আজ থেকে নিয়মিত পরিচয় করিয়ে দিব আপনাদের প্রাচীন সেই সব শহর ও জায়গাগুলো এবং সেগুলোর বর্তমান ভৌগলিক অবস্থান যেগুলোর কথা উল্লেখ ছিল ‘মহাভারতে’’এবং ৫০০০ খ্রিস্টপূর্ব হতে ১০০০ খ্রিস্টপূর্ব সময়কার ।
গান্ধার ( বর্তমনে সিন্ধু প্রদেশ, রাওয়ালপিন্ডি, উত্তর পাকিস্থান ও আফগানিস্তানের কান্দাহার ):
 |
প্রাচীন গান্ধার রাজ্যের ভগ্নাবশেষ |
এটি একটি সুপ্রাচীন পৌরনিক শহর মহাভারতের সময়কার । এটি পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের সিন্ধু নদীর পশ্চিমে এবং আফগানিস্তানের কান্দাহার অবস্থিত । ধৃতরাষ্টের স্ত্রী গান্ধারী ছিল গান্ধার রাজ্যের রাজা সুবলের কন্যা । গান্ধারীর ভাই শকুনি ছিল দূর্যোধনের মামা । দুর্যোধনকে তিনি নানান কুবুদ্ধি দিতেন। কালকূট বিষ প্রয়োগ করে ভীমকে হত্যা, জতুগৃহে কুন্তি সহ পাণ্ডবদের পুড়িয়ে মারা,ইত্যাদি ষড়যন্ত্রে শকুনির সক্রিয় ভূমিকা ছিল। সে ছলের আশ্রয় নিয়ে পান্ডবদের পাশা খেলায় হারিয়ে সবকিছু কেড়ে নিয়ে বনবাসে পাঠিয়েছিল । তার এই জালিয়াতির কারনেই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সুত্রপাত ঘটে । যুদ্ধ শুরু হবার আগে শকুনির পুত্র উলুক দুর্যোধনের দূত হিসেবে দুর্যোধনের শিখিয়ে দেওয়া অভদ্র অশ্লীল কথাগুলো পাণ্ডব পক্ষকে গিয়ে শোনালেন। সহদেব সেই শুনে ক্রোধান্বিত হয়ে শপথ করলেন যে, শকুনির সামনে প্রথমে উলুককে হত্যা করে,তারপর তিনি শকুনিকে বধ করবেন। যুদ্ধের শেষ দিনে সহদেবের হাতেই শকুনি-পুত্র উলুক ও শকুনির মৃত্যু হয়।
 |
মহাভারতের সময়ের ভারতবর্ষ |
আফগানিস্তানে এখনও পর্যন্ত মহাভারত সময়কালীন অনেক প্রাচীন হিন্দু মন্দির অবস্থিত । পূর্বে আফগানিস্তান শাসন করত হিন্দু শাহী রাজারা । তারা দশম শতাব্দী পর্যন্ত এই সনাতন ধর্মকে টিকিয়ে রেখেছিলেন । কিন্তু পরবর্তীতে ইসলামের অভ্যুথানের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে ঐ দেশের প্রধান ধর্ম হিসেবে ইসলাম ধর্ম স্বীকৃতি লাভ করে । দেশটিতে এখনও পর্যন্ত অনেক সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বাস করে । যাদের অনেকেই বংশগত পরম্পরায় এখনও পর্যন্ত টিকে রয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের অধিকাংশই বাস করে আফগানিস্তানের কাবুল এবং কান্দাহারে । হিন্দু শাহী রাজাদের আমলে ‘কাবুল’ ছিল তখন প্রধান রাজধানী ।

বৈদিক সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে তখন শাহী রাজাদের আমলে প্রচলিত স্বর্নের দিনারে দেবাদিদেব শিবের মনোগ্রাম স্থাপিত ছিল ।

শাহী রাজা কিংগালের আমলে ৫ম শতাব্দিতে স্থাপিত শ্রী গণেশের মূর্তিও অবস্থিত যেটি আফগানিস্তানের গার্ডেজে দেখতে পাওয়া যেত । তবে এখন মূর্তিটি কাবুলের দার্গ পীর রঞ্জন নাথ নামক স্থানে স্থাপিত রয়েছে । যদিও মূর্তির বিভিন্ন অংশ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে । এই স্থানটিতেও অনেক হিন্দু মন্দির রয়েছে । কান্দাহারের শিখাপুর বাজার, কাবুলি বাজার, যাম্পীর সাহীব এবং দেবী দেওয়ার, চাসমা সাহীব, সুলতানপুর, জালালাবাদ, ঘজনী, হেলমান্ত(লম্বারগ) এবং কুন্তজ নামক আঞ্চলেও অনেক প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের নিদর্শন পাওয়া যায় ।
পাকিস্থান ও আফগানিস্তানের এসব প্রাচীন নিদর্শনসমূহ ও শকুনি মামার রাজ্যের প্রাচীন সংস্কৃতিসমূহ থেকে আমাদের এটি উপলব্ধি করতে বাধ্য করে যে, সনাতন ধর্মের সংস্কৃতি বহু প্রাচীন এবং মহাভারতের কাহিনীসমূহ কাল্পনিক নয় বরঞ্চ চির শাশ্বত ও বাস্তব । যার প্রমাণ পাকিস্থান ও আফগানিস্তানের এ নিদর্শনসমূহ ।
ছবি কৃতজ্ঞতায়ঃ নিরঞ্জন হাওলাদার
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন