(জন্মঃ ১২ ফেব্রুয়ারি ১৮২৪ টঙ্কর, অধুনা গুজরাট ও মৃত্যুঃ ৩০ অক্টোবর ১৮৮৩ (৫৯ বছর) আজমির, রাজস্থান জাতীয়তাঃ ব্রিটিশ ভারতীয় )
স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী একজন গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক এবং আর্যসমাজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন । পশ্চিম ভারতের কাথিয়াওয়াড়ের মোরভি শহরে এক ধনাঢ্য নিষ্ঠাবান সামবেদী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর গার্হস্থ্যাশ্রমের নাম মূলশংকর । বাল্যশিক্ষা পিতার কাছেই লাভ করেন । ইংরাজি শিক্ষার সুযোগ না হওয়ায় প্রথম থেকেই তিনি সংস্কৃতশাস্ত্র উত্তমরূপে আয়ত্ত্ব করেন এবং ধীরে ধীরে সমগ্র যজুবেদ ও আংশিকভাবে অপর তিন বেদ, ব্যাকরণ, তর্ক ও দর্শনশাস্ত্র, কাব্য, অলংকার, স্মৃতি প্রভৃতিতে যথেষ্ট বুৎপত্তি অর্জন করেন ।
''আর্য সমাজ'' হিন্দু সংস্কার আন্দোলনের জন্য স্বামী দয়ানন্দ কর্তৃক ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি হিন্দু সংগঠন। তিনি একজন বেদ প্রচারক সন্ন্যাসী ছিলেন। তিনি ব্রহ্মচর্যের আদর্শের উপর জোর দিয়েছিলেন।
বৈদিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাঃ
-----------------------
১৮৬৯ থেকে ১৮৭৩ এর মধ্যে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী ভারতে তাঁর প্রথম সংস্কার প্রচেষ্টা চালান। এই প্রচেষ্টা ছিল মূলত “বৈদিক বিদ্যালয়” বা “গুরুকূল” স্থাপনের লক্ষ্যে যা শিক্ষার্থীদের বৈদিক জ্ঞান, সংস্কৃতি ও ধর্ম সম্পর্কে গুরুত্ব প্রদান করে। প্রথম বিদ্যালয়টি ১৮৬৯ সালে ফররুখাবাদে প্রতিষ্ঠিত হয় মাত্র ৫০ জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে। প্রারম্ভিক সাফল্যের দরুণ মির্জাপুর(১৮৭০), কাসগঞ্জ (১৮৭০), চালিসার (আলীগড়) (১৮৭০) এবং বারাণসী (১৮৭৩)-তে দ্রুত বেশ কিছু বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। বৈদিক বিদ্যালয় সমূহ মূলত স্বামী দয়ানন্দের সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কারের প্রায়োগিক প্রয়াসকেই তুলে ধরে। সেগুলো মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল। একদিকে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে ঐতিহ্যগত মূর্তিপূজা করতে পারত না, বরং তাদের প্রতিদিন দুবার সন্ধ্যা বন্দনা ও অগ্নিহোত্র যজ্ঞ করতে হত। তারা ছিল শৃঙ্খলাবদ্ধ। অন্যদিকে তাদের সমস্ত খাবার, বাসা, পোশাক এবং বই বিনামূল্যে দেয়া হত এবং অ-ব্রাহ্মণরাও সংস্কৃত পাঠ করতে পারত। তাদেরকে প্রধানত বেদ শিক্ষা দেয়া হত। বৈদিক বিদ্যালয়সমূহ দ্রুতই বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়।
আর্যসমাজের মূলনীতি:
---------------------
আর্য সমাজ মূলত স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী প্রবর্তিত দশটি নিয়মের উপর প্রতিষ্ঠিত। নিয়মগুলো হচ্ছে:
০১/ সব সত্যবিদ্যা এবং যা পদার্থবিদ্যা দ্বারা জানা যায় সেসবের আদিমূল পরমেশ্বর।
০২/ ঈশ্বর সচ্চিদানন্দস্বরূপ, নিরাকার, সর্বশক্তিমান, ন্যায়কারী, দয়ালু, অজন্মা, অনন্ত, নির্বিকার, অনাদি, অনুপম, সর্বাধার, সর্বেশ্বর সর্বব্যাপক, সর্বান্তর্যামী, অজর, অমর, অভয়, নিত্য, পবিত্র ও সৃষ্টিকর্তা, একমাত্র তাঁরই উপসনা করা উচিত।
০৩/ বেদ সব সত্যবিদ্যার পুস্তক, বেদের পঠন-পাঠন, শ্রবণ ও শ্রাবণ সবল আর্যের পরম ধর্ম।
০৪/ সত্য গ্রহণে ও অসত্য পরিত্যাগে সদা উদ্যত থাকবে।
০৫/ সব কাজ ধর্মানুসারে অর্থাৎ সত্য ও অসত্য বিচারপূর্বক করা উচিত।
০৬/ সংসারের উপকার করা এই সমাজের মুখ্য উদ্দেশ্য অর্থাৎ শারীরিক, আত্মিক ও সামাজিক উন্নতি করা।
০৭/ সকলের সঙ্গে প্রীতিপূর্বক ধর্মানুসারে যথাযোগ্য ব্যবহার করা উচিত।
০৮/ অবিদ্যার নাশ ও বিদ্যার বৃদ্ধি করা উচিত।
০৯/ প্রত্যেককে নিজের উন্নতিতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত নয়, কিন্তু সবার উন্নতিতে নিজের উন্নতি ভাবা উচিত।
১০/ সব মানুষকে সামাজিক সর্বহিতকারী নিয়ম পালনে পরতন্ত্র এবং প্রত্যেক হিতকারী নিয়মে সবাইকে স্বতন্ত্র থাকা উচিত।
দর্শনঃ
চার বেদ সংহিতার উপর গড়ে ওঠা ত্রৈতবাদী বৈদিক দর্শন এবং এটি ষড় দর্শনের পাশাপাশি নিরুক্ত ও নিঘণ্টুতেও পাওয়া যায় যা পাণিনিয় ব্যাকরণ সমর্থিত
সাহিত্য কর্মঃ সত্যার্থ প্রকাশ (১৮৭৫)
উদ্ধৃতিঃ
"ওঁ বিশ্বানি দেব সবিতর্দুরিতানি পরা সুব। য়দ্ভদ্রং তন্ন আ সুব।।"
স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী একজন গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক এবং আর্যসমাজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন । পশ্চিম ভারতের কাথিয়াওয়াড়ের মোরভি শহরে এক ধনাঢ্য নিষ্ঠাবান সামবেদী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর গার্হস্থ্যাশ্রমের নাম মূলশংকর । বাল্যশিক্ষা পিতার কাছেই লাভ করেন । ইংরাজি শিক্ষার সুযোগ না হওয়ায় প্রথম থেকেই তিনি সংস্কৃতশাস্ত্র উত্তমরূপে আয়ত্ত্ব করেন এবং ধীরে ধীরে সমগ্র যজুবেদ ও আংশিকভাবে অপর তিন বেদ, ব্যাকরণ, তর্ক ও দর্শনশাস্ত্র, কাব্য, অলংকার, স্মৃতি প্রভৃতিতে যথেষ্ট বুৎপত্তি অর্জন করেন ।
''আর্য সমাজ'' হিন্দু সংস্কার আন্দোলনের জন্য স্বামী দয়ানন্দ কর্তৃক ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি হিন্দু সংগঠন। তিনি একজন বেদ প্রচারক সন্ন্যাসী ছিলেন। তিনি ব্রহ্মচর্যের আদর্শের উপর জোর দিয়েছিলেন।
বৈদিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাঃ
-----------------------
১৮৬৯ থেকে ১৮৭৩ এর মধ্যে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী ভারতে তাঁর প্রথম সংস্কার প্রচেষ্টা চালান। এই প্রচেষ্টা ছিল মূলত “বৈদিক বিদ্যালয়” বা “গুরুকূল” স্থাপনের লক্ষ্যে যা শিক্ষার্থীদের বৈদিক জ্ঞান, সংস্কৃতি ও ধর্ম সম্পর্কে গুরুত্ব প্রদান করে। প্রথম বিদ্যালয়টি ১৮৬৯ সালে ফররুখাবাদে প্রতিষ্ঠিত হয় মাত্র ৫০ জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে। প্রারম্ভিক সাফল্যের দরুণ মির্জাপুর(১৮৭০), কাসগঞ্জ (১৮৭০), চালিসার (আলীগড়) (১৮৭০) এবং বারাণসী (১৮৭৩)-তে দ্রুত বেশ কিছু বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। বৈদিক বিদ্যালয় সমূহ মূলত স্বামী দয়ানন্দের সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কারের প্রায়োগিক প্রয়াসকেই তুলে ধরে। সেগুলো মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছিল। একদিকে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে ঐতিহ্যগত মূর্তিপূজা করতে পারত না, বরং তাদের প্রতিদিন দুবার সন্ধ্যা বন্দনা ও অগ্নিহোত্র যজ্ঞ করতে হত। তারা ছিল শৃঙ্খলাবদ্ধ। অন্যদিকে তাদের সমস্ত খাবার, বাসা, পোশাক এবং বই বিনামূল্যে দেয়া হত এবং অ-ব্রাহ্মণরাও সংস্কৃত পাঠ করতে পারত। তাদেরকে প্রধানত বেদ শিক্ষা দেয়া হত। বৈদিক বিদ্যালয়সমূহ দ্রুতই বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়।
আর্যসমাজের মূলনীতি:
---------------------
আর্য সমাজ মূলত স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী প্রবর্তিত দশটি নিয়মের উপর প্রতিষ্ঠিত। নিয়মগুলো হচ্ছে:
০১/ সব সত্যবিদ্যা এবং যা পদার্থবিদ্যা দ্বারা জানা যায় সেসবের আদিমূল পরমেশ্বর।
০২/ ঈশ্বর সচ্চিদানন্দস্বরূপ, নিরাকার, সর্বশক্তিমান, ন্যায়কারী, দয়ালু, অজন্মা, অনন্ত, নির্বিকার, অনাদি, অনুপম, সর্বাধার, সর্বেশ্বর সর্বব্যাপক, সর্বান্তর্যামী, অজর, অমর, অভয়, নিত্য, পবিত্র ও সৃষ্টিকর্তা, একমাত্র তাঁরই উপসনা করা উচিত।
০৩/ বেদ সব সত্যবিদ্যার পুস্তক, বেদের পঠন-পাঠন, শ্রবণ ও শ্রাবণ সবল আর্যের পরম ধর্ম।
০৪/ সত্য গ্রহণে ও অসত্য পরিত্যাগে সদা উদ্যত থাকবে।
০৫/ সব কাজ ধর্মানুসারে অর্থাৎ সত্য ও অসত্য বিচারপূর্বক করা উচিত।
০৬/ সংসারের উপকার করা এই সমাজের মুখ্য উদ্দেশ্য অর্থাৎ শারীরিক, আত্মিক ও সামাজিক উন্নতি করা।
০৭/ সকলের সঙ্গে প্রীতিপূর্বক ধর্মানুসারে যথাযোগ্য ব্যবহার করা উচিত।
০৮/ অবিদ্যার নাশ ও বিদ্যার বৃদ্ধি করা উচিত।
০৯/ প্রত্যেককে নিজের উন্নতিতেই সন্তুষ্ট থাকা উচিত নয়, কিন্তু সবার উন্নতিতে নিজের উন্নতি ভাবা উচিত।
১০/ সব মানুষকে সামাজিক সর্বহিতকারী নিয়ম পালনে পরতন্ত্র এবং প্রত্যেক হিতকারী নিয়মে সবাইকে স্বতন্ত্র থাকা উচিত।
দর্শনঃ
চার বেদ সংহিতার উপর গড়ে ওঠা ত্রৈতবাদী বৈদিক দর্শন এবং এটি ষড় দর্শনের পাশাপাশি নিরুক্ত ও নিঘণ্টুতেও পাওয়া যায় যা পাণিনিয় ব্যাকরণ সমর্থিত
সাহিত্য কর্মঃ সত্যার্থ প্রকাশ (১৮৭৫)
উদ্ধৃতিঃ
"ওঁ বিশ্বানি দেব সবিতর্দুরিতানি পরা সুব। য়দ্ভদ্রং তন্ন আ সুব।।"
0 Comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন