হিন্দু
ধর্মের প্রধান তিন দেবতার একজন।
ইনি বিশ্বব্যাপক এবং বিশ্বপ্রবেশক
অর্থে বিষ্ণু। ঋষি কশ্যপ-এর ঔরসে অদিতির গর্ভে এঁর জন্ম।
এঁর স্ত্রীর নাম লক্ষ্মী।
কোন কোন ক্ষেত্রে
লক্ষ্মী ছাড়াও স্ত্রী হিসাবে সরস্বতীর নাম পাওয়া যায়।
ইনি সৃষ্টির পালক এবং
অনন্তশয্যায় শায়িত।
এঁর শঙ্খের নাম
পাঞ্চজন্য,
চক্র নামক অস্ত্রের নাম সুদর্শন,
গদা নামক অস্ত্রের নাম
কৌমদকী,
ধনুকের নাম শার্ঙ্গ,
তরবারির নাম নন্দক।
এঁর ধারণকৃত মণির নাম
কৌস্তভ।
ইনি চারহাত বিশিষ্ট।
এই চার হাতে রয়েছে
পাঞ্চজন্য শঙ্খ,
সুদর্শনচক্র,
কৌমদকী গদা ও পদ্ম।
বুকে রয়েছে শ্রীবত্স
নামক একটি চিহ্ন ও কৌস্তভ মনি,
মণিবন্ধে রয়েছে শ্যমন্তক
মণি।
সৃষ্টির
আদিতে ইনি প্রলয় সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায়
যোগনিদ্রায় দশায়
শায়িত ছিলেন।
এই সময়
তাঁর নাভি থেকে ব্রহ্মার সৃষ্টি
হয়।
এই সময় তাঁর কর্ণমল থেকে মধু ও
কৈটভ [মধুকৈটভ] নামক দুই দৈত্য
আবির্ভূত হয়ে
ব্রহ্মাকে হত্যা করতে
উদ্যত হলে- ইনি যোগনিদ্রারূপী মহামায়ার বন্দনা করেন। মহামায়া বিষ্ণুর দেহের বিভিন্ন
অংশ থেকে বিচ্ছুরিত হয়ে নিজেকে ব্রহ্মার সামনে নিজেক প্রকাশ করেন। পরে ব্রহ্মাকে
অভয় দান করে অন্তর্হিত হলে-
বিষ্ণু
নিদ্রা থেকে জেগে উঠে দৈত্যদের আক্রমণ করেন।
এরপর বিষ্ণু
এদের সাথে
পাঁচ
হাজার বছর যুদ্ধ করেন।
কারণ এই দৈত্যরা
মহামায়ার দ্বারা অনুগ্রহভাজিত ছিল। ফলে শেষ পযর্ন্ত
যুদ্ধে কোন
পক্ষই জয়লাভ করতে সক্ষম হলো না।
এরপর
দৈত্যরা
বিষ্ণুর যুদ্ধে সন্তুষ্ট হয়ে বিষ্ণুকে বর দিতে ইচ্ছা করেন।
বিষ্ণু বলেন যে- লোক হিতার্থে তোমরা
আমার
বধ্য হও।
দৈত্যরা বিষ্ণুকে বলেন যে- তুমি
আমাদেরকে
জলহীনস্থানে হত্যা কর।
এরপর বিষ্ণু
তাঁর হাটুর উপর উভয় দৈত্যকে রেখে সুদর্শন চক্র দ্বারা তাঁদের শিরোশ্ছেদ করেন।
পরে
এই দুই দৈত্যের দেহের মেদ থেকেই
পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে বলে-
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতে
পৃথিবীর অপর নাম মেদিনী।
দক্ষের দক্ষের যজ্ঞানুষ্ঠানে মহাদেবের নিন্দা সহ্য করতে না পেরে সতী [দুর্গা] দেহত্যাগ করলে, মহাদেব দক্ষের যজ্ঞ পণ্ড করে দেন। পরে ইনি সতীর মৃতদেহ নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য করতে থাকেন। এর ফলে পৃথিবী ধ্বংসের উপক্রম হলে- বিষ্ণু তাঁর সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর দেহকে ৫১টি ভাগে বিভক্ত করেন। এই খণ্ডগুলো পৃথিবীর ৫১টি স্থানে পতিত হয়। দেখুন: পীঠস্থান।
দক্ষের দক্ষের যজ্ঞানুষ্ঠানে মহাদেবের নিন্দা সহ্য করতে না পেরে সতী [দুর্গা] দেহত্যাগ করলে, মহাদেব দক্ষের যজ্ঞ পণ্ড করে দেন। পরে ইনি সতীর মৃতদেহ নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য করতে থাকেন। এর ফলে পৃথিবী ধ্বংসের উপক্রম হলে- বিষ্ণু তাঁর সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর দেহকে ৫১টি ভাগে বিভক্ত করেন। এই খণ্ডগুলো পৃথিবীর ৫১টি স্থানে পতিত হয়। দেখুন: পীঠস্থান।
মহাভারতের মতে–
দেবতারা অসুরদের সাথে
ক্রমাগত যুদ্ধে করতে করতে শক্তি হারিয়ে ফেললে- এঁরা বিষ্ণুর কাছে গিয়ে শক্তি ও
অমরত্ব প্রার্থনা করেন।
বিষ্ণু পরামর্শ দেন যে,
সমুদ্রমন্থন করলে অমৃত
পাওয়া যাবে এবং তা পান করলে অমরত্ব লাভ করা যাবে।
দেবতাদের সাহায্যার্থে
বিষ্ণু কূর্মরূপ ধারণ করে সমুদ্রমন্থনে সাহায্য করেন।
মন্দারপর্বতকে মন্থনদণ্ড
ও বাসুকী সাপকে মন্থনরজ্জু হিসাবে ব্যবহার করে দেবতারা সমুদ্র মন্থন করতে গেলে-
তাদের শক্তি অপর্যাপ্ত বিবেচিত হয়।
এরপর অসুরদের সহায়তায়
সমুদ্র মন্থন করে অমৃতলাভ হয়।
চুক্তি অনুসারে এই অমৃতে
অসুরদের ভাগ ছিল।
কিন্তু বিষ্ণু মোহিনী মূর্তি
ধরে অসুরদের সাথে ছলনা করেন এবং অসুরদেরকে অমৃত থেকে বঞ্চিত করেন।
মানুষ ও দেবতাদের কল্যাণে ইনি
নয় বার অবতার হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন।
এর মধ্যে তাঁর নয়টি
অবতাররূপ অতিক্রান্ত হয়েছে।
শেষোক্ত (দশম) কল্কি
অবতার ভবিষ্যতে দৃষ্ট হবে বলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন।
নিচে বিভিন্ন যুগে
আবির্ভূত অবতারের তালিকা দেওয়া হলো।
সত্যযুগে আবির্ভূত চার
অবতার:
১. মৎস্য অবতার,
২. কূর্ম অবতার,
৩. বরাহ অবতার
৪. নৃসিংহ অবতার।
ত্রেতাযুগের তিন অবতার :
৫. বামন অবতার,
৬. পরশুরাম অবতার
৭. রামচন্দ্র
দ্বাপর যুগের অবতার :
৮. কৃষ্ণ : ইনি দ্বাপর যুগের একমাত্র অবতার। এঁর সময় কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
কলি যুগের অবতার :
৯. বুদ্ধ
১০. কল্কি অবতার।
১. মৎস্য অবতার,
২. কূর্ম অবতার,
৩. বরাহ অবতার
৪. নৃসিংহ অবতার।
ত্রেতাযুগের তিন অবতার :
৫. বামন অবতার,
৬. পরশুরাম অবতার
৭. রামচন্দ্র
দ্বাপর যুগের অবতার :
৮. কৃষ্ণ : ইনি দ্বাপর যুগের একমাত্র অবতার। এঁর সময় কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।
কলি যুগের অবতার :
৯. বুদ্ধ
১০. কল্কি অবতার।
বিভিন্ন অর্থে বিষ্ণুর যে সকল
নাম পাওয়া যায়, তার তালিকা।
বিষ্ণু : বিশ্বব্যাপক এবং বিশ্বপ্রবেশক। বৈকুণ্ঠ : বি (বিগত) হইয়াছে কুণ্ঠা যাহার। |
বজ্র হতে জন্ম এই অর্থে-অক্ষজ
চক্র (সুদর্শন চক্র) ধারণ করে এই অর্থে- অক্ষধর
অঘা নামক অসুর বিনাশকারী অর্থে- অঘানাশক, অঘানাশন
যিনি নিজ পদ থেকে বিচ্যুত হন না, এই অর্থে- অচ্যুত।
জন্মরহিত অর্থে- অজ।
ব্রহ্মার দ্বারা বন্দিত এই অর্থে-অজগ।
যাকে জয় করা যায় না, এই অর্থে- অজিত।
ইন্দ্রিয়ের অতীত অর্থ- অতীন্দ্রিয়
অদিতির পুত্র হিসাবে- অদিতিজ, অদিতিতনয়, অদিতিনন্দন, অদিতিপুত্র, অদিতিসূত।
যাকে ধরা যায় না, এই অর্থে- অধৃত।
মহাদেবের পাদদেশে জন্মেছিলেন এই অর্থে-অধোক্ষজ
অন্ত নাই যার এই অর্থে- অনন্ত, অনন্তদেব।
অন্তহীন শয্যায় শায়িত যিনি, এই অর্থে- অনন্তশয়ান।
যার কোন প্রভু নাই, এই অর্থ- অনীশ।
সমুদ্রে শয্যা যার, এই অর্থে- অব্দিশয়ন।
যাকে ব্যক্ত করা যায় না, এই অর্থে- অব্যক্ত।
যার কোন ব্যয় (ক্ষয়) নাই এই অর্থে- অক্ষয়, অব্যয়।
রূপকে অভিগত এই অর্থে- অভিরূপ।
সর্বভক্ষক অর্থে-অমিতাশন।
অমৃত রক্ষা বা পান করেন যিনি, এই অর্থে- অমৃতপ, অমৃতপা।
শব্দের অধিপতি অর্থে- অম্বরীষ
যোনি ছাড়া অন্যস্থানে জন্ম যার, এই অর্থে- অযোনি, অযোনিজ।
পদ্মনাভি যার, এই অর্থে-অরবিন্দনাভ।
গরুড় এঁর বাহন ছিলেন, এই অর্থে-গরুড়ধ্বজ, গরুড়বাহন।
লক্ষ্মীর স্বামী অর্থে : অর্ধলক্ষ্মী, অর্ধলক্ষ্মীহরি, কমলাকান্ত, কমলাপতি, রমাকান্ত, রমানাথ, রমাপতি, রমেশ, লক্ষ্মীপতি, লক্ষ্মীকান্ত, লক্ষ্মীজনার্দন, লক্ষ্মীনারায়ণ, লক্ষ্মীশ্বর।
অ, অরিষ্টমথন,
অরিষ্টসূদন,
অর্ক,
অসুরসূদন,
অসুরারি,
ঈপতি,
কঞ্জনাভ,
কুন্দর,
কিরীটী,
খগাসন,
খিল,
গদাধর,
গদাপাণি,
গোলকনাথ,
গোলকপতি,
গোলকবিহারী,
চক্রধর,
চক্রধারী,
চক্রপাণি,
চক্রায়ধ,
চক্রী,
চতুর্ভুজ,
চতুর্বাহু,
চতুষ্কর,
জগন্নাথ,
জনার্দন,
জয়পাল,
জহ্নু,
জিষ্ণু,
তুষ্ট,
দর্পহা,
দর্পহারী,
দানবারি,
দামোদর,
দীননাথ,
দীনবন্ধু,
দীনেশ,
দৈত্যারি,
দ্বিজবাহন,
ধরণীধর,
ধরণীশ্বর,
ধর্মনাভ,
নরকান্তক,
নারায়ণ,
পদ্মনাভ,
পদ্মপলাশ লোচন,
পদ্মেশয়,
পরব্যোম,
পরমেষ্ঠী,
পারায়ণ,
পুরুষোত্তম,
পুষ্করাক্ষ,
বলিন্দম,
বলিসূদন,
বারিশ,
বিশ্বম্ভর,
ব্রহ্মদেব,
ব্রহ্মনাভ,
মনোজব,
লোকনাথ,
শশবিন্দু,
শার্ঙ্গদেব,
শার্ঙ্গপাণি,
শিপিবিষ্ট,
শ্রীকান্ত,
শ্রীধর,
শ্রীনিবাস,
শ্রীপতি,
শ্রীবৎসলাঞ্ছন,
শ্রীশ,
সত্যনারায়ণ,
সনাতন,
সহস্রাস্য,
সাত্বত,
সুদর্শনধারী,
হ,
হরি,
হৃষিকেশ।
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন