহাদেব সতীর শোকে তাঁর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে তাণ্ডবনৃত্য শুরু
করেন। এর ফলে সৃষ্টি ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হলে,
বিষ্ণু তাঁর চক্র দ্বারা সতীদেহকে একান্নভাগে বিভক্ত করে দেন। এই একান্নটি খণ্ড
ভারতের বিভিন্নস্থানে পতিত হয়। ফলে পতিত প্রতিটি খণ্ড থেকে এক একটি মহাপীঠ উৎপন্ন
হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতিটি মহাপীঠকে পবিত্র তীর্থস্থান হিসাবে বিবেচনা করে
থাকেন।
সতীর দেহাংশ যে সকল স্থানে পতিত হয়েছিল,
মহাদেব সেখানে লিঙ্গরূপে অধিষ্ঠিত হলেন। বিশেষ করে সতীর মস্তিষ্ক পতিতস্থানে মহাদেব
শোকাহত অবস্থায় উপবেশন করেন। এই সময় দেবতারা সেখানে উপস্থিত হলে- মহাদেব লজ্জায়
প্রস্তর-লিঙ্গে পরিণত হন। পরে দেবতারা এই লিঙ্গরূপী মহাদেবকে পূজা করতে থাকেন।
হিন্দু পুরাণে মহাদেবের এই লিঙ্গপ্রতীক শিবলিঙ্গ নামে পরিচিত।
কথিত আছে- দেবতাদের জয় করার জন্য তারকাসুর এক হাজার বৎসর তপস্যা
করেন। কিন্তু তিনি এর ফলে কোন বর লাভে ব্যর্থ হলেও- তাঁর মাথা থেকে এক ধরণের তেজ
নিসৃত হতে থাকে। এই তেজ দেবতাদের দগ্ধ করতে থাকলে- দেবতারা ব্রহ্মার শরাণাপন্ন হন।
তখন ব্রহ্মা তারকাসুরের কাছে এসে বর প্রার্থনা করতে অনুরোধ করেন। তারকাসুর
ব্রহ্মার কাছে দুটি বর প্রার্থনা করেন। বর দুটি হলো- তাঁর চেয়ে শক্তিশালী আর কেউ
জন্মগ্রহণ করবে না এবং মহাদেবের ঔরসজাত পুত্রের হাতেই তাঁর মৃত্যু হবে। পরে
মহাদেবের পুত্র কার্তিকেয় এই অসুরকে হত্যা করতে সমর্থ হয়েছিলেন। এরপর তারকাসুরের
তিন পুত্র- তারকাক্ষ,
কমলাক্ষ ও বিদ্যুন্মালীকে হত্যা করে ত্রিপুরারি নামে পরিচিত হন।
কার্তিকেয়-এর জন্মবৃত্তান্তের সাথে মহাদেবের সাথে পার্বতীর
বিবাহঘটিত একটি উপখ্যান আছে।
শ্রীমদ্ভাগবত ও ব্রহ্মবৈবর্ত
পুরাণের মতে- সতী দেহত্যাগের পর হিমালয়ের কন্যা পার্বতীরূপে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।
ইনি মহাদেবকে পতিরূপে
পাওয়ার জন্য তপস্যা শুরু করেন।
এই সময় মহাদেব গভীর
তপস্যায় মগ্ন ছিলেন।
পার্বতী সে কথা জানতে
পেরে
প্রতিদিন তাঁর পূজা করতে থাকেন।
এদিকে তারকাসুর নামক এক
অসুর ব্রহ্মার বরে বলীয়ান হয়ে,
দেবতাদের উপর পীড়ন শুরু করলে— দেবতারা
ব্রহ্মার শরণাপন্ন হন।
ব্রহ্মা দেবতাদের জানান
যে,
শুধু মাত্র মহাদেবের ঔরসজাত
সন্তানই এই অসুরকে হত্যা করতে পারবেন।
মহাদেবের ধ্যানভঙ্গের
জন্য,
অন্যান্য দেবতাদের অনুরোধে কামদেব হিমালয়ে গিয়ে তাঁর কন্দর্প বাণ নিক্ষেপ করেন।
ফলে মহাদেবের ধ্যান ভঙ্গ
হয়।
এতে মহাদেব ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁর
তৃতীয় নয়ন উন্মোচিত করে কামকে ভস্মীভূত করেন।
এরপরে মহাদেব অনুতপ্ত
হয়ে— কামদেবকে
প্রদ্যুম্নরূপে জন্মগ্রহণ করতে বলেন।
মহাদেবের তৃতীয় নেত্রে
ভস্মীভূত হয়ে ইনি অঙ্গহীন হয়েছিলেন বলে- এর অপর নাম অনঙ্গ।
তারকাসুরকে হত্যা করার জন্য একটি পুত্র উৎপাদনের লক্ষ্যে,
মহাদেব পার্বতীর সাথে
মিলিত হন। কিন্তু মহাদেবের বীর্য গ্রহণে পার্বতী অসমর্থা দেখে তিনি তা,
অগ্নিতে নিক্ষেপ করেছিলেন। অগ্নিও উক্ত বীর্য গ্রহণে অক্ষম ছিলেন বিধায় তা গঙ্গায়
নিক্ষেপ করেছিলেন। গঙ্গা আবার তা শরবনে নিক্ষেপ করলে একটি সুদর্শন বালকের সৃষ্টি
হয়। মহাদেব তাঁর বীর্য অগ্নিতে নিক্ষেপ করেছিলেন বলে- এই বালকের নাম অগ্নিভু রাখা
হয়। কৃত্তিকারা এই বালককে স্তন্যদানে প্রতিপালন করেন। কৃত্তিকাদের স্তনদানের কারণে
ইনি তাঁদের পুত্র হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন এবং সেই সূত্রে ইনি কার্তিকেয় নামে
অভিহিত হয়ে থাকেন। পরে পার্বতী বিষয়টি অবগত হয়ে কার্তিকেয়কে তাঁর কাছে নিয়ে
যান।
তাঁর তৃতীয় নয়নের উৎপত্তি নিয়ে একটি গল্প আছে। পার্বতী একবার
পরিহাসছলে শিবের দুই চোখ হাত দিয়ে আবৃত করলে- সমগ্র চরাচর অন্ধকার হয়ে যায়। জগতকে
আলোকিত করার জন্য তাঁর তৃতীয় নয়নের উদ্ভব ঘটে। এই তৃতীয় নয়নের জ্যোতিতে হিমালয়
ধ্বংস হয়ে গেলে- পার্বতীর অনুরোধে তা আবার পুনস্থাপিত হয়। তবে এটি প্রক্ষিপ্ত
কাহিনী বলেই মনে হয়। কারণ- পার্বতীর সাথে শিবের বিবাহের পূর্বেই তাঁর তৃতীয় নয়নের
তেজে কামদেব ভস্মীভূত হন।
ইনি তাঁর স্ত্রী পার্বতী সহযোগে উত্তেজক নৃত্য পরিবেশন করলে তাকে
তাণ্ডবনৃত্য বলা হয়। অন্য মতে-বিশ্ব ধ্বংসের সময় ইনি যে নৃত্য করে থাকেন তাই
তাণ্ডবনৃত্য। ইনি গজাসুর ও কালাসুরকে হত্যা করার পর তাণ্ডবনৃত্য করেছিলেন। ইনি
নৃত্যকলার আদি কারণ বলে- নটরাজ নামে খ্যাত।
অন্ধক নামক দৈত্যকে নারদ কৌশলে মন্দর পর্বতে নিয়ে যান। সেখানে মহাদেব পার্বতীর
সাথে আমোদ-প্রমোদে রত ছিলেন। অন্ধক সেখানে উপস্থিত হলে, মহাদেব
শূলের আঘাতে অন্ধককে হত্যা করেন। এই কারণে ইনি যে সকল নাম প্রাপ্ত হন,
তা হলো- অন্ধকান্তক
(অন্ধকের অন্তক),
অন্ধকরিপু (অন্ধকের রিপু),
অন্ধকারি (অন্ধকের অরি),
অন্ধকাসুহৃদ (অন্ধকের অসুহৃদ)।
কালিকা পুরাণ মতে- দুন্দুভি নামক জনৈক দৈতরাজ,
ব্রহ্মার বরে বলীয়ান হয়ে- দেবতাদের পরাজিত করেছিলেন। কৈলাসে মহাদেব ও পার্বতীকে
[দুর্গা] একত্রে ভ্রমণ করার সময় পার্বতীকে দেখে মোহিত হন,
এবং তাঁকে অধিকার করার
চেষ্টা করলে- মহাদেবের অগ্নিদৃষ্টিতে ইনি ভস্মীভূত করেন। [চতুর্থোহধ্যায়,
কালিকাপুরাণ]
পুরাণ মতে- ঘটনাক্রমে দেবর্ষি নারদ শুদ্ধ সংগীত শোনানোর জন্য
মহাদেবকে অনুরোধ করলে,
মহাদেব জানান যে,
প্রকৃষ্ঠ শ্রোতা ছাড়া
তিনি গান শোনাবেন না। পরে নারদ মহাদেবের পরামর্শ অনুসারে ব্রহ্মা ও বিষ্ণু-কে
অনুরোধ করে আসরে নিয়ে আসেন। এই সঙ্গীতের মর্ম ব্রহ্মা বুঝতে অক্ষম হন। কিন্তু
বিষ্ণু কিছুটা বুঝতে পেরেছিলেন। ফলে ইনি আংশিক দ্রবীভূত হন। বিষ্ণুর এই দ্রবীভূত
অংশ ব্রহ্মা তাঁর কমণ্ডলুতে ধারণ করেন। বিষ্ণুর এই দ্রবীভূত অংশই গঙ্গা নামে খ্যাত
হয়। দেখুন : নারদ,
গঙ্গা
পরবর্তী সময়ে সগর রাজার পুত্রদের উদ্ধারের জন্য, ভগীরথ
কঠোর তপস্যার দ্বারা ব্রহ্মাকে সন্তুষ্ট করে গঙ্গাকে পৃথিবীতে আনার অনুমতি পান।
কিন্তু গঙ্গার অবতরণকালে পৃথিবী ধ্বংস হতে পারে,
-এই আশংকায় গঙ্গা
ভগীরথের কাছে একটি অবলম্বন প্রার্থনা করেন। ভগীরথ উপযুক্ত অবলম্বনের জন্য মহাদেবকে
তপস্যার দ্বারা সন্তুষ্ট করেন। মহাদেব গঙ্গার স্রোতধারাকে ধারণ করার জন্য তাঁর জটা
বিছিয়ে দেন। এরপর গঙ্গা ব্রহ্মার আদেশে মহাদেবের জটা অবলম্বন করে নেমে আসেন। মহাদেব
গঙ্গাকে বিন্দু সরোবরে ত্যাগ করলে গঙ্গা- পশ্চিমে হ্লাদিনী,
পাবনী,
নলিনী- পূর্বে সুচক্ষু,
সীতা,
সিন্ধু ও ভগীরথের পশ্চাতে এক স্রোত হিসাবে প্রবাহিত হন।
এঁর বরে শক্তিশালী হয়ে বৃত্র,
বাণ প্রভৃতি অসুর
ক্ষমতাবান হয়ে অত্যাচারী হয়ে উঠলে ইন্দ্র,
কৃষ্ণের হাতে এঁরা নিহত হন। পরশুরাম এঁর কাছে অস্ত্র শিক্ষা করে অজেয় হন। তৃতীয়
পাণ্ডব অর্জুনের তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে ইনি কিরাত বেশে তাঁর সাথে কৃত্রিম যুদ্ধ
করেন। যুদ্ধে অর্জুনের বিক্রম দেখে মহাদেব সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে পাশুপাত অস্ত্র
প্রদান করেন।
একবার কৈলাসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রাবণের রথের গতি রুদ্ধ হয়। এই
সময় মহাদেবের অনুচর নন্দী রাবণকে স্মরণ করিয়ে দেন যে,
এখানে হর-পার্বতী আছেন।
নন্দীর বানর মুখ দেখে রাবণ অবজ্ঞায় হাস্য করলে,
নন্দী অভিশাপ দেন যে,
তার মতো বানরদের হাতেই
রাবণ বংশ ধ্বংস হবে। রাবণ এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে কৈলাস উত্তোলন করতে থাকলে,
পার্বতী চঞ্চল হয়ে উঠেন। তখন মহাদেব পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে রাবণকে
চেপে ধরেন। রাবণ সে চাপ সহ্য করতে না পেরে প্রচণ্ড চিৎকার করতে থাকেন। পরে
মহাদেবের স্তব করে মুক্তি পান। মহাদেব স্তবে সন্তুষ্ট হয়ে রাবণকে চন্দ্রহাস নামে
একটি দীপ্ত খড়্গ উপহার দেন।
ইনি মহর্ষি অত্রির কাছে যোগশিক্ষা গ্রহণ করেন। বিষ্ণুর সহায়তায় ইনি
জলন্ধরকে হত্যা করেন। তাঁর পরম ভক্ত অসুর বাণকে রক্ষা করা সত্তেও কৃষ্ণের হাতে বাণ
পরাজিত হন। কিন্তু কৃষ্ণের দয়ায় বাণ মহাকাল নামে মহাদেবের অনুচরদের অন্তর্ভূক্ত হন।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন